রবিরাগে— পঞ্চম পর্ব: ‘বসন্ত পঞ্চমের রাগে’

প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখা উচিৎ, যাকে বলছি আদি বসন্ত, সেই রাগই দাক্ষিণাত্যে বসন্ত বলে পরিচিত। উত্তর ভারতে শুদ্ধ সোহিনী বলে একটি রাগ রয়েছে, খুব যে গাওয়া বা বাজানো হয়, এমন নয়। রবীন্দ্রনাথের ‘প্রথম আদি তব শক্তি’ গানটি ওই রাগেই বাঁধা। গানটি বাইজু বাওরার একটি ধ্রুপদ থেকে প্রতিগৃহীত।
রবীন্দ্রগানে রাগসঙ্গীতের, বিশেষত বসন্ত পঞ্চম রাগের প্রয়োগ নিয়ে লিখলেন সুভদ্রকল্যাণ…
কাজের মানুষ রথীন্দ্রনাথ

অতি বাহুল্যবর্জিত পড়াশোনার এই রীতির সমান্তরালে, শিলাইদহের প্রকৃতি এক কথায় পেয়ে বসেছিল রথীন্দ্রনাথকে। ডানপিটেমি করলে ছিল না কোনও শাস্তির ভয়। বেড়ানো, মাছ ধরা, সাঁতার কাটা, লাঠি সড়কি খেলা, ঘোড়ায় চড়া এমনকি ভরা পদ্মায় নৌকা চালানো— তাতেও কোনও বাধা ছিল না। মা মৃণালিনীর দেওয়া মাসিক পাঁচ টাকার পকেটমানি জমিয়ে কিনেছিলেন এক ডিঙি নৌকো, যা চেপে শনি-রবিবার নদী পারাপার করা যেত। নদীতে সাঁতারও শিখেছিলেন খুব সহজে— পদ্মাবোটের উপর থেকে বাবার সজোর ধাক্কায় জলে পড়ে খানিক হাবুডুবু আর জল খেয়ে।
লিখলেন সপ্তর্ষি রায় বর্ধন।
‘বসন্ত’ গীতিনাট্যে রবীন্দ্র-নজরুল বন্ধন : কিছু অনুমান ও অনুভূতি

নিজের সম্পাদিত ‘ধূমকেতু’ পত্রিকায় তীব্র শাসকবিরোধী কবিতা লেখার জন্যে, ১৯২২-এর নভেম্বরে নজরুলকে কারারুদ্ধ করে ব্রিটিশ সরকার। সেইসময় নজরুল ছিলেন আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় সেখানে গিয়ে তাঁকে দিলেন বইয়ের একটি কপি। বই বুকে নিয়ে তো আনন্দে নাচতে লাগলেন নজরুল। ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা জেল-সুপার এসব দেখে, পবিত্রবাবুর কাছে জানতে চাইলেন ব্যাপারটা কী? পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় বললেন যে, ‘পোয়েট টেগোর’ নজরুলকে এই বইটি ‘ডেডিকেট’ করেছেন। সুপার জিজ্ঞেস করলেন, “ইউ মিন প্রেজেন্টেড?” পবিত্রবাবু বললেন, “নো ডেডিকেটেড”।
লিখলেন অভীক চট্টোপাধ্যায়…
‘শাত্-ইল-আরব’-এর কবির প্রতিভায় আবিষ্ট ছিলেন ছন্দের জাদুকর

বিবেকানন্দ রোডের মোড়ের কাছেই ৩৮ নম্বর কর্নওয়ালিশ স্ট্রিটে (অধুনা বিধান সরণি) থাকতেন গজেন্দ্রকুমার ঘোষ। কবি-সাহিত্যিক মহলে তিনি পরিচিত ছিলেন গজেন, গজেনদা, বা গজেনবাবু হিসাবে। সেই বাড়িতে প্রতি সন্ধ্যায় আড্ডা বসত কবি-সাহিত্যিকদের। কে আসতেন না সেই আড্ডায়— প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়, মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়, হেমেন্দ্রকুমার রায়, নরেন্দ্র দেব, মোহিতলাল মজুমদার প্রমুখ! সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত কিন্তু কবি-সাহিত্যিকদের অন্য আড্ডায় খুব একটা যেতেন না। এই গজেনদার বাড়িতেই এক সন্ধ্যায় সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের সঙ্গে আলাপ হল নজরুলের এবং আলাপটা হয়েছিল সত্যেন্দ্রনাথের আগ্রহেই।
লিখলেন শম্ভুপ্রসাদ সেন।
শিশু বনাম রবীন্দ্রনাথ

সে রবীন্দ্রজয়ন্তী ভুলব না। মহারাজের উতোর আর দর্শকদের চাপান। মহারাজ বলছে—“এককানি ছোতো খেত আমি একেলা”। বলেই দর্শকদের সুযোগ দিতে চুপ করে যাচ্ছে। তাঁরা সমস্বরে ক্যাচ লুফে নিয়ে—“চারিদিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।” হঠাৎ মহারাজ আপন মনে—“বাকা জল, আঁকা জল কইছে খেলা…। গান গেয়ে গান গেয়ে কইছে খেলা…।” বড় করতালি সহযোগে মহারাজ মঞ্চ থেকে নেমে এলেন। বাবা সগর্বে বললেন—“বলেছিলাম না, সবটা বলতে পারবে না?”
প্রবাসে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন উপলক্ষ্যে কিছু মজার ঘটনা, স্মৃতিচারণ করলেন আলোলিকা মুখোপাধ্যায়…
রবিরাগে- চতুর্থ পর্ব: রবীন্দ্রনাথ ও মাইহার

মাজ-খাম্বাজের উৎস যাই হোক, আলাউদ্দিনের ঘরের শিষ্যরাই যে তা বাজিয়ে তার প্রচার করেছেন, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। প্রশ্ন ওঠে, রবীন্দ্রনাথ এ রাগের সন্ধান পেয়েছিলেন কীভাবে! এই প্রশ্ন ওঠা অসমীচীন নয়, কারণ ‘আজি যত তারা তব আকাশে’ গানটি রচিত হয়েছিল মাইহার ঘরানার প্রধান দুই প্রতিনিধি, আলি আকবর খাঁ ও রবিশঙ্করের জন্মের প্রায় পনেরো বছর আগে এবং রবীন্দ্রনাথ প্রয়াত হয়েছেন ওঁরা জনসমক্ষে বাজানো শুরু করার অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই। আলাউদ্দিন খাঁ নিজে এই রাগ বাজিয়ে রেকর্ড করেছিলেন, বা কোনও অধিবেশনে বাজিয়েছিলেন, এমন খবর আমার কাছে নেই। সুতরাং এক্ষেত্রে আলাউদ্দিনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের আলাপই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মাজ-খাম্বাজের পরিচয় ঘটিয়েছিল, এমন ভাবা হয়ত খুব অন্যায় নয়। এত কিছু সত্ত্বেও একটা বড়রকম খটকা থেকেই যায়, কারণ— রবীন্দ্রনাথ যখন ‘আজি যত তারা তব আকাশে’ রচনা করেন, অর্থাৎ ১৯০৪ সালে, বা তারও অনেক আগে যখন ‘বাল্মীকি প্রতিভা’র জন্য রচনা করেন ‘ব্যাকুল হয়ে বনে বনে’, তখনও আলাউদ্দিনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ হয়নি।
রবীন্দ্রগানে রাগসঙ্গীতের, বিশেষত খাম্বাজ রাগের প্রয়োগ নিয়ে লিখলেন সুভদ্রকল্যাণ…
রবীন্দ্রকাব্যে জন্মদিন এবং পঁচিশে বৈশাখ

বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, রবীন্দ্রনাথ তাঁর সত্তর বৎসর পূর্ণ হওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁর কবিতায় মাত্র কয়েকবার জন্মদিনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন, সেই তিনিই পরবর্তী দশ বৎসরের জীবৎকালে অসংখ্যবার এই প্রসঙ্গে ফিরে ফিরে গেছেন। তাহলে কি সাধারণ মানুষের মতোই রবীন্দ্রনাথও যত জীবন-সমাপনের দিকে এগিয়েছেন, ‘শেষ পারানির কড়ি’ হিসাবে জন্মদিনকেই ‘স্মরণবীণ’ করে তুলতে চেয়েছেন?
লিখলেন দিলীপ কুমার ঘোষ…
রবিরাগে- দ্বিতীয় পর্ব: রবীন্দ্র-ভাবনায় খাম্বাজ

মল্লারে সাধারণত কোমল ধৈবতের স্থান না থাকলেও, মীরাবাঈয়ের মল্লারে কোমল ধৈবত খুবই স্পষ্ট। বলা বাহুল্য, রবীন্দ্রনাথ সাহানা মল্লার বা মীরাবাঈয়ের মল্লারের প্রতি দায়বদ্ধ ছিলেন না; তাঁর দায়বদ্ধতা গানের বক্তব্যের প্রতি, এবং সেই বক্তব্য প্রকাশের উপযুক্ত সুরের চলনের প্রতি, তাই কোমল ধৈবতযুক্ত মল্লারের এই রূপ রবীন্দ্রনাথের ভাবনার স্বাতন্ত্র বহন করে। হয়ত সেই জন্যই সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর চেয়েছিলেন, এই রাগের নাম হোক রবিমল্লার।
রবীন্দ্রগানে রাগসঙ্গীতের, বিশেষত খাম্বাজ রাগের প্রয়োগ নিয়ে লিখলেন সুভদ্রকল্যাণ…