১
ক্ষিদে পাওয়া সন্ধের কাছে
নত হয়ে আছে যুবতীকথন।
নির্জন বাঘিনীর মতো পা টিপে টিপে
সে চলে যাচ্ছে দিগন্তরেখা ছেড়ে,
নিয়নবিচিত্রা ছেড়ে,
থোকা থোকা আড্ডাফুল ছেড়ে,
ফিরে তাকাতে তাকাতে সে
ধীরে ধীরে বিন্দু হয়ে এল রাস্তায় –
রাত্রের মায়াবী উড়ান তাকে নিয়ে যায় না কোথাও।
২
দূর থেকে থেকে সে বিদগ্ধ মাছের খেলা দেখে।
পাখনা নাড়ার শিল্পে অনুগত হাততালি ওঠে,
আলোদের ক্যাকোফোনি ভরে দেয় জমাট নিশীথ।
বাঘিনীর হৃদয় জুড়ে পাক খায় সান্দ্র লিপিমালা, অপার কাহন
নিজস্ব এপিটাফ সে তীক্ষ্ণ দাঁতের ফাঁকে নিয়ে
চালাচালি করতে করতে গেঁথে দেয় অব্যর্থ ক্যানাইন –
শব্দের খুনের স্বাদ নিতে নিতে, শান্ত হয়ে আসে
আলোর রাজনীতি থেকে দূরে থাকা অরণ্য-হৃদয়।
৩
বাঘিনীর নীরব নখরে বেলা বাড়ে।
সন্ধ্যা পোহাইলে সে উত্তাপ ভ্রমণের দিকে যায়।
ভ্রমণের কৌশলে বাঁধা পড়ে সিনেমাপুলক
আর ইতিউতি কোনা থেকে ঝরে পড়া দৃষ্টির লোল,
মাঝে মাঝে ঝাড়া দিয়ে নিঃশব্দ থাবা ফেলে সে।
উজ্জ্বল ক্ষিদে তার তনুময় ডোরাকাটা হয়ে
শুয়ে আছে যেমন দিদারগঞ্জ যক্ষীর দেহনিম্ন ভাঁজ;
অবনত না হয়ে যে জেগে আছে হাজার বছর।
৪
নিচুজল খেতে খেতে বাঘিনীর জিভে ক্লান্তি আসে।
সে অন্য জলে যেতে চায়,
গা ভিজিয়ে স্নানসুখ ভক্ষণ করতে করতে
আপামর ব্যাজস্তুতি ধুয়ে ফেলতে চায়,
পাখলে সরাতে চায় দেহময় কারও যেন উপহৃত ক্লেদ –
কিন্তু এই অশেষ জঙ্গল তাকে বিষাদ-মেজ-এর মতো
ঘিরে ধরে থাকে। কংক্রিটপ্রতিভাময় ক্যানপিজীবন ছুড়ে দেয়।
ডোরাকাটা পশমের মধ্যে অন্ধকার দ্রব হয়ে এলে,
স্পর্শে নিজস্ব ওম নিজেই লেহন করে সে।
গুরু নিতম্বের মতো তার ঘন হয়ে আছে প্রেম,
ইচ্ছেকণাগুলি।
সঙ্গীতজ্ঞ মানস চক্রবর্তীর সুযোগ্যা কন্যা শ্রীদর্শিনী উত্তর ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে তালিম নিয়েছেন এক্কেবারে শিশুবয়স থেকে। সঙ্গীত তাঁর শিরা-ধমনীতে। টাইমস মিউজিক থেকে বেরিয়েছে গানের সিডিও। মুম্বইয়ের ইন্ডিয়ান আইডল অ্যাকাডেমিতে মেন্টরের ভূমিকা পালন করেন শ্রীদর্শিনী। লেখালিখিও তাঁর পছন্দের বিষয়।তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'শীতের অব্যর্থ ডুয়ার্স', 'এসো বৃষ্টি এসো নুন', 'রাজা সাজা হল না যাদের' এবং 'জ্বর-জ্বর ইচ্ছেগুলো' পাঠকমহলে সমাদৃত।
অসাধারণ সিরিজ। মন্ত্রমুগ্ধ ছাড়া কিছু বলার নেই। বারবার পড়ার মত লেখা। আপনার দুটো বই পড়েছি রাজা সাজা হলোনা যাদের এবং এসো বৃষ্টি এস নুন। আপনি নিজেই নিজেকে ক্রমাগত অতিক্রম করে চলেছেন। আরো পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।
খুব ভালো লাগল শ্রীদর্শিনী