গোলকিপার (পর্ব ১৯)

বেলভেডিয়ার নার্সিং হোমে পৌঁছতে পৌঁছতে অবশ্য ভিজিটিং আওয়ার শেষ। তবে ডাক্তার করকে হাসপাতালেই পেয়ে যাওয়ায় অরিত্রর কাছে যেতে কুর্চির অসুবিধে হল না। সকালের ফিজিওথেরাপি সেশন শেষ করে স্নান-টান সেরে ঘরের কোণের সোফায় বসে শরদিন্দু পড়ছিল অরিত্র। কুর্চিকে দেখে খুশি খুশি গলায় বলল, “কদ্দিন পরে এলে। আমাকে তো চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলে!” শুনে এত জোরে হেসে উঠল কুর্চি যে নিজেই লজ্জা পেল। অরিত্রর মুখোমুখি সোফাটায় বসতে বসতে বলল, “সরি। দিন নেই রাত নেই, আমি পাঁইপাঁই করে ছুটে বেড়াচ্ছি, আর আমাকে নিয়েই চিন্তা হাসপাতালে বন্দি গোলকিপারের! শুনি, কিসের এত চিন্তা তোমার?”
গোলকিপার (পর্ব ১৮)

একসঙ্গে জনা কুড়ি লোকের ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেশ আরাম করে বসার ব্যবস্থা যে ঘরে, সেখানে একা বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন সুজাত। পড়ছিলেন, না সামনে কাগজ মেলে বসেছিলেন, বলা মুশকিল। সামনে রাখা পেয়ালায় চা জুড়িয়ে জল। একবারও ইচ্ছে হয়নি তাতে চুমুক দেওয়ার। রাতে অনেক ধৈর্য ধরেও ঘুম না-আসায় ওষুধ খেতে বাধ্য হয়েছিলেন। সকালেও মন দিতে পারছেন না কোনও কিছুতে। যে মনঃসংযোগের জন্যে তাঁর এত সুনাম, আজ কিছুতেই তার হদিশ পাচ্ছেন না। অনেক ধাঁধার কোনও সমাধানই খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি–– কুর্চি কী জেনেছে, কতটা জেনেছে, কীভাবে জেনেছে!
গোলকিপার (পর্ব ১৭)

কয়েক মুহূর্তের মধ্যে হাজির ডাক্তার কর। এসেই অরিত্রর চিকিৎসার ফাইলে চোখ বোলাতে বোলাতে বললেন, “অনেকটাই তো সেরে উঠেছ এখন। প্রেসার খুব নেমে গিয়েছিল, এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। এবার হাঁটা-চলা শুরু করা যাক, নাকি ফুটবলারশ্রী? আজই তোমার আইসিইউ-মুক্তি। আমি সব বলে দিয়েছি, কিছুক্ষণের মধ্যেই তোমাকে ছ’তলার কেবিনে নিয়ে যাওয়া হবে। আপনারা থাকুন, ওর সঙ্গেই ছ’তলায় যান। ওর ভালো লাগবে। কাল থেকে ওর ফিজিওথেরাপি শুরু হবে। তার কয়েক দিন পরে কাউন্সেলিং। ফরোয়ার্ডদের পা থেকে বাজপাখির মতো বল তুলে নেওয়ার অভ্যেসটা ফিরে আসা চাই তো?”
গোলকিপার (পর্ব ১৬)

গেটের একপাশে নিম আর অন্যপাশে কাঞ্চন। গেট থেকে বাড়ি পর্যন্ত খালি জায়গাটা এখন এই ফাল্গুনের মাঝামাঝি খয়েরি রঙের খসা নিমপাতা আর স্কারলেট রঙের ঝরা কাঞ্চন ফুলে মিলেমিশে লাবণ্যময়ী প্রাচীনার মতো মায়াময়। গেটের দুই পাল্লা জুড়ে একটা তালাসুদ্ধু শিকল এমনভাবে জড়ানো যে মনে হতে পারে গেটে তালা ঝুলছে। কিন্তু অভিজ্ঞ চোখ সহজেই বুঝে নেয়, শিকল নামালেই গেট খুলে যাবে। ভেতরে ঢুকে কুর্চি দেখল, সদর দরজা বাইরে থেকে হুড়কো টেনে বন্ধ, অথচ তাতে তালা লাগানো নেই!
গোলকিপার (পর্ব ১৪)

কুর্চি চোখ ফিরিয়ে তাকিয়ে আছে জলের দিকে। যে কথাটা দেবদীপ বলতে চায়, যা বলার জন্যে কুর্চিকে সে আজ ডেকেছে রোয়িং ক্লাবে, সেটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে বিষিয়ে উঠবে কুর্চির মন। মেয়েটা যথাসাধ্য চেষ্টা করছে ওর পুরনো দুঃখ ভুলে আনন্দে বাঁচার। দেবদীপ যা বলতে যাচ্ছে, তাতে কি ওর বাঁচাটা সহজ হবে? বাবা ছাড়া ওর নিজের লোক বলতে সত্যিই তো কেউ নেই! কুর্চি সামলাতে পারবে তো এই ধাক্কা? একা থাকে, ডিপ্রেশনে ভয়ঙ্কর কিছু করে বসবে না তো? কিন্তু অরিত্রর পাশে যে এখন কুর্চিকে দরকার!
গোলকিপার (পর্ব ১৩)

সুমিত্রা ভাবলেন, সত্যিই তো তাঁর সঙ্গে কেউ নেই। নার্সিং হোমের নামটা শোনামাত্র একটা ট্যাক্সি নিয়ে ছুটে চলে এসেছেন। বুঝতে পারছেন, অনেকক্ষণ এখানে কাটিয়ে দেবদীপ এখন চলে যেতে চাইছে। চিকিৎসার সব দায়-দায়িত্ব যখন সেই হাতে তুলে নিয়েছে, তখন দেবদীপের সঙ্গে গেলে আরও কিছুক্ষণ অরিত্রর খোঁজ-খবর নেওয়ার সুযোগটা তো পাওয়া যাবে। কুর্চি দাঁড়িয়েই ছিল। দেবদীপ ফিরে আসতেই মনের অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে পড়তে বাধ্য হলেন সুমিত্রা।
গোলকিপার (পর্ব ১২)

ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে অরিত্র অভ্যেসমতো বারান্দায় এসে বসার সঙ্গে সঙ্গে সুমিত্রা তার মাথায় পুজোর ফুল ঠেকিয়ে বললেন, “রক্ষা করো, করুণা করো, মার্জনা করো।” অভ্যেস মতোই বসলেন ছেলের পাশের চেয়ারে। ব্রাহ্ম পরিবারে জন্ম হলেও সুমিত্রার বিয়ে হয়েছে হিন্দু বাড়িতে। তবু তাঁর পুজো আর প্রার্থনা এখনও একটু অন্যরকম। তাঁর ঠাকুরঘরে কোনও ঠাকুরের মূর্তি বা ছবি থাকে […]
গোলকিপার (পর্ব ১১)

রাত সাড়ে নটা বাজল। কনসালটেন্সিতে আসা শেষ রোগীটি চলে যেতেই ডাক্তার সুজাত গুপ্ত হাসপাতালের ন’তলায় তাঁর চেম্বারের সহায়কদের বললেন সমস্ত বড় আলো নিভিয়ে বাড়ি চলে যেতে। অন্ধকার ঘরে টেবল ল্যাম্প জ্বালিয়ে একটা জার্নাল খুলে পড়তে শুরু করলেন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘরে ঢুকলেন চিকিৎসা-জগতের বাইরে তাঁর সবচেয়ে বিশ্বাসভাজন মানুষ অলোকেশ গুহ বিশ্বাস। অনেক দিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। […]