ঝড়কে পেলেম সাথি

শান্তিনিকেতনে, বলা ভালো গোটা রাঢ়বঙ্গেই কালবৈশাখীর দাপট বাংলার অন্যান্য অংশের চেয়ে কিঞ্চিৎ বেশিই। তার প্রমাণ তো গুরুদেবের অজস্র গানের ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে রয়েছে। আমি গানের মানুষ, তাই ঝড় উঠলেই মনে হয়, ‘আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার’-এর প্রতিটি মীড়েই কি ধরা নেই লাল মাটির উপর কালবৈশাখীর তাণ্ডব? কিম্বা ‘ওই যে ঝড়ের মেঘের কোলে, বৃষ্টি আসে মুক্তকেশে, আঁচলখানি দোলে’-র সুরের দুলুনিতে তো প্রায় বৃষ্টির ফোঁটা হাওয়ার টানে ছিটকে এসে পড়ে গানের খাতার ওপর! ‘হৃদয় আমার ওই বুঝি তোর বৈশাখী ঝড়’ না গাইলে বুঝি কালবৈশাখীর বাউল বাতাসকে শরীরে অনুভব করা যায় না! ‘ওই বুঝি কালবৈশাখী’ গানে যেমন করে কালবৈশাখীর রূপের মধ্যে অরূপের বাণী তুলে আনেন কবি, সে যে জীবনের করালঝড় সামলে চলার শিক্ষা!
দাম্পত্যের কালবৈশাখী

যদি অন্ত্যমিল না থাকে দুজন মানুষের দাম্পত্যে, যদি বৃষ্টি না-নেমে সবকিছু স্নিগ্ধই না-হয়ে যায়, তখন তারা থাকবে কেমন করে পরস্পরের সঙ্গে? মাছ আর পাখির মতো? একজন জলে, অন্যজন আকাশে? সেইভাবে এক ছাদের নিচে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো বসবাসে ভালোবাসা কি বেঁচে থাকে? সফল দাম্পত্যে ওই তীব্র অধিকারবোধের আকাঙ্ক্ষার থেকেও অনেক বেশি প্রয়োজন নির্ভরতা আর বিশ্বাস। যখন দু’টি মানুষের মনের মধ্যে যোজনবিস্তৃত ব্যবধান আলসেমির রোদ্দুর মেখে শুয়ে থাকে… দীঘল কালো চুলের সর্পিল বেণীটির মতো.. তাকেই বলা যেতে পারে বহুব্যবহারে জীর্ণ দাম্পত্য এবং তখনই কালবৈশাখী ঝড় ওঠে আচমকা।
আকাশ-কোণে সর্বনেশে

আসলে কালবৈশাখীর মধ্যে যেটা আছে, তা হল আচম্বিত। চেয়ে হেদিয়ে গেলেও পাওয়া যাবে না, আর যখন ন্যূনতম আশা থাকবে না, তখন হরে মুরারে বেশে রই রই আছড়ে পড়বে।
কখন যে ঝড় আসে

কোনও কালবৈশাখীই অকালবৈশাখী নয়। কারণ কালবৈশাখীর মধ্যে একধরনের অনিশ্চয়তা আছে যা নিষ্ঠুর , কিন্তু নিয়তিনির্ধারিত। প্রকৃতির মধ্যে এই সৃষ্টি এবং ধ্বংসের লীলা নিয়ে যে প্রচুর রোমান্টিক এবং আধ্যাত্মিক কাব্য রচিত হয়েছে, তা মনে হয় এখন আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। দুর্গার প্রবল বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার মতো বা জ্বরের মধ্যে পড়ে বাইরে প্রবল ঝড়ের আবহে প্রতি মুহূর্ত সেই অনিশ্চয়তার সঙ্গে দাবা খেলার মতো কালবৈশাখীকে ভিলেন বা অশনির দূত হিসেবে মনে করার পিছনেও সম্ভবত ভুল কিছু নেই।