এভাবেও ফিরে আসা যায় (প্রবন্ধ)

এমনই চলছিল গত প্রায় দুবছর! ওমা, হঠাৎ করে আবার সপ্তাহ দুয়েক আগে দেখি এক পিক-আপ ট্রাক থেকে লোটাকম্বল নামাচ্ছে জেসিকা! তড়াং করে সেটা থেকে লাফ দিয়ে নামল সাদা কুকুর ও দুই বাচ্চা। হাঁটতে বেরিয়ে তার দিন দুয়েক পরে দেখি, বাড়ির দরজা খোলা, জেসিকা ভেতরে বাড়ি পরিষ্কার করছে দেখা যাচ্ছে। খাবলা মেঝে আবার ফেরত আসা জিনিসে ভরে গেছে। আমাদের ব্যাকইয়ার্ডের পাশেই তাদের ব্যাকইয়ার্ডে সাদা কুকুর কালো কুকুর আবার একসঙ্গে দাপাদাপি করে খেলছে! বাড়ির সামনে জেসিকা ছোট ছোট গোলাপের চারা পুঁতছে।
আয়রন ম্যান ও ভয়াল ভাইরাস

হঠাৎ করে চায়ের দোকানে আয়রন ম্যানকে দেখে সবাই চমকে চোদ্দো! ট্যাঁপা তো চায়ের ভাঁড় উল্টে ফেলে নিজের বারমুডাটাই ভিজিয়ে ফেলল! দত্তবাড়ির বুড়োদাদু আস্তে করে আয়রন ম্যানকে জিজ্ঞেস করলেন, “ও বাবা টোনি, এই অসময়ে তুই আবার কশটিউম পরে চায়ের দোকানে উড়ে এলি কেন? কিচু হইয়েচে নাকি?” আয়রন ম্যান রেগে মেগে বলল, “বলি আক্কেলবুদ্ধি কি সব আলমারিতে তালা দিয়ে রেখে বেরিয়েছ? সবাইকে বার বার টিভিতে-রেডিয়োতে-কাগজে-ফেসবুকে বারণ করা হচ্ছে অকারণে ঘর থেকে বেরতে!
করোনা কোয়ারান্টাইন ও ফিটনেস

চালু কথায় যাকে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ বলে (কোনও যন্ত্রপাতির সাহায্য ছাড়া খালি হাতে যে ব্যায়ামগুলো করা যায়), কম সময় আর ছোট জায়গার জন্য সেগুলো আদর্শ। সোজা দাঁড়িয়ে ঘাড় দিয়ে শুরু করে একে একে নিচের দিকে নামতে থাকুন। দেহের প্রত্যেকটা জয়েন্ট একবার ডান থেকে বাঁয়ে আর বাঁ থেকে ডানে ঘুরিয়ে নিন। ঘাড়, কাঁধ, কবজি, কোমর, হাঁটু, অ্যাঙ্কল – এইভাবে।
দূরকে করেছ নিকট বন্ধু

গত দু’সপ্তাহ ধরে আমরা এক অদ্ভুত সময়ের মধ্যে বাস করছি। এক এক দিন ঘুম ভেঙে মনে হচ্ছে যেন সায়েন্স ফিক্শন-এর মধ্যে বেঁচে আছি। স্পর্শ থেকে দূরে, একে অপরের স্পর্শ বাঁচিয়ে বেঁচে থাকা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সব বন্ধ; এখন পড়াশোনা, গবেষণা, মিটিং সবকিছুর মাধ্যম ভার্চুয়াল। অর্থাৎ কম্পিউটার বা ফোন। শিক্ষার্থীদের দেখাশোনা হচ্ছে zoom, blue jeans, webex, ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে। হাত বাড়িয়ে প্রিয় বন্ধুকে ছোঁয়ার উপায় নেই। বড় জোর একটা দু’টো উড়ন্ত চুম্বন স্ক্রিন তাক করে পাঠানো যেতে পারে।
এই সময়, এই চিড়িয়াখানা

করোনা ভাইরাসের আড়ালে অন্য যে ভাইরাসটা লুকিয়ে বসে আছে, সে তো বহুদিন ধরে মানুষকে আক্রান্ত করে রেখেছে! সে শরীরে মারে না। মনকে ঝাঁঝরা করে ফেলে, ধীরে। খুব ধীরে। অসুস্থ মানুষ চায় একটা ছোট্ট, নিজস্ব পৃথিবী তৈরি করতে, যেখানে থাকবে শুধু তার পরিবার, তার ধর্ম, তার জাতি। প্রতিবেশীকে সেই পৃথিবী থেকে বহিস্কার করতে সে বিন্দুমাত্র পিছপা হয় না, যদি সে প্রতিবেশী অন্যধর্মী হয়। এই মানুষ স্বার্থপর।
ওয়র্ক ফ্রম হোম

সাধারণ দিন হলে এই সময়টায় দাপিয়ে বেড়াই। তোয়ালে ও অন্তর্বাস আমার সঙ্গে লুকোচুরি খেলে। আমি চার্চিলের মতো চিৎকার করে বাথরুমে প্রবেশ করি এবং পরিবার লজ্জা নিবারণের ব্যবস্থা না করলে ওই অবস্থাতেই বেরিয়ে আসার হুমকি দিই। কিন্তু এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতি। ওয়র্ক ফ্রম হোম, মানে ডব্লিউ-এফ-এইচ। নিয়ম মেনে আগে কুড়ি সেকেন্ড সাবান জলে হাত কচলাই। তারপর হালকা করে ওঁকে বলি, ব্রেকফাস্ট-এ পাঁউরুটি হলেই চলবে, বাড়িতেই তো আছি। টুকটাক খেতেই থাকব। আজ চান নয়, দাড়ি কামানো নয়। পুরো বেনিয়ম। কিন্তু বিধির বিধান হল করপোরেট পদে পদে পরীক্ষায় ফেলবে তার বিশ্বস্ত কর্মচারিকে।
করোনার কুশপুতুলি

আচ্ছা এতে রাখঢাকের কী আছে মশাই? রোগ হলে হবে, হয়েছে। স্বীকার করুন। সবার বাড়িতে আমাদের বুড়োমানুষেরা আছেন, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিসে ভোগা প্রচুর মানুষ রয়েছেন। আমাদের লিফট ইত্যাদি পরিষ্কার করা হচ্ছে সর্বক্ষণ। কিন্তু সেই ছেলেগুলি গায়ের জোরে আবার ঢুকে পড়বে না তো? সারাক্ষণ স্যানিটাইজেশন চলছে। পেপারওয়ালা, পুজোর ফুল, দোকান থেকে কয়েন ফেরত নেওয়া, স্যুইপার, মালি, ড্রাইভার সব বন্ধ করে আমরা হোম কোয়ারান্টাইনে রয়েছি। কিন্তু অবোধ এই বালকেরা? এরা এত অবাধ্য? প্লিজ কথা শুনুন সবাই। রোগ লুকোবেন না। রোগ ছড়াবেন না।
করোনার দিনগুলিতে আমরা

বাড়ি বসে অফিসের ডিউটি করার পর তো বাকি সময়টায় খবর দেখা ছাড়া কোনও কাজ নেই। অনলাইন প্ল্যাটফর্মও এক সময় ক্লান্তি ধরায়। তা হলে, নষ্ট করার মতো সময়টা পার করেও নিজের হাতে পড়ে থাকবে অঢেল সময়। তখন নিজের সঙ্গে সময় কাটাতেই হবে। আর নিজের সঙ্গে সময় কাটানোই হল সবচেয়ে বড় ভয়ের। আত্মনিরীক্ষা বিষম বস্তু।