অতিমারী ও প্রকৃতি-বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দু (প্রবন্ধ)

এই অতিমারী প্রকৃতি এবং পরিবেশের জন্য ভালো না খারাপ, সেটা ভাইরাসের উপরে নিশ্চিত ভাবে নির্ভর করবে না, নির্ভর করবে মানুষের উপরে।… এই যুদ্ধ দুর্যোগ নয়, প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য আজ মানুষের কাছে এক বিরাট সুযোগ।…
বিশ্ব যখন নিদ্রামগন (প্রবন্ধ)

এপিডেমিক শব্দটার উত্থান ইউরোপে, গ্রিসে। এপি অর্থে উপর (upon/above) আর ডেমস অর্থে মানুষ (সেখান থেকেই ডেমক্রেসি বা গণতন্ত্র)। কোনও ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস-জনিত মারণ রোগ যখন একই দেশের অনেক মানুষকে সংক্রামিত করে, তখন তাকে এপিডেমিক বা মহামারী বলে। আবার সেই এপিডেমিক যখন এক দেশের সীমান্ত পার করে পড়শি দেশ, মহাদেশ, বা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে, তখন তারই নাম হয় প্যানডেমিক বা অতিমারী।…
অপ্রতিরোধ্য বসন্তদিন

কে রুখবে অপ্রতিরোধ্য বসন্তের হাওয়া? চারিদিকের এই মহেঞ্জোদাড়োর শূন্যতার মাঝে ঝাঁপিয়ে পড়েছে দুরন্ত ম্যাগনোলিয়া। দু’মিটারের দূরত্ব বজায় রেখে সন্তর্পণে পাড়ায় হাঁটছি আলেকজান্দ্রা প্যালেসের দিকে। মার্চের প্রথম বাসন্তী রোদ গায়ে মেখে। মনে পড়ে যাচ্ছে বোকাচ্চিওর দশ বন্ধুর কথকতা। মহামারী প্রবল অন্ধকারের বুক থেকে ড্যাফোডিল আলো ছিনিয়ে এনে হালকা হাসিতে তারা ছড়িয়ে দিয়েছে বিংশ শতাব্দির করোনার কলোনিতে। এ সময় ভয়ের। এ সময় নির্ভীকতার। এ সময় সামাজিক দূরত্বে দাঁড়াবার। এ সময় ভীতিপ্রদ রক্তচক্ষুর দিকে সরাসরি তাকিয়ে থাকবার।
লকডাউনে চাপমুক্তি

নিজের এলাকার একা থাকা মানুষ বা বৃদ্ধ মানুষগুলোর দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো ওষুধ বিষুধ কিনে পৌঁছে দিন। অর্থ সংগ্রহ করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করুন। ন্যুনতম প্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন চাল ডাল আলু কিনে দিন। তবে এসব কাজ করতে হবে সবরকম সাবধানতা অবলম্বন করে। সার্জিকাল মাস্ক পরুন। বাড়ি ফিরেই ভালো করে হাত ধোন। স্বেচ্ছাসেবীরা এক কি দুজনের বেশ একসঙ্গে যাবে না। এই বিষয় গুলো একধরনের মানসিক শান্তি দেবে দু পক্ষকেই।
সময়সারণী ও প্রতিষেধকের খোঁজ

এখনও অবধি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কোন ধাপেই কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়নি। অতি মারাত্মক ক্ষেত্রে কিছু ক্ষেত্রে শোনা যাচ্ছে সার্স, এইচআইভি-তে ব্যবহৃত অ্যান্টি-ভাইরাল ড্রাগ এবং ক্লোরোকুইন বা ক্লোরামফেনিকলের মতো অ্যান্টিবায়োটিকের সম্মিলিত প্রয়োগে ফল দিচ্ছে। কিন্তু ১৮ মার্চ, ২০২০-তে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এ প্রকাশিত ট্রায়াল রিপোর্ট (র্যান্ডমাইজড, কন্ট্রোলড, ওপেন লেবেল ট্রায়াল) “ট্রায়াল অফ লোপিনাভির-রিটোনাভির ইন অ্যাডাল্টস হসপিটালাইসড উইথ সিভিয়ার কোভিড-১৯” জানাচ্ছে – “হাসপাতালে ভর্তি প্রাপ্তবয়স্ক তীব্র করোনা আক্রান্তদের ওপর লোপিনাভির-রিটোনাভির-এর কোনও প্রভাব দেখা যাচ্ছে না”।
অসামাজিকতাই একমাত্র রক্ষাকবচ

আপনি বাঁচলে বাপের নাম— এখন আর নয়। এখন সবাই বাঁচলে নিজের বাঁচার একটা সম্ভবনা আছে। সুতরাং বাধ্য হয়ে সবার কথা ভাবতে হবে। কেবল নিজের হাত ধোওয়ার ব্যবস্থা পাকা করলেই হবে না। অন্যের জন্য হাত ধোওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এক ডজন স্যানিটাইজ়ার কিনে ঘরে মজুত রাখলে বাঁচা যাবে না। অন্যের জন্য দোকানে স্যানিটাইজার ছাড়তে হবে। আবেগে ভেসে গিয়ে থালা বাজিয়ে মিছিল করলে হবে না। মনে রাখতে হবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জানলায় বা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থালা বাজাতে। যে ভাবে অন্যান্য দেশ নিজের মতো করে স্বাস্থ্যকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করছে। রাস্তায় বেরিয়ে নয়। ঘরে থেকে।
করোনার কুশপুতুলি

আচ্ছা এতে রাখঢাকের কী আছে মশাই? রোগ হলে হবে, হয়েছে। স্বীকার করুন। সবার বাড়িতে আমাদের বুড়োমানুষেরা আছেন, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিসে ভোগা প্রচুর মানুষ রয়েছেন। আমাদের লিফট ইত্যাদি পরিষ্কার করা হচ্ছে সর্বক্ষণ। কিন্তু সেই ছেলেগুলি গায়ের জোরে আবার ঢুকে পড়বে না তো? সারাক্ষণ স্যানিটাইজেশন চলছে। পেপারওয়ালা, পুজোর ফুল, দোকান থেকে কয়েন ফেরত নেওয়া, স্যুইপার, মালি, ড্রাইভার সব বন্ধ করে আমরা হোম কোয়ারান্টাইনে রয়েছি। কিন্তু অবোধ এই বালকেরা? এরা এত অবাধ্য? প্লিজ কথা শুনুন সবাই। রোগ লুকোবেন না। রোগ ছড়াবেন না।
করোনা: হারানো প্রাপ্তি সংবাদ

করোনাভাইরাসের দৌলতে এই শব্দটা দিব্যি শিখে গিয়েছি আমরা। ডব্লুএফএইচ। মানে ওয়ার্ক ফ্রম হোম। কথা শোনও, হাত ধোও, অফিসেতে যেও না। করোনায় প্রথম করণীয় কী, আঁচ করতে পেরেই একের পর পর এক অফিসে দিন পনেরোর ছুটি হয়ে গিয়েছে দেশের বেশ কয়েকটা শহরে। নামী কোম্পানির দামি সিইও বড় মুখ করে মিডিয়ায় বলছেন, প্রেস নোট দিচ্ছেন, ‘আমরা আমাদের কর্মীদের উপরে পূর্ণ ভরসা রাখি। আমরা জানি, অফিসে বসে তাঁরা দিন রাত এক করে যে কাজ করেন, একই উদ্যমে তাঁরা কাজ করে যাবেন বাড়িতে বসেও।’