ক্যাম্পবস্তির বালকবেলা: অন্তিম পর্ব

সপ্তাহে একদিন একটি পয়সা পেত ছেলেটি মায়ের কাছে৷ মায়ের অফুরান আদরের ভাণ্ডার, যা রিফিউজি যুগ পুরোপুরি শেষ করে দিতে পারেনি৷ ওই একটি দিনে সে জড়ো করত সাতদিনের আনন্দ৷ ওই একটি দিন হয়ে উঠত সীমানাহীন, পৃথিবী হয়ে উঠত একান্তভাবে তার, পৃথিবীর সব রাস্তা তার৷ প্রবল বেগে সে রিং ছোটাত এইজন্যে যাতে একঘণ্টায় যেন তার চেনা পৃথিবীর বাইরেটাও ছোঁয়া যায়৷ নোনাপুকুর ট্রামডিপো পেরিয়ে, ওয়েলেসলি স্কোয়ার পেরিয়ে, ময়দান পেরিয়ে নদীর ওপারে বাজবে ট্যাং ট্যাং৷
উদবাস্তু জীবন আর কলকাতার শৈশব কৈশোর নিয়ে মধুময় পালের কলম ‘ক্যাম্পবস্তির বালকবেলা’, অন্তিম পর্ব আজ
ক্যাম্পবস্তির বালকবেলা: পর্ব ২৩

দিদিমা মারা গেলেন চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে৷ বিনা চিকিৎসায়, সারাদিন বারান্দায় পড়ে থেকে৷ ডাক্তারেরা পাশ দিয়ে গটগট করে হেঁটে গেলেন ক্রুশিয়াল কনফারেন্সের হাবভাবে৷ খটখটিয়ে নার্সরা হেঁটে গেল উড়ন্ত ব্যস্ততায়৷ দিদিমা পাঁজর ভেঙে ভেঙে বাতাস টেনে টেনে একসময় স্থির হয়ে গেলেন৷ নিজের দেশ থেকে, ভিটেমাটি থেকে দূরে অনাহার অবহেলা অসম্মানের অকুস্থলে তাঁর দেহ ছাই হল৷ চিতার খরচ মেটানো হল চাঁদা তুলে৷
মধুময় পালের কলমে পুরনো কলকাতার রাজনৈতিক কালবেলার আখ্যান…
ক্যাম্পবস্তির বালকবেলা: পর্ব ২২

সম্ভবত ১৯৬৯ সাল৷ বি.এ. ফাইনাল দিয়েছি কোনওক্রমে৷ রাজনীতিতে জড়িয়েছি বেশ৷ চাঁদুদা বললেন, হেমাঙ্গদার বাড়ি থেকে দুপুরে খাবার পৌঁছে দিতে হবে মেন্টাল হাসপাতালে৷ ঋত্বিক ঘটক আছেন ওখানে৷ একটু ভাবতে হল৷ কারণ পুলিশ নজর রাখছে৷ পুলিশের হয়ে কংগ্রেসের ছেলেরাও৷ দিনের বেলা চলাফেরা করতে হয় সাবধানে৷ তবু রাজি হয়ে গেলাম৷ দু-তিন দিন পৌঁছে দিয়েছিলাম৷ বাকি দিনগুলো অন্যেরা৷ তখনই শুনি ঋত্বিক ঘটক নাটক করছেন হাসপাতালে৷ বিকেলে সন্ধেয় গেটের কাছে দাঁড়ালে রিহার্সাল শোনা যায়৷
মধুময় পালের কলমে পুরনো কলকাতার নস্টালজিয়া.
ক্যাম্পবস্তির বালকবেলা: পর্ব ২১

রাতের রাজভবনে গোপনে শপথ নেওয়ার পর থেকেই প্রফুল্ল ঘোষের হারিয়ে যাওয়া শুরু৷ হারালেন তাঁর উচ্চতা৷ নানারকম হেনস্থা সইতে হয়েছে, আশু ঘোষের কটুকাটব্য শুনেছেন, বিধানসভায় আক্রান্ত হয়েছেন, প্রকাশ্যে অপমানিত হয়েছেন শারীরিক আঘাতে৷ বাংলার রাজনীতিতে তাঁর ছবি বেশ মলিন, যা হওয়ার কথা ছিল না৷ আর, অন্ধকারের খেলোয়াড় হিসেবে, মিডলম্যান হিসেবে প্রতিপত্তি বাড়তে শুরু করল ভান্তু তথা আশু ঘোষের৷
মধুময় পালের কলমে পুরনো কলকাতার রাজনৈতিক কালবেলার আখ্যান,,,
ক্যাম্পবস্তির বালকবেলা: পর্ব ২০

কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে পুলিশ৷ আমরা বলতাম টিয়ার গ্যাস৷ চোখ জ্বালা করছে৷ জলে ভেসে যাচ্ছে মুখ৷ জীবনে সেই প্রথম টিয়ার গ্যাসের ঝাপটা খাওয়া৷ হেডস্যার হেরম্ব চক্রবর্তী থাকেন কাছেই৷ পা চালিয়ে চলে গেলেন বাড়িতে৷ নিয়ে এলেন ধুতি৷ টুকরো টুকরো করে ছাত্রদের দেওয়া হল৷
…মধুময় পালের কলমে পুরনো কলকাতার রাজনৈতিক কালবেলার আখ্যান
ক্যাম্পবস্তির বালকবেলা: পর্ব ১৯

এককালে ডিহি শ্রীরামপুর অঞ্চলের একশো শতাংশ বাসিন্দাই ছিল মুসলিম ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের৷ হরেন মুখার্জির পিতৃদেব যখন জমি কিনে বাড়ি করেন, পূর্ব কলকাতার এই এলাকাটি ছিল অনুন্নত ও দীনদরিদ্র মানুষের বসতি৷ হিন্দুরা এখানে বসবাস শুরু করে সম্ভবত দেশভাগের কিছু আগে৷ মুসলমানদের বাড়িগুলো সম্পত্তি বিনিময়ের মাধ্যমে হিন্দু-বাড়ি হতে থাকে৷ এই কারণে এখানে গির্জা ছিল, মসজিদ ছিল, কিন্তু মন্দির ছিল না৷ টিনের ঘরের মন্দির কে কবে বানিয়েছিল তা নিশ্চিত করে বলা যায় না৷ মন্দির বানানোর পেছনে জমিদখলের বুদ্ধি থাকতে পারে৷ হতেই পারে সেই বুদ্ধিধর মানুষটি ইট-বালির কারবারি গৌরাঙ্গ রায়ের আগেকার লোক…
মধুময় পালের কলমে পুরনো কলকাতার ক্যাম্পজীবনের আখ্যান
ক্যাম্পবস্তির বালকবেলা: পর্ব ১৮

ভবা চৌকিদার কীভাবে জমিদার হলেন সেটা জানি না৷ বাঙালদের দেশের বাড়িতে বিঘে বিঘে জমি ছিল, বাগান ছিল, পুকুর ছিল বলে কেউ কেউ বিদ্রুপ করে৷ হয়তো তাদের কেউ তাঁকে ‘জমিদার’ বলেছে৷ তাঁর জমিদারসুলভ হাঁকডাক চলাফেরার জন্যও বলতে পারে৷ এটা শুনেছি, জমিদারকে শিবমন্দিরে জায়গা করে দেন গৌরাঙ্গ রায়৷
… মধুময় পালের কলমে পুরনো কলকাতার স্মৃতিভেজা আখ্যান
ক্যাম্পবস্তির বালকবেলা: পর্ব ১৭

‘রেডগার্ড’ বলার মধ্যে একটা ঘৃণা আছে৷ কমিউনিস্টদের ঘৃণা করেন৷ রাজনীতির লোকেরা এরকম করে থাকে৷ তবু, লোকটা তেমন মন্দ নয়৷ মাগনায় বিজয়া সম্মিলনে হেমন্ত, শ্যামল, সন্ধ্যা, মানবেন্দ্র, তরুণ, উৎপলা, ইলা বসু, সতীনাথের পুজোর নতুন গান, সিনেমার গান শোনার সুযোগ আর কে করে দেয় ভাই, এই গরিব তল্লাটে?