মালালার পাশে সত্যজিৎ (প্রবন্ধ)

তাঁর ছবির উপরের স্তরে আছে এক সরস-সরলতা। ফলে, তাঁর ‘দেবী’র মতো ভয়ংকর ট্র্যাজিক ছবিরও গোড়ার দিকে যথেষ্ট হাসির উপাদান আছে। তিনি জানতেন — সরল ও সংযত হিউমারের পটভূমতিে ট্র্যাজেডির ঘন-অন্ধকার মূর্তিটা অনেক বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।
সিনেমা-পুস্তিকাতেও অনন্য সত্যজিৎ

প্রচ্ছদে অপু-দুর্গার মুখ-সহ বইয়ের ভিতরের যাবতীয় লেখা, ছবি নিজের হাতে লিখে, এঁকে, ডামি-কপি করে ফেলেছিলেন। সামান্য বেশি খরচের কারণে সেই পুস্তিকার প্রস্তাব নাকচ করে দেন প্রযোজকদের পক্ষে তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়। তখন সত্যজিৎ একটি ফুলস্ক্যাপ কাগজকে চার ভাঁজ করে ‘পথের পাঁচালী’র পুস্তিকাটির লে-আউট করে দেন।
রবি থেকে সত্যজিৎ: প্রবাহ-পরম্পরা (প্রবন্ধ)

তবে কি ধরে নেওয়া যেতে পারে যে সত্যজিতের মতো বহুমুখী প্রতিভাও রবীন্দ্রনাথের গানকে এমন নবীকরণ করেছিলেন সজ্ঞানেই! যদিও তিনি তাঁর অন্যান্য চলচ্চিত্রেও রবীন্দ্রনাথের অনেক গানের ব্যবহার করেছিলেন সযত্নেই। এই প্রসঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা ছবিতে অমিয়া ঠাকুরের কন্ঠে ‘এ পরবাসে রবে কে’ গানটির প্রয়োগ চলচ্চিত্র জগতে একটি মাইলস্টোন হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে।
ক্যাপ্টেন স্পার্কের র্যাক্সিট

রবিবার রবিবার বিশপ লেফ্রয় রোডে সত্যজিৎবাবুর বাড়ির আড্ডায় বাবার উপস্থিতি থাকতই। আমাদের এন্টালির বাড়িতেও সত্যজিৎবাবু এসেছেন বেশ কয়েকবার বাবার সংগ্রহ ও বই দেখতে। ‘জন অরণ্য’ শুটিংয়ের সময়ও এসেছেন। বাবার সংগ্রহ থেকে বেশ কিছু জিনিস প্রপস হিসেবে সত্যজিৎ ব্যবহার করেছেন তাঁর ছবিতে, যেমন জয় বাবা ফেলুনাথের ডিম্বাকৃতি তাস!
মানিকদার গান-গল্প

আমরা যখন হাল্কা আলাপচারিতায় ব্যস্ত হঠাৎ “এসে গেছে” ”এসে গেছে” বলে একটা চাপা গুঞ্জন শুনতে পেলাম। স্টুডিওয় তখন পিন পড়লেও শব্দ হবে। তারপরেই মানিকদার প্রবেশ। ঢুকতে ঢুকতেই ওই বাজখাঁই গলায় “অলোক, তোমার সব মিউজিশিয়ান এসে গেছে?” বলে হাঁক দিলেন।
সত্যজিতের প্রচ্ছদ, প্রচ্ছদের সত্যজিৎ

সিগনেটের অন্যান্য বইতে শুধুমাত্র ক্যালিগ্রাফি অথবা লেটারিং দিয়েও অসামান্য কিছু প্রচ্ছদ করেছিলেন সত্যজিৎ। যেমন জীবনানন্দের ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি, ‘রূপসী বাংলা’, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তর ‘ইন্দ্রানী’, সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ‘অর্কেস্ট্রা’। ‘অর্কেস্ট্রা’য় নামের তিনখানা অক্ষর লেখা হয়েছে সরু লাইনকে একটু অমসৃন করে, যেন ছোট ছোট ঢেউ এসে ওদের সামান্য দুলিয়ে দিচ্ছে আর ওরা সুরের ছন্দে ভেসে বেড়াচ্ছে।
স্মৃতির সত্যজিৎ

প্রুফ খুব তাড়াতাড়ি দেখতেন এবং ছাপার কোনও ভুল থাকলে খুব তাড়াতাড়ি ধরে ফেলতেন। কিন্তু ওই গমগমে গলায় উনি যে কোনও বিষয়ে আমাকে যাই বলতেন, আমার কাছে ধমক বলে মনে হত। উনি যতক্ষণ প্রুফ দেখতেন আমি ততক্ষণ অবাক হয়ে ওঁর ঘরটা দেখতাম। চারিদিকে কেবল বই, ম্যগাজিন, খাতায় ভর্তি। যেহেতু বই আমার খুব প্রিয়, এই ঘরটাও আমার দারুণ লাগত।
সত্যজিতের সুরধুনী

সত্যজিৎ মনে করতেন, দৃশ্যের বা শটের গভীরতা দর্শকের কাছে পোঁছে দিতে গেলে আবহসঙ্গীতের ব্যবহার আবশ্যক। আবহ যোগ না করলে দর্শকের সেই বিশেষ দৃশ্যটির ভেতরকার অর্থ বুঝে উঠতে অসুবিধে হবে। আবার এও ঠিক, অভিনেতা যদি অভিনয়ে সেটা ফুটিয়ে তুলতে অক্ষম হন, তখন হাজার আবহসঙ্গীত দিলেও কাঙ্খিত অভাবটা রয়েই যাবে। কখনওই সংলাপ ছাড়িয়ে আবহ শোনা যাওয়াটা বাঞ্ছনীয় নয়।