গল্প: দিবসের শেষে – জগদীশ গুপ্ত

অধর বকশি সে-বার নৌকা যাত্রা করিবার ঠিক পূর্বদিন সন্ধ্যাবেলায় আবছায়া জ্যোস্নায় নিজেরই ছায়া দেখিয়া আঁৎকাইয়া উঠিয়াছিল,— প্রাঙ্গণে লাফাইয়া লাফাইয়া সে নিজেরই ছায়ার দিকে আঙুল দেখাইয়া ভীতস্বরে কেবলই চিৎকার করিয়াছিল— ও কে? ও কে ? …সে-দিন তার রক্তবর্ণ নিস্পলক চক্ষুর দিকে ভালো করিয়া চাহিয়া থাকিতে কাহারও সাহস হয় নাই। বহু চেষ্টায় সেদিনকার মতো আতঙ্কের নিবৃত্তি হইয়া সে নিরস্ত হইয়াছিল বটে, কিন্তু তার নৌকা আর ফেরে নাই, সে-ও না।
গল্প: রূপকথা নয়

গত এক মাস থেকে একটি ছেলেও নিয়মিত আসছিল কফি শপে। তার মত সেও একাই একটা টেবিলে বসত। চোখে পড়ার মতন সুদর্শন, সম্ভবত বেশ অবস্থাপন্নও। অথচ সোবার। কিন্তু ঠিক সন্ধে আটটার সময় উঠে যেত। নন্দিনী লক্ষ্য করে দেখেছে যে ঠিক ঐ সময় একটা লাল রঙের বি এম ডব্লু গাড়ি এসে কফি শপ্টার সামনে হ্যাজার্ড লাইট অন করে দাঁড়াত।
কুহকীর নতুন গল্প ‘রূপকথা নয়’…
বড়গল্প: তুলোর পাখি

খাতা দেখা বা পেপার জমার সিজনে সেন্টার থেকে বেরোতে দশটা-এগারোটা হয় ঋতব্রতর, বেসমেন্টের পার্কিং জুড়ে তখন মোটা মোটা থামের ঠান্ডা ছায়া। একটার আড়ালে হয়তো ঘাপটি মেরে বসে থাকবে, নাগালে এলেই লাফিয়ে পেটে গুঁজে দেবে ফলা, ইন্ট্রা-অ্যাবডমিন্যাল ভ্যাসকুলেচর ফর্দাফাঁই। কিংবা হয়তো রক্ত দেখলে মাথা ঘোরে বলে বন্দুক জোগাড় করেছে। ফট ফট ফট। মুখ থুবড়ে পড়েছে ঋতব্রত। শপিং মলের আলোর নীচে দু’হাত উঁচু করে কাঁধ ছুঁয়ে মাপা কার্ডিগানের আকাশি ছাপিয়ে উঠছে লাল। গাঢ় লাল।
কুন্তলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন গল্প…
গল্প: ফাইট

কান্নার তীক্ষ্ণ আওয়াজে ঘুমটা ভেঙে গেল। আধো আলোয় হাতড়ে হাতড়ে চশমাটা খুঁজছিল ও। হঠাৎ কিছুর টানে ওর ডান হাতটা আটকে যেতে বাঁ হাতেই বেডসুইচটা জ্বালিয়ে নিল। আলোর ঝলকানিতে নজরে এল ওর কোলের একদম কাছে সরে এসেছে বাচ্চাটা।
ছোটগল্প ‘ফাইট’, লিখলেন সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়…
গল্প: ছবি

দাদাইয়ের ছবির দিকে তাকিয়ে মায়ায় হাসল ঠাম্মি, “মেজখোকা বলল না, মা স্বাধীন! মা কি সত্যিই স্বাধীন? নিজের ইচ্ছেমতো সব করতে পারে? এই বাড়িতে একটাও জায়গা নেই যেখানে তোর বাবার ছবিটা রাখি। দেয়ালে দেয়ালে কী সুন্দর ছবি, পেইন্টিং! এখানে কোথায় রাখি? রিয়াবুড়ির ঘরের দেয়াল জুড়ে রঙিন ছবি, ফুলের, প্রজাপতির, পুতুলের। বড্ড বেমানান লাগবে না, বল?”
আইভি চট্টোপাধ্যায়ের নতুন গল্প ‘ছবি’
ছোটদের গল্প: ছুটির ফাঁদে

মাত্রাতিরিক্ত গরম আর তাপপ্রবাহের কারণে ক’দিন পরেই স্কুলে ছুটি পড়ে গেল। গরমে কাবু বাবানকে নিয়ে সুজাতা-মলয় হাজির হল মেঘেদের বাড়ি—মৌসিনরামে। যে নামটা শুনলে প্রথমেই মেঘের কথা মনে আসে, সেই মেঘালয়ে। মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড়ের কোলে— মৌসিনরামে সবসময়ই মেঘের আনাগোনা। তারা যেদিন পাইন গাছের বনের মধ্যে দিয়ে মৌসিনরামে ঢুকছিল, সেদিন মেঘ এসে যেন জাপটে ধরল তাদের। তারপর কী বৃষ্টি, কী বৃষ্টি! এত বৃষ্টি যে তিন দিন তারা কটেজ থেকে বেরোতেই পারল না।
…দিলীপ কুমার ঘোষের নতুন গল্প ‘ছুটির ফাঁদে’
গল্প: মনের মাঝে

চোখ থেকে ফাইবার গ্লাসের চশমাটা খুলে হতভম্বের মতো এদিক ওদিক তাকাল শোভন। একটু আগে দেখা ঘরটাকে, মানুষগুলোকে খুঁজতে চাইল যেন। অসুস্থ লাগছিল ওর। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত, যেন অনেকদিন ঘুমোয়নি। নিজেকে দেখলে হয়তো চিনতেও পারত না ও। পরনে ছেঁড়া জামা, ময়লা প্যান্ট। গালে অনেকদিনের না কামানো দাড়ি, চুল উসকোখুসকো। বয়সটা যেন এক ধাক্কায় দশ বছর বেড়ে গেছে!
সৌভিক চক্রবর্তীর নতুন গল্প…
গল্প: মরুশহরে কেল্লাফতে

যেহেতু রাতে মরুভূমির মধ্যে দিয়ে ট্রেনটা যাবে আর আজ কোজাগরী পূর্ণিমা তাই ঠিক হল ওরা সারা রাত জেগেই কাটাবে। পৌনে বারোটায় ট্রেন ছাড়ল। অরূপ দাশগুপ্তের কলমে রহস্যরোমাঞ্চের গপ্পো।