“অটো-ইমিউনিটি”র কোনও বাংলা প্রতিশব্দ আছে কিনা আমার জানা নেই। এমনকি গুগল ঠাকুরও ক্ষমা চাইলেন। মোটামুটি জোড়াতালি দিয়ে একখানা প্রতিশব্দ দাঁড় করানো যায়, – “স্বানক্রম্যতা”। তবে এই বাজারে জিভ, দম আর গলার উপর এত অত্যাচার নিরাপদ নয়।
বাংলা যাই হোক, এই ধারণাটা কিন্তু খুব একটা নতুন নয়। সাধারণতঃ, যে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বহু মানুষ মারা গেলেই এই আলোচনাটা ঘুরে ফিরে আসে। সহজ করে কিংবা বলা ভালো কাব্যি করে ব্যাপারটাকে বলা হয়, প্রকৃতির প্রতিশোধ। রবিবাবুর যে এই নামেই গীতিনাট্য রয়েছে সে কথা কে না জানে। সোজা কথায়, প্রকৃতি দিচ্ছেন মানুষের প্রতি সতর্কবার্তা – বাপু হে, এতদিন ধরে জন্মদাত্রী এই গ্রহের উপর প্লাস্টিক বাড়িয়ে, পারমাণবিক বর্জ্য ফেলে, বনজঙ্গল সাফ করে যে ধর্ষণ করেছ, “সবকা বদলা লেগা মেরা সুনামি/ক্যাটরিনা/ আয়লা/করোনা/(পড়ুন দুর্যোগ)।” অর্থাৎ, পৃথিবীর কোনও প্রজাতি যদি তার প্রাকৃতিক ভারসাম্যকে ক্রমাগত বিপর্যস্ত করতে থাকে, তাহলে পৃথিবী নিজেই তার জন্য প্রতিশোধ নেবে। একথা মানতেই হবে যে, তা যদি সত্যিই হয়, তাহলে এবারের প্রতিশোধ যতখানি কার্যকর হয়েছে, তা বহুকাল হয়নি। সারা গ্রহে দূষণ হুহু করে কমছে। মুম্বইয়ের সমুদ্রতটে দেখা গিয়েছে ডলফিন! ভেনিশিয়ান লেগুনে ফিরে আসছে রাজহাঁস। নিউ ইয়র্কে বাতাসে কার্বন মনোক্সাইড কমে গিয়েছে ৫০%! প্রকৃতিবিজ্ঞানীদের উল্লসিত দাবি, এ ভাবে আরও মাস দু’ত্তিন সমগ্র মানবজাতি গৃহবন্দি থাকলে এই গ্রহ দূষণের দিক থেকে পাঁচশো বছর আগের জায়গায় ফিরে যেতে পারবে!
খবরটা একই সঙ্গে আশাপ্রদ এবং ভয়ঙ্কর, সন্দেহ নেই। কিন্তু তার বাইরেও দু’একটা কথা আছে।
প্রথমতঃ, প্রকৃতি প্রতিশোধ নিচ্ছে বললে, নিজেদের প্রতি বাড়াবাড়ি রকম গুরুত্ব দেওয়া হয়। একটা অন্তত সাড়ে চারশো কোটি বছরের গ্রহের বয়ে গেছে সামান্য ‘মানুষ’ নামক জীবের প্রতি এত গুরুত্ব দিতে। তার মোটেই এত সময় নেই যে কুল্যে দশ লক্ষ বছর বয়সের কীটানুকীটের প্রতি এত আক্রোশ পোষণ করবে, সে যতই ক্ষতি করুক না কেন। হয়তো, অস্বস্তিটা একটা পর্যায়ে গেলে তাকে নির্বংশ করে ফেলবে নেহাত অভ্যাসবশেই, তার বেশি কিছু না।
ব্যাপারটা কী রকম বলুন তো? ধরুন, আপনার মাথায় উকুন আছে। তারা খায় দায় বাঁশি বাজায়। মাঝে মাঝে অল্পস্বল্প উপদ্রব করে। আপনি মাথা চুলকোন, শ্যাম্পু দেন, দু’পাশে দাঁড়াওলা চিরুনি চালিয়ে দু’চারটে বের করে টিপে মারেন। ওরা মরে, কিন্তু বিশেষ চৈতন্য হয় না। এবার বংশবৃদ্ধি করতে করতে এদের উপদ্রব এমন জায়গায় গেল, যে আপনি বিরক্ত হয়ে একদিন পাড়ার নাপিতকে বললেন মাথাটা কামিয়ে জঞ্জাল সাফাই করে দিতে। ফলে উকুনেরা সমূলে উৎখাত হল। মাসখানেক বাদে আপনি যখন ফের টেরি বাগাবেন, উকুনেরা তদ্দিনে ইতিহাস।
এখন, কথা হচ্ছে, আপনার কি উকুনগুলোর প্রতি কোনও আক্রোশ ছিল? বা তাদের নীতিবোধ জাগিয়ে তোলার ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ ছিল? বা আপনি কি তাদের কোনও চেতাবনি দিয়েছিলেন যে খুলির রক্ত খাওয়া বন্ধ না করলে নিকেশ করবেন? তাহলে পৃথিবীই বা দেবে কেন?
এখন, আমার মতো এঁড়ে তর্ক করা যাদের স্বভাব, তারা সহজেই এখানে খুঁচিয়ে আরও বড় একটা প্রশ্ন বার করতে পারেন। পৃথিবী, বা সেটা যার অংশ, সেই ব্রহ্মাণ্ডের যদি এরকম একটা কেন্দ্রীভূত চেতনা থাকে, যে তা বিভিন্ন স্তরে ভারসাম্য রক্ষার জন্য নিজস্ব ব্যবস্থা নিতে পারে, তাহলে কি সর্বশক্তিমান ব্রহ্ম, ঈশ্বর, কর্মফল ইত্যাদির কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে?
ব্যপারটা সিলেবাসের বাইরে চলে যাচ্ছে মানছি। কিন্তু এমনিতেও যখন বাড়িতেই রাজা উজির মারছি, তখন এরও উত্তর খোঁজা যাক।
প্রথমতঃ, এই ভারসাম্য রক্ষার প্রবণতা বোঝার জন্য এরকম চরম উদাহরণের দরকার নেই। সেটা প্রকৃতির বিভিন্ন জায়গায় স্পষ্ট। স্থলবায়ু-সমুদ্রবায়ু, জলের সমোচ্চশীলতা, পদার্থের স্বাভাবিক সমসত্ত্ব অবস্থা, ইত্যাদি প্রায় সমস্ত প্রাকৃতিক ঘটনা যা আমরা ছোটবেলা থেকে ফিজিক্স বইতে পড়ে এসেছি, এরই ইঙ্গিতবাহী।
দ্বিতীয়তঃ, শুধু ভারসাম্য রক্ষাই নয়, মহাবিশ্বে এমন বহু ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে, যা একটা কেন্দ্রীয় চেতনা বা চালিকাশক্তির দিকে নির্দেশ করে।
কথা সেটা নয়। কথা হচ্ছে, এই চালিকাশক্তি যদি থাকেও, তার সাথে আমাদের বোঝাপড়াটা ঠিক কী? সেটা কি মাথা আর উকুনের মতোই কেজো? না সেখানে আমাদের আরও কিছু অতিরিক্ত আমদানির সুযোগ আছে?
এখন, আমরা প্রাণের সৃষ্টি জিনিসটাকে যতই গুরুত্ব দিই না কেন, বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের নিরিখে সেটা যে নেহাতই তুচ্ছ ঘটনা, তার সবথেকে বড় প্রমাণ, সেটা ব্রহ্মাণ্ডের এক অজ্ঞাত কোণে একটা অখ্যাত গ্রহে সীমাবদ্ধ। অবশ্য, আমরা ব্রহ্মাণ্ডের কতটুকুই বা দেখেছি? তাই অন্য বহু গ্রহেও প্রাণ থাকতেই পারে। কিন্তু তা হলেও এই বিচ্ছিন্ন ঘটনা সম্বন্ধে ব্রহ্মাণ্ড বিশেষ সচেতন বা সজাগ, তা মনে হয় না। অতএব যে বোঝাপড়ার কথা হচ্ছিল, সেটা যে একমুখী, তাতে সন্দেহ কম।
আবার অন্যদিকে, যে কোনও প্রক্রিয়া চালনার জন্য যে শক্তি লাগে, তার সূচনা বা উদ্ভবের সময়ে শক্তি লাগে তার থেকে অনেক, অনেক বেশি। এর উদাহরণ, ওপেন হার্ট সার্জারিতে দেখা যায়, বরফ দিয়ে হৃদস্পন্দন থামানো যায়, কিন্তু চালু করতে গেলে হাই ভোল্টেজ বিদ্যুৎ লাগে। তাই আমাদের প্রাণরক্ষার জন্য যে পরিমাণ শক্তি লাগে, তার সৃষ্টির সময়ে নিশ্চয়ই তার থেকে অনেক বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়েছিল! শুধু তাই নয়, সেই শক্তির উৎসও যখন এই প্রকৃতির মধ্যেই নিহিত, তখন কোনও ভাবে সেই শক্তির কিছুটা টানা গেলে খানিক অতিমানবিক সুবিধা পাওয়া যায় বৈকি! একটা সীমা পর্যন্ত সেই শক্তির উচ্ছিষ্ট সংগ্রহ করলে পৃথিবীর কিছু যায় আসে না। কিন্তু সেটাই যদি পৃথিবীর বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে সে অল্প করে গা-ঝাড়া দেয়। তাতেই পাঁচ হাজার বছরের সযত্নলালিত সভ্যতার গণেশ উল্টোনোর দশা।
যাই হোক, এসব কথা এখন অবান্তর। সারমর্ম হলো, চারটি রকেট উড়ল কি পুড়ল, শ’খানেক অস্কারবিজেতা কি নোবেল লরিয়েট পড়ল না মরল, এবং সর্বোপরি মানবজাতি রইল না গেল, তাতে পৃথিবীর কাঁচকলা। সে হু’এর মত সতর্কবাণী শোনাবে না, আনমনে হাল্কাচালে নরমেধ করবে। এই করোনায় মানুষের চৈতন্য হলে ভালো, না হলে নিজের ভরণপোষণের জন্য আরও ভূমিকম্প, বজ্রপাত, মহামারী আছে ব্রহ্মাণ্ডের আস্তিনে…
…আর তার মর্টালিটি রেট তিন পার্সেন্ট নয়।
পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। তিতিবিরক্ত হতে হতেও আইটি শিল্পতালুকে মজদুরি করতে বাধ্য হন। কিন্তু সবচেয়ে পছন্দের কাজ হাতে মোবাইলটি নিয়ে আলসেমি করে শুয়ে থাকা। চেহারাছবি নিরীহ হলেও হেব্বি ভালোবাসেন অ্যাকশন ফিলিম, সুপারহিরো আর সাই ফাই। সঙ্গে চাই সুরেশের রাবড়ি, চিত্তরঞ্জনের রসগোল্লা-পান্তুয়া, কেষ্টনগরের সরভাজা ইত্যাদি নানাবিধ মিষ্টান্ন।
দুটো জিনিস বেশ ইন্টারেস্টিং লাগলো,প্রকৃতির প্রতিশোধ আর কেন্দ্রিয় চালিকাশক্তি।
তবে রচনাটি হঠাৎ থেমে গেল।
সত্যই কি মানব জাতির একটা বিরাট অংশ এই ব্যাপারটা নিয়ে অন্তর থেকে কোনও প্রচেষ্টা করে?
মনুষ্য নামক প্রজাতির lokkho lokkho প্রতিনিধি প্রতিদিন দেশ বিদেশের অলী গলি তে নিত্য দিন তাদের নিত্য কর্ম সম্পাদন করার সময়ে আদৌ প্রকৃতি বা ধরিত্রী র কথা আদৌ মনে রাখে?
নামী mnc company র ম্যানেজার যখন তার অফিস এর বসের মন জয় করার jonnyo নানারকম kutniti r আশ্রয় নিয়ে থাকে… কিংবা ভিন্ন ভিন্ন দেশের রাষ্ট্র নেতা রা jokhon নিজের বা নিজের দেশের শক্তি কিভাবে পড়শী দেশের থেকে বেশি হবে তার লক্ষ্যে নিজেদের সমস্ত একাগ্রতা নিবেশিত করে tokhon সেই বিরাট bramhanda শক্তি তাতে কিছু মনে করলেই বা ki?
ব্যাপারটা অনেকটা এরকম
নদীর স্রোত বইএই চলতে থাকে… নৌকা bailo কি bailo না তাতে তার কাঁচকলা…
Bedda আরও শুনতে ইচ্ছে করছে —- অনেকদিন পর কলম ধরলে ??
Ajker dine khub e prasongik lekha. Goto bochorer fani jhorer somoy ei rokom e ekti kotha alochona kore chilam ek seniorer sathe. ‘Global warming’ kokhonoi ek mukhi hote pare na. Manush jodi eke reverse direction e chalito na kore tahole prokriti nijei chalie nebe…
দারুন লেগেছে। গুটিকয়েক আরো হোক!