রবীন্দ্রকাব্যে জন্মদিন এবং পঁচিশে বৈশাখ

বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, রবীন্দ্রনাথ তাঁর সত্তর বৎসর পূর্ণ হওয়ার আগে পর্যন্ত তাঁর কবিতায় মাত্র কয়েকবার জন্মদিনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন, সেই তিনিই পরবর্তী দশ বৎসরের জীবৎকালে অসংখ্যবার এই প্রসঙ্গে ফিরে ফিরে গেছেন। তাহলে কি সাধারণ মানুষের মতোই রবীন্দ্রনাথও যত জীবন-সমাপনের দিকে এগিয়েছেন, ‘শেষ পারানির কড়ি’ হিসাবে জন্মদিনকেই ‘স্মরণবীণ’ করে তুলতে চেয়েছেন?
লিখলেন দিলীপ কুমার ঘোষ…
মুস্তারী বাঈয়ের গান শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ

কেউই আর গাইতে চান না। এরকম অপরূপ গানের পর আর গান হয় না। মুস্তারীর তো মাটিতে মিশে যাবার মতো অবস্থা। কী বলছেন এইসব মহান শিল্পীরা! তিনি এবার ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে ফৈয়াজ খাঁ-র দুটো পা ধরে বললেন, “এ কী কথা বলছেন খাঁ সাহেব? আমার গানের জন্যে গাইবেন না আপনি?
ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সংগীতের এক অজানা অধ্যায়, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্বয়ং বিশ্বকবির নাম, লিখলেন অভীক চট্টোপাধ্যায়
রবি ও নরেন

রবীন্দ্রনাথ তখন নিতান্তই ছয় বছর বয়সী এক বালকমাত্র। উনপঞ্চাশ বছর যাঁর বয়স, যিনি ব্রাহ্মধর্মের পুরোধা, সেই মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের কাছে এসেছিলেন উনিশ বছরের ছোট তিরিশের যুবা কালীসাধক গদাধর চট্টোপাধ্যায়।
নিজের রবীন্দ্রনাথ (প্রবন্ধ)

দুর্ভাগ্যবশত, ওই সময় যাঁদের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল, পরে বুঝেছিলাম, তাঁরা কেউই রবীন্দ্রনাথকে ভালবাসতে পারেননি। পরবর্তীকালে কোনো কোনো মানুষকে দেখেছি, যাঁরা হয়তো ধুতি পাঞ্জাবিই পরেন, সভা সমিতিতেও হয়তো যান, কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে সত্যিকার ভালবাসেন।
রবি থেকে সত্যজিৎ: প্রবাহ-পরম্পরা (প্রবন্ধ)

তবে কি ধরে নেওয়া যেতে পারে যে সত্যজিতের মতো বহুমুখী প্রতিভাও রবীন্দ্রনাথের গানকে এমন নবীকরণ করেছিলেন সজ্ঞানেই! যদিও তিনি তাঁর অন্যান্য চলচ্চিত্রেও রবীন্দ্রনাথের অনেক গানের ব্যবহার করেছিলেন সযত্নেই। এই প্রসঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘা ছবিতে অমিয়া ঠাকুরের কন্ঠে ‘এ পরবাসে রবে কে’ গানটির প্রয়োগ চলচ্চিত্র জগতে একটি মাইলস্টোন হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে।
তোমায় আমি দেখিনি (কবিতা)

এমন দিনে, ছল ছেড়ে দিই যত
ভালবাসার আয়াসে বিক্ষত
মেঘ যেরকম আকাশ পেলে ডাকে…
তোমার সাড়া পেয়েছি, তাই জানি
আবার আমায় বদলে দেবে গানই
হঠাৎ কোনও পঁচিশে বৈশাখে!
ঝড়কে পেলেম সাথি

শান্তিনিকেতনে, বলা ভালো গোটা রাঢ়বঙ্গেই কালবৈশাখীর দাপট বাংলার অন্যান্য অংশের চেয়ে কিঞ্চিৎ বেশিই। তার প্রমাণ তো গুরুদেবের অজস্র গানের ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে রয়েছে। আমি গানের মানুষ, তাই ঝড় উঠলেই মনে হয়, ‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার’-এর প্রতিটি মীড়েই কি ধরা নেই লাল মাটির উপর কালবৈশাখীর তাণ্ডব? কিম্বা ‘ওই যে ঝড়ের মেঘের কোলে, বৃষ্টি আসে মুক্তকেশে, আঁচলখানি দোলে’-র সুরের দুলুনিতে তো প্রায় বৃষ্টির ফোঁটা হাওয়ার টানে ছিটকে এসে পড়ে গানের খাতার ওপর! ‘হৃদয় আমার ওই বুঝি তোর বৈশাখী ঝড়’ না গাইলে বুঝি কালবৈশাখীর বাউল বাতাসকে শরীরে অনুভব করা যায় না! ‘ওই বুঝি কালবৈশাখী’ গানে যেমন করে কালবৈশাখীর রূপের মধ্যে অরূপের বাণী তুলে আনেন কবি, সে যে জীবনের করালঝড় সামলে চলার শিক্ষা!