মালালার পাশে সত্যজিৎ (প্রবন্ধ)

তাঁর ছবির উপরের স্তরে আছে এক সরস-সরলতা। ফলে, তাঁর ‘দেবী’র মতো ভয়ংকর ট্র্যাজিক ছবিরও গোড়ার দিকে যথেষ্ট হাসির উপাদান আছে। তিনি জানতেন — সরল ও সংযত হিউমারের পটভূমতিে ট্র্যাজেডির ঘন-অন্ধকার মূর্তিটা অনেক বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।
সত্যজিৎ ও ঘোষালবাড়ির গান

তবে যে জিনিসটি সত্যজিৎ দেখালেও আমাদের কাছে উহ্য রয়ে গেছে তা হল ঘোষাল পরিবারে শুধু গণেশই ছিলেন না, ছিলেন সরস্বতীও। সারস্বত সাধনার ভিন্ন মার্গের নিদর্শন সেখানে দেখিয়েছেন সত্যজিৎ। ঘোষাল পরিবারের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত মার্গসঙ্গীত। ছবির একটি দৃশ্যে ফেলুদা, তোপসে, জটায়ুকে অম্বিকাবাবুর সঙ্গে আলাপ করাতে নিয়ে যাচ্ছেন উমানাথ। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে ভেসে আসে ঠুমরি। কেসরবাঈ-এর কণ্ঠে ‘কাহে কো দারি’। উমানাথ জানান, তাঁর ঠাকুরদা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বড় ভক্ত। একসময় গানবাজনা নিয়ে প্রচুর মেতে থেকেছেন। এখন একজন চাকর রয়েছে শুধু গ্রামাফোনের রেকর্ড পাল্টাবার জন্য!
মানিকদার গান-গল্প

আমরা যখন হাল্কা আলাপচারিতায় ব্যস্ত হঠাৎ “এসে গেছে” ”এসে গেছে” বলে একটা চাপা গুঞ্জন শুনতে পেলাম। স্টুডিওয় তখন পিন পড়লেও শব্দ হবে। তারপরেই মানিকদার প্রবেশ। ঢুকতে ঢুকতেই ওই বাজখাঁই গলায় “অলোক, তোমার সব মিউজিশিয়ান এসে গেছে?” বলে হাঁক দিলেন।
সত্যজিতের প্রচ্ছদ, প্রচ্ছদের সত্যজিৎ

সিগনেটের অন্যান্য বইতে শুধুমাত্র ক্যালিগ্রাফি অথবা লেটারিং দিয়েও অসামান্য কিছু প্রচ্ছদ করেছিলেন সত্যজিৎ। যেমন জীবনানন্দের ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি, ‘রূপসী বাংলা’, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তর ‘ইন্দ্রানী’, সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ‘অর্কেস্ট্রা’। ‘অর্কেস্ট্রা’য় নামের তিনখানা অক্ষর লেখা হয়েছে সরু লাইনকে একটু অমসৃন করে, যেন ছোট ছোট ঢেউ এসে ওদের সামান্য দুলিয়ে দিচ্ছে আর ওরা সুরের ছন্দে ভেসে বেড়াচ্ছে।
স্মৃতির সত্যজিৎ

প্রুফ খুব তাড়াতাড়ি দেখতেন এবং ছাপার কোনও ভুল থাকলে খুব তাড়াতাড়ি ধরে ফেলতেন। কিন্তু ওই গমগমে গলায় উনি যে কোনও বিষয়ে আমাকে যাই বলতেন, আমার কাছে ধমক বলে মনে হত। উনি যতক্ষণ প্রুফ দেখতেন আমি ততক্ষণ অবাক হয়ে ওঁর ঘরটা দেখতাম। চারিদিকে কেবল বই, ম্যগাজিন, খাতায় ভর্তি। যেহেতু বই আমার খুব প্রিয়, এই ঘরটাও আমার দারুণ লাগত।