আগের পর্বের লিংক: খলিল জিব্রানের দ্য প্রফেট-এর অনুবাদ: [কথামুখ] [প্রেম] [বিবাহ] [সন্ততি] [দান ও দাক্ষিণ্য] [পান-ভোজন] [কাজ-কারবার] [দুঃখ ও সুখ] [ঘর-বসত] [পরিধেয়] [বিকি কিনি] [অপরাধ ও শাস্তি]

আইনসম্মত

এবার এক উকিল বললেন, কিন্তু আমাদের আইন কী প্রভু?
তিনি উত্তরে বললেন:
আইন মোতায়েন করতে পেরেই তুমি তো উল্লসিত,
কিন্তু এই তুমিই অধিক সহর্ষ, সে আইন ভাঙতেই।
যেন ওই শিশুগুলিরই মতো, যারা সমুদ্রতটে, খেলার ছলে কেমন ক্রমাগত চূড়া বানায় এবং নিজেরাই তা আবার ভেঙে ফেলে হাসতে হাসতে।
কিন্তু তোমার এই চূড়া নির্মাণে, আরও আরও বালি তো সাগরই এনে দেয় ওই সমুদ্রতটে, তাই যখন তুমি তা নিজেই গুঁড়িয়ে দাও, সাগরও হাসতে থাকে।
সমুদ্র আসলে নিষ্পাপের সঙ্গে সর্বদা হাসিতেই মেতে থাকে।
কিন্তু, সেই তাদের কী হবে, যাদের জীবনটা সমুদ্রের মতো নয় এবং মানুষের তৈরি ওই আইনও নয় সেই বালির চূড়া মাত্র,
এবং সেই তারা, যাদের জীবন পাষাণময় এক পর্বত, আর আইনই যেখানে একমাত্র সেই ছেনি, যা দিয়ে তারা কুঁদে চলেছে তাদের নিজস্ব ইচ্ছাগুলিও?  
আর সেই খঞ্জ, যে নর্তকদের ঘৃণা করে?
এবং সেই ষাঁড়টি, যে নিজের গলকম্বলকেই ভালবাসে আর ভাবে যে ওই নির্ভার বলগা এবং সুঠাম অরণ্য – হরিণ আদতে কুচ্ছিত?
আর সেই বৃদ্ধ সাপ, যে নিজের খোলস ছাড়বার ক্ষমতা হারিয়ে ,বাকিদের বলে নগ্ন ও নির্লজ্জ?
এবং সেই পেটুক, যে বিয়ের নিমন্ত্রণে এসে বাকি সব নিমন্ত্রিতদের ফেলে, সকলের আগে দম ফাঁস খেয়ে ক্লান্ত হয়ে, সমস্ত ভোজকেই বলে বেআইনি এবংই প্রতিটি নিমন্ত্রিতকেই আদপে তাই নিয়ম-ভঙ্গকারী ভাবে?

আর তাদেরই বা কী বলব, যারা সূর্যের নীচে দাঁড়িয়ে আছে ঠিকই, কিন্তু আলোর দিকেই তাদের পিঠগুলি ফিরিয়ে?
এরা তাই, আলোর বদলে দেখে, শুধু নিজেদেরই ছায়া এবং এই ছায়াই হল তাদের আইন।
তাদের কাছে সূর্যও কি শুধুমাত্র এক ছায়া নিক্ষেপকারী নয়?
আর এই আইন মানাও কি তাই, হেঁট হয়ে বসে, ওই ছায়াগুলির প্রতিচ্ছবিই এ পৃথিবীতে খুঁজে বেড়ানো ছাড়া আর অন্য কোনও কিছু?
এবং যখন তুমি হেঁটে যাও সূর্য অভিমুখে, পৃথিবীর বুকে আঁকা আর কোন ছবিই বা তোমাকে ধরে রাখতে পারে?
আর, বাতাসে ভর দিয়ে যখন হেঁটে বেড়াও, তখনই বা কোন বায়ু-পতাকা তোমার দিক নির্দেশ করে?
তাই মানুষের বানানো কোন আইনই বা বাঁধবে তোমাকে, তুমি যদি শুধু তোমার গলকম্বলটিই ভেঙে, অন্যের জেলখানার দরজাটি না ভাঙো?
কোন আইনকেই বা তোমার ভয়, যদি তোমার নাচে অন্যের লোহার শিকলে ধাক্কা লেগে তোমার পদস্খলন না ঘটায়?
কে তোমাকে বিচারালয়ে নিয়ে যাবে, যদি তোমার পোশাকটি তুমি  নিজেই ছিঁড়ে, কোনও বেওয়ারিশ পথে ফেলে যাও?

ওহে, অরফালেসের মানুষ, ওই ঢোলটি বাজানো বন্ধ করে দিতেই পার, আলগাও করে দিতে পার, ওই সুর-যন্ত্রের তার, কিন্তু কোকিলকে তার গান থামাবার আদেশ কেই বা দিতে পারে?

Mandar Mukhopadhyay

আড্ডা আর একা থাকা,দুটোই খুব ভাল লাগে।
লিখতে লিখতে শেখা আর ভাবতে ভাবতেই খেই হারানো।ভালোবাসি পদ্য গান আর পিছুটান।
ও হ্যাঁ আর মনের মতো সাজ,অবশ্যই খোঁপায় একটা সতেজ ফুল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *