মেঘালয় এসে জয়ন্তিয়া পাহাড়ে যাওয়ার কথা সাধারণত মনেই থাকে না। এতদিনের চেনা ছক ছেড়ে এবার না হয় একটু অন্য রাস্তায় হাঁটলেন। শহর থেকে বেরিয়ে বামপন্থী হয়ে শিলং-বদরপুর-শিলচর জাতীয় সড়ক ধরে এগোতে থাকুন। গুয়াহাটি থেকে সড়কপথে শিলঙ হয়ে বরাক উপত্যকায় যাঁরা যাতায়াত করেন তাঁদের কাছে এই রাস্তা অত্যন্ত পরিচিত। শিলঙ থেকে চৌষট্টি কিলোমিটার দূরের জেলা শহর জোয়াই এড়িয়ে বরাক উপত্যকায় এগিয়ে যাওয়ার অন্য কোনো রাস্তা নেই।

জোয়াই শহরের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষগুলো দেখলে জয়ন্তিয়াপুর এবং পুরোনো সিলেট রাজের ঐতিহ্যের কথা মনে পড়ে যাবে। এই পথে যাওয়ার সময় জোয়াই পৌঁছনোর অনেক আগেই বাঁ দিকের গ্রামীন রাস্তায় কিছুটা এগোলেই পৌঁছে যাবেন নারতিয়াং। এই  গ্রামে এককালে ছিল জয়ন্তিয়া রাজাদের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী। এখানেই দেখতে পাবেন বিখ্যাত নারতিয়াং মনোলিথ। বিশাল চত্বরে অবিন্যস্তভাবে পড়ে রয়েছে নানান আকারের প্রায় শতখানেক বড় বড় পাথরের চাঁই। সবচেয়ে বড়টা লম্বায় প্রায় ন মিটার আর দু’ মিটার চওড়া। ভারতীয় উপমহাদেশে এত বড়ো মনোলিথ অন্য কোথাও দেখেছি কি না ভাবতে বসলে থই খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে বিলেত ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থাকলে মনে পড়ে যাবে ইংল্যান্ডের উইল্টশায়ার কাউন্টিতে দেখা স্টোনহেঞ্জ আর নারতিয়াং মনোলিথ-এর মধ্যে কোথাও যেন একটা সাযুজ্য রয়েছে। স্টোনহেঞ্জ কিন্তু অনেককাল আগেই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃত। কাজেই উপচে পড়া পর্যটকের অর্থে উইল্টশায়ার কাউন্টির কোষাগার সমৃদ্ধ হচ্ছে। আর নারতিয়াং? আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তত্বাবধানে ভাঙাচোরা রেলিং ঘেরা এক চত্বর হিসেবে কোনোরকমে হেলাফেলায় টিকে আছে। 

ইতিহাস বিশারদ এবং আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার মতে পনেরশো থেকে আঠারশো পঁয়ত্রিশ খ্রিস্টাব্দ অর্থাৎ তিনশো পঁয়ত্রিশ বছরের সময়সীমায় এই প্রস্তরখন্ডগুলি নারতিয়াং-এ রাখা হয়েছে। এগুলো আসলে জয়ন্তিয়া রাজাদের বিভিন্ন যুদ্ধ জয়ের স্মারক। একটু দূরেই দাঁড়িয়ে থাকা জয়ন্তিয়া রাজাদের গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ এই অভিমতকে সম্পৃক্ত করে।    

প্রকৃতি বিলাসী হলে জোয়াই পৌঁছোনোর একটু আগে ডানদিকে সামান্য পথ পেরিয়ে গেলেই পৌঁছিয়ে যাবেন ইয়ালঙ ইকো পার্ক।  পাহাড়ের উপর গড়ে তোলা হয়েছে এক টুকরো সাজানো অরণ্য। চারপাশে যেদিকে তাকাবেন নজরে আসবে পাহাড়-উপত্যকা-নদী-ঝরনা। মনে মনে হয়তো উচ্চারণ করবেন,- ইসস্ ফ্রান্স-সুইজারল্যান্ড যাওয়ার আগে এখানে কেন এলাম না! ইয়ালঙ ইকো পার্ক ছেড়ে বেরিয়ে এসে আবার জাতীয় সড়কে পৌঁছোনোর পরেই পেয়ে যাবেন থাডলস্কেইন লেক, উমহাঙ লেক ইত্যাদি। সময় থাকলে কাছাকাছির মধ্যে উমলাওয়ান লেকও দেখে আসতে পারেন।   

জোয়াই। মেঘালয়ের এগারোটি জেলার অন্যতম ওয়েস্ট জয়ন্তিয়া হিলস জেলার সদর শহর জোয়াই।  শিলং-করিমগঞ্জ-হাইলাকান্দি-বদরপুর-শিলচর সড়কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহর জোয়াই। প্রায় সতেরোশো বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে ছড়িয়ে থাকা ওয়েস্ট জয়ন্তিয়া হিলস জেলায় রয়েছে শ’ তিনেক গ্রাম। শহর গ্রাম মিলিয়ে প্রায় পঁয়ত্রিশ হাজার বাসস্থানে পৌনে তিন লক্ষ মানুষের বসবাস। মাতৃতান্ত্রিক সমাজে সংখ্যায় মেয়েরা বেশি। সাবেক জয়ন্তিয়া হিলস জেলা ভেঙে দু’ হাজার বারোর একত্রিশে জুলাই তৈরি হওয়া ইস্ট জয়ন্তিয়া হিলস-এর আয়তন প্রায়  দু’ হাজার বর্গ কিলোমিটার। দু’শো ছয়টি গ্রাম আর জেলা সদর মিলিয়ে প্রায় সোয়া লক্ষ মানুষের বসবাস। জেলা সদরের নাম বাংলায় ঠিকমতো উচ্চারণ করা কঠিন। খুব কাছাকাছি উচ্চারণ – কালেরিআট (Khliehriat)। 

শিলং থেকে সোহরা যাওয়ার পথে বাঁশের ধাঁচায় বাঁধা কপিকল আর তার পাশে জমে থাকা কয়লার স্তূপ তেমনভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে না। পাহাড়-টিলার মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র। চারদিকে তো ধূ ধূ প্রান্তর। জনবসতি নেই। তবে ইস্ট এবং ওয়েস্ট জয়ন্তিয়া হিলস  জেলা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বাঁশের ধাঁচায় বাঁধা কপিকল দিয়ে কয়লা তোলার এমন অপরিচিত ব্যবস্থাকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। দুই জেলায় রয়েছে অসংখ্য কয়লা তোলার গর্ত। অথবা কয়লা খনি। আপনার-আমার চোখে প্রথম প্রথম আশ্চর্য লাগলেও এই পথের নিয়মিত যাত্রীরা অবিশ্যি এ দৃশ্য দেখতে অভ্যস্ত। আবার স্থানীয় মানুষের কাছেও এইসব খনি অত্যন্ত পরিচিত। স্থানীয় লোকজন আরও জানেন যে এই গহ্বরগুলিই আদতে এখানকার সম্পদ। এমনকি শিলং শহরের প্রাচুর্যর অনেকাংশের জোগান দেয় এইসব গর্ত থেকে বের করে আনা কয়লা।     

মেঘালয়ের অনেক জায়গায় বিশেষত ইস্ট ও ওয়েস্ট জয়ন্তিয়া জেলার অধিকাংশ এলাকায়  মাটির গভীরে রয়েছে কয়লা। ভারতের সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিল মেঘালয় রাজ্যে প্রযোজ্য বলে জমির মালিক ওই কয়লার স্বত্বাধিকারী। কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের পক্ষে কয়লা সমৃদ্ধ এইসব জমি অধিগ্রহণ সম্ভব নয়। তার ওপর এই কয়লা উন্নত মানের নয় বলে কয়লা উত্তোলনের আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগে কোনও নামকরা সংস্থা এগিয়ে আসেনি। ফলাফল, প্রচলিত পদ্ধতিতে মাটিতে গর্ত খুঁড়ে তার ভেতরে সুড়ঙ্গ তৈরি করে তুলে আনা হয় প্রকৃতির নিজস্ব সম্পদ। সুড়ঙ্গ বেশি গভীর নয়। প্রশস্তও নয়। কত গভীরে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য শাখা-প্রশাখার সমন্বয়ে গঠিত এই খনি ব্যবস্থা তা কারও জানা নেই।  না আছে তার কোনো নকশা না আছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যখন যেদিকে কয়লা পাওয়া যায় সেদিকেই গাঁইতি মারতে মারতে এগিয়ে চলে খর্বকায় শীর্ণ শ্রমিকের দল। তাদের জানা নেই কোথায় গাঁইতি চালালে হঠাৎ করে নদীর তলদেশে ছিদ্র হয়ে যেতে পারে অথবা ভূগর্ভস্থ কোনো জলস্তরে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। সবমিলিয়ে ইঁদুরের গর্তের এ এক পরিবর্ধিত সংস্করণ। প্রযুক্তির পরিভাষায়- ব়্যাটহোল মাইনিং। বেশি যন্ত্রপাতি নিয়ে বলিষ্ঠ শ্রমিকের পক্ষে ভেতরে ঢুকে কাজ করা সম্ভব হয় না। ছোটখাটো চেহারার রোগাসোগা বালক-কিশোরই জমির ভেতরে যাওয়ার উপযোগী। সেভাবেই বাছা হয় এইসব খনির শ্রমিক। স্থানীয় বালক-কিশোর না পাওয়া গেলে প্রতিবেশী অসম-মিজোরাম-মনিপুর থেকেও গরীব ঘরের বালক-কিশোরদের অর্থের লোভ দেখিয়ে আনা হয়। প্রয়োজনে প্রতিবেশী বাংলাদেশ এবং নেপাল থেকেও সংগ্ৰহ করা হয় অপ্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিক। অনেকের মতে অন্তত হাজার পঞ্চাশ অপ্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিক মেঘালয়ের বেআইনি খনিগুলিতে কর্মরত। দিন-মজুরের কাজ বলে এদের না আছে কোনো অর্থনৈতিক নিরাপত্তা কিংবা সামাজিক  অধিকার। অসুস্থ হলে মালিক কোনও দায়িত্ব নেয় না। কাজ করতে গিয়ে আহত হলেও মালিক দায়িত্ব এড়িয়ে যায়। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে প্রথমে খবরটা চাপা দিয়ে মালিক নির্বিকার থাকে। একান্তই জানাজানি হয়ে গেলে শেষকৃত্য বাবদ থোক টাকা দিয়ে মালিক হাত ধুয়ে ফেলে।

কবে থেকে এমন কান্ড চলছে তা বলা মুশকিল। নথিভুক্ত তথ্য অনুসারে অবশ্য বিংশ শতাব্দীর শেষভাগ থেকেই এই ব্যবস্থার রমরমা। এবং সেই সুবাদেই জানা যায় যে এইসব ছোটো ছোটো ইঁদুরের গর্তের মতো খনিতে মাঝে মাঝেই বিপর্যয় ঘটে। কখনও সুড়ঙ্গ বাড়তে বাড়তে নদীর তলদেশে ভাঙন ধরিয়ে দেয়। হু হু করে সুড়ঙ্গের মধ্যে জল ঢুকতে থাকে। কখনও আবার সুড়ঙ্গ এগোতে এগোতে ফাটিয়ে দেয় জলস্তরের দেওয়াল। ফলাফল,- সুড়ঙ্গের মধ্যে ঢুকে যায় নিয়ন্ত্রণবিহীন জলস্রোত। এবং হারিয়ে যায় অগণিত প্রাণ। তাদের পরিচয় বেশিরভাগ সময় অজানা থেকে যায়। নাম-ধাম তো দূরের কথা ঠিক কতজন এইসব বিপর্যয়ের বলি হয় তারও কোনও হিসেব নেই।    

কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার ধারাবাহিক প্রচার এবং আইনী বিশ্লেষণের ফলে দু’ হাজার চোদ্দোর সতেরোই এপ্রিল জাতীয় পরিবেশ আদালত মেঘালয়ের কয়লা খনন ব্যবস্থাকে অবৈধ বলে ঘোষণা করে। খনন বন্ধের নির্দেশ জারি হয়। জমির ওপর জমে থাকা কয়লা পরিবহন নিষিদ্ধ। জমির মালিক পক্ষ আদালতের দ্বারস্থ হলে সুপ্রিমকোর্ট একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কয়লা পরিবহনের নির্দেশ দেয় যাতে জমে থাকা সমস্ত কয়লা সরিয়ে ফেলা যায়। প্রথমবার সময়সীমা শেষ হয়ে আসার প্রাক মুহূর্তে জমি তথা খনির মালিকরা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন যে আরও কিছুদিন সময় না দিলে সমস্ত কয়লা সরিয়ে নেওয়া যাবে না। আদালত আবেদন মেনে নেয়। তারপর বারবার একই আবেদন চলতে থাকে। এবং সময় বাড়ানোর ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় আদালতের সম্মতি পাওয়া যায়। প্রশ্ন ওঠে, খনিমুখে কত কয়লা জমে ছিল যা পাঁচ বছরেও সরিয়ে দেওয়া গেল না।                  

 এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল ২০১৮-র ১৩ই ডিসেম্বর। ইস্ট জয়ন্তিয়া জেলার কসান গ্রামের এক খনিতে তলিয়ে গেল পনেরোজন (মতান্তরে ষোলো) শ্রমিক। অভিযোগ, সুড়ঙ্গ কাটতে কাটতে এগিয়ে যাওয়ার সময় শ্রমিকদের গাইতি ফাটিয়ে দেয় পাশের নদীর তলদেশ। হু হু করে জল সুড়ঙ্গের মধ্যে ঢুকতে শুরু করে। বেআইনি এই খনিতে অন্যান্য খনির মতোই না ছিল কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা না উদ্ধার করার সাজসরঞ্জাম। ফলে হারিয়ে গেল জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোজগারের সন্ধানে কাজ করতে থাকা এতগুলি বালক-কিশোর। চূড়ান্ত বিচারে এরা বেআইনি কয়লা খনির শ্রমিক।

খনি গহ্বর ও সুড়ঙ্গের মধ্যে জল ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ বিশেষত গ্যাস। এর মধ্যে এক মাসের বেশি সময় কোনো মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। এই বাস্তবতা মেনে নিতে এত আপত্তি কেন বলা মুশকিল। এই দুর্ঘটনার পরে রাজ্যের কোনো জনপ্রতিনিধি ঘটনাস্থলে ক্ষণেকের জন্যেও উপস্থিত হননি। অবশ্য আসবেন কোন মুখে? তাঁদের অনেকেই তো এইসব বেআইনি খনির মালিক। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরেও কি আশপাশের আরও নব্বইটি বেআইনি খনির কাজ বন্ধ হয়েছে? না, হয়নি। খবরের কাগজ, টিভি চ্যানেলে কয়েকদিন বিষয়টি প্রচারিত হলেও সমস্ত বেআইনি খনি অবিলম্বে বন্ধ করার কথা এখনও পর্যন্ত কোথাও উচ্চারিত হয়নি। বেআইনি খনিটির মালিক জেমস সুখলেইন দুর্ঘটনার পরে পালিয়ে যায়। কয়েকদিন পর তাকে গ্রেফতার করে প্রশাসন কৃতিত্ব দাবি করেছে। অথচ সামগ্রিক ভাবে এন জি টি-র নির্দেশ প্রয়োগ করে সমস্ত বেআইনি খনি বন্ধ করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।                         

খাতা-কলমে জমির মালিক তার জমির ভেতরে থাকা মজুদ কয়লার  স্বত্বাধিকারী হলেও এক বিরাট মাফিয়া চক্র পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে। কোন খনির কয়লা কোন ট্রাকে ভর্তি করা হবে থেকে শুরু করে কোন ট্রাক কোথায় যাবে তা ঠিক করে দেয় মাফিয়া চক্রের নিয়োগ করা একদল দালাল। এদের বিরুদ্ধে গেলে প্রাণ সংশয় হতে পারে। কসানের দুর্ঘটনার মাসখানেক আগে ইস্ট জয়ন্তিয়া জেলারই কং অং গ্রামে আক্রান্ত হলেন প্রবীণ সমাজকর্মী আগনেস খারসিং। শ্রীমতি খারসিং মেঘালয়ে মহিলাদের সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। মেঘালয়ে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয়। প্রশাসনও  তাঁকে সমঝে চলে। বেআইনি খনি নিয়ে বহুদিন ধরেই তিনি আন্দোলন করছেন। নয়ই নভেম্বর সকালে তিনি পুলিশকে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন কোন ট্রাকে কোন জমির কয়লা বোঝাই করা হয়েছে তখন পুলিশের সামনেই একদল দুর্বৃত্ত আগনেস, তাঁর সহকর্মী অমিতা সাংমা এবং তাঁদের গাড়ির চালককে আক্রমণ করে। পুলিশ দুর্বৃত্তদের নিরস্ত্র করা বা গ্রেফতার করার বদলে আক্রান্তদের তড়িঘড়ি হাসপাতালে নিয়ে যায়। মাসখানেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পরে আক্রান্তরা বাড়ি ফিরেছেন।               

এই ঘটনায় সমগ্র মেঘালয় বিক্ষোভ মুখর হয়ে ওঠায় প্রশাসনের পক্ষে নীরব থাকা সম্ভব হয়নি। আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। দুর্বৃত্তদের নেতা আবার শাসক দলের ইস্ট ও ওয়েস্ট জয়ন্তিয়া জেলার কার্যকরী সভাপতি। এই ঘটনায় আবার প্রমাণিত হল মেঘালয়ের বেআইনি খনি থেকে নিয়মিত কয়লা তোলার কাজে প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দল এবং দুর্বৃত্ত সকলেই যুক্ত। নির্বিবাদে দিনের পর দিন আদালতের নির্দেশ অমান্য করে বেআইনি খনি থেকে কয়লা খনন ও পরিবহনের কাজ চলছে। প্রতিদিন রাজ্যের সম্পদ লুঠ হচ্ছে। অথচ আইনের ফাঁসে সরকারের পক্ষে এই কয়লা থেকে রাজস্ব আদায় সম্ভব নয়। তবে ভাগের বখরা নির্দিষ্ট জায়গায় ঠিক সময়ে পৌঁছে যায় বলেই নাকি প্রশাসন এমন নির্লিপ্ত আচরণ করে।  

আগের পর্বের লিঙ্ক https://banglalive.today/tales-from-jaintia-hills/

Amitabha Ray Author

প্রশিক্ষিত প্রযুক্তিবিদ ও পরিচিত পরিকল্পনাবিশারদ। পড়াশোনা ও পেশাগত কারণে দেশে-বিদেশে বিস্তর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। তার ফসল বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় বই। জোয়াই, আহোম রাজের খোঁজে, প্রতিবেশীর প্রাঙ্গণে, কাবুলনামা, বিলিতি বৃত্তান্ত ইত্যাদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *