রবিরাগে- তৃতীয় পর্ব: মাজ-খাম্বাজ কথা

‘আজি যত তারা তব আকাশে’ গানটি সরোদ-শিল্পী বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত মাজ-খাম্বাজের গতের ছকে ফেলে বাজিয়েছিলেন। তাঁর বাজনায় আলি আকবর খাঁ, রবিশঙ্কর, অন্নপূর্ণা দেবী, এঁদের সবার ছায়া থাকা সত্ত্বেও প্রকটতর হয়ে উঠেছিল রবীন্দ্রনাথের চিন্তনে যেভাবে মাজ-খাম্বাজ ধরা দিয়েছিল, তার ছায়া। বস্তুত, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের বাজনা থেকেই রবীন্দ্র-ভাবনায় মাজ-খাম্বাজ কেমন ছিল, তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করা যায়।
রবীন্দ্রগানে রাগসঙ্গীতের, বিশেষত খাম্বাজ রাগের প্রয়োগ নিয়ে লিখলেন সুভদ্রকল্যাণ…
তোমারি ওই অমৃতপরশে

ভেবেছিলাম আমার ধৃষ্টতায় বিরক্ত হয়ে ঘর থেকে বের করে দেবেন। তা তো করলেনই না উল্টে আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে জানতে চাইলেন “যেগুলোর কথা তুমি আমাকে বললে তা কি তোমার শোনা কথা না তুমি সেগুলো শিখেছ?” আমি সেসব শিখেছি শুনে আরও খুশি হয়েছিলেন। বলা বাহুল্য সেদিনের বক্তৃতা অসাধারণ হয়েছিল। বক্তৃতার মাঝে উনি গান গেয়েছিলেন, যার সঙ্গে আশীষদা সরোদ বাজান। সেই রেকর্ডিং আমার কাছে আজও সযত্নে রাখা আছে।
ঈশ্বরকণা

তাঁর মতো রসিক মানুষও কম আছে। ওঁর বাড়ির কাছে একটা বড় মাঠে খুব বড় হ্যালোউিন-এর পার্টি হত। দু-তিন বার আমি আর বিক্রমও গিয়েছি। এবং ভাবলেও অবাক লাগে, জ্যাঠামশাই, চিন্নামা, অণুষ্কা, আমি, বিক্রম—সবাই আমরা অদ্ভুত সমস্ত পোষাক পরে দারুণ হুল্লোড় করেছি। কেউ পাইরেট, কেউ ভূত, কেউ পেত্নি সেজে মহানন্দে মেতে উঠেছি।
বিশ্বজন মোহিছে

রবিশঙ্কর আজীবন ভারতীয় মার্গসঙ্গীতের প্রতি থেকেছেন শ্রদ্ধাশীল। আর বারে বারে পাশ্চাত্যের উপযোগী করে তাকে পরিবেশন করেছেন। আবার জাপানি সঙ্গীতের সঙ্গে তাকে মিলিয়েও, দুই দেশের বাদ্যযন্ত্রের সম্মিলিত ব্যবহার করে নিরীক্ষা করেছেন। সারাক্ষণ, সব শুচিবায়ু ভেঙে, তিনি মেলানোর, মেশানোর, চেষ্টার, কৌতূহলের রাজ্যের বাসিন্দা হতে চেয়েছেন। এই প্রাণশক্তি আর প্রতিভার মিশ্রণেই, তিনি বিদেশের কাছে ভারতীয় মার্গসঙ্গীতের মুখ। আর ভারতের কাছে, পাশ্চাত্যের জৌলুসযুক্ত তারকা।
মীড় দিলে নিষ্ঠুর করে…

রবিশঙ্কর তাঁর গুরু আচার্য আলাউদ্দিন খানের তালিম মাফিক শুরু করলেন বিলম্বিত তিনতালে গৎ বাজানো। এবং আজীবন কর্ণাটকী সঙ্গীত পদ্ধতিতে বিশ্বাসী থাকার দরুণ তিনি সেই গতে লয়ের মারপ্যাঁচ, অঙ্কের হিসেব, তেহাই ইত্যাদি নিয়ে এলেন। এতে তাঁর বাজনায় আমরা পেলাম সুরের সঙ্গে তাল-লয়ের অসামান্য সামঞ্জস্য।