শেষে কিনা সুশান্ত! কপাল কপাল! শ্রেয়ার হাসিও পায়, রাগও হয়। সেই কলেজ লাইফ থেকে ছেলেটাকে দেখলেই মনে হয় যেন শালিখছানা। রোগা ডিগডিগে, কাঁধের হাড়গুলো উঁচু হয়ে আছে। যাচ্ছেতাই রকমের। অদ্ভুত একটা কান্নামেশানো অভিমান উঠে আসছে শ্রেয়ার বুক ঠেলে। মাত্র একবছরে এত বদলে গেল সবকিছু! একইরকম পরিস্থিতিতে ওর মতো প্রজ্ঞাও পড়েছিল, বিনীত পড়েছিল, শুভ্র পড়েছিল। প্রজ্ঞার বাবার টাকার জোরে বিদেশে বিয়ে হয়ে গেল। ফেসবুকে ঢাউস সানগ্লাস চোখে সমুদ্রের ধারে দাঁড়ানো ছবি দেয়। বুকটা টনটন করে শ্রেয়ার। বিনীত আর শুভ্র তো কোনও যোগাযোগই রাখে না।

আর শ্রেয়া? স্বপ্ন ইচ্ছে সব পুঁটুলি বেঁধে তাতে ন্যাপথলিন দিয়ে শেষে ওই সুশান্তকেই বিয়ে করতে হবে!
— ছেলেটা বিপদের সময়ে আগাগোড়া পাশে ছিল…
ফাটা রেকর্ডের মতো একটানা বলে যায় মা-বাবা। হ্যাঁ, তার জন্য শ্রেয়া কৃতজ্ঞ। কিন্তু কৃতজ্ঞতা আর ভালোবাসা কি এক! আবার তাকে বিয়ে করা! ডিসগাস্টিং! শ্রেয়ার এমন চিন্তা কি অপরাধ! উফফ, ডাক ছেড়ে কান্না পাচ্ছে।
— সুশান্ত প্রাইমারি স্কুলে চাকরি পেয়ে গেছে শুনেছ!
শ্রেয়ার বাবা না রিটায়ার্ড সরকারি অফিসার! আহ্লাদে গদগদ হয়ে বলার ধরনটা গা জ্বালিয়ে দিয়েছিল। এবার সূচে ফোঁড় তুলে ভালো করে শ্রেয়ার সঙ্গে পাকাপাকি সেলাই করা যাবে।
— তোর ভাগ্য ভালো। না হলে খবরের কাগজে নাম-সহ খবরে আসা মেয়ে, কে বিয়ে করবে হ্যাঁ?
মায়ের দুখকাঁদুনি শুরু হয়ে যাবে আপত্তি করলেই। উফফ কলেজের দিনগুলোকে ফিরিয়ে সবকিছু আবার শুরু করলে এই দিনটা দেখতে হত না। সক্কলের সঙ্গে কথা বলতে এখন বিশ্রী লাগে শ্রেয়ার। সবার জীবন ঠিকঠাক। শুধু শ্রেয়ার পরীক্ষার খাতায় কালির দোয়াত উল্টে গেল। একটা বিশ্রি জিভে লেগে থাকা নিমতেতো।

কলেজের দিনগুলোয় সুশান্তকে দেখলে গা রিরি করত। ওর জন্যই খোরাক হতে হত বন্ধুদের কাছে। অদ্ভুত মেয়েলি গড়ন, কীরকম যেন মেয়েদের মতো হাত-পা নাড়া। অথচ সবসময় শ্রেয়ার সঙ্গে সেঁটে থাকত। মেয়েলি ছেলেগুলো নাকি ‘গে’ হয়, ভুল জানে শ্রেয়া। নাকি ঠিকই জানে? সুশান্তর আনস্মার্টপনা তুলনারহিত। শ্রেয়ার গা-ঘেঁষে থাকাটা কি প্রেম? না কারও সঙ্গে মিশতে না পারার অক্ষমতা? কী মরতে যে একবার ওকে বেসিনে বমি করতে দেখে জলের বোতল এগিয়ে দিয়েছিল! সেই থেকে এঁটুলি। সেই মানুষটাই এখন জীবনের সঙ্গে জুড়তে বসেছে।

Couple
কলেজের দিনগুলোয় সুশান্তকে দেখলে গা রিরি করত

শ্রেয়াদের বাড়িটা বাসরাস্তার ওপরে। উত্তর কলকাতার পুরনো বাড়ি। বাড়ির শেষ দেওয়ালের সঙ্গে পাশের বাড়ি জোড়া। একটার ভিত কাঁপলে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে সবটা। ট্রাম যাচ্ছে। কাঁপছে পুরো গলি। ভেঙে পড়ুক, বেঁচে যায় শ্রেয়া। জানলার গ্রিলে কবেকার দেওয়ালিতে লাগানো মোমবাতির অবশেষ। খুঁটে খুঁটে তুলতে তুলতে শ্রেয়ার মনে হল, এখনও দু’বছর আগের দোলের রঙ লেগে আছে হাতে। সেই যে বিতানদের ফ্ল্যাটে ওরা দোল খেলতে গেছিল। একগাদা আবির গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল ওদের নতুন গৃহপ্রবেশ না-হওয়া ফ্ল্যাটের সাদা মার্বেল মেঝেতে… তারপর, তার ঘড়ি ধরে দুঘণ্টা পর সব রঙগুলো ঘেঁটে মিশে লেপ্টে একটা যাচ্ছেতাই কালশিটে হয়ে গেল।
–মিমি, তোর ফোন…
মায়ের গলার স্বরেই শ্রেয়া বুঝল কার ফোন। শ্রেয়া ফোন ধরবে, কী কথা হবে, মা দরজায় দাঁড়িয়ে শুনবে। অন্তত ওই বলদমার্কা ছেলেটার ঘাড়ে না চাপানো পর্যন্ত শ্রেয়ার প্রত্যেকটা কাজ-কথা খুঁটিয়ে দেখবে মা-বাবা। পাত্র সুশান্ত না বিগড়ে যায়! হাসিও পায় ঘেন্নাও ধরে।
— হ্যালো
— কী করছিস?
ওপাশ থেকে মিনমিনে গলা।
— ওই একটু বসে আছি।
আড় চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে মুখে প্লাস্টিক হাসি টেনে নিয়ে এল শ্রেয়া।

দুই

 

— ওরে বিতান তুই সাইডে বস। শ্রেয়ার পাশে সিট ফাঁকা পেলেই ওর পোষা হনুমানটা বসে পড়বে।
গ্যালারিতে ছেঁড়া কাগজের টুকরোর মতো হাসিগুলো ভেসে বেড়াতে লাগল। শ্রেয়াকেও হাসতে হল। মনে মনে চিড়বিড়ে জ্বলন সত্ত্বেও। ছেলেটা নিজেও খোরাক হচ্ছে, শ্রেয়াকেও করছে। রোজ ছুটির পর বলবে,
— শ্রেয়া হাঁটবি হাতিবাগান পর্যন্ত?
শ্রেয়া পাত্তা না দিয়ে হনহন করে হেঁটে বেরিয়ে যেত। সেদিনও বলেছিল। দোল ছিল। ক্যাম্পাসে রঙের বন্যা। সুশান্তর কলারে অল্প আবির লেগে।
— নাহ। তুই যা।
কলেজের মস্ত গেটটা গড়গড় করে বন্ধ হচ্ছিল। শ্রেয়াও একটা দরজা মুখের ওপর বন্ধ করে বলেছিল ‘না’। বিশাল বড় ‘না!’ এত বড়ো, যে সেটা টপকে আসার সাহস সুশান্তর মত ম্যাদামারা ছেলের সাতজন্মে হবার কথা নয়।
— আচ্ছা বেশ
মুখ নামিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দূরে আবছা হয়ে গিয়েছিল ও। তারপর আস্তে আস্তে স্বচ্ছ হল। আর এখন অদ্ভুতভাবে মিষ্টি খাচ্ছে সামনে বসে। যেন জীবনে খেতে পায় না।
— পরীক্ষাটা এ বছর ও দিক। একটা বছর নষ্ট হল।
ভয়ে ভয়ে বলল সুশান্ত। আহা কী বুদ্ধি করে কথা! গতবছর ‘বাড়ি থেকে বেরবে না’ বলে বাবা এমন নাটক শুরু করল, ফাইনাল ইয়ারটা নষ্ট হয়ে গেল। উইদাউট প্রিপারেশন হয় নাকি! শ্রেয়া নিজেও মানসিক ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি। টানা কাউন্সেলিং সেশন চলেছে ওই সময়ে। তবে, পরীক্ষা দিলে মাস্টার্সে অনেক ভালো রেজাল্ট করত শ্রেয়া। সুশান্তর মতো মিডিওকার ও নয়। প্রাইমারি স্কুলে চাকরি পেয়েই মোক্ষলাভ হয়ে গেছে। শ্রেয়া পড়াশোনা শুরু করে করবে কী! ইউভার্সিটি যাবে, ক্লাসে সবাই গুনগুন করবে, ‘এই যে সেই মেয়েটা। ওই যে রাত্রি বেলা মদ ফদ খেয়ে ফিরছিল বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে। কয়েকটা ছেলে ঘিরে ধরে রঙ মাখিয়ে দিয়েছিল। অত রাতে ফাঁকা রাস্তায় কী করছিল ওরা!’ অথচ বিতান, শুভ্র এরা ওর বয়ফ্রেন্ড বলতে যা বোঝায় তা মোটেই নয়। ফ্রেন্ড, আর লিঙ্গগতভাবে ‘বয়’ এটুকুই। মিডিয়া ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে অমন বলেছিল।

সুশান্ত ওর দিকেই তাকিয়ে। সেই বোকাটে মুখ। বাবা মায়ের মুখের দিকে তাকানোর দরকার নেই। ফোকটে পেয়ে যাওয়া মুশকিল আসানকে জল মিষ্টি খাওয়াতে ব্যস্ত। মিডিয়ার কৌতূহল, পাড়া প্রতিবেশীর কৌতূহল নিবৃত্ত করার সময়টা মনে করছে হয়ত। তখন সুশান্ত রোজ ফোন করত। শ্রেয়া কথা বলত না, তাও। শ্রেয়া তখন পাথর পাথর। ‘মর, মরিস না কেন!’ বলার পরেও ওকে স্বাভাবিক করার জন্যই সুশান্তকে আসতে বলত মা-বাবা। ও আসত, বাইরে বসে থেকে চলে যেত। শ্রেয়ার বাপ মায়ের মনে হল ‘আহা, এই হল দরদি ছেলে।’ আর কেউ খোঁজ অবধি নেয়নি, এমনকি ছোটবেলার বন্ধুরাও না।

The lonely woman
শ্রেয়ার নিজের কাছে নিজের দাম তো একটুও কমেনি! মাঝের ঘটনাগুলো ইরেজার দিয়ে মুছে দেওয়া যায় না?

প্রাইমারি স্কুলে চাকরি পেল, শিকে ছিঁড়ে গেল অমনি। ইস! শ্রেয়ার নিজের কাছে নিজের দাম তো একটুও কমেনি! মাঝের ঘটনাগুলো ইরেজার দিয়ে মুছে দিলে সরলরেখার মতো সবটা হত। কেন যে হল না!
— তোমার গার্জেন বলতে তাহলে শুধু পিসি? বেশ তাঁর ফোন নম্বর দাও। একবার আনুষ্ঠানিক কথা বলে নিই।
— আচ্ছা কাকু।
পুরো গ্লাসটা এক চুমুকে শেষ করে টেবিলে রাখল সুশান্ত। এলোমেলো কথা হচ্ছে টুকটাক। কী একটা কথায় মাড়ি বের করে হাসছে। সারা পৃথিবীটা, ওই যে বিনীত, প্রজ্ঞা যারা এখন যোগাযোগ অবধি রাখে না, ওই অ্যান্টিসোশ্যালগুলো, যারা অন্ধকারে হাত বাড়িয়ে গালে কাদা লেপে দিয়েছিল দোলের রাতে, বসন্তের হাওয়ায় সাপের নিঃশ্বাস হয়ে ঘুরছে এখনও। একটা মস্ত বিস্ফোরণে সবটা ফাটিয়ে নষ্ট করে দিতে পারলে হত! মুখ ভ্যাঙাতে ইচ্ছে করছে বিশ্রীভাবে, কাকে কে জানে! সামনে বসে থাকা সুশান্ত, দেখেই কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে, ওর সঙ্গে শুতে হবে! কোনওরকম আউটনলেজ নেই, এতটুকু বাড়তি ভাব-ভাবনা নেই। জোড়াতালি দেওয়া পড়াশোনা, চাকরি!

খ্যাল খ্যাল করে হাসছে সামনের লোকগুলো। বোতামখোলা ত্রিভুজ বুকের লোমশ জমিতে রুপোলি রাধাকৃষ্ণ। ‘এই! মাখা রঙ’ নর্দমা থেকে তুলে আনা টাটকা পাঁক। কী দুর্গন্ধ! ‘এত রাতে মেয়েছেলে নিয়ে ফুর্তি চাঁদু!’ শ্রেয়া বাধা দিতে পারছে না। শক্ত দুটো হাত ওর হাত চেপে ধরছে। গালে মুখে নাকে লেপে যাচ্ছে দুর্গন্ধ!

ফ্যানের ঠিক তলায় সুশান্ত। চামচে তুলে নেওয়া মিষ্টির টুকরোতে কোনও গন্ধ পাচ্ছে না! পাঁকের গন্ধ! পুরো ঘরটায় তো ছড়াচ্ছে। হ্যাঁ শ্রেয়া পাচ্ছে তো।

তিন

 

–পারলি না তো, পারবিও না।
ফোঁস ফোঁস করে বলল শ্রেয়া। বিছানার এক কোণে কুঁকড়ে শুয়ে সুশান্ত। চোখে ফেল করে মার খাওয়া ছাত্রের চাহনি।
— আসবি একবার ফ্ল্যাটটা দেখতে?
হেডস্যারের কাছে টানা কদিন ছুটির দরখাস্ত করতে বড্ড ভয় পায় সুশান্ত। তবু সাহসে ভর করে বলেছিল। ফ্ল্যাটটা কেনা নয়। ভাড়া। তবে পরে কিনবে ঠিক নিজস্ব একটা আস্তানা। সুশান্ত দেখতে পায় শ্রেয়া মনের মতো করে সেটা সাজাচ্ছে। ফুলদানিতে ফুল রাখছে কাঁচি দিয়ে মাপ করে ডাল কেটে। পর্দায় রিং পরাচ্ছে। সুশান্ত সেই ফ্রেমে নেই। তাই শ্রেয়ার চোখের চারদিকে তাচ্ছিল্যের কুঞ্চন নেই সাময়িক।

শ্রেয়া আসত না। সুশান্তকে ‘না’ বলে চুপসে দিতে শ্রেয়ার মন্দ লাগে না। কিন্তু একটা ‘না’ যদি বিগড়ে দেয় সব! মায়ের ঠেলায় আসতে হল। সুশান্ত আশা করেনি। অদ্ভুত একটা আনন্দ হচ্ছিল, কিন্তু সেটা প্রকাশের পথ জানা নেই। ফাঁকা ফ্ল্যাটে শ্রেয়াকে রেখে ছুটতে ছুটতে ছাদে গিয়ে খানিক জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেবার পর শান্ত হয়েছিল মন। এই একজনকেই বন্ধু ভাবা। ঠিক বন্ধুও নয়। সঙ্গটা অদ্ভুত ভালো লাগত। আজও ফ্ল্যাটে আসার পর একটা সুন্দর গন্ধ ছড়িয়ে গেল। কী মেখে এসেছে কে জানে! 
–কফি করি?
— হ্যাঁ।
সুশান্ত ওপেন কিচেনে কফি বানাচ্ছিল। হঠাৎ চোখ পড়ল, শ্রেয়া এদিকে তাকিয়ে। অদ্ভুত জরিপ করা চোখ। একে বিয়ে করতে হবে কদিন বাদে। ভাবলেই গলা শুকিয়ে যায়। সেই তাচ্ছিল্য, কলেজে ওর জন্মদিনে পাশে বসে থাকা সুশান্তকে এক্কেবারে ভুলে গিয়ে বাকি সবাইকে চকলেট দেওয়া, গোলাপি সালোয়ারের ওড়না উড়িয়ে গ্যালারি বেয়ে ঝরনার মতো নেমে আসা। সুশান্ত কি শ্রেয়ার জন্য আদৌ ঠিক ম্যাচ! মাদার ডেয়ারির তুলতুলে মাখনের পাশে ফ্রিজে পড়ে থেকে শুকিয়ে যাওয়া কলা।

 

পড়ুন: বাংলালাইভের বিশেষ ক্রোড়পত্র: সুরের সুরধুনী

 

শ্রেয়া উঠে এসেছে সোফা থেকে। গ্যাস নিভিয়ে দিল একটা মোচড়ে।
— ক-কি হল?
অদ্ভুত জ্বলজ্বলে চোখ। ব্যালের মতো নৃত্যভঙ্গিমায় সুশান্তর হাত ধরে টেনে বলল,
— এই ঘরে আয়।
অনভ্যস্ত হাতে শ্রেয়াকে উন্মুক্ত করছে সুশান্ত, আদেশ মেনে। ব্রায়ের হুক শক্ত হয়ে আটকে। খুলছে না।
— কী হল, এতেই ভড়কে গেলি?
ঠোঁট বেঁকে আছে মেয়েটার।
‘ঝিমন্ত মুরগি’, স্কুলের বন্ধুরা বলত সুশান্তকে। ঠিকই বলত। শ্রেয়াকে দেখতে ভালো লাগে, পাশে বসতে, একটু ওড়না ছুঁয়ে গেলে! কিন্তু এভাবে! এই প্রথম! শ্রেয়া মাধ্যমিকের অঙ্ক পরীক্ষার কড়া গার্ডের চোখে মেপে দেখছে সুশান্তর পারফরম্যান্স। ভুল হচ্ছে, যথেষ্ট স্মার্টলি হচ্ছে না কিছু। সুশান্ত ভয়ে কেঁপে গেল। ততক্ষণে শ্রেয়ার হাত শিয়রচাঁদা সাপের মতো বাইছে শরীর বেয়ে। একবার থামল ঠিক কণ্ঠার কাছে। দেখছে নিবিষ্ট। যেমন করে ডিসেকশনের আগে খুঁটিয়ে দেখা হয় অবজেক্ট। তাতে ভালোবাসার লেশমাত্র নেই। সুশান্তর শরীরে শ্রেয়ার হাত। সুশান্ত ইচ্ছে করে শ্রেয়ার মুখের দিকে না তাকিয়ে হাতটুকুর দিকে তাকিয়ে রইল। গোলাপি নেলপালিশ অল্প উঠে গেছে। নখের নিজস্ব লালচে রঙ অদ্ভুত মায়াবি। শ্রেয়া ঝুঁকে পড়েছে। ঠোঁটের ওপরে বিন্দু বিন্দু শিশির।

পুরো গ্লাসটা এক চুমুকে শেষ করে টেবিলে রাখল সুশান্ত। এলোমেলো কথা হচ্ছে টুকটাক। কী একটা কথায় মাড়ি বের করে হাসছে। সারা পৃথিবীটা, ওই যে বিনীত, প্রজ্ঞা যারা এখন যোগাযোগ অবধি রাখে না, ওই অ্যান্টিসোশ্যালগুলো, যারা অন্ধকারে হাত বাড়িয়ে গালে কাদা লেপে দিয়েছিল দোলের রাতে, বসন্তের হাওয়ায় সাপের নিঃশ্বাস হয়ে ঘুরছে এখনও। একটা মস্ত বিস্ফোরণে সবটা ফাটিয়ে নষ্ট করে দিতে পারলে হত! মুখ ভ্যাঙাতে ইচ্ছে করছে বিশ্রীভাবে, কাকে কে জানে! সামনে বসে থাকা সুশান্ত, দেখেই কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে, ওর সঙ্গে শুতে হবে! 

এখন ও পরীক্ষকের চোখে জরিপ করছে। তারপর হাতের বাজুদুটোয় প্রায় নখ বসিয়ে টেনে নিল এক ঝটকায়। সুশান্ত চোখ বুজে আছে। শ্রেয়া যেন রাগ ক্ষোভ উগরে দিচ্ছে নখে দাঁতে। এরপরের স্পর্শটা হয়তো উষ্ণ হবে, আরামদায়ক হবে, সুশান্ত চুপ করে রইল। শ্রেয়া হঠাৎ সরে গিয়ে হিসহিস করে বলল,
— এবার তোর কাজ।
— আজ থাক না।
— ভয় করছে? বিয়ের আগে তোকে একটু পরখ করব না!
শ্রেয়া নিষ্ঠুরভাবে হেসে উঠল। সুশান্ত অপ্রস্তুত হাতে শ্রেয়ার গাল ছুঁতেই ঘন স্রোতে উষ্ণতা বমন করল শরীর।
— জানতাম, কিচ্ছু পারিস না তুই। কোনওদিন পারবিও না। হরমোনের সমস্যা আছে বলে এরকম মেয়ে মেয়ে টাইপ। ছিঃ, আমার ভাগ্য!
একরাশ খয়েররঙা থুতুর মতো ছিটিয়ে দিল কথাগুলো। অগোছালো চাদরের আর একদিকে স্কুলের কাগজপত্র, লেজার বুক। হিসাব নিয়ে বসতে হবে। মাথায় লোড করা খরচপাতি লিখতে হবে। শ্রেয়া দ্রুত উঠে দাঁড়িয়েছে। পোশাক নিয়ে বাথরুমে চলে গেল। ঘরে মিষ্টি গন্ধটা পাক খেয়ে ঘুরছে এখনো। পাখার হাওয়ায় কেটে কেটে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
— আমি যাচ্ছি। পুরোপুরি যে যাব, সে পথ তো ভাগ্যই আটকে দিয়েছে। পরশু যাস। মা তোর বিয়ের আংটির মাপ নেবে।

চার

 

সাদা সিলিংয়ে বাইরে থেকে আসা গাছের পাতার আলোর খেলা দেখতে দেখতে অল্প হাসল সুশান্ত। নিজের মনেই। পুরো মনটাই অদ্ভুত অসাড় লাগছে। সেই শ্রেয়া। বমির সঙ্গে চোখের জলে ঝাপসা সামনেটা। বুক থেকে কী যেন উঠে আসছিল।
— এই নে জল খা একটু।
তারপর স্বপ্নে ভাবনায় সেই বাড়িয়ে ধরা শীতলতা। এটুকু যত্নই কী যথেষ্ট ছিল! কাউকে এতটা বেশি করে ভাবতে! নাকি ভুল হচ্ছে!
— তোর কী দায় ভাই? তোকে পাত্তা দেয়?
নিজেকেই মাঝে মাঝে বলতে ইচ্ছে করে। তাহলে? এতটা দুর্বল সুশান্ত! এত অপমান! আজকেরটা! মাথার ভেতরটা একটা মস্ত বোমার মতো ফেটে উঠতে চাইছে। মেয়েটার ভেঙে পড়া মুখ, ওর বাবা মায়ের অনুরোধ! শ্রেয়া কী ভাবে, ওকে বিয়ে করতে পারা মানে লটারি পাওয়া! আর সুশান্তর এত দিনের ধৈর্য! কোনও মূল্য নেই তার! উঠে বাথরুমে গিয়ে নিজেকে শীতল করতে চাইল শাওয়ারের ঠান্ডা জলে। মাথা বেয়ে নামছে জলের ধারা। বাইরে এসে ফোনে ডায়াল করল। রিং হচ্ছে।
— হ্যালো
ওপাশে শ্রেয়ার গলায় স্পষ্ট ভিজে সুর। কাঁদছিল। সুশান্তর গলা বেয়ে বিষ চুঁইয়ে নামছে। কীসের কান্না? সুশান্ত এত ফেলনা!
— একটা কথা ছিল।
খুব শান্ত গলায় সুশান্ত বলল। ওপাশে কোনও আওয়াজ নেই।
— শ্রেয়া, আমি তোমার যোগ্য নই বলে তোমার যে ধারণা, সেটা একদম ঠিক, জানো। নেহাৎ পাকেচক্রে লেগে যাওয়া লাইন।
সুশান্ত হাসার চেষ্টা করল। ‘তুমি’র দূরত্ব তৈরি করল ইচ্ছে করেই।
— আমি কিছুই পারি না আসলে। কোনওদিন পারিনি। বাবাকে বাঁচাতে পারিনি, মায়ের চলে যাওয়া আটকাতে পারিনি। ঠিকই করতে তোমরা আমায় নিয়ে হাসতে।

Silent Night
এখন ভরসন্ধ্যে, এই সময়টাকে বলে রাক্ষসীবেলা

শ্রেয়া কি আছে ফোনে! সুশান্ত বলে চলল,
— তোমার জীবনে যে মিসহ্যাপ, দেখো লোকজন আজ নয় কাল ভুলে যাবে ঠিক। ওটা বাদ দিয়ে একটা আস্ত জীবন্ত তুমি খুব মূল্যবান।
— না।
শ্রেয়া জোর করে কান্না চেপে রেখেছে। সুশান্ত এবার শক্ত গলায় বলল,
— এটুকু বিশ্বাস নিজের ওপর রাখো শ্রেয়া। আর আমাকে জোর করে বিয়ে করতে হবে না। সেটা কারোর জন্য ভালো হবে না। তু-তুমি ঠিক তোমার মনের মতো জীবন পাবে… আ-আমি…
আরো কত কথা বলার ছিল সুশান্তর। অসমাপ্ত কথাগুলো হাত বাড়িয়ে শব্দ খুঁজছে। শব্দগুলো কী সব হারিয়ে গেল! কাটা ঘুড়ির মতো ঘুরছে, লাট খাচ্ছে দূরের আকাশে। কিন্তু নাগালে আসছে না মোটেই। এখন ভরসন্ধ্যে, এই সময়টাকে বলে রাক্ষসীবেলা। দিনটা গপ করে গিলে নিয়ে রাত নামবে। গতকাল এই সময়ে সুশান্ত শ্রেয়াকে নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসের কৃষ্ণচূড়ার তোরণ পার হয়ে শেষ মাথায় গিয়েছিল মনে মনে। একটা আশ্চর্য নদী ছিল সেখানে। কেউ জানে না। কেউ দেখেনি। ইস পথটা ফুরোল না।

সুশান্তর একটা ব্যথা উঠছে বুক বেয়ে। কদিন থাকবে। আজ কাল পরশু তারপরের দিন। তারপর নির্ঘাৎ মিলিয়ে যাবে…

পাঁচ

 

— কে রে জানলায় রঙ দিলি..
মায়ের খেঁকুরে চিৎকারে শ্রেয়া বিছানায় উঠে বসে পড়ল কাঠ হয়ে।
— আহ সবিতা..
বাবার গলা। বাড়ির পরিস্থিতি যেন শ্মশান। মা রান্নাঘরে ঝনঝন করে বাসন গোছাচ্ছে।
— আমার এই হল কপাল! কী হতছেদ্দা! সে ছেলে পড়ে থাকার! মুখের ওপর জানিয়ে দিল করবে না বিয়ে। বিষ খেয়ে মরিস না কেন তুই!
শ্রেয়ার বিছানার একপাশে বইপত্র নোটস। এবার ও মাস্টার্স কমপ্লিট করবেই। মনটা সেদিকে দিতে অনাবশ্যক নাড়াচাড়া করল বইপত্র। আচ্ছা সুশান্তর জায়গায় শ্রেয়া নিজে হলে কী করত! না না। শ্রেয়া ওরকম আত্মসম্মানহীনের মতো পাত্তা না দিলেও পায়ে পায়ে ফেরার বান্দা নয়। এত অবহেলার পরে মরে গেলেও আসত না। সেদিন বাড়ি আসার পর সুশান্তর ড্যাবডেবে বোকাটে চোখ দুটো অনেকক্ষণ মনের মধ্যে ঘুরছিল। বেশিই নির্মম হয়ে গেল কী! তারপরের কথাগুলো, কীরকম কান্নার মতো। এই এতগুলো দিনে যখন কেউ আসেনি, খোঁজ নেয়নি, একজন কিন্তু ছিল। শ্রেয়া কথা অবধি বলেনি কতদিন, তাও। সমস্ত নোটস জেরক্স করে এনে দিয়েছিল। এই তো সামনে পড়ে আছে।

 

আরও পড়ুন: অভীক চট্টোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ: অনুপম সুরে

 

শ্রেয়ার জীবনে এমন কিছু হয়েছে কী, যে দাগ মুছবে না! টিপিক্যাল মধ্যবিত্ত মানসিকতার বাবা-মাকে বোঝানো অসম্ভব, এটাই হল মুশকিল। কিন্তু এসবের বাইরে তার বুদ্ধি, মেধা, হিউম্যান কোয়ালিটি সব পচে গেছে! হয়তো এতদিন যায়নি। সুশান্ত হয়তো খুঁজেছিল সেটাই। তবে এখন গেছে। নাহলে কাল ওরকম করতে ও পারল! শ্রেয়ার অস্থির লাগছে! কী হয়ে গেল এটা! সুশান্তকে বেশিই শাস্তি দেওয়া হল! বেশিই অবিচার করে ফেলল শ্রেয়া। সুশান্তকে ও দয়া করেছে ভাবছিল! ভেতরে খচ খচ করে কাঁটা হয়ে ফুটছে। ঠিক হয়নি একদম। মস্ত বড় ভুল হয়েছে। শ্রেয়া চাইলেই সুশান্তকে মনের মতো করে গড়ে নিতে পারত। না, এটাও ভুল। সুশান্ত যদি শ্রেয়াকে ওর নিজের ধরনে মেনে নিতে পারে, শ্রেয়া কেন পারবে না!

The Walk
সুশান্ত যদি শ্রেয়াকে ওর নিজের ধরনে মেনে নিতে পারে, শ্রেয়া কেন পারবে না

শ্রেয়া এই দু’দিন যতবার সুশান্তকে ভেবেছে এই একবছরে অত ভাবেনি। সুশান্তর যে ফোন এলে শ্রেয়া অসীম বিরক্ত হলেও প্রকাশ করত না, সেটাও আসেনি এ কদিন। ‘আমি পৌঁছে গেছি স্কুলে।’ এই বার্তাও নয়। তবু এ কদিন রোজ ফোন হাতে নিয়ে অপেক্ষা করেছে। শ্রেয়া নিজে ফোন করবে! ক্ষমা চাইবে! নাহ, অনভ্যস্ত লাগবে। কী বলবে, ও নিজেই জানে না। সুশান্ত ফোন ধরবে কিনা কে জানে!

নীচের ফুটপাথে একদল ছেলেমেয়ে রঙ খেলছে। ওহ, আজ তো দোল। রঙমাখা ছেলে মেয়েগুলো খিল খিল করে হাসছে। কারও মুখ আলাদা করে চেনা যাচ্ছে না। এর মধ্যে যদি ঐ মানুষগুলো মিশে থাকে! মুখ থেকে ভগভগ করে মদের গন্ধ! আটকে ধরেছে রাস্তা। শ্রেয়া একটা পা-ও এগোতে পারছে না। বাইকে চালকের আসনে থাকা ঝকঝকে স্মার্ট ছেলেদুটো ভয়ে কাঁপছে।
— দাঁড়া, আরে একটু আমাদের সঙ্গে খেলে যা মামণি।
হায়নাগুলো হাসছে। শ্রেয়া পিছিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ।
— চল শ্রেয়া, হাঁটি হাতিবাগান পর্যন্ত। বিবেকানন্দের বাড়িতে ঢুকবি? কী শান্ত পরিবেশ। যাবি?
শ্রেয়া এবার এগিয়ে যাবে। এখুনি। আজ দোল, নিশ্চয়ই বাড়িতে আছে সুশান্ত। অনেক রঙিন আবির নিয়ে যাবে। সুশান্ত অবাক হবে। ভেবলে যাবে। কথা তুতলে যাবে। হাসবে? বিতান, শুভ্র, প্রজ্ঞারা! শ্রেয়াও? না, একদম নয়।
— মা একটু বেরচ্ছি।
— দোলের দিন, আবার! শয়তান মেয়ে। মেরে পা খোঁড়া করে দেব।
মা জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে।
— আমায় যেতেই হবে মা! দেরি করব না। 
রাস্তায় বেরিয়ে ফুটপাথের দোকান থেকে বেছে বেছে রঙ নিল শ্রেয়া। হলুদ গোলাপি লাল সবুজ। ছোট ছোট কাগজের মোড়কে প্লাস্টিকের ব্যাগ ভর্তি। বাসে উঠে মনে হল সুশান্ত বাড়িতে আছে তো! একবার ফোন করা দরকার ছিল। হ্যাঁ, এখনই।

তোর কী দায় ভাই? তোকে পাত্তা দেয়? নিজেকেই মাঝে মাঝে বলতে ইচ্ছে করে। তাহলে? এতটা দুর্বল সুশান্ত! এত অপমান! আজকেরটা! মাথার ভেতরটা একটা মস্ত বোমার মতো ফেটে উঠতে চাইছে। মেয়েটার ভেঙে পড়া মুখ, ওর বাবা মায়ের অনুরোধ! শ্রেয়া কী ভাবে, ওকে বিয়ে করতে পারা মানে লটারি পাওয়া! আর সুশান্তর এত দিনের ধৈর্য! কোনও মূল্য নেই তার! উঠে বাথরুমে গিয়ে নিজেকে শীতল করতে চাইল শাওয়ারের ঠান্ডা জলে। মাথা বেয়ে নামছে জলের ধারা। 

সুশান্ত ট্রেনের একদম দরজার কাছে। হু হু করে চলন্ত ট্রেনের চলতি দিকের হাওয়া মুছে দিচ্ছে কপালের ঘাম। রোদের ভাপ ওঠা হাওয়ায় মিশে যাওয়া ফাগ। কোথাও যাবার ছিল আজ। শ্রেয়ার কাছে। এটা উল্টোদিকের পথ। টিকিট কেটে উঠে পড়া। গেটের রড ধরে কিছুটা বাইরে সুশান্ত। চুল মুখে কপালে লুটছে। কপালের চুলে শ্রেয়া কোনওদিন হাত বুলিয়ে দিলে কেমন আরাম লাগবে সেটা নিয়ে ফ্যান্টাসি ছিল কত! দূর! ঘামের ওপর হাওয়া লেগে বেশ লাগছে কিন্তু। মোবাইল বাজছে। শ্রেয়ার নম্বর। কপাল কুঁচকে গেছে। কী বলতে চায়?
— হ্যালো
আবেগহীন গলা সুশান্তর।
— তুই কোথায়? আমি যাচ্ছি তোর কাছে।
— কেন?
— আজ আমরা একসঙ্গে হাঁটব অনেকটা।
— কোথায়, কতটা?
সুশান্ত এক মুহূর্তের জন্য অন্যমনস্ক। অনেকটা হাওয়ার জন্য দরজার বাইরে শরীরটা পাখির মতো এগিয়ে দিল। কানের দুপাশে হাওয়ার শব্দ, শার্টটা লেপ্টে যাচ্ছে গায়ে, বুনো ফুল, আগাছাগুলো দুলছে হাওয়ায়।

একটা ইলেকট্রিক পোস্ট, এগিয়ে আসছে। সামনে আরও… আরও সামনে। ট্রেনের যাত্রীরা চিৎকার করে উঠল…

ছয়

 

শ্রেয়ার বাস মানিকতলা ক্রসিংয়ে দাঁড়িয়ে। বেশিরভাগ যাত্রীর গায়ে রং আর আবির। বাস এমনিতেই কম রাস্তায়। বাড়িগুলোর গায়ে ছোপ ছোপ রং, রাস্তা ফুটপাথ সব রংয়ে ভিজে। প্রায় পৌঁছে গেছে শ্রেয়া। আর কয়েকটা স্টপ। এই রাস্তার ওপর দিয়ে ওরা আজ হাঁটবে। রংয়ে আবিরে চেনা সুশান্তকে আজ অচেনা লাগবে। শ্রেয়াকেও। এতক্ষণ কেন দাঁড়িয়ে! আর তর সইছে না। ফোনটাও কথা বলতে বলতে কেটে গেল। তারপর নট রিচেবল। আরেকবার ফোন করল। এই তো আবার রিং হচ্ছে।
— হ্যালো, উফফ তখন কেটে গেছিল কেন শুনি?
— আমার পথ আলাদা হয়ে গেছে শ্রেয়া। আমি অনেক দূরে। তুই ফিরে যা।
শ্রেয়ার কান্না পাচ্ছে খুব। জেদ করে বলে উঠল।
— আমি যাচ্ছি, অপেক্ষা করব। দেখি তুই কেমন না এসে পারিস।
শেষের কথাগুলো ডুবে গেল। রাস্তায় কাঁদলে সকলে ড্যাবড্যাব চোখে নাটক দেখবে। কিন্তু বুকের নিচে জল থৈ থৈ যে।

শ্রেয়া ফোন রেখে বাসের জানলা দিয়ে বাইরে দেখল। আকাশের নীল গালের একদম কাছে ফুটপাথে জন্মানো পলাশগাছের মগডাল হাত উঁচিয়ে আছে। আঙুল ছড়ানো পাতাগুলো দুলছে হাওয়ায়। তাতে পলাশের লাল আবির মাখামাখি। আর একটু বাড়ালেই ছুঁতে পারবে আকাশ। তার নিঃসঙ্গ বুকটা পলাশ রঙে মাখামাখি হয়ে যাবে। শ্রেয়া এগিয়ে যাবে লাল আবিরে মেখে। আর আবিররঙা রোদ মেখে অনেকটা দূরে অপেক্ষা করে আছে একটা ডাক, “আয় আমরা হাঁটি, অনেক অনেক দূর।” সেই ডাকে সাড়া দিতে হবে। তার কাছে পৌঁছতে হবে। হবেই।

 

*ছবি সৌজন্য: Pinterest

হৈমন্তী ভট্টাচার্য পেশায় শিক্ষিকা। নিবাস দমদম। মূলত নিবিড় পাঠক। রঙের বাহারে প্রকৃতির ছবি আঁকা এবং কলমে ভাবনাকে রূপ দেওয়া তাঁর প্যাশন। শারদীয়া সহজিয়া, বিষাণ শারদীয়া, ঋত্বিক, অভিব্যক্তি, কাশফুলের বার্তা, পাঁচ মাথার মোড়, শনিবারের আসর, দক্ষিণের জানালা ই-ম্যাগ ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে।

One Response

  1. গল্প সাদামাটা হলেও শ্রেয়ার চিন্তা ভাবনার বিস্তারে মুনশিয়ানা দেখা গেছে। স্টাইল ভালো। ভাষা স্বচ্ছ। তুলনামূলক শব্দ চয়ন অত্যন্ত ভালো লাগলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *