রবিরাগে- চতুর্থ পর্ব: রবীন্দ্রনাথ ও মাইহার

Classical Music and Rabindranath part4

মাজ-খাম্বাজের উৎস যাই হোক, আলাউদ্দিনের ঘরের শিষ্যরাই যে তা বাজিয়ে তার প্রচার করেছেন, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। প্রশ্ন ওঠে, রবীন্দ্রনাথ এ রাগের সন্ধান পেয়েছিলেন কীভাবে! এই প্রশ্ন ওঠা অসমীচীন নয়, কারণ ‘আজি যত তারা তব আকাশে’ গানটি রচিত হয়েছিল মাইহার ঘরানার প্রধান দুই প্রতিনিধি, আলি আকবর খাঁ ও রবিশঙ্করের জন্মের প্রায় পনেরো বছর আগে এবং রবীন্দ্রনাথ প্রয়াত হয়েছেন ওঁরা জনসমক্ষে বাজানো শুরু করার অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই। আলাউদ্দিন খাঁ নিজে এই রাগ বাজিয়ে রেকর্ড করেছিলেন, বা কোনও অধিবেশনে বাজিয়েছিলেন, এমন খবর আমার কাছে নেই। সুতরাং এক্ষেত্রে আলাউদ্দিনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের আলাপই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মাজ-খাম্বাজের পরিচয় ঘটিয়েছিল, এমন ভাবা হয়ত খুব অন্যায় নয়। এত কিছু সত্ত্বেও একটা বড়রকম খটকা থেকেই যায়, কারণ— রবীন্দ্রনাথ যখন ‘আজি যত তারা তব আকাশে’ রচনা করেন, অর্থাৎ ১৯০৪ সালে, বা তারও অনেক আগে যখন ‘বাল্মীকি প্রতিভা’র জন্য রচনা করেন ‘ব্যাকুল হয়ে বনে বনে’, তখনও আলাউদ্দিনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ হয়নি।

রবীন্দ্রগানে রাগসঙ্গীতের, বিশেষত খাম্বাজ রাগের প্রয়োগ নিয়ে লিখলেন সুভদ্রকল্যাণ…

জীবন থেকে জীবনে: পর্ব ১৫

Pundit Ravishankar playing

রবিশঙ্কর ওঁর জন্মদিনের আসর শেষ করেছিলেন অতি মধুর ও রোমান্টিক পঞ্চম সে গারা বাজিয়ে। হল সেদিন ভেঙে পড়ছিল ‘আ হা হা!’ ও হাততালিতে। পণ্ডিতজি থেকে রবুদা হওয়ার গল্প শংকরলাল ভট্টাচার্যের কলমে। পর্ব ১৫।

ঈশ্বর এ রকমই দেখতে

Ravishankar portrait by Syamantak Chattopadhyay

মাঝরাতের কিছু আগে পণ্ডিতজি বসলেন বাজাতে। আমি অনুভব করলাম একটা রাত কী করে তৈরি হয়। একটু একটু করে কালো থেকে গাঢ় নীল থেকে আরও গভীর কোনও বর্ণহীন রাত। মোহিত ছিলাম। মোহভঙ্গ হল, যখন দেখলাম চ্যাপেলের ছাদের কাছের অনেক উঁচু প্য়ানেল দিয়ে ভোরের আলো এসে পড়ছে। সেতারে তখন ভৈরবী। সে ভোরও তৈরি করছেন পণ্ডিতজি। ভোরের যেন একটা গন্ধও ছড়িয়ে পড়ছে সুরের সেই মূর্ছনা থেকে।

বিশ্বজন মোহিছে

pandit ravishankar

রবিশঙ্কর আজীবন ভারতীয় মার্গসঙ্গীতের প্রতি থেকেছেন শ্রদ্ধাশীল। আর বারে বারে পাশ্চাত্যের উপযোগী করে তাকে পরিবেশন করেছেন। আবার জাপানি সঙ্গীতের সঙ্গে তাকে মিলিয়েও, দুই দেশের বাদ্যযন্ত্রের সম্মিলিত ব্যবহার করে নিরীক্ষা করেছেন। সারাক্ষণ, সব শুচিবায়ু ভেঙে, তিনি মেলানোর, মেশানোর, চেষ্টার, কৌতূহলের রাজ্যের বাসিন্দা হতে চেয়েছেন। এই প্রাণশক্তি আর প্রতিভার মিশ্রণেই, তিনি বিদেশের কাছে ভারতীয় মার্গসঙ্গীতের মুখ। আর ভারতের কাছে, পাশ্চাত্যের জৌলুসযুক্ত তারকা।

মীড় দিলে নিষ্ঠুর করে…

pandit ravishankar

রবিশঙ্কর তাঁর গুরু আচার্য আলাউদ্দিন খানের তালিম মাফিক শুরু করলেন বিলম্বিত তিনতালে গৎ বাজানো। এবং আজীবন কর্ণাটকী সঙ্গীত পদ্ধতিতে বিশ্বাসী থাকার দরুণ তিনি সেই গতে লয়ের মারপ্যাঁচ, অঙ্কের হিসেব, তেহাই ইত্যাদি নিয়ে এলেন। এতে তাঁর বাজনায় আমরা পেলাম সুরের সঙ্গে তাল-লয়ের অসামান্য সামঞ্জস্য।