গোলকিপার (পর্ব ২১)

Episodic Novel Illustration ধারাবাহিক উপন্যাস

কুর্চি একবার ভাবল ফিরেই যাবে কিনা। তারপর নিজেকে বোঝাল, অনেক ভেবেচিন্তেই তো এখানে এসেছে সে। এখন ফিরেই বা যাবে কেন? একতলায় বসার ঘরে ঢুকে দেখল, খালি গলায় গাইছেন মানিনীদি আর বাবার সঙ্গে বসে একমনে গান শুনছেন নন্দিতাদিদা, সুচিরাপিসি আর সুশোভনজেঠু। কুর্চি যেদিক দিয়ে ঢুকল, তার উল্টো দিকে তাকিয়ে আছেন তাঁরা, মানিনীদির দিকে মুখ করে। চোখ বন্ধ করে গাইছিলেন মানিনী, গান শেষ হতে তিনিই প্রথম দেখতে পেলেন কুর্চিকে। বললেন, “ওই তো কুর্চি এসে গেছে।” সুজাত তাঁর সোফায় পাশের জায়গাটা দেখিয়ে বললেন, “আয়, বোস।”

গোলকিপার (পর্ব ২০)

Episodic Novel Illustration ধারাবাহিক উপন্যাস

বেলভেডিয়ারে পৌঁছতে দেবদীপেরও একটু দেরি হয়ে গেল। অরিত্রর কেবিনের দরজা খুলেই হকচকিয়ে গেল দেবদীপ। শুয়ে আছে অরিত্র, ডাক্তার কর তার মাথার ক্ষত পরীক্ষা করছেন, তাঁকে ঘিরে জনা পাঁচেক সহযোগী। দাঁড়িয়ে পড়ল দেবদীপ, উদ্বেগের ছায়া ক্রমশ গাঢ় হয়ে উঠছে তার মুখে। মিনিট খানেকের মধ্যেই অরিত্রকে ছেড়ে ঘুরে দাঁড়ালেন ডাক্তার কর।

গোলকিপার (পর্ব ১৯)

Episodic Novel Illustration ধারাবাহিক উপন্যাস

বেলভেডিয়ার নার্সিং হোমে পৌঁছতে পৌঁছতে অবশ্য ভিজিটিং আওয়ার শেষ। তবে ডাক্তার করকে হাসপাতালেই পেয়ে যাওয়ায় অরিত্রর কাছে যেতে কুর্চির অসুবিধে হল না। সকালের ফিজিওথেরাপি সেশন শেষ করে স্নান-টান সেরে ঘরের কোণের সোফায় বসে শরদিন্দু পড়ছিল অরিত্র। কুর্চিকে দেখে খুশি খুশি গলায় বলল, “কদ্দিন পরে এলে। আমাকে তো চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলে!” শুনে এত জোরে হেসে উঠল কুর্চি যে নিজেই লজ্জা পেল। অরিত্রর মুখোমুখি সোফাটায় বসতে বসতে বলল, “সরি। দিন নেই রাত নেই, আমি পাঁইপাঁই করে ছুটে বেড়াচ্ছি, আর আমাকে নিয়েই চিন্তা হাসপাতালে বন্দি গোলকিপারের! শুনি, কিসের এত চিন্তা তোমার?”

গোলকিপার (পর্ব ১৮)

Episodic Novel Illustration ধারাবাহিক উপন্যাস

একসঙ্গে জনা কুড়ি লোকের ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেশ আরাম করে বসার ব্যবস্থা যে ঘরে, সেখানে একা বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন সুজাত। পড়ছিলেন, না সামনে কাগজ মেলে বসেছিলেন, বলা মুশকিল। সামনে রাখা পেয়ালায় চা জুড়িয়ে জল। একবারও ইচ্ছে হয়নি তাতে চুমুক দেওয়ার। রাতে অনেক ধৈর্য ধরেও ঘুম না-আসায় ওষুধ খেতে বাধ্য হয়েছিলেন। সকালেও মন দিতে পারছেন না কোনও কিছুতে। যে মনঃসংযোগের জন্যে তাঁর এত সুনাম, আজ কিছুতেই তার হদিশ পাচ্ছেন না। অনেক ধাঁধার কোনও সমাধানই খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি–– কুর্চি কী জেনেছে, কতটা জেনেছে, কীভাবে জেনেছে!

গোলকিপার (পর্ব ১৭)

Episodic Novel Illustration ধারাবাহিক উপন্যাস

কয়েক মুহূর্তের মধ্যে হাজির ডাক্তার কর। এসেই অরিত্রর চিকিৎসার ফাইলে চোখ বোলাতে বোলাতে বললেন, “অনেকটাই তো সেরে উঠেছ এখন। প্রেসার খুব নেমে গিয়েছিল, এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। এবার হাঁটা-চলা শুরু করা যাক, নাকি ফুটবলারশ্রী? আজই তোমার আইসিইউ-মুক্তি। আমি সব বলে দিয়েছি, কিছুক্ষণের মধ্যেই তোমাকে ছ’তলার কেবিনে নিয়ে যাওয়া হবে। আপনারা থাকুন, ওর সঙ্গেই ছ’তলায় যান। ওর ভালো লাগবে।  কাল থেকে ওর ফিজিওথেরাপি শুরু হবে। তার কয়েক দিন পরে কাউন্সেলিং। ফরোয়ার্ডদের পা থেকে বাজপাখির মতো বল তুলে নেওয়ার অভ্যেসটা ফিরে আসা চাই তো?”

গোলকিপার (পর্ব ১৬)

Episodic Novel Illustration ধারাবাহিক উপন্যাস

গেটের একপাশে নিম আর অন্যপাশে কাঞ্চন। গেট থেকে বাড়ি পর্যন্ত খালি জায়গাটা এখন এই ফাল্গুনের মাঝামাঝি খয়েরি রঙের খসা নিমপাতা আর স্কারলেট রঙের ঝরা কাঞ্চন ফুলে মিলেমিশে লাবণ্যময়ী প্রাচীনার মতো মায়াময়। গেটের দুই পাল্লা জুড়ে একটা তালাসুদ্ধু শিকল এমনভাবে জড়ানো যে মনে হতে পারে গেটে তালা ঝুলছে। কিন্তু অভিজ্ঞ চোখ সহজেই বুঝে নেয়, শিকল নামালেই গেট খুলে যাবে। ভেতরে ঢুকে কুর্চি দেখল, সদর দরজা বাইরে থেকে হুড়কো টেনে বন্ধ, অথচ তাতে তালা লাগানো নেই!

গোলকিপার (পর্ব ১৫)

Episodic Novel Illustration ধারাবাহিক উপন্যাস

মাঝের তিনটে দিন সুমিত্রাকে সত্যিই নিয়ম করে অরিত্রর খবর দিয়ে গেছে দেবদীপ। সুমিত্রা জানেন অরিত্রর অবস্থা স্থিতিশীল, চিকিৎসায় ভালোই সাড়া দিচ্ছে সে। তবু সারাটা রাস্তা এলেন দুরুদুরু বুকে। নার্সিং হোমে পৌছে লবির সামনে দেবদীপ অপেক্ষা করছে দেখে আরও যেন  বেড়ে গেল তাঁর বুকের কাঁপুনি। লিফট থেকে নেমে আইসিইউ-এর দিকে যেতে যেতে বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল বছর চারেক আগে হাসপাতালে তাঁর স্বামীর শেষ কয়েকটা দিনের দৃশ্য। ভয় হচ্ছিল, চনমনে ছেলেটা যন্ত্রের ঘেরাটোপে কী জানি কী কষ্টের মধ্যেই না আছে! যত এসব কথা ভাবছেন, ততই যেন পা অসাড় হয়ে আসছিল তাঁর। টকটকে লাল হয়ে উঠেছে তাঁর মুখ।

গোলকিপার (পর্ব ১৪)

Episodic Novel Illustration ধারাবাহিক উপন্যাস

কুর্চি চোখ ফিরিয়ে তাকিয়ে আছে জলের দিকে। যে কথাটা দেবদীপ বলতে চায়, যা বলার জন্যে কুর্চিকে সে আজ ডেকেছে রোয়িং ক্লাবে, সেটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে বিষিয়ে উঠবে কুর্চির মন। মেয়েটা যথাসাধ্য চেষ্টা করছে ওর পুরনো দুঃখ ভুলে আনন্দে বাঁচার। দেবদীপ যা বলতে যাচ্ছে, তাতে কি ওর বাঁচাটা সহজ হবে? বাবা ছাড়া ওর নিজের লোক বলতে সত্যিই তো কেউ নেই! কুর্চি সামলাতে পারবে তো এই ধাক্কা? একা থাকে, ডিপ্রেশনে ভয়ঙ্কর কিছু করে বসবে না তো? কিন্তু অরিত্রর পাশে যে এখন কুর্চিকে দরকার!