জীবনে প্রথম মামাবাড়ি গিয়ে একসঙ্গে তিনখানা মহাবিপদ ঘাড়ে এসে পড়ল। তার মধ্যে বাড়ির কেঁদো অ্যালসেশিয়ানের পিলে চমকানো হাঁক আর সকালে কাঁসার জাম্বো গেলাসভরা ছাগলের দুধ যদি বা সামলানো গেল, কিছুতেই ম্যানেজ করা গেল না গম্ভীরদাদুকে। ইনি মায়ের দাদামশাই। ইংরেজ আমলে চা বাগানে ম্যানেজারি করেছিলেন বলেই বোধহয় কড়া স্বভাব। কোনও দিন হাসতে দেখিনি। ছিঁচকান্না, বেয়াড়া বায়নাক্কা মোটে বরদাস্ত করেন না, এমনই কানাঘুষো শুনেছিলাম। তাই প্রণাম-টনাম সারার পরে কাছে ঘেঁষিনি। তিনিও তাতে বিশেষ কাতর হয়েছিলেন বলে মনে হয়নি। হঠাৎ এক সকালে তলব পেয়ে ছোটমামার সঙ্গে খানা-কামরায় ঢুকে দেখি, নীল রঙের কৌটোয় চাকু ঘুরিয়ে কী জানি খুবলে এনে পাউরুটির ওপর জড়ো করছেন। একটা শব্দও খরচ না করে কৌটো থেকে ফিকে হলুদ ফালি হাতের তালুতে ফেললেন। দাদুর প্রসাদ মনে করে আগুপিছু না ভেবে মুখে চালান করলাম। বাপ্‌স! যেমন ভ্যাটপচা গন্ধ, তেমনই নুনপোড়া ওয়াক তুলে বেসিনপানে ঊর্ধ্বশ্বাস দৌড়ের সময় দেওয়াল তোবড়ানো অট্টহাসি তাড়া করেছিল এ ভাবেই চিজের সঙ্গে আমার পহেলি মোলাকাত।

সেই থেকে চাখা তো দূরস্থান, তার নাম শুনলেই চোখে অন্ধকার দেখতাম। ব্যাপারটা এমনই চলত, যদি না ব্যাঙ্গালোর থেকে বেড়াতে এসে বাড়ির কাচ্চাবাচ্চাদের নিয়ে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দর্শনের পরে ফ্লুরিজে চা খেতে যেতেন বড়কাকার জামাইবাবু। তার আগে, না এমন সাহেবি রেস্তোরাঁয় ঢুকেছি, আর না এসব খাবারদাবার মুখে দিয়েছি। শো কেসের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা তো ভ্যাবাচ্যাকা। কী কী খেয়েছিলাম অ্যাদ্দিন পরে মনে নেই, তবে মুচমুচে প্যাটিকে ভুলিনি। তার স্বাদে আপ্লুত হতে হতে নজরে পড়ল, পাপড়িঝরা খোলসের ফাটল বেয়ে নেমে আসা সফেদ ধারা। আর তার এমনই সুন্দর স্বাদ, যে চেটেপুটে আশ মেটে না। ব্যাঙ্গাজ্যাঠা চেনালেন, মেল্টেড চিজ। শুনে তো আক্কেলগুড়ুম! এ-ও চিজ? কই, ঝাঁঝালো দুগ্গন্ধ নেই, নুনের থাপ্পড় নেই! কী করে হল? তিনি বোঝালেন, চিজমাত্রেই অমন বিতিকিচ্ছিরি হয় না। সেই যে বোধোদয়, তারপর আর যাকে বলে পিছু ফিরে দেখতে হয়নি। বছর না ঘুরতে পার্ক স্ট্রিট হবি সেন্টারের বিশালবপু পিৎজার ওপরে চুইংগামের মতো চিজের পরতে স্যসেজ টুকরোর লুকোচুরি দেখে নোলা উতলা হল আবার নিউ মার্কেটে গিয়ে দেখলাম, ফ্যাটফেটে সাদা আর ধোঁয়াটে সুবাসমাখা বাদামি রঙের পেঁড়াদেরও চিজ বলছে। দুটোই বেজায় নোনতা, তবে বদবু নেই। তা ছাড়া, রাতভর জলে চুবিয়ে রাখলে নুনও ধুয়ে যায়। শক্তপোক্ত নয় তার গা, সাবধানে ছুরি না বসালে গুঁড়ো হয়ে যায়। সেই ব্যান্ডেল চিজ যে আদতে বান্ডল চিজ, তা জানিয়েছিলেন জে জনসনের মালিক। না কি, পুঁটলিতে বেঁধে রাখে বলে এমন নাম। চিজখেকো ইঁদুরের হাত থেকে বাঁচাতে আর ছাতা পড়া আটকাতে নুনের এমন বাড়াবাড়ি, যার ফলে ফ্রিজ ছাড়াই বেশ কয়েক দিন গড়ায় তার আয়ু। এককালে পর্তুগিজদের ঘাঁটি ব্যান্ডেলে পাওয়া গেলেও হালে এই চিজ প্রজাতির আঁতুড়ঘর তারকেশ্বর আর বিষ্ণুপুর লাইনে। 

কেটে যাওয়া দুধ ফেলে না দিয়ে লোভনীয় খাবার তৈরির কারিগরি বাংলায় প্রথম আমদানি করে পর্তুগিজরা। তার আগে, ছানা কেটে গেলে সেই দুধ ফেলে দেওয়াই ছিল দস্তুর। যে কারণে এখনও মন্দিরের প্রসাদে ছানা নয়, ক্ষীরের প্রচলন বেশি। সেই পর্তুগিজরাই চিজ তৈরির পাঠ দিয়েছিল আরাকান থেকে আসা তাদের মগ পাচকদের, হাতঘুরে যে বিদ্যে পরে জেনেছিল অজগেঁয়ে বঙ্গসন্তান। ব্যান্ডেল থেকে পর্তুগিজরা পাততাড়ি গোটালেও আশেপাশে ছড়িয়ে গিয়েছিল তাদের শেখানো চিজ তৈরির কায়দা। শুনলাম, ফুটো করা ছোট ছোট গোল পাত্রে জমানোর ফলেই ব্যান্ডেল চিজের এমন প্যাঁড়াসুলভ গড়ন। আর তার গায়ে বাদামি ছোপ ও ধোঁয়াটে গন্ধ জুড়তে ব্যবহার করা হয় ঘুঁটের আঁচ। এই চিজ রান্নায় কাজে না লাগলেও স্যান্ডউইচ আর স্যালাডে দিব্যি ব্যবহার করা যায়পোর্ট ক্লাবের এক বিশেষ ভোজে গাঢ় রেড ওয়াইনের সঙ্গী চেরি টম্যাটো, স্মোক্‌ড হ্যাম, আইসবার্গ লেটুস আর অলিভ স্লাইসের ওপর ছড়ানো সাদা ধোঁয়াটে ব্যান্ডেল চিজের স্বাদু স্যালাড চমৎকার লেগেছিল। 

পর্তুগিজ রসনার ব্যান্ডেল চিজ আপাতত হগ মার্কেটের দুই দোকানে পাওয়া গেলেও ইহুদি ঘরানার চিজ এ তল্লাটে মেলে একমাত্র নাহুম’স-এ। ময়দার পাতলা মুচমুচে খোলের ভিতরে গলে যাওয়া হালকা নোনতা চিজের পুরভরা সাম্বুসাক, আম খদ্দেরের নজর টানতে যথার্থই ‘চিজ সমোসা’ নামে বিক্রি হয় সে দোকানেখোঁজখবর নিয়ে জানা গেল, মূল মধ্যযুগীয় ফারসি ‘সানবোসাগ’, অঞ্চলভেদে সাম্বুসাক, সানবুসাক, সানবুসাজ, সমোসা এবং বাঙালির অতি প্রিয় সিঙাড়া নামে পরিচিতি পেলেও আসলে একই রসনা-পরম্পরার শরিক। মিশর থেকে মঙ্গোলিয়া, মায় ভারত, প্রাচীন কাল থেকে এই পিঠের পুর হিসেবে কষানো মাংসের কিমা, মশলাদার সতেজ সবজি, রকমারি বাদাম, ভুট্টা বা মটরদানা, শুকনো ফলের মিশেল এবং চিজ ব্যবহার করে আসছে। শুনেছি ইজরায়েলে সাম্বুসাকের পেটে ফেটা আর কাশকাভাল, দু’ রকম চিজের মোলায়েম স্বাদসঙ্গম খাদ্যরসিকদের বিহ্বল করেসিঙাড়ার পরনে সাদা তিল বা পোস্তদানার বুটিদার জামা। ডুবোতেলে ভেজে তোলার সময় এমন সুগন্ধ ছড়ায় যে, তার টানে থমকে দাঁড়াতে বাধ্য হয় ব্যস্ত পথিক। উনিশ শতকের কলকাত্তাইয়া ইহুদি হেঁশেলের মুসলিম বাবুর্চিরা সে সব ডাকসাইটে পদে হাত পাকিয়েছিলেন বটে, কিন্তু ইদানীং সেই যখের ধনের নাগাল পাওয়া অসম্ভব। পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে বিন্দুতে সিন্ধু দর্শনের সুযোগ করে দেওয়ার কৃতিত্ব অবশ্যই নাহুম’স-এরএখানে সাম্বুসাকের পেটে নরমসরম যে চিজ মেলে, তা পাতা হয় দোকানের রসুইঘরেইসেই চিজ কিনতে হলে না কি আগেভাগে টাকা দিয়ে বুকিং করতে হয়। ক্যানাল ইস্ট রোডের ফ্রান্সিস ব্রাগাঞ্জা নিউ ইয়ার পার্টিতে ঝলসানো অতিকায় ভেটকির পিঠে খাঁজ কেটে টাটকা আঙুর, কমলার কোয়া আর নাহুম’স-এর সেই দুর্লভ চিজ গলিয়ে বহু যত্নে যে অভিজাত মোটিফ ফুটিয়ে তুলেছিলেন, রোমন্থনের ঘুলঘুলি বেয়ে আজও যেন তার সুঘ্রাণ ভেসে আসে।

শোনা যায়, ওল্ড টেস্টামেন্টের ‘বুক অফ জেনেসিস’-এর পাতাতেও ইহুদিদের চিজচর্চার বিস্তর উল্লেখ রয়েছে। তবে একেবারেই জানা ছিল না পারসি চিজের কথা। কয়েক মাস আগে হিন্দুস্তান পার্কের এক কাফেটেরিয়ায় চেখে দেখার সৌভাগ্য হল বিট, লেটুস আর সেঁকা আখরোটের সঙ্গে রহস্যময় এক সফেদ চিজ মেশানো লোভনীয় স্যালাডের। এই চিজের রকমসকমে শুরুতে মোজারেলার হাবভাব দেখা গেলেও জিভের উত্তাপে গলতে শুরু করলে ভিন্ন মেজাজ ধরা পড়ল। ভেবেছিলাম, নির্ঘাৎ বিদেশি। ও হরি! মালকিন কবুল করলেন, বিরল পার্সি চিজ ‘টোপলি না পনির’-এর স্রষ্টা রিপন স্ট্রিট নিবাসী প্রাক্তন বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়ন ভিলু বাটলিওয়ালা। কলকাতায় পার্সিরা পা রাখার পর থেকে বংশানুক্রমে এই চিজের গুহ্য রেসিপি আগলে রাখা হয়েছে। চিজ জমানো হয় খেলনাবাটির বাসনের মতো খুদে কঞ্চির চুবড়ি বা টোপলিতে, যার দাগ থেকে যায় চিজের নরম ত্বকে। শ্রীমতী বাটলিওয়ালা প্রবীণ শান্তিপ্রিয় নাগরিক, তথা প্রচারবিমুখ। তাঁর নিভৃতবাসে হানা দেওয়ার উটকো ফিকির তাই আষাঢ়ে কল্পনাতেও প্রশ্রয় দিইনি। দূর থেকেই কুর্নিশ জানিয়েছি লুপ্তপ্রায় রসনা সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখায় তন্নিষ্ঠ সাধিকাকে

অতি উচ্চ মানের মোজারেলা গোত্রের চিজ ‘ঢাকাইয়া পনির’-এর জন্মরহস্যের পিছনেও পর্তুগিজদেরই অবদান ছিল। এই পনির কিন্তু ভারতে আমাদের চেনাজানা পনির গোত্রের থেকে একেবারেই আলাদা। স্বাদ এবং চরিত্র পনিরের থেকেও বেশি মেলে ইতালীয় মোজারেলা চিজের সঙ্গে। ইতিহাস বলছে, ১৫৮০ সালে চট্টগ্রাম ঘুরে প্রাচীন এই শহরে পর্তুগিজরা এসে পৌঁছয়। ক্রমে সেখানে তারা ব্যবসার সুবিধায় ফ্যাক্টরি বা গুদাম তৈরি করে। গড়ে ওঠে ঘরবাড়ি, আওয়ার লেডিজ অফ রোজারি গির্জা আর স্কুল। মজার কথা হল, বাংলার পশ্চিম ভাগের বাসিন্দাদের তারা বান্ডল চিজের সঙ্গে পরিচয় করালেও পূবপারের অধিবাসীদের শেখায় মোজারেলার আদি কৌশল। এই চিজে নুনের পরিমাণ যৎসামান্য। আর মোজারেলার বৈশিষ্ট মেনে তার চরিত্র মালাইদারও বটেচিজ অল্প গলিয়ে বিরন চালের ভাতে মেখে খেতে অপূর্ব। সেই স্বাদ প্রথম পেলাম রসনা বিশেষজ্ঞ সাহিত্যিক সামরান হুদার হাওড়ার বাড়িতে। তবে তার সেরা পার্টনার অবশ্যই পুরনো ঢাকার খানদানি বাকরখানি রুটি। শিল্পী মহসিন কবীর হিমালয়ের সৌজন্যে সদ্য তন্দুর থেকে বের হওয়া মুচমুচে বাকরখানির ওপর সেই চিজের হরকতে সার্থক হয়েছিল ঢাকা সফরের পয়লা স্মৃতি। 

Cheese Illustration by Upal
হুঁহুঁ বাওয়া… এ কি যে সে চিজ!!! ছবি- উপল সেনগুপ্ত

কালিম্পঙের হার্ড চিজ অধিকাংশ শপিং মলে পাওয়া গেলেও শৈলশহরের সিগনেচার সফ্ট চেডারের দেখা মেলে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নিউ মার্কেটের জনসন বা মল্লিকদের দোকানে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, চিজ-পাঠের প্রদোষকালে যদি তার দেখা পেতাম, তাহলে জীবনে অনেক কিছুই অন্য রকম হত। তার নমনীয় স্বাদ-গন্ধ চরম চিজ-বিবাগীকেও অক্লেষে বশ করতে পারে। জনসনের দোকানে শীতের শেষতক পাওয়া গেলেও বছরের বাকি দিনগুলোয় তার জন্য আক্ষেপ আর বিরহই ভরসা। তার খোঁজ নিতে সটান কালিম্পং শহরেই হাজির হলাম। কিন্তু বাজারে ঘোরাঘুরি করে বেশ কয়েক রকম চিজ পেলেও ঠিক সে জিনিস চোখে পড়ল না। বরাতের এমন খেল, মঙ্গলবারের হাটে ঘুরতে ঘুরতে দেখি সবুজ প্লাস্টিকের ছাউনির নীচে পাতা টেবিলে তাল তাল সাদা মাখন আর ডেলা পাকানো ইয়াকের দুধের ঘিয়ের সঙ্গে কাঠের বারকোশে পড়ে রয়েছে হুবহু সেই জনসনের দোকানে দেখা বাসন্তী ব্লক। স্যাম্পেলের স্বাদ চিনতে ভুল করেনি জিভ। দোকানদারকে জেরা করতেই পেয়ে গেলাম গুপ্তধনের ঠিকানাপরের সকালে দুই কিলোমিটার চড়াইপথ ডিঙিয়ে পৌঁছলাম গিডাবলিং গ্রামে। সেখানে একরত্তি খামারে সাইমন শেরিং আর তার বন্ধু খুশ নারায়ণ শর্মা লেপচা আর ভুটিয়াদের আদ্যিকালের রেসিপি ঘেঁটে রকমারি চিজ তৈরিতে মগ্নসিকিমের পাকইয়ংয়ে ওদেরই বন্ধু ডুকপা দেংজুককেও এই কাজে জুতে দিয়েছে। সফ্ট আর হার্ড, দুই কিসিমের চেডারের সঙ্গে তিন রকম ছুরপি আর পনির তৈরি হয় এখানে। 

দার্জিলিং বেড়াতে গিয়ে কেউ কেউ পাহাড়িদের দেখাদেখি শখ করে ছুরপি কিনে গালে ফেলেন। অনেকক্ষণ চুষেও কাঠের মতো শক্ত টুকরোয় দাঁত বসাতে না পেরে ধুত্তোর বলে ছুড়ে ফেলে দেন নর্দমায়। অথচ দুনিয়ার সবচেয়ে শক্ত এই চিজ মুখে দিয়েই দিনভর চকবাজার থেকে ভোটবস্তি, মহাকাল মন্দির, ধিরিধাম মায় লেবং রেসকোর্স অবধি হাসিমুখে মোট মাথায় চরকিপাক খায় মেয়ে-মদ্দ পোর্টাররাযাযাবর ভুটিয়া গোয়ালাদের তাঁবুতে কাঠের চৌবাচ্চাভরা ইয়াকের দুধ থেকে ছানা কাটিয়ে তৈরি হয় ছুরপির তিন ভ্যারাইটি। তাঁবুর মাঝে পাথুরে চুলোর ওপরে টাঙানো দড়ি থেকে ঝাড়বাতির মতো ঝোলে ছুরপির গোছা। দিনের পর দিন শুকোনোর ফলে রসকষ লোপ পেয়ে ক্রমে কেঠো হয় তার চেহারা। এ ছাড়া প্রায় রোজই মেলে শুকনো ক্ষীরের মতো গুঁড়ো ছুরপি। মোমোর লেজুড় বেদম ঝাল চাটনি বানাতে পোড়া টম্যাটো, রসুন, ডাল্লে খোরসানি বাটার সঙ্গে ছুরপিগুঁড়ো না জুড়লে রাঁধিয়ের ফাঁকিবাজি ধরা পড়ে যায়। এই দুই প্রজাতির মাঝ বরাবর রয়েছে কাচ্চা ছুরপি, যা বেশ নরমসরম। নিংরো শাক ভাজির স্বাদ খোলে তার স্পর্শে। সাইমনদের খামারে কলকাত্তাইয়া অতিথির আপ্যায়নে রকশির চাট হিসেবে বেড়ে দেওয়া হয়েছিল গ্রেট করা টাটকা ছুরপি ও শুকনো লঙ্কার তালমিলে রাঁধা লোভনীয় এমা দাৎশি। 

আজকাল মেশিনে তৈরি ছুরপি বিক্রি হয় দার্জিলিঙে কেভেন্টার্সের কাউন্টারে। তবে তার স্বাদে তিব্বতী গো-পালকের ছোঁয়া খুঁজতে গেলে হতাশ হতে হয়। প্রাচীন বাংলার চিজ-ঐতিহ্যের তত্ত্ব-তালাশ করতে হলে চটকের পথ ছেড়ে উঁকি দিতে হবে অজানা ইতিহাসের পাতায়, ঢুঁ দিতে হবে অচিন পাহাড়ি বস্তিতে, খুঁজতে হবে বোম্বেটেদের ছেড়ে যাওয়া কুঠি-বন্দর। কে জানে কোথায় মিলে যায় ভুলে যাওয়া রসনাপথের হারানো রুটম্যাপ!

জন্ম ইস্তক কলকাতায়। শিক্ষা দিক্ষার খতিয়ানে ঘোর বিড়ম্বনার আশঙ্কা রয়েছে বলে আপাতত উহ্য। নোলা-সর্বস্ব জীবন। যে কোনও মুলুকের হরেক কিসিম পদ চেখে দেখার নেশা আশৈশব। পাকযন্ত্র চালু রাখা বাদে আরও কিছু সযত্নলালিত বদভ্যাস - হকেনকে খুন্তিবাজিতে সহবাসীদের নাকাল করা। বাতিক - ইনসমনিয়া কাজে লাগিয়ে রাত্তির জেগে বইপত্তর ঘাঁটা। তাতে হাঁফ ধরলে তল্পিতল্পা গুটিয়ে নিরুদ্দেশ হওয়ার কুমতলব হামেশাই দেখা দেয়। জুতসই বিষয় আর দোসর জুটিয়ে কাজ ফেলে খোশগল্প আর হল্লা করার দুর্নাম বরাবর। প্রকাশিত বই - খ্যাঁটনসঙ্গী।

9 Responses

  1. আরে মশাই, এমন একখানি চিজকাহন পড়তে গিয়ে তো একখিলি পানও শেষ হলনা, এমনই তর তর। ‘চিজ’ বটে আপনি, পাঠকদেরও cheezy করে দিলেন। তো প্রতি উপহারে এক আশ্চর্য চিজ জানাই। এই নাহুম সাহেবের বৌদি, প্রায় নব্বই, Ms. Flower Silimon, এখন প্রবীনতম ইহুদী। থাকেন ময়রা স্ট্রীটের কাছে। তাঁর হেঁশেলপনা থেকেই সম্ভবত নাহুমের দোকানদারির সাত সতেরো। এঁর তৈরী সেই অসামান্য ইহুদী চিজ ও চিজের বাহার জোহার জানতে সটান যোগাযোগ করুন। ইনি নিজেই এক অসামান্য হেঁশেলের অবিস্মরণীয় গৃহিনী এবং ইতিহাস। মাঝে কিছুটা সময় ইজরায়েল বাসের সময় তাঁর রেস্তোঁরার নাম ছিল ” মহারাজা” আর তাঁর লেখা বই এরনাম Three Cups of Flower.
    চলে যান মশাই, ঠকবেন না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *