গতকালের কলকাতা (পর্ব ৩): সেকালের পথঘাট ও তার নামকরণ

এই খাল অচিরেই ইংরেজদের দুয়ো-রানি হয়ে গেল, যখন ব্রিটিশদের সুরক্ষার জন্যে পরিখার অনুমতি দেওয়া আলিবর্দি খাঁর নাতি কলকাতা আক্রমণ করল আর এই পরিখা কোনোরকম সুরক্ষাই দিতে পারল না। এর চল্লিশ বছর বাদে শহরে সার্কুলার রোড তৈরির সময় এই খাত বুজিয়ে দেওয়া হয়। সেসময় এই সার্কুলার রোড হয়ে উঠল শহরের অঘোষিত সীমানা আর এই সার্কুলার রোডের পাশে বাসা বাঁধল সেই মানুষেরা যারা গ্রামেও প্রান্তিক আর অস্পৃশ্য ছিল— যাদের অভাবে পরিষেবা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ত, কিন্তু নিজেরা পরিষেবা সীমানার বাইরে থাকাকেই নিয়ম বলে মেনে নিয়েছিল।
পুরনো কলকাতার অজানা গল্প, লিখলেন পিনাকী ভট্টাচার্য। আজ তৃতীয় পর্ব…
গতকালের কলকাতা (পর্ব ২): হারিয়ে যাওয়া পথঘাট

এই ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কেমন ছিল জানেন? প্রাণকৃষ্ণ দত্ত’র লেখায় পাওয়া যায় ১১ই অক্টোবরের এই ঝড়ে কলকাতা বন্দরে দাঁড়ানো নয়টা ব্রিটিশ জাহাজের মধ্যে আটটা, চারটে ওলন্দাজ জাহাজের মধ্যে তিনটে সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তার সাথে বিশ হাজার নৌকো ভেঙে পড়েছিল এই ঝড়ে। তিন লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিল ঘূর্ণিঝড়ে। ‘এক রামে রক্ষে নেই, সুগ্রীব দোসর’ প্রবাদ মেনে ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গী হয়েছিল সাইক্লোন।
পুরনো কলকাতার অজানা গল্প, লিখলেন পিনাকী ভট্টাচার্য…
গতকালের কলকাতা (পর্ব ১) কলকাতা বাজারের গল্প

বর্তমান বাগবাজার অঞ্চলে ব্রিটিশ ধনকুবের ক্যাপ্টেন চার্লস পেরিনের বাগানবাড়ি ছিল। ১৭৫২ সালে তাঁর মৃত্যুর পরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সেই জায়গা কিনে নিয়ে এক ওয়াচ-টাওয়ার বসায়, সেইসময়ের ৩৩৮ টাকা খরচা করে। কারণ? নবাব সিরাজদৌল্লা কলকাতা আক্রমণ করবেন, এই খবর তাদের কাছে আগেই পৌঁছেছিল। তাই পশ্চিমে হুগলী নদী আর উত্তরের জলা-জঙ্গলের দিকে নজর রাখতে এই ওয়াচ-টাওয়ার, যাতে নবাবের সৈন্য দেখলে তৎক্ষণাৎ কেল্লায় খবর দেওয়া যায়।
লিখলেন পিনাকী ভট্টাচার্য…
ক্যাম্পবস্তির বালকবেলা: অন্তিম পর্ব

সপ্তাহে একদিন একটি পয়সা পেত ছেলেটি মায়ের কাছে৷ মায়ের অফুরান আদরের ভাণ্ডার, যা রিফিউজি যুগ পুরোপুরি শেষ করে দিতে পারেনি৷ ওই একটি দিনে সে জড়ো করত সাতদিনের আনন্দ৷ ওই একটি দিন হয়ে উঠত সীমানাহীন, পৃথিবী হয়ে উঠত একান্তভাবে তার, পৃথিবীর সব রাস্তা তার৷ প্রবল বেগে সে রিং ছোটাত এইজন্যে যাতে একঘণ্টায় যেন তার চেনা পৃথিবীর বাইরেটাও ছোঁয়া যায়৷ নোনাপুকুর ট্রামডিপো পেরিয়ে, ওয়েলেসলি স্কোয়ার পেরিয়ে, ময়দান পেরিয়ে নদীর ওপারে বাজবে ট্যাং ট্যাং৷
উদবাস্তু জীবন আর কলকাতার শৈশব কৈশোর নিয়ে মধুময় পালের কলম ‘ক্যাম্পবস্তির বালকবেলা’, অন্তিম পর্ব আজ
ক্যাম্পবস্তির বালকবেলা: পর্ব ২৩

দিদিমা মারা গেলেন চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে৷ বিনা চিকিৎসায়, সারাদিন বারান্দায় পড়ে থেকে৷ ডাক্তারেরা পাশ দিয়ে গটগট করে হেঁটে গেলেন ক্রুশিয়াল কনফারেন্সের হাবভাবে৷ খটখটিয়ে নার্সরা হেঁটে গেল উড়ন্ত ব্যস্ততায়৷ দিদিমা পাঁজর ভেঙে ভেঙে বাতাস টেনে টেনে একসময় স্থির হয়ে গেলেন৷ নিজের দেশ থেকে, ভিটেমাটি থেকে দূরে অনাহার অবহেলা অসম্মানের অকুস্থলে তাঁর দেহ ছাই হল৷ চিতার খরচ মেটানো হল চাঁদা তুলে৷
মধুময় পালের কলমে পুরনো কলকাতার রাজনৈতিক কালবেলার আখ্যান…
ক্যাম্পবস্তির বালকবেলা: পর্ব ২২

সম্ভবত ১৯৬৯ সাল৷ বি.এ. ফাইনাল দিয়েছি কোনওক্রমে৷ রাজনীতিতে জড়িয়েছি বেশ৷ চাঁদুদা বললেন, হেমাঙ্গদার বাড়ি থেকে দুপুরে খাবার পৌঁছে দিতে হবে মেন্টাল হাসপাতালে৷ ঋত্বিক ঘটক আছেন ওখানে৷ একটু ভাবতে হল৷ কারণ পুলিশ নজর রাখছে৷ পুলিশের হয়ে কংগ্রেসের ছেলেরাও৷ দিনের বেলা চলাফেরা করতে হয় সাবধানে৷ তবু রাজি হয়ে গেলাম৷ দু-তিন দিন পৌঁছে দিয়েছিলাম৷ বাকি দিনগুলো অন্যেরা৷ তখনই শুনি ঋত্বিক ঘটক নাটক করছেন হাসপাতালে৷ বিকেলে সন্ধেয় গেটের কাছে দাঁড়ালে রিহার্সাল শোনা যায়৷
মধুময় পালের কলমে পুরনো কলকাতার নস্টালজিয়া.
ক্যাম্পবস্তির বালকবেলা: পর্ব ২১

রাতের রাজভবনে গোপনে শপথ নেওয়ার পর থেকেই প্রফুল্ল ঘোষের হারিয়ে যাওয়া শুরু৷ হারালেন তাঁর উচ্চতা৷ নানারকম হেনস্থা সইতে হয়েছে, আশু ঘোষের কটুকাটব্য শুনেছেন, বিধানসভায় আক্রান্ত হয়েছেন, প্রকাশ্যে অপমানিত হয়েছেন শারীরিক আঘাতে৷ বাংলার রাজনীতিতে তাঁর ছবি বেশ মলিন, যা হওয়ার কথা ছিল না৷ আর, অন্ধকারের খেলোয়াড় হিসেবে, মিডলম্যান হিসেবে প্রতিপত্তি বাড়তে শুরু করল ভান্তু তথা আশু ঘোষের৷
মধুময় পালের কলমে পুরনো কলকাতার রাজনৈতিক কালবেলার আখ্যান,,,
ক্যাম্পবস্তির বালকবেলা: পর্ব ২০

কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে পুলিশ৷ আমরা বলতাম টিয়ার গ্যাস৷ চোখ জ্বালা করছে৷ জলে ভেসে যাচ্ছে মুখ৷ জীবনে সেই প্রথম টিয়ার গ্যাসের ঝাপটা খাওয়া৷ হেডস্যার হেরম্ব চক্রবর্তী থাকেন কাছেই৷ পা চালিয়ে চলে গেলেন বাড়িতে৷ নিয়ে এলেন ধুতি৷ টুকরো টুকরো করে ছাত্রদের দেওয়া হল৷
…মধুময় পালের কলমে পুরনো কলকাতার রাজনৈতিক কালবেলার আখ্যান