আগের পর্বের লিংক: খলিল জিব্রানের দ্য প্রফেট-এর অনুবাদ: [কথামুখ] [প্রেম] [বিবাহ] [সন্ততি] [দান ও দাক্ষিণ্য] [পান-ভোজন] [কাজ-কারবার] [দুঃখ ও সুখ] [ঘর-বসত] [পরিধেয়] [বিকি কিনি] [অপরাধ ও শাস্তি] [আইনসম্মত]

স্বাধীনতা

এবার এক বাগ্মী বললেন, স্বাধীনতা বিষয়ে আমাদের কিছু বলুন।

তিনি উত্তর দিলেন: 

নগর দরজায় এবং তোমার গৃহস্থালিতেও তো তোমাকে দেখলাম, যে সাষ্টাঙ্গে প্রণিপাত হয়ে  নিজের স্বাধীনতাকেই তুমি পুজো করে চলেছ। 

ঠিক একজন দাস যেমন বিনয়াবনত হয়, স্বেচ্ছাচারী প্রভুর সামনে এবং চাবুকের আঘাতে জর্জরিত হয়েও যেমন প্রভুর প্রশংসা করেই চলে।

সবসময় তো এটাই দেখেছি যে, তোমাদের মধ্যে চূড়ান্ত স্বাধীন ব্যক্তিটিও স্বর্গের ছায়ায় বসেও তার ওই স্বাধীনতাকেই গলকম্বল এবং হাতকড়ার মতোই ধারণ করে আছে। 

এ দেখে আমার হৃদয় রক্তাক্তই হয়েছে; কারণ, তখনই তো যথার্থ স্বাধীন হবে, যখন স্বাধীন হবার এই ইচ্ছের গ্লানি থেকেও মুক্ত হবে তুমি, এমনকি বিরত হবে একথা বলা থেকেও, যে স্বাধীনতাই তোমার একমাত্র লক্ষ্য এবং পরিতৃপ্তি। 

তখনই তুমি যথার্থ স্বাধীন, যখন তোমার দিনগুলি না অযত্নে লালিত, বা না তোমার রাতগুলি চাহিদা ও আক্ষেপ-বিহীন।

উপরন্তু, এসব তোমার জীবনকে কোমর-বন্ধনীর মতো বেঁধে রাখলেও, যখন তুমি সব কিছুর ঊর্ধ্বে নগ্ন এবং মুক্ত।

কিন্তু কীভাবেই বা তোমার এই দিন এবং রাতের ঊর্ধ্বে উঠবে তুমি, যদি না ছিঁড়ে ফেল তোমার সেই শিকলটি, যা দিয়ে তুমি তোমার অভিজ্ঞতার ভোরেই, মধ্যাহ্নকেও পাকে পাকে জড়িয়েছ? 

আদতে যাকে তুমি স্বাধীনতা বলে ভাব, আসলে তা এই শৃঙ্খলেরই সেই দুর্বার শক্তি,  সূর্যের আলোয় যা ঝকঝক করে এবং ধাঁধা লাগায় তোমার দু’চোখে। 

আর তোমার সত্তার ওই খণ্ডাংশগুলিই বা কী, যা বাতিল করতে পারলেই তুমি মুক্ত?

এবং সত্যিই তা যদি বাতিলযোগ্য এক অনুচিত আইনও হয়, তো একথাই জানবে যে, সে আইন তোমার কপালে, তোমার নিজের হাতেই লেখা।   

ফলে, হাজারও আইন বই পুড়িয়ে, বা এক সমুদ্র জল তোমার বিচারকের কপালে ঢেলেও তা কিন্তু তুমি মুছে দিতে পারবে না।

কোনও স্বৈরাচারীকে যদি সিংহাসনচ্যুতও কর, তো আগে দেখ যে, তোমারই গভীরে মাথাচাড়া দেওয়া তার সেই সিংহাসনটিও ধ্বংস হয়েছে কিনা। 

একজন স্বাধীন এবং গর্বিতকে কীভাবেই বা শাসন করবে সেই স্বৈরাচারী, যখন তারা নিজেরাই স্বাধীনতাপ্রমত্ত এবং যারা নিজেরাই তাদেরই আত্মগৌরবের লজ্জাও বটে? 

আর তা যদি হয় সতর্কতা, যা থেকে মুক্তি চাও তুমি, তো জানবে যে, সে সতর্ক স্বভাবও তোমার নিজস্বলালিত এবং তা কোনও ওপর থেকে চাপানো কিছু নয়।  

ভয় থেকে যদি পরিত্রাণ চাও তো জানবে যে, সে ভয়ের আসন তোমার বুকেই এবং যে ভয় দেখায়, সে কোনও ভয়ের কারণই নয়। 

সত্য এই যে, প্রার্থিত বা ভীতিজনক, আপত্তিকর বা আদরণীয়, আক্রমক বা পলায়নরত– এর সবকিছুই তোমার সত্তায় ঘোরাফেরা করে এক আংশিক আলিঙ্গনে।  

যেভাবে জুটি বেঁধে বেঁধে তোমার মধ্যে ছায়া আর আলোর চলাচল, এগুলিও সেভাবেই সহাবস্থানে সেঁটে আছে।

তাই সেই ছায়া যখন মুছে যেতে থাকে, সে আলোও তো থাকে না এবং যেটুকু যা থাকে তা আসলে অন্য এক আলোর, ভিন্ন কোনও ছায়া।

তোমার স্বাধীনতাও ঠিক এরকমই, যখন তা শৃঙ্খল-মুক্ত, তখন আবার তা আরও বৃহৎ কোনও স্বাধীনতার আর এক শৃঙ্খলই হয়ে ওঠে।

Mandar Mukhopadhyay

আড্ডা আর একা থাকা,দুটোই খুব ভাল লাগে।
লিখতে লিখতে শেখা আর ভাবতে ভাবতেই খেই হারানো।ভালোবাসি পদ্য গান আর পিছুটান।
ও হ্যাঁ আর মনের মতো সাজ,অবশ্যই খোঁপায় একটা সতেজ ফুল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *