উপন্যাস: আকাশপ্রদীপ: পর্ব ২৩

novel Akashpradip part 23

পনেরো-ষোলো বছরের রণো যেন একজন ব্ল্যাক ছেলে৷ আত্মরক্ষার জন্য কী একটা ঘোরতর অন্যায় করেছে সে৷ পুলিশ এসে জেরা করছে রণোকে৷ রণো অসহায়ভাবে খুঁজছে ওর বাবাইকে৷ পুলিশ কোনও কথা না শুনে পিস্তল বার করে গুলি করছে রণোর কানের কাছে৷ সাইলেন্সার লাগানো পিস্তল৷ কোনও আওয়াজ হচ্ছে না৷ শুধু নির্বাক ছবির মতো রণো পড়ে যাচ্ছে৷ সীমন্তিনী ঘুমের মধ্যে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে— ‘রণো! রণো! যাস্‌ না! তুই থাক্‌৷ তুই আমার কাছে থাক৷’ চারদিক অন্ধকার৷

উপন্যাস: আকাশপ্রদীপ: পর্ব ২২

Novel Akashpradip part 22

সুন্দরী হিসেবে দিদির খ্যাতি ছিল৷ কুড়ি বছর বয়সে দিদির ছবি ‘ফেমিনা’তে কভার হয়েছিল৷ দিদির প্রথম বিয়ে হয় ডাক্তার এ সি রায় বা অম্বিকাচরণ রায়ের সঙ্গে, কলকাতা সার্কিটে আপ অ্যান্ড কামিং ডাক্তার হিসেবে যার তখন প্রচুর খ্যাতি আর সম্মান৷ বিয়ের পরের বছরই সীমন্তিনীর জন্ম৷ দিদির তখন সবে তেইশ আর আমার আঠেরো৷ সীমন্তিনীর জন্মের বছরখানেক পরেই কলকাতায় আসেন ইংল্যান্ডের এক নামকরা থিয়েটার পার্সোনালিটি ডেভিড ব্রুক৷ ইনি ডক্টর রায়ের পূর্বপরিচিত৷ কলকাতায় শেক্সপিয়রের থিয়েটার প্রোডাকশনের কাজে ইনি কয়েকজন অ্যাসিস্ট্যান্ট খুঁজছিলেন৷ আমার দিদি রাধিকা ওঁকে সাহায্য করার কাজে যোগ দেয় এবং অচিরেই দুজনের মধ্যে তুমুল প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে৷

উপন্যাস: আকাশপ্রদীপ: পর্ব ২১

novel Akashpradip Part-21

সীমন্তিনী লক্ষ করেছিল অরুণাভ কষ্ট করে সহজ হচ্ছে বৃন্দার প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে৷ অরুণাভকে কোনও অস্বস্তিতে ফেলতে চায়নি ও৷ কথা ঘুরিয়েছিল ওর মা-বাবা-বোনের প্রসঙ্গে৷ দমদমের বাড়ি থেকে কবে ইংল্যান্ডে গেল, জিনিয়ার জন্ম, আমেরিকায় চলে আসা, একটা সুখী পরিবারে বড় হয়ে ওঠা- সব কিছুই যেন সীমন্তিনীর অভিজ্ঞতা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা৷ ওর আশপাশে চেনা যাদের দেখেছে, তাদের থেকে যেন অনেকই আলাদা অরুণাভ, প্রতিদিন নতুন করে মনে হচ্ছিল সীমন্তিনীর৷ ওর ক্ষতটায় যেন অদ্ভুত একটা প্রলেপের কাজ করছিল অরুণাভ৷

উপন্যাস: আকাশপ্রদীপ: পর্ব ২০

Novel Akashpradip part 20

কুড়ি বছরে যখন সিমোন প্রথম এখানে আসে, তখন প্রথম প্রথম খুব কষ্ট হয়েছিল অ্যাডজাস্ট করতে৷ মনে হত একছুটে চলে যায় স্কটল্যান্ডের ফেলে আসা ওই একচিলতে বাড়িটায়, যে বাড়িটায় ও আর ওর মা পনেরো বছর ধরে ভাড়া ছিল৷ মা যখন ভায়োলেন্ট হয়ে গেল, তখন ল্যান্ডলেডিই ফোন করেছিল মানিকে৷ সিমোন তখন রিহ্যাবে৷

উপন্যাস: আকাশপ্রদীপ: পর্ব ১৯

Novel Akashpradip Part-19

শতমুখে বৃন্দার কথা বলছিলেন অরুণলেখা৷ হ্যাঁ, হুঁ বলে কোনওরকমে শুনেছিল সীমন্তিনী৷ বলতে পারেনি বৃন্দা ওর নিজের মাসি৷ জ্যোতির্ময় আর অরুণলেখা বরাবর জেনে এসেছেন সীমন্তিনী শৈশবে মাতৃহারা৷ সীমন্তিনীর ইদানীং মনে হয় – ওর মায়ের পুরো গল্পটা যদি জানতেন ওর শ্বশুর-শাশুড়ি, তবে কী প্রতিক্রিয়া হত ওঁদের?

উপন্যাস: আকাশপ্রদীপ: পর্ব ১৮

Novel Akashpradip Part-18

সন্তান হিসেবে রুণের এক ধরনের ভালবাসার দাবি রয়েছে জিনিয়ার প্রতি৷ নাকি নির্ভরতাবোধ? বিয়াট্রিসেরও এই এত বছরে এক ধরণের অধিকারবোধ জন্মেছে জিনিয়ার উপর৷ বিবাহ-বিচ্ছেদের পর থেকে অ্যালেক্সের জীবনটা আলাদা হয়ে গেছে৷ ওর নতুন জীবনযাত্রা, নতুন প্রাত্যহিক রুটিন মেরি জানে৷ অ্যালেক্সের স্ত্রী৷ বহুদিন ধরে জিনিয়ার চলার পথ আলাদা৷ সেজন্য জিনিয়ার কোনও দুঃখবোধ নেই৷

উপন্যাস: আকাশপ্রদীপ: পর্ব ১৭

Novel Akashpradip part-17

তখন আই.বি. ডিপার্টমেন্ট আমাদের মতো বেশ কিছু ছেলেমেয়েকে ব্ল্যাকলিস্ট করেছে, নকশাল মুভমেন্টে মদত দিচ্ছি বলে৷ পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য অনেকেই ওয়েন্ট অ্যাব্রড৷ আমিও তাদের মধ্যে ছিলাম৷ আমার বাবার টাকারও অভাব ছিল না, কানেকশনেরও না৷ পেপার্স রেডি করতে বাবার সাত দিনও লাগেনি৷

উপন্যাস: আকাশপ্রদীপ: পর্ব ১৬

Novel Akashpradip part 16

বৃদ্ধ মানুষটি কিছু যেন বলতে চাইছিলেন বাবার কাছে৷ দাদু তাঁর একমাত্র জীবিত ছেলের কাছে ওই অব্যক্ত চাউনি দিয়ে কী বলতে চেয়েছিলেন কে জানে? পরে ঐ দৃষ্টি মনের মধ্যে হন্ট করেছে অনেকবার৷ তার চেয়েও বেশি ওর মনে হচ্ছিল বাবার কথা৷ জ্যোতির্ময়ের দুচোখ বেয়ে জল পড়ছিল৷ আর তাঁর বাবার দুটি হাত নিজের হাতের মধ্যে জড়িয়ে ধরেছিলেন তিনি৷
…অপরাজিতা দাশগুপ্তের উপন্যাস আকাশপ্রদীপ, পর্ব ১৬