এত সুর আর এত গান

সদ্য ঢুকেছি ‘দি ইকনমিক টাইমস’ নিউজ ডেস্কে। সালটা ১৯৯২। রবিবার সকালের শিফটে নন্দিনী আর আমি। দু’টি পাতা, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস আর ওয়ার্ল্ড। হঠাৎ ঘরের মাঝামাঝি স্টিলের আলমারির উপরে রাখা রেডিয়োটা নন্দিনী চালিয়ে দিল। ‘কাজের মধ্যে গান?’ প্রশ্ন করায় নন্দিনী বলল, ‘অল ইন্ডিয়া রেডিয়োতে মিউজিকাল ব্যান্ডবক্স কখনও শুনিসনি? ওরে পাগলা, ইন্টারন্যাশনাল মিউজিক না শুনলে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসের কপি এডিট করবি কী করে?’

নন্দিনীর মতো পাশ্চাত্যসঙ্গীতের এমন ভক্ত কমই দেখেছি। রেডিয়োতে যে গানই বাজছে, প্রায় সব জানা। কখনও গলা মেলাচ্ছে জন ডেনভারের ‘সানশাইন’-এর সঙ্গে, আবার কখনও কুইন ব্যান্ডের সঙ্গে চেঁচিয়ে উঠছে ‘আই ওয়ন্ট টু ব্রেক ফ্রি’।

Calcutta B
আকাশবাণীর ইংরেজি বিভাগের কর্মীরা। বাঁ দিক থেকে রত্না সেন, বুলবুল সরকার, জিজা ভট্টাচার্য, নীরজা লাল এবং পিছনের সারিতে রঞ্জন মিত্র ও সুব্রত লাহা। ছবি – কলকাতা বেতার, পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের সৌজন্যে প্রাপ্ত। 

এর পর যেটা হল, রবিবার নাইট শিফট থাকলে আমিও বাড়ির ঘড়িতে দুপুর একটা দশ বাজলেই ট্রানজিস্টরে চালিয়ে দিতাম, ক্যালকাটা বি স্টেশনে ‘মিউজিকাল ব্যান্ডবক্স।’ এই অনুষ্ঠানে রত্না সেন, জিজা ভট্টাচার্য, ওয়াই সি গুপ্ত, সাধনা দত্তের মতো কয়েকজন অসাধারণ সঞ্চালক আমাদের পাওনার মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই প্রিয় শিল্পীর তালিকায় চলে এলেন জর্জ বেনসন, স্টিভি ওয়ান্ডার, ববি ম্যাকফেরিন। সেই সময় শোনা যে সব গান আজও মনের জানালায় উঁকি দিয়ে যায়, তার মধ্যে রয়েছে কার্পেনটার্সের ‘টপ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’, বিটলসের ‘ইয়েলো সাবমেরিন’, সুসান রে’-র ‘এলএ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট’ আর ব্ল্যাক লেস ব্যান্ডের ‘অ্যাগাডু।’

নূতন যুগের ভোরে

‘মিউজিকাল ব্যান্ডবক্স’-এর জনপ্রিয়তা নিয়ে ক্যালকাটা স্কুল অফ মিউজিক’-এর (সিএসএম) ওয়েস্টার্ন মিউজিকের প্রধান চৈতালি গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘এই ধরনের অনুষ্ঠান পাশ্চাত্যসঙ্গীতের প্রতি আমাদের আগ্রহ তৈরি করে দিয়েছিল। সেখান থেকেই এলভিস প্রেসলি, নিল ডায়মন্ড আর ক্লিফ রিচার্ডের গান ভালোবাসতে শিখি।’ ‘মিউজিকাল ব্যান্ডবক্স’, সঞ্চালক বরুণ হালদারকে বা ‘বিকে’কে এনে দিয়েছিল বিপুল জনপ্রিয়তা। পরে অবশ্য তিনি আকাশবাণী দিল্লি কেন্দ্রের সংবাদ বিভাগে বদলি হয়ে যান।

Ratna Sen
রত্না সেন এখন। রত্না সেন তখন। কলকাতা খ-এর অনুষ্ঠানের রেকর্ডিং করছেন চার নম্বর স্টুডিওতে। ছবি – রত্না সেনের সৌজন্যে

এই প্রসঙ্গে একটি চমৎকার গল্প শুনলাম রেডিয়োয় চার দশক কাটিয়ে আসা বিশিষ্ট সঞ্চালক ও ঘোষক রত্না সেনের কাছে। ১৯৭৪ সালে এমএ পরীক্ষা দেওয়ার আগেই আকাশবাণীর কলকাতা খ’য়ে রত্না ইংরেজি ঘোষকের চাকরি পাওয়ায় তাঁর মা প্রথমে খুশি হননি। কারণ রত্নাদের পরিবারে শিক্ষকরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। অথচ, মেয়ে চাকরিতে ঢোকার পর এই মা-ই জিজ্ঞাসা করতেন, ‘কী রে, বিকের সঙ্গে দেখা হল? কথা বললি?’

শুধু ‘মিউজিকাল ব্যান্ডবক্স’ই নয় ক্যালকাটা বি’তে সপ্তাহজুড়ে থাকত নানা অনুষ্ঠান। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠেছিল ‘লাঞ্চটাইম ভ্যারাইটি’, ‘ইয়াসটার্ডে ওয়ান্স মোর’ আর ‘ক্লাসিক্যাল মিউজিক অ্যাট ইয়োর রিকোয়েস্ট’ এবং ‘কলিং অল চিলড্রেন।’ স্থানীয় শিল্পীদেরও অনুষ্ঠান করার ব্যবস্থা ছিল। এখান থেকেই উড়ান শুরু লুই ব্যাঙ্কস, আর্থার গ্রেশিয়াস, গার্নি নিস, কার্লটন কিটো, আব্রাহাম  মজুমদার, ভায়োলিন ব্রাদার্সের মতো কৃতী সঙ্গীতশিল্পীদের। শ্রোতাদের প্রত্যাশা কানায় কানায় পূর্ণ করতেন ভি বালসারা, ললিতা মায়াদাস, আজিম লুইস, আদি গজদার, দত্ত পরিবার, নোয়েল সেনের মতো কৃতী শিল্পীরা।

রেডিয়োর বুলবুল পাখি

এই বিশাল কর্মকাণ্ডের রূপকার ছিলেন বুলবুল সরকার। এই কেন্দ্রের জনপ্রিয়তার পিছনে তাঁর অবদান কলকাতা ক কেন্দ্রের বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র বা বাণীকুমারের সঙ্গে তুলনা করা যায়। ১৯৫৮ সালে আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রে তিনি যোগ দেন ঘোষক ও সঞ্চালক হিসাবে। ১৯৮৪ সালে ডেপুটি চিফ প্রোডিউসার (ওয়েস্টার্ন মিউজিক) হিসাবে যখন অবসর নেন, তখন ১৭টি কেন্দ্রের পাশ্চাত্য সঙ্গীত বিভাগের দায়িত্ব ছিল তাঁর কাঁধে।

bulbul sarkar
কলকাতা খ-এর বীরেন্দ্রকৃষ্ণ বলাই চলত তাঁকে। তিনি বুলবুল সরকার। ছবি সোজন্য – noisebreak.com

১৯৭৭ সালে ভেনিসে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এআইআর প্রতিনিধি বুলবুল সরকারকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয় ‘রেডিয়োয় আপনার ভূমিকা ঠিক কী?’ তখন তিনি বলেন, ‘হেড কুক অ্যান্ড বটল ওয়াশার’ যা বাংলা তর্জমায় দাঁড়ায় ‘জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ।’ তাঁর একনিষ্ঠ ছাত্রী রত্না সেনের কাছে পাওয়া গেল তার খতিয়ান। ‘অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা, তার উপস্থাপনা, স্ক্রিপ্টের মান পরীক্ষা করা, সহকর্মীদের প্রশিক্ষণ, পাশ্চাত্যসঙ্গীতের রেকর্ড কেনা, প্রতিটি বিষয়েই ছিল তাঁর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। আমাদের রেকর্ড লাইব্রেরির কোনও তুলনাই হয় না। বুলবুলদির উদ্যোগেই কেনা হয় বিখ্যাত ‘গ্রোভ’স ডিকশনারি অফ মিউজিক অ্যান্ড মিউজিশিয়ান্স।’

শুধু কী তাই? নিউ এম্পায়ার সিনেমা থেকে সিম্ফনি কনসার্ট, ময়দানের বার্ষিক জ্যাজ়ফেস্ট, সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল থেকে বিখ্যাত গসপেল সিঙ্গার মাহেলিয়া জ্যাকসনের অনুষ্ঠান রেডিয়োতে সরাসরি সম্প্রচারের মূলেও ছিলেন বুলবুলদি।’ বুলবুল সরকারের আর এক অনন্য কীর্তি ‘মিউজিক আই লিভ বাই’ সাক্ষাৎকার সিরিজ, যেখানে তাঁর অতিথি হয়ে এসেছিলেন সত্যজিৎ রায়, বিষ্ণু দে ও সলিল চৌধুরীর মতো বিশিষ্টজনেরা।

পিয়ানো আর বেহালা

রত্নার মনে পড়ে আরও একজনের কথা। তিনি ‘লিটল দে’। সাদা ধুতি-শার্ট পরা মানুষটি রেডিয়ো স্টেশনে আসতেন নিউ মার্কেট এলাকার মার্কুইস স্ট্রিট থেকে। তাঁর কাজ ছিল প্রতি মাসে এক বার আকাশবাণী কলকাতার আট নম্বর স্টুডিয়োতে রাখা দু’টি পিয়ানোর টিউনিং করা। অগস্ট ফরস্টার পিয়ানোটি বাজানো হত জ্যাজ় মিউজিকের সঙ্গে। আর স্টেইনওয়ে পিয়ানোটি থাকত ওয়েস্টার্ন ক্লাসিকালের জন্য পিয়ানো দু’টির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন ধ্রুপদী পাশ্চাত্যসঙ্গীত বিশেষজ্ঞ এবং ক্যালকাটা স্কুল অফ মিউজিক-এর প্রেসিডেন্ট জ্যোতিষ্ক দাশগুপ্ত। তাঁর মতে ও দু’টি অমূল্য। তিনি স্বীকার করলেন,  পাশ্চাত্যসঙ্গীতের প্রতি তাঁর ভালোবাসার পিছনে অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর বিরাট অবদান রয়েছে।

Piano
বাঁয়ে ‘দ্য অগাস্ট ফরস্টার’ পিয়ানো, ডাইনে ‘স্টেইনওয়ে’ পিয়ানো। এই মডেলের দু’টি পিয়ানোই ব্যবহৃত হত কলকাতা খ বেতারকেন্দ্রে। তবে সেগুলি অনেক পুরনো। এই ছবিদু’টি কেবলমাত্র পিয়োনার ‘মেক’ বোঝানোর জন্য। ছবি সৌজন্য – wikimedia commons

জ্যোতিষ্কর কথায়, ‘আমার বাবা এই ধরনের মিউজিক পছন্দ করতেন। আমাদের বাড়িতে শুধু ওয়েস্টার্ন ক্লাসিকালেরই রেকর্ড ছিল ৪৬টি। কিন্তু যাঁরা গানের কাঙাল তাঁরা তো আরও শুনতে চাইবেনই। সেই অভাবটাই পূরণ করল ক্যালকাটা বি স্টেশন।’ সাতের দশকে শহরে হওয়া দু’টি অনুষ্ঠানের কথা জ্যোতিষ্কর বেশ মনে আছে। ইউরোপিয়ান ইউথ অর্কেস্ট্রার সঙ্গে রবিশঙ্কর এবং বার্লিন রেডিয়ো সিম্ফনি। দুটি দলের অনুষ্ঠানই ক্যালকাটা বি’তে সম্প্রচারিত হয়। জ্যোতিষ্ক আরও বললেন, ‘রেডিয়োর মাধ্যমেই শিখেছি এক এক জন কম্পোজারের সৃষ্টি কে সব থেকে ভালো উপস্থাপন করতে পারে। তাই ফ্রাঞ্জ শ্যুবার্টের সৃষ্টি শুনতে আপনাকে যেতেই হবে অ্যালফ্রেড ব্রেন্ডেলের কাছে। আবার জোহান সেবাস্টিয়ান বাখকে সব থেকে ভালো উপস্থাপন করেছেন ওয়ান্ডা লান্ডাউস্কা।’

জ্যোতিষ্ক কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করলেন দুই সঙ্গীত সমালোচককে যাঁরা পাশ্চাত্যসঙ্গীতকে সাধারণের মধ্যে জনপ্রিয় করতে আজীবন চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। এঁরা হলেন পিয়ারসন সুরিটা এবং জেরাল্ড নিল ক্রেগ। দু’জনেই লিখতেন ‘দ্য স্টেটসম্যান’-এ। পিয়ারসন সুরিটা অবশ্য ধারাভাষ্যকার হিসাবে ক্রীড়াজগতেও যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন।

বেতার-স্মৃতির মণিমালিকা

জেরাল্ড নিল ক্রেগের নাম উঠতেই তাঁকে নিয়ে এক অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন এ যুগের দুই বিশিষ্ট ভায়োলিনবাদক দেবশঙ্কর ও জ্যোতিশঙ্কর রায়। যাঁরা ‘ভায়োলিন ব্রাদার্স’ নামেই বেশি পরিচিত। দেবশঙ্কর বললেন, ‘আমাদের বাজনা বুলবুলদি এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞের পছন্দ হওয়ায় আমরা খুব অল্প বয়সেই ক্যালকাটা বি-তে সরাসরি বাজানোর সুযোগ পাই। এমনই কোনও একটি অনুষ্ঠান জেরাল্ড নিল ক্রেগের খুব ভালো লাগে এবং তিনি কাগজে আমাদের প্রশংসা করেন। তারপর আমাদের সঙ্গে দেখাও করতে চান। সেই সাক্ষাৎ আর কোনওদিনই হয়নি কারণ ওই লেখার মাস তিনেকের মধ্যেই তিনি মারা যান। এই ঘটনায় আমরা এতটাই আঘাত পাই যে তার পরেই ম্যাক্স ম্যুলার ভবনে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই। রেডিয়োর সার্থকতা এখানেই।’

Ratna Sen
বিখ্যাত গিটারবাদক কার্লটন কিটোর সঙ্গে রত্না সেন। ছবি – রত্না সেনের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে

শেষ করব একটি ঐতিহাসিক ঘটনা দিয়ে, যার সঙ্গে জুড়ে আছে রত্না সেনের নাম। তাঁর বয়ানেই শোনা যাক। ‘১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাস। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলছে। আমি তখন অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর ক্যাজুয়াল স্টাফ। দুপুর আড়াইটের ঠিক আগেই আবহাওয়ার খবর পড়ার কথা। ঘরে রয়েছেন পার্থ ও গৌরী ঘোষও। হঠাৎ খুলে গেল স্টুডিয়োর দরজা। গটগটিয়ে ঢুকলেন চারজন আর্মি অফিসার। তাঁদের আগে সাদা চুলের এক ভদ্রলোক।

একটা টাইপ করা কাগজ দিয়ে আমায় বললেন, ‘এটা পড়ুন। আবহাওয়ার খবর পড়তে হবে না।’ কাগজটা দেখে তো আমার হাত-পা কাঁপতে শুরু করেছে। সেখানে লেখা ‘জেনারেল স্যাম মানেকশ’জ় ফাইনাল আল্টিমেটাম টু জেনারেল নিয়াজ়ি অফ পাকিস্তান আর্মড ফোর্সেজ।’ চোখের জল চেপে কী ভাবে পড়েছিলাম জানি না। পড়ার পর গৌরীদি জড়িয়ে ধরলেন। তাঁর চোখেও জল। খানিক পর পার্থদা আলাপ করিয়ে দিলেন সেই সাদা চুলের ভদ্রলোকের সঙ্গে। তিনি আকাশবাণী কলকাতার স্টেশন ডিরেক্টর দিলীপ সেনগুপ্ত। তাঁর নির্দেশে আরও দশদিন প্রচারিত হল সেই আল্টিমেটাম। পুরস্কার হিসাবে পেলাম বরুণদা, দ্য গ্রেট বিকে’র সপ্রশংস স্যালুট।’

দু’দশক ইংরেজি সংবাদপত্রের কর্তার টেবিলে কাটিয়ে কলমচির শখ হল বাংলায় লেখালেখি করার। তাঁকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন কয়েকজন ডাকসাইটে সাংবাদিক। লেখার বাইরে সময় কাটে বই পড়ে, গান শুনে, সিনেমা দেখে। রবীন্দ্রসঙ্গীতটাও নেহাত মন্দ গান না।

9 Responses

  1. Hey! You took me back to the time riddled with memories. All theses, and mote, happened in front of my eyes. What days, what intense moments! Went along B.K. to the American Consulate to interview Mahalaya Jackson. She was partaking lunch on a bunch of yellow bananas. Smiled at us and gracefully held out the branch toward us. ,Her huge personna , both in stature and physique, dissolved inti her childlike smile. And again, when we went to record an interview with Mother Teresa. Oh, but that’s another story. Forgive the foibles of old men. We so dwell in the past

  2. Remembering the good old days. Was with all these legends for almost two years 1978 to 80.Compered Lunch Time Variety, Musical Band Box,Jazz,, Classical Music at your request and my favourite programme Kaleidoscope.
    Bulbuldi, Ratna Sen.Jijadi, Monisha,Sumitadi,Ranjan Mitra, Abhijit Basu, Durjoy Shome.What fun we had.And the record collection. Wow. Outstanding.Learnt a lot about about Jazz, and Classical Music.And the interaction with the bunch of letters which came every week.I shall never forget those days!!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *