অরুণা আসফ আলি, লক্ষ্মী সেহগাল, সুচেতা কৃপালিনী, তারারানি শ্রীবাস্তব, কনকলতা বড়ুয়া সহ আরও অসংখ্য মহিলা স্বাধীনতাসংগ্রামীদের কথা আমরা মনে রাখিনি। কিন্তু সত্যি সত্যি এঁরা ছাড়া কি সম্ভব ছিল দেশের স্বাধীনতা? তাঁরাও একই ভাবে পুরুষের পাশাপাশি ব্রিটিশ রাজশক্তির বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন, গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, মিছিলে হেঁটেছেন, নারকীয় যন্ত্রণা ভোগ করেছেন, কারাবরণ করেছেন, জীবন দিয়েছেন দেশের জন্য, দেশবাসীর মুক্তির জন্য। ভারতীয় নারীর দুর্বল, কোমল, অবনত রূপটিকে নস্যাৎ করে যে বীর রমণীরা ইংরেজদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন গুলাম কউর তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য।

দেশের জন্য সব ছেড়েছেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার লড়াই-এ অংশ নেবেন বলে নির্দ্বিধায় নিরাপদ সংসারের আশ্রয় ফেলে চলে এসেছিলেন। স্বামীর কথাও ভাবেননি এক বারের জন্য। কিন্তু দেশবাসী মনে রেখেছে কি এই প্রতিদান? ইতিহাস নারীদের শৌর্য আর আত্মত্যাগের কাহিনী প্রায়শই ভুলে যায়। বিস্মৃতির অতলে আবছা হয়ে আসে তাঁদের মুখগুলো। বীরাঙ্গনাদের জয়গান তেমন ভাবে গাওয়া হয় না! গুলাব কউর এমনই এক বীর নারী।

১৮৯০ সালে পঞ্জাবের সাংরুর জেলার বক্সিওয়ালা গ্রামে জন্ম গুলাবের। তাঁর জীবন সম্পর্কে খুব বেশি নথি পাওয়া যায় না। কিন্তু মান সিং নামক এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছিলেন বলে জানা যায়। দেশের অর্থনৈতিক সংকট থেকে রেহাই পেতে এই দম্পতি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে দেশান্তরী হওয়ার বাসনা নিয়ে ফিলিপাইনের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন। যাত্রাকালে গদর পার্টির কিছু বিখ্যাত সদস্যের সঙ্গে তাঁদের পরিচয় হয়। প্রসঙ্গত, ইংরেজদের বিরুদ্ধে এই গদর পার্টির সংগঠক ছিলেন পঞ্জাবি শিখ অভিবাসীরা। গদর পার্টির সদস্যদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে প্রথমে এই পঞ্জাবি দম্পতির দু’জনেই ঠিক করেন দেশে ফিরে ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেবেন। কিন্তু পরে মান সিং আমেরিকাতে চলে যেতে চাইলে, গুলাব স্বামীর সঙ্গে না গিয়ে ফিরে আসেন। আর কোনও দিকেই না তাকিয়ে গদর আন্দোলনে যোগদান করেন তিনি।

গদর দলের আরও অন্যান্য ৫০ জন সদস্যের সঙ্গে গুলাব কউর ভারতের উদ্দেশে যাত্রা করেন ফিলিপাইন থেকে। ভারতে ফিরে আসার পর তিনি ভারতের সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের এক জন মুক্তিযোদ্ধা হন। কপূরথালা, জলন্ধর, হোসিয়াপুর অঞ্চলে তিনি এক জন সক্রিয় বিপ্লবী হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। অসংখ্য সাধারণ মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করে সশস্ত্র আন্দোলনে নিয়ে আসেন। স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক সাহিত্যকে যুক্ত করে তিনি তা ছড়িয়ে দেন সবার মধ্যে, যাতে জাতীয়তাবাদ চেতনা সুদৃঢ় হয় জনমানসে। বিপ্লবীদের ছাপার প্রেসগুলিতে তিনি কড়া নজরদারি রাখতেন। মানুষের মধ্যে ব্রিটিশ-বিরোধী আবেগ ও মনোভাব সঞ্চার করার পাশাপাশি তিনি গদর পার্টির সদস্যদের অস্ত্র ও গোলাবারুদের জোগান দিতেন। অন্যদের গদর পার্টিতে যোগ দিতে প্ররোচিত করতেন। অবশেষে ব্রিটিশ সরকারের হাতে ধরা পড়েন এবং রাজদ্রোহী হিসেবে গ্রেফতার হন গুলাব কউর। লাহৌরের শাহি কিলাতে তিনি বন্দী জীবন কাটান। জেলে থাকাকালীন তাঁকে নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়। ১৯৩১ সালে জীবনাবসান হয় তাঁর।

banglalive logo

বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *