প্রেমদিবসের আগে (গল্প)

ঠান্ডাটা যেন যেতেই চাচ্ছে না! ঠান্ডার নতুন নতুন খবরে ছেলে-বৌমা লাফিয়ে লাফিয়ে উঠছে। নিত্যি প্ল্যান ভাঁজছে, কোথায় যাওয়া যায় অন্তত দুটো দিনের জন্য! কোথায় গিয়ে মুঠোয় বরফ নিয়ে লুফোলুফি খেলা যায়! আর ওদের এই লাফালাফির সঙ্গে সঙ্গেই সুমিত্রার বুকের মধ্যে একটা বল লাফাতে থাকে! মানুষটা কী কষ্টটাই না পায় ঠান্ডায়! একটার ওপর আর একটা গরম জামা চড়িয়েও যেন সে দুর্বিপাক ঠেকানো যায় না!
একটা ল্যান্ডস্কেপের অক্ষরমালা

অর্ক আর ঝিলিকের সম্পর্কে লম্বা ছায়া ফেলে ঝাউবন। জঙ্গলের কটেজে কফির ধোঁয়া মিশে যায় কুয়াশায়।
হেয়ারড্রায়ার কিসসা (গল্প)

মেমসাহেবের কেতাদুরস্ত স্নানঘরেই ঝুলে থাকত হেয়ারড্রায়ারটা। প্রথম প্রথম বড় লোভ হত সুদক্ষিণার। ভাড়াটে হয়ে এ বাড়িতে যবে থেকে সে উঠেছে, তবে থেকেই দেখছে সেটাকে। কিন্তু অন্যের জিনিস বলে হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে দেখবে বা নিজের চুল শুকনোর জন্য ব্যবহার করবে বলে ভুলেও ভাবেনি সে। ছুঁয়েও দেখেনি। কারণ সুদক্ষিণার মাথায় একরাশ কালো চুল নেই। এদেশে আসার আগেই সে বয়কাট করে ফেলেছে। তাই চুল শুকনোর ঝামেলাও নেই। তবুও রোজ চানঘরে ঢুকেই সুদৃশ্য বেসিন কাউন্টারের পেল্লায় আয়নার পাশে ঝুলতে থাকা হেয়ারড্রায়ারটায় চোখ পড়ে।
সোনাতরঙ্গ নদীর ধারে

এক শীতের প্রবাসে বরফঢাকা প্রান্তরের দৃশ্যাবলীর সামনে বসে ঋতু আর রাজ, দুজনে মিলে বসন্তের অপেক্ষা করে। পৃথিবীতে এখন হিমযুগ এসেছে।
মেঘরাশি ঢেউলগ্নের মেয়ে (গল্প)

ইশ্ আজকেও এগারোটা হয়ে যাবে ফিরতে ফিরতে। মোবাইল সুইচড্ অফ দেখে রাহুল নিশ্চয়ই বাড়িতে ফোন করবে। পাবে না। দেখা হয় না কতদিন। আকাশে ঘন মেঘ। সেই সন্ধ্যের পর থেকেই। দমকা ঠান্ডা হাওয়ায় জানলা খোলা রাখা যাচ্ছিল না। তাই বাইরেটা দেখা না গেলেও শব্দের ঘনঘটায় বোঝা যাচ্ছিল একটা বেশ ওলটপালট হচ্ছে। এখন আবার বৃষ্টিও নেমেছে। সঙ্গে […]
চিরসখা হে (গল্প)

আমি তো রোজই স্কুলের পাশ দিয়ে যাই, জানিস। ভুল বললাম। রোজ না। মাঝেমধ্যে। ওই এরিয়ার দোকানের অর্ডার তুলতে যেতে হয়। এক এক দিন তো এক একটা এলাকা আমার। দোকানে যাই। অর্ডার তুলি। কার্ড সোয়াইপ করার মেশিনের মতো দেখতে একটা যন্ত্রে রিকুইজিশনগুলো পাঞ্চ করি। ডিস্ট্রিবিইউটারের কাছে সঙ্গে সঙ্গে চলে যায় সেগুলো। কয়েকদিন পরে ডেলিভারি দেওয়ার সময় আবার ডিস্ট্রিবিউটারের ছোট ম্যাটাডরে। স্কুলের পাশ দিয়ে গেলে তাকাই। তিনতলায় বারান্দার পাশের জানালাটা দেখি। ওইখানেই তো আমাদের ক্লাস নাইন। ক বিভাগ। মানে এ সেকশন। দোতলার মাঝামাঝি ওই ঘরটা। আমাদের ক্লাস সেভেন। খ বিভাগ। মনে পড়ে। ঘাড় উঁচু করে তাকালে কয়েকটা মাথাও দেখতে পাই। আমাদের তখনকার মতো ওরাও হয়তো এখন ভাবছে বড় হব কবে।
রক্ত (গল্প)

১ ক্যালেন্ডারের দিকে চোখ পড়তেই মনে মনে আবার হিসেবটা করে নেয় চন্দ্রানী। আজ থেকে ঠিক দেড় মাস আগে নিয়মিত শারীরিক ঋতু পরিবর্তনের হঠাৎ বেনিয়ম হওয়ায় খুব স্বাভাবিক উৎকন্ঠা এবং একরাশ বুক ধুকপুকুনি নিয়ে ড. চ্যাটার্জির কাছে ছুটে গিয়েছিল সৌরজ কে নিয়ে। ড চ্যাটার্জি বহুদিনের পরিচিত। ব্যস্ত এবং বেশ নাম করা স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ। ওরা যেতেই প্রেসক্রিপশন […]
বিসর্জন লেন

একটা আলতো শীত মেখে দাঁড়িয়ে আছে শহরটা। কেমন যেন আনমনা। বা উদাসীন। মাঝরাতে জানলা খুলে দেখা কার্নিশে দুটো বেড়ালের লড়াই বা ল্যাম্পপোস্ট চুঁইয়ে পড়া আলোর ছায়াপথ, কুয়াশার ভেতর হারিয়ে যাওয়া গলিমুখ, অবিরাম ডেকে চলা কুকুরগুলোর সাথে মাতালের কথার টুকরো সংলাপ অথবা পুলিশের টহলদার জিপের নিঝুমকাড়া ভাঙাচোরা শব্দ, এইসব ইলিউশনের ট্রাফিকে ঈশান অহেতুক আটকে পড়ে প্রায়ই। সবকিছুতেই একটা দেরি ওকে পিছিয়ে দেয়।