চিরসখা হে (গল্প)

আমি তো রোজই স্কুলের পাশ দিয়ে যাই, জানিস। ভুল বললাম। রোজ না। মাঝেমধ্যে। ওই এরিয়ার দোকানের অর্ডার তুলতে যেতে হয়। এক এক দিন তো এক একটা এলাকা আমার। দোকানে যাই। অর্ডার তুলি। কার্ড সোয়াইপ করার মেশিনের মতো দেখতে একটা যন্ত্রে রিকুইজিশনগুলো পাঞ্চ করি। ডিস্ট্রিবিইউটারের কাছে সঙ্গে সঙ্গে চলে যায় সেগুলো। কয়েকদিন পরে ডেলিভারি দেওয়ার সময় আবার ডিস্ট্রিবিউটারের ছোট ম্যাটাডরে। স্কুলের পাশ দিয়ে গেলে তাকাই। তিনতলায় বারান্দার পাশের জানালাটা দেখি। ওইখানেই তো আমাদের ক্লাস নাইন। ক বিভাগ। মানে এ সেকশন। দোতলার মাঝামাঝি ওই ঘরটা। আমাদের ক্লাস সেভেন। খ বিভাগ। মনে পড়ে। ঘাড় উঁচু করে তাকালে কয়েকটা মাথাও দেখতে পাই। আমাদের তখনকার মতো ওরাও হয়তো এখন ভাবছে বড় হব কবে।
রক্ত (গল্প)

১ ক্যালেন্ডারের দিকে চোখ পড়তেই মনে মনে আবার হিসেবটা করে নেয় চন্দ্রানী। আজ থেকে ঠিক দেড় মাস আগে নিয়মিত শারীরিক ঋতু পরিবর্তনের হঠাৎ বেনিয়ম হওয়ায় খুব স্বাভাবিক উৎকন্ঠা এবং একরাশ বুক ধুকপুকুনি নিয়ে ড. চ্যাটার্জির কাছে ছুটে গিয়েছিল সৌরজ কে নিয়ে। ড চ্যাটার্জি বহুদিনের পরিচিত। ব্যস্ত এবং বেশ নাম করা স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ। ওরা যেতেই প্রেসক্রিপশন […]
বিসর্জন লেন

একটা আলতো শীত মেখে দাঁড়িয়ে আছে শহরটা। কেমন যেন আনমনা। বা উদাসীন। মাঝরাতে জানলা খুলে দেখা কার্নিশে দুটো বেড়ালের লড়াই বা ল্যাম্পপোস্ট চুঁইয়ে পড়া আলোর ছায়াপথ, কুয়াশার ভেতর হারিয়ে যাওয়া গলিমুখ, অবিরাম ডেকে চলা কুকুরগুলোর সাথে মাতালের কথার টুকরো সংলাপ অথবা পুলিশের টহলদার জিপের নিঝুমকাড়া ভাঙাচোরা শব্দ, এইসব ইলিউশনের ট্রাফিকে ঈশান অহেতুক আটকে পড়ে প্রায়ই। সবকিছুতেই একটা দেরি ওকে পিছিয়ে দেয়।
মনের ঝুলবারান্দা

আমি সুরঞ্জন। একটা অদ্ভুত সমস্যায় পড়েছি জানেন! কার সঙ্গে আলোচনা করব বুঝতে পারছি না। বাড়িতে আমি একা। না মানে ঠিক একা নই, সঙ্গে কয়েকটা বদ্রী পাখি আর দুটো বেড়াল আছে। অ্যাকোরিয়ামও আছে একটা। পাথর ভরা। জল নেই। এসব মৌলির শখের জিনিস। মৌলি আমার স্ত্রী। মৌলি থাকলে মাছগুলোও থাকত। সবথেকে বড় কথা আমার সমস্যাটা ওর সঙ্গে […]
রূপের আড়ালে

“এখানেও তুই না বলে দিলি?” মা’র করুণ মুখটার দিকে তাকিয়ে আদিত্যর এত অসহায় লাগে যে হেসে ব্যাপারটাকে হালকা করে দিতে চায়। “চিনুদির পছন্দ বিশ্বাস কোরও না। সেই লেকটাউনের মেয়েটার জন্য অত তদ্বির করল। তাকে বিয়ে করলে তোমাকে এত দিনে ভিটে ছাড়া হতে হত।” -অত অলুক্ষুনে চিন্তা করে কেউ বিয়ে করতে যায় না। -ওটাই তো ভুল […]
হনিমুনে যেমন হয়

বিয়ে হয়েছিল শেষ রাতে। বাসরঘরে যেতে যেতেই আকাশ ফর্সাঁ। মেয়েরা আক্ষেপ করেছিল এই রকম বিয়ের কোনও মানে হয় না। বাসর জেগে বরবউ-এর সঙ্গে রসিকতা করা গেল না, গানবাজনা হল না, এ কেমন বিয়ে! অবশ্য সবাই জানত ওই রাত ছিল মরশুমের শেষ বিয়ের রাত আর তার লগ্ন যদি শেষ রাত্রে পড়ে তাহলে কারও কিছু করার নেই। […]
অবরোহণ

তুমি অনর্থ করার মেয়ে, আমি জানি।” বাধ্য ছাত্রীর মতো আমি একটা ছোটো ছেলের পাশে পাশে হাঁটছি। গাড়ির নম্বর মিলিয়ে সিটে বসছি। পাশে বসছে চওড়া ঠোঁটের কৃষ্ণবর্ণ তরুণ। মেরুন পাঞ্জাবির পকেট থেকে তার দু’সপ্তাহ আগের হারিয়ে যাওয়া দুলটা বার করে বলছে, “এটা আমার কাছে থাকে এখন। রোজ। আউটডোর করার সময়, ইনডোরে রাউন্ডের সময়, মাঝরাতে ডেলিভারি করানোর সময়।
রি-ইউনিয়ন

(১) প্রথমে একটু সময় লেগে যাবে চোখটা সইয়ে নিতে। চামড়া পোড়ানো তাত,ক্রমশঃ তা-ও সয়ে যাবে। আলো আঁধারিতে পাগলের মতো ড্রাম বাজাচ্ছে প্রাগৈতিহাসিক ক’জন মানুষ, মানুষী। মেয়ে তো নয়! যেন পাগলিনী এক। মাথা ঝাঁকাচ্ছে ড্রামের তালে তালে। এলোচুল ঢেকে দিচ্ছে মুখ-চোখ-নাক। দু’হাতে ধরে আগুনের তরবারি। খোলা তরোয়ালের ফলায় দাউ দাউ জ্বলছে মন্দিরের চূড়ার মতো লাল মায়াবি […]