কলেজে বেরনোর সময় অপর্ণা মানে পিকুর মা, ওর হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বললেন “কলেজের পর পারলে এটা একটু সল্টলেকে দিদাকে দিয়ে আসিস, আর যদি বেরোতে দেরি হয় তাহলে সন্তুর অফিসে দিবি, বলে দিবি দিদাকে দিতে।” পিকুর মামা সন্তু অর্থাৎ শান্তনু, ভবানী ভবনে রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগের সিনিয়র অফিসার। পিকু বেহালার জয়শ্রী পার্কে থাকে। রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে ফিজিক্সে এমএসসি পড়ে আর মামার পাল্লায় পড়ে মাঝেমধ্যে সখের গোয়েন্দাগিরি করে। এর মধ্যেই বেশ কয়েকটা রহস্যের সমাধান করে পিকুর একটু নামডাকও হ’য়েছে। পিকুর খুব ঘনিষ্ঠ বান্ধবী মেঘনা। মেঘনাও সায়েন্স কলেজেই পড়ে, তবে ওর বিষয় কেমিস্ট্রি। থাকে নিউ আলিপুরে। তাই ওরা একসঙ্গেই কলেজে যাতায়াত করে।

সেদিন কলেজ থেকে বেরোতে একটু দেরিই হল। পিকু ঠিক করল মা’র দেওয়া প্যাকেটটা বাড়ি ফেরার পথে মামাকেই দিয়ে যাবে। কলেজ থেকে বেরিয়ে পিকু মেঘনাকে জিজ্ঞাসা করল “ভবানী ভবন যাবি।” মেঘনা এককথায় রাজি। সন্তুকে মেঘনার বেশ লাগে। অত বড় একজন আই পি এস অফিসার অথচ কি ভীষণ সিম্পল আর মাই ডিয়ার লোক। পিকুরা কলেজ থেকে বেরিয়ে রাজাবাজার মোড়ে এসে ২০৪ নম্বর বাসে উঠে বসল। ভবানী ভবন পৌঁছতে ওদের সন্ধ্যে হয়ে গেল। মেঘনা আগেই বলেছিল বেশিক্ষণ বসবে না, ওর বাড়িতে মাসিদের আসার কথা আছে। সন্তুকে প্যাকেটটা দিয়েই পিকুরা উঠে আসছিল, সন্তুই ওদের একটু বসে যেতে বলল – “চা আর ভেজিটেবল চপ দিতে বলেছি খেয়ে যা।” সন্তুর অফিসে আসার এটাও একটা বড় আকর্ষণ পিকুদের। এখানে এলেই মামা কিছু না কিছু খাইয়ে তবে ছাড়বে। চা আর চপ খেয়ে সন্তুর অফিস থেকে বেরিয়ে গোপালনগর থেকে পিকুরা তারাতলার অটোতে উঠল। মেঘনা নিউআলিপুরে নেমে গেল আর পিকু তারাতলায় নেমে বেহালা চৌরাস্তার দিকে হাঁটা শুরু করল।

ঘটনাটা ঘটল ঠিক অজন্তা সিনেমার উল্টো দিকের ফুটপাথে। তখন প্রায় রাত পৌনে আটটা। রাস্তার লাইট জ্বলছেনা বলে একটু অন্ধকারই ছিল জায়গাটা। হঠাৎ পিকুর পাশে একটা মারুতি ভ্যান এসে দাঁড়াল। তিনটে লোক নেমে ওকে জোর করে গাড়িতে তুলে নাকে কীসের একটা গন্ধ শোঁকাতেই পিকু বেহুঁশ হয়ে গেল।

জ্ঞান যখন ফিরল তখন প্রথমটা পিকু কিছুই বুঝে উঠতে পারল না। শুধু বুঝল মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করছে। তারপর ধীরে ধীরে সব মনে পড়তে হুড়মুড়িয়ে উঠে দ্যাখে সঙ্গে মোবাইল ঘড়ি কিছুই নেই, একটা অচেনা ঘরে বিছানায় বসে আছে। ঘরে ওর খাটটা ছাড়া আছে একটা বড় ডবল সোফা আর একটা রিডিং টেবিল এবং চেয়ার । ঘরে এসি চলছে। উঠে ঘরের লাইটটা জ্বালালো পিকু। টেবিলের ওপর রাখা একটা ঘড়ি তাতে রাত আড়াইটে বাজে। ঘরটা বেশ বড়, একটা টয়লেটও আছে। ফ্ল্যাটের দরজাটা খুলতে চেষ্টা করে পিকু দেখল সেটা বাইরের থেকে বন্ধ। তার মানে হি হ্যাজ বিন কিডন্যাপড।

একে মাথাটা ঝিমঝিম করছে, কোনও কিছুই ঠিক ঠাহর করতে পারছে না তার ওপর খিদেও পেয়েছে খুব। খাবার কোথায় পাবে? কোনও লোকজন কি আছে আশেপাশে? কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। দুএকবার দরজাটায় ধাক্কা মারল, কিন্তু কোথাও কোনও সাড়াশব্দ নেই। এদিক ওদিক তাকিয়ে পিকু দেখল ঘরের অন্য পাশে একটা বন্ধ দরজা। একটা ধাক্কা দিতেই সেটা খুলে গেল। একটা ছোট্ট প্যান্ট্রি গোছের ঘর। ছোট একটা ফ্রিজ আর মাইক্রোওয়েভ ওভেন রাখা। ফ্রিজটা খুলে পিকু দেখল সেলোফেন পেপারে মোড়া স্যান্ডউইচ আর কয়েকটা কোকের ক্যান রয়েছে সেখানে। পিকু সাহস করে গরম না করেই দুটো স্যান্ডউইচ আর একটা কোক খেয়ে নিল। পেটে একটু কিছু পড়তে মনে হল মাথার কষ্টটা যেন কমেছে খানিকটা । কিন্তু ঝিমুনি ভাবটা কিছুতেই যাচ্ছে না। একটা ব্যাপার পিকুর মাথায় ঢুকছে না, – ওকে কারা কিডন্যাপ করল আর কেনই বা করল। তবে আর বেশি কিছু ভাবার আগেই আবার ঘুমিয়ে পড়ল পিকু।

এদিকে পিকু বাড়ি ফেরেনি দেখে তো চারপাশে হুলুস্থুল কাণ্ড – প্রথমে বন্ধু বান্ধবের কাছে খোঁজ করা হলো – মেঘনা জানাল তারাতলা পর্যন্ত ওরা একসঙ্গে ছিল। তারাতলা-বেহালা অঞ্চলে কোনও পথ দুর্ঘটনাও হয় নি। তাহলে কী হল? ছেলেটা গেল কোথায়! সন্তু ইতিমধ্যেই পিকুর ছবি দিয়ে রাজ্যের সব থানায় খবর পাঠিয়ে দিয়েছে। সব স্টেট আর ইন্টারন্যাশনাল বর্ডারের থানাগুলোকেও ইনফর্ম করা হয়েছে। পিকুর মা সেই যে ঠাকুরের আসনের সামনে বসেছেন আর উঠছেন না। একমাত্র মেঘনা ভয় পেলেও খুব কনফিডেন্ট যে পিকু ফিরে আসবেই। 

পরের দিন ভোরবেলা ঘুম ভাঙল পিকুর – মাথা এখন অনেকটা পরিষ্কার। টেবিলের ওপর নতুন একটা টুথ ব্রাশ আর ছোট একটা পেস্ট রাখা ছিল, পিকু তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিলো। একটা ব্যাপার পরিষ্কার, যারাই পিকুকে কিডন্যাপ করুক না কেন, পিকুর সঙ্গে তারা এ পর্যন্ত কোনও দুর্ব্যবহার করেনি। একটু পরে দরজা খুলে একজন বৃদ্ধ কাজের লোক এসে টিপটে চায়ের লিকার, আলাদা দুধ, চিনি আর এক প্লেট বিস্কুট দিয়ে গেল। পুরো ব্যাপারটার মধ্যেই একটা সফিস্টিকেশনের ছাপ আছে। পিকু কথা বলার চেষ্টা করলেও লোকটা কোনও উত্তর না দিয়ে দরজা বন্ধ করে চলে গেল। 

পিকুর চা খাওয়া শেষ হতে না হতেই দরজা খুলে একজন মধ্যবয়সী ভদ্রলোক ঘরে ঢুকলেন – ধবধবে সাদা পায়জামা পাঞ্জাবী পরা, গলায় মোটা সোনার চেন, কপালে তিলক। দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিছুক্ষণ আগে স্নান করে পুজো সেরে এসেছেন, গা থেকে ধূপের গন্ধটা তখনও যায়নি। ঘরে ঢুকেই হাতজোড় করে বলে উঠলেন “গুড মর্নিং পিনাকী বাবু! আমার নাম তিলকচাঁদ নাহাতা । আমিই আপনাকে এখানে আনার বন্দোবস্ত করলাম।” 

“গুড মর্নিং! কিন্তু আমার দোষ কী?” পিকু জিজ্ঞাসা করলো। 

পিকুর খাটের উল্টোদিকে রিডিং টেবিলের চেয়ারটা টানতে টানতে তিলকচাঁদ বললেন “ছিঃ ছিঃ দোস বলবেন না! আমার আপনার কাছ থেকে একটা হেল্প লাগবে। আপনি হেল্প করবেন, আমরা ছেড়ে দিবো, না করলে ফেলে দিবো! বুঝতেই পারছেন ম্যাটার আর্জেন্ট আছে।” তিলকচাঁদের কথা বলার টোনটা অনেকটা কলকাতার মারওয়ারিদের মতো।

“কী হেল্প লাগবে সেটা তো আগে শুনি!”
“ইখুনি সুনবেন নাকি বেরেকফাস্ট করে লিয়ে সুনবেন? আপনি যেইরকমটা বলবেন!”  

“না না এখনই বলুন।” 

 তিলকচাঁদ পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে পিকুর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
“এর মানে কি আছে বলে দিতে হোবে!” 

পিকু কাগজটা হাতে নিয়ে দ্যাখে তাকে লেখা – 

“কমলা সবুজ হলুদ লাল
খেজুর গাছে মস্ত তাল।
শুকনো তালের মিষ্টি শাঁস
গড়িয়াহাটের চবনপ্রাশ।”

“আপনি কী ব্যাপারে এই কবিতার মানে জানতে চাইছেন? একটু পরিষ্কার করে বলুন।” 

“তাহলে সুনেন! আমার এক্সপোর্ট ইমপোর্টের বেওসা আছে। আমার এক কেলায়েন্ট মিঃ জীবন তরফদার আছেন। সেদিন উনি উনার ভেরি ওল্ড পাস্ট জেনরেশনের একটা ছোটা বাকসো দিলো, ছও ডিজিটের কম্বিনেসন লোক লাগানো। বললো উটার মোধ্যে ছওটা হীরার আংটি ভি আছে। কিন্তু বাকসো ভাঙ্গা যাবে না। ওই বাক্সের ওপর যা সোনার কাজ করা আছে আর ওর যা অ্যান্টিক ভেলু আছে তা কড়োরো মে হোবে। আর বললো ওই বাকসের ছও ডিজিটের কম্বিনেসন লোকের নম্বার ইস কাগাজ মে লিখখা হ্যায়। আমরা বাংলা পড়তে পারি। কিন্তু এর মিনিং বুঝতে পারলাম না। আপনি পাসওয়ার্ড নম্বারটা বার করে দিবেন আমরা আপনার ফিস সমেত আপনাকে ফেরৎ করে দিবো। সিম্পল!” 

“সবই তো বুঝলাম, কিন্তু আপনি বুঝছেন কি করে যে আমি এটা সলভ করতে পারব আর আপনি আমাকে এই ভাবে ধরে না নিয়ে এসে আমার সাথে যোগাযোগও তো করতে পারতেন, আমি পারলে করে দিতাম!” 

“ভেরি সিম্পল! আপনি শান্তনু স্যারের ভাগ্নে আছেন। আপনাকে জানালে বেপারটা সেফ থাকবে না। আর আপনি কেনো? কারণ আপনি ভদ্রেশ্বরে প্রবলেম সলভ করলেন, তখনই জানলাম ইউ আর ভেরি ভেরি ইন্টেলিজেন্ট! তাই আমি আমার নিজের লোকের সঙ্গে কথা কোরে আপনাকে ধরে আনলাম। ভদ্রেশ্বরের ওই প্রোপার্টিটা আমারই তো লিবার ছিলো! ঠিক আছে, তাহলে আপনি কাজে লেগে যান! আপনার যা কিছু লাগবে ওখানে কোলিং বেল আছে, বাজাবেন আমার চাকর হরি আছে, ও সব বেওস্থা করে দিবে। আপনার হলে ওকেই বলবেন আমি ফিন চলে আসবো।” – তিলকচাঁদ বলল। 

“কিন্তু আমার মোবাইলটা যে লাগবে!”  

“সেটা তো এখন পাবেন না। আপনার কী মেসেজ কাকে দিতে হবে লিখে দেন আমার লোক মেল করে দিবে। আপনি মেইল আই ডি লিখে দিবেন। তবে বেসি চালাকি করবেন না।” একটু থ্রেট করার টোনেই তিলকচাঁদ কথাগুলো বলল।

“তাহলে আপনার ফোনটা বা অন্য কারুর ফোন একটু পাওয়া যাবে ? আমি আমার মেলটা একবার চেক করে নেব!” 

তিলকচাঁদ নিজের ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললো “এই লিন, এখানেই দেখে লিন!” 

পিকু ফোনটা হাতে নিয়ে একটুক্ষণ রেখে ফেরৎ দিয়ে দিল। 

“আমি একটা মেসেজ লিখে দেব, আপনি একটু পাঠাবার ব্যাবস্থা করে দেবেন?” পিকু জিজ্ঞাসা করলো। 

“এই ড্রয়ারে কাগাজ পেন আছে আপনি লিখে রাখেন আমার লোক লিয়ে যাবে। অল দা বেস্ট! আমি তালে চলি? আবার বলছি, দেখবেন বেসি চালাকি করবেন না!” এই বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল তিলকচাঁদ।

ব্রেকফাস্টে পুরি, আলুর তরকারি আর লাড্ডু দিয়ে গেল হরি। সঙ্গে আর এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা। আবার ঘুমে চোখ বুঁজে আসছিল পিকুর। কী যে শুঁকিয়েছিল লোকগুলো কে জানে! পিকু আর পারল না, আবার ঘুমিয়ে পড়ল। কতক্ষণ পরে কে জানে, পিকুর ঘুম ভেঙে গেল দরজা খোলার আওয়াজে । 

“সাব আপকা খানা!” পিকু তাকিয়ে দ্যাখে হরি দাঁড়িয়ে। খাবার রেখে হরি চলে গেলো। টিপিক্যাল ভেজ থালি। ডাল, দুরকমের সব্জি, দুটো রুটি, একটু বাসমতী চালের ভাত আর আচার। পিকু খেয়েও নিল, কিন্তু সবটাই কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে ঘটছে। না বাড়ির কোনও চিন্তা হচ্ছে, না কিছু ভাবতে পারছে। পিকু আবার শুয়ে পড়ল।

 আমার এক কেলায়েন্ট মিঃ জীবন তরফদার আছেন। সেদিন উনি উনার ভেরি ওল্ড পাস্ট জেনরেশনের একটা ছোটা বাকসো দিলো, ছও ডিজিটের কম্বিনেসন লোক লাগানো। বললো উটার মোধ্যে ছওটা হীরার আংটি ভি আছে। কিন্তু বাকসো ভাঙ্গা যাবে না। ওই বাক্সের ওপর যা সোনার কাজ করা আছে আর ওর যা অ্যান্টিক ভেলু আছে তা কড়োরো মে হোবে। আর বললো ওই বাকসের ছও ডিজিটের কম্বিনেসন লোকের নম্বার ইস কাগাজ মে লিখখা হ্যায়। আমরা বাংলা পড়তে পারি। কিন্তু এর মিনিং বুঝতে পারলাম না।

এদিকে কলকাতায় সকলের দুশ্চিন্তায় অবস্থা খারাপ। সন্তুর মেজাজ প্রচণ্ড গরম হয়ে আছে, কিছুতেই কোনও সূত্র পাওয়া যাচ্ছে না। পিকুর মোবাইল সুইচড অফ, তাই টাওয়ার লোকেশন বোঝা যাচ্ছে না। শেষ লোকেশন ছিল অজন্তা সিনেমার কাছে। মেঘনাও আস্তে আস্তে মনের জোর হারিয়ে ফেলছে। পিকুর মা’র প্রেসার ফল করেছে, সে তো সন্তুকে বলেই বসল “তোর জন্যেই আজ পিকুর এই বিপদ। এইসব ডিটেক্টিভ হওয়ার উসকানি তুইই ওকে দিয়েছিস।” সন্তু যত বোঝাবার চেষ্টা করে যে পিকু ঠিক ফিরে আসবে, কেউই মানতে চায় না এমন কি মেঘনাও না। 

পরদিন সকালে নটা নাগাদ পিকুর যখন ঘুম থেকে উঠল, মাথাটা তখন একদম ঠিক হয়ে গেছে। এইবারে পিকুর চিন্তা হতে শুরু করল মা’র জন্যে, মেঘনার জন্যে। তিলকচাঁদ তো বলেইছে পিকু মেসেজ পাঠাতে পারে। ড্রয়ার থেকে প্যাড আর পেন বার করে পিকু মেঘনাকে একটা চিঠি লিখে হরিকে ডেকে দিয়ে দিল তিলকচাঁদকে দেবার জন্যে। মেঘনার ইমেল আই ডিটাও সঙ্গে দিল। 

মেলটা পেয়ে মেঘনা প্রথমে একটু অবাকই হলো। ইমেল এড্রেসটা চেনা নয়। কি এক সুইটিএন@জিমেইল.কম! তবে পড়ে বুঝল মেলটা পিকুরই। মেঘনা একটুও সময় নষ্ট না করে তক্ষুণি সন্তুকে ফোন করে জানাল ব্যাপারটা আর ইমেলটাও পাঠিয়ে দিল। দশ মিনিটের মধ্যে সন্তু আই পি এড্রেস ট্র্যাক করে জানতে পারল মেলটা ভদ্রেশ্বর অঞ্চলের কোনও একটা সাইবার ক্যাফে থেকে এসেছে। কিন্তু মেলে যা লেখা আছে তা দেখে তো সবার মাথায় হাত। পিকু লিখেছে –

“বুঝলি মেঘনা, 

আমি এখন যেখানে আছি জায়গাটা ভারী সুন্দর। সামনে একটু জঙ্গল পেরোলেই ছোট্ট একটা পাহাড়ি নদী। অল্প জল। ঘরে বসেই নদীর তির তির করে জল বয়ে যাওয়ার শব্দ শোনা যায়। নদী পার হলেই মাইল দুয়েক দূরে সবুজ পাহাড়। জানালা দিয়ে শুধুই প্রকৃতির রঙের খেলা দেখি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সারাদিন দূরের পাহাড়টার কিরকম রঙ বদলে যায়। কতরকম যে সবুজ ভাবতেই পারবি না। তাছাড়া নানান রকম পাখির ডাক তো আছেই। সত্যি ভীষণ সুন্দর জায়গাটা। সব থেকে ইন্টারেস্টিং হল রাত্রে হাতি, হরিণ এমনকি লেপার্ডও নদীতে জল খেতে আসে। কাল পূর্ণিমা ছিল, নদীর জলের উপর জোৎস্নার আলো পড়ে সে এক স্বর্গীয় দৃশ্য তৈরী হয়েছিল। আমি তো প্ল্যানই করে রেখেছি সামনের শীতে আমরা বন্ধুরা একবার অবশ্যই এখানে বেড়াতে আসব। ঘড়িতে এখন ঠিক রাত দশটা বেজে উনত্রিশ মিনিট হয়ে পাঁচ সেকেন্ড। ওপরের ব্যালকনিতে বসে আছি, উত্তর থেকে হালকা হাওয়া বইছে। একটু ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা ভাব। বাইরে বাইশ ডিগ্রি মতো টেম্পারেচার। পরিবেশটা সত্যিই খুব মনোরম। ও হ্যাঁ! আজ সকালে হঠাৎ আমাদের বন্ধু সুমন ফোন করেছিল। বহুদিন পরে কথা হলো। চিনতে পারলি সুমনকে? আমেরিকায় ইস্ট কোস্টে নিউ ইয়র্কে থাকে। বলছিল বছরের এই সময় ওদের ওখানে নাকি হঠাৎ ভীষণ গরম পড়েছে। ও যখন ফোন করেছিল তখন ওখানে রাত নটা বেজে এক মিনিট টি ভিতে নাকি দেখাচ্ছে বাইরে টেম্পারেচার প্রায় ৮৮ ডিগ্রি ফারেহাইট। হঠাৎ নাকি একটা হিট ওয়েভ বইছে। এখানে বেশ ভালই লাগছে। কলকাতায় এত একঘেয়ে জীবন কাটছিল যে হঠাৎ ঠিক করলাম কদিনের জন্যে একটু কোথাও ঘুরে আসি। এখানকার কেয়ারটেকার কাকু ভীষণ ভাল। খুব যত্ন করেন। খাওয়াদাওয়াও দারুণ। এই তো আজকেই, ব্রেকফাস্টে লুচি আলুর দম সাথে ক্ষীরের চপ আবার  লাঞ্চে শুক্তো, সোনা মুগের ডাল, বেগুন ভাজা, কচি পাঁঠার ঝোল, জলপাইয়ের চাটনি আর শেষে মিষ্টি দই।

তোরা সবাই ভাল থাকিস। মা’কে বলিস আমাকে নিয়ে চিন্তা না করতে। আমি কদিনের মধ্যেই ফিরে আসব। সবসময় সিগন্যাল থাকে না, তাই যোগাযোগের অসুবিধা। সুযোগ মতো ফোন করব।”

সন্তু বুঝতে পারছে না এটা কি সত্যিই পিকু লিখেছে নাকি অন্য কেউ ফলস মেল পাঠাচ্ছে! তবে সুমনের কথা পড়ে মেঘনা কনফার্ম করল ইমেলটা পিকুরই লেখা। তার মানে পিকু সুস্থ আছে। কিন্তু পিকুই বা এইরকম একটা মেল লিখল কেন। তাহলে কি ওরা পিকুকে কলকাতার বাইরে কোথাও নিয়ে গেছে। ডেসক্রিপশন পড়ে মনে হচ্ছে ডুয়ার্স। অথচ সন্তুর দৃঢ় বিশ্বাস পিকু কলকাতাতেই আছে। সে বলল – “ আমার মনে হয় এই সবকিছুই করা হচ্ছে আমাদের কনফিউজ করে দেবার জন্যে। পিকুর মেসেজটা ভাল করে অ্যানালাইস করে দেখতে হবে। ওটা যদি সত্যিই পিকুর হয় তাহলে আমি যতটা আমার ভাগ্নেকে চিনি ওতে নিশ্চই কোনও ইম্পর্ট্যান্ট ইনফরমেশন থাকবে।“ 

মেঘনা সেদিন সারাদিন ধরে শুধু পিকুর মেসেজটাই পড়ল। বারে বারে পড়ল। কিন্তু কিচ্ছু উদ্ধার করতে পারল না। পিকুই মেঘনাকে শিখিয়েছে, যেকোনও লেখা বারে বারে পড়তে থাকলে একসময় লেখার মধ্যের ইম্পর্ট্যান্ট অংশগুলো পরিষ্কার হতে থাকে। কিন্তু মেঘনার সেরকম কিছুই হচ্ছে না। মেঘনা নিজে নিজেই ভাবলো ওর কত কম বুদ্ধি। এই করতে করতে হঠাৎ মেঘনার পিকুর লেখার মধ্যে দুটো ব্যাপার স্ট্রাইক করলো ! প্রথমটা – ঘড়িতে এখন ঠিক রাত দশটা বেজে উন্ত্রিশ মিনিট হয়ে পাঁচ সেকেন্ড। আর দ্বিতীয়টা – বাইরে টেম্পারেচার প্রায় ৮৮ ডিগ্রি ফারেহাইট। হঠাৎ পিকু এত স্পেসিফিক নাম্বারস্ বলছে কেন! নিশ্চয়ই কোনও ব্যাপার আছে। মেঘনা বোঝার চেষ্টা করল কোন ব্যাপারে এত স্পেসিফিক ইনফরমেশন লাগে! অনেক চেষ্টা করেও না পেরে যখন প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছে, হঠাৎ মনে হলো, আচ্ছা পিকু এই অবস্থায় সব থেকে আগে কি ইনফরমেশন পাঠাতে চাইবে। অবভিয়াসলি লোকেশন! তার মানে পিকুর এই মেসেজের মধ্যে হয়তো ও যেখানে আছে সেখানকার লোকেশন বলা আছে। 

মেঘনা এবার আরও মন দিয়ে মেসেজটা পড়তে শুরু করল। “ঘড়িতে এখন ঠিক রাত দশটা বেজে উনত্রিশ মিনিট হয়ে পাঁচ সেকেন্ড। ছাদে বসে আছি, উত্তর থেকে হালকা হাওয়া বইছে! বাইরে বাইশ ডিগ্রি মতো টেম্পারেচার!” উত্তর থেকে হালকা হাওয়া বইছে – মানে নর্থ। বাইশ ডিগ্রি টেম্পারেচার মানে ২২°। রাত দশটা উনত্রিশ মিনিট হয়ে পাঁচ সেকেন্ড মানে ২৯’০৫”! অর্থাৎ ২২°২৯’৫” নর্থ। আর “আমেরিকায় ইস্ট কোস্টে নিউ ইয়র্কে থাকে। ও যখন ফোন করেছিল তখন ওখানে রাত নটা বেজে এক মিনিট। টিভিতে নাকি দেখাচ্ছে বাইরে টেম্পারেচার প্রায় ৮৮ ডিগ্রি ফারেহাইট”! তার মানে ৮৮°২১’১” ইস্ট। 

তার মানে পিকু যেখানে আছে তার ল্যাটিচুড আর লঙ্গিচুড হচ্ছে : ২২°২৯’৫” নর্থ ৮৮°২১’১” ইস্ট। মেঘনা নিজের আবিষ্কারে নিজেই আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠল। এক্সসাইটেড হয়ে প্রথমেই সন্তুকে ফোন করে জানাল “মামা মনে হচ্ছে পেয়ে গেছি পিকু কোথায় আছে!” তারপর ফোনেই সবটা বুঝিয়ে বলল সন্তুকে। 

সন্তু দেরী না করে লালবাজারে জানাল পুরো ব্যাপারটা। জানা গেল মেঘনার পাঠানো ল্যাটিচুড-লঙ্গিচুডটা টালিগঞ্জের ম্যূর এ্যাভেনিউয়ের, রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার। দশ মিনিটের মধ্যে সন্তু রওনা দিল আর ওদিক থেকে রিজেন্ট পার্ক থানার পুলিশও পৌঁছে গেল। পুরো বাড়িটা ঘিরে সার্চ করতেই পিকুকে পাওয়া গেল আর পিকুর কথা মতো ধরা পড়ল তিলকচাঁদ নাহাতাও । 

সন্তু ইতিমধ্যেই বাড়িতে জানিয়ে দিয়েছে যে পিকু ভাল আছে, বাড়ি আসছে। 

উত্তর থেকে হালকা হাওয়া বইছে – মানে নর্থ। বাইশ ডিগ্রি টেম্পারেচার মানে ২২°। রাত দশটা উনত্রিশ মিনিট হয়ে পাঁচ সেকেন্ড মানে ২৯’০৫”! অর্থাৎ ২২°২৯’৫” নর্থ। আর “আমেরিকায় ইস্ট কোস্টে নিউ ইয়র্কে থাকে। ও যখন ফোন করেছিল তখন ওখানে রাত নটা বেজে এক মিনিট। টিভিতে নাকি দেখাচ্ছে বাইরে টেম্পারেচার প্রায় ৮৮ ডিগ্রি ফারেহাইট”! তার মানে ৮৮°২১’১” ইস্ট। 

নাহাতা সাহেবকে লোকাল থানার জিম্মায় রেখে, নিউ আলিপুর থেকে মেঘনাকে তুলে পিকু আর সন্তু সোজা বেহালায় পিকুদের বাড়ি পৌঁছল। পিকুর মা তো ছেলেকে দেখে কেঁদেই ফেললেন আর তাই দেখে মেঘনাও। এরমধ্যে ঠাম্মাও এসে উপস্থিত, তিনি পিকুর মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন “ও ভাই! ওরা তোমায় খাইতে দিসিলো?” আদর আহ্লাদের পালা শেষ হলে সন্তু পিকুকে জিজ্ঞাসা করল “কিন্তু ওরা তোকে কিডন্যাপ করলো কেন সেটা জানতে পারলি কি?”

“হ্যাঁ, পেরেছি। লোকটার নাম তিলকচাঁদ নাহাতা। এক্সপোর্ট ইমপোর্টের ব্যবসা, সঙ্গে প্রোমোটারিও করে। আমাকে ভদ্রেশ্বর থেকে নামে চেনে। কারণ বিনয়বাবুর বাড়িতে এই নাহাতারই নাকি ফ্ল্যাট বানানোর কথা ছিল। ওর বক্তব্য ও নাকি কারুর কাছ থেকে একটা সোনার কাজ করা বাক্স পেয়েছে যার মধ্যে নাকি ছটা হীরের আংটি আছে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে বাক্সটা একটা কম্বিনেশন লক দিয়ে আটকানো আর তার পাসওয়ার্ড বলা আছে একটা চার লাইনের কবিতায়। ওরা বাংলা পড়তে জানলেও ওই কবিতার থেকে পাসওয়ার্ড উদ্ধার করতে পারছে না ! তাই আমাকে ধরে নিয়ে যায়। আমি যদি কবিতার অর্থ উদ্ধার করতে পারি! বাক্সটা ভাঙতেও পারছে না, কারণ ওই বাক্সটার নাকি সাংঘাতিক অ্যান্টিক ভ্যালু। তবে যাই বল, ওরা কিন্তু আমায় খুব যত্নে রেখেছিল। শুধু মোবাইল ফোনটা নিয়ে নিয়েছিল আর ঘরের দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ করে রেখেছিল। খাওয়াদাওয়া তুখোড়। এ সি ঘর। আর বেল বাজালেই হরি বলে একজন বৃদ্ধ কাজের মানুষ চলে আসবে, তোমার যা লাগবে ওকে বললেই এনে দেবে, অবশ্য যদি নাহাতা সাহেব এ্যালাও করেন। সেই জন্যে আই ওয়্যাজ কুল!” পিকু এক নিশ্বাসে বলে গেল। 

এসব শুনে মেঘনা বেজায় ক্ষেপে চেচিয়ে উঠল – “আমরা এখানে চিন্তা করে মরছি আর উনি ওখানে কুল লাইফ কাটাচ্ছেন! কি স্বার্থপর দ্যাখো মামা!” মেঘনার রাগকে আমল না দিয়ে পিকু বলতে থাকল – “কিন্তু সমস্যা হল যেহেতু আমার কাছে ফোন ছিল না, আমি ভেবেই পাচ্ছিলাম না কি করে তোমাদের আমার লোকেশনটা জানাই। নাহাতা বলেছিল আমি কিছু পাঠাতে চাইলে ওদের কাগজে লিখে দিলে ওরা ইমেল করে দেবে! তাই আমি মেল চেক করব বলে ওর মোবাইলটা চেয়ে চট করে লোকেশনটা দেখে নিই। আর তারপর ওরা যাতে ধরতে না পারে তাই ওই ভাবে ওইরকম একটা কনফিউজিং চিঠি লিখে পাঠাই।” এতটা বলে পিকু একটু থামল। পিকুর মা বললেন “থাক এখন আর এত কিছু বলতে হবে না, এখন বিশ্রাম কর! কাল বলিস।” পিকু মা’র কথায় আমল না দিয়ে সন্তুর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে বলল “তবে এখন এটা আমায় মানতেই হচ্ছে যে মেঘনা ইজ এ গুড স্টুডেন্ট। ভালোই প্রগ্রেস করছে। কি বলো মামা!” এই কথা শুনে মেঘনা তো পিকুকে এই মারে তো সেই মারে। 

ওদের থামিয়ে সন্তু বলল – ” কিন্তু ওদের কম্বিনেশন লকের পাসওয়ার্ডের কি হল?” “হ্যাঁ, পাসওয়ার্ডের সমাধান কি হল?” – মেঘনারও একই প্রশ্ন।

“সেটাই বলছি, একটু ধৈর্য ধরে শোন। আমি যদিও সেটা বার করে ফেলেছি, কিন্তু তিলকচাঁদ নাহাতাকে আর বলা হয়নি। তার আগেই তো মামারা চলে এল।” 

“সেই উত্তরটা আমাদের একটু বল তাহলে!” সন্তু বললো। 

“হ্যাঁ বলছি! কবিতাটা এইরকম ….

কমলা সবুজ হলুদ লাল
খেজুর গাছে মস্ত তাল।
শুকনো তালের মিষ্টি শাঁস
গড়িয়াহাটের চবনপ্রাশ।।

প্রথমেই বলি তিলকবাবুর বাক্সের তালাটা সিক্স ডিজিটের কম্বিনেশন লক। তার মানে এই কবিতাতেই পাসওয়ার্ডের ছটা সংখ্যা লুকিয়ে আছে। আর কবিতাটা বারে বারে পড়ে একটা কথা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল যে এই চার ছত্রের কবিতাটার কোনও মানে হয় না। অতএব এখানে শুধু কম্বিনেশন লকের সংখ্যাই খুঁজতে হবে। প্রথম লাইনে চারটে পরপর রং দেখে আমার ভিবজিওরের কথাই মনে পড়ে। আমরা যদি ভিবজিওরের সাতটা রং পরপর লিখি তাহলে বেগুনি এক নম্বরে হলে কমলা ছয়ে, সবুজ চারে, হলুদ পাঁচে আর লাল সাতে হয়। তাহলে প্রথম লাইনের চারটে রং থেকে যে চারটে সংখ্যা বেরোয় তাহলো ৬৪৫৭। আর খেজুর গাছে বা তালে তো আর কোনও সংখ্যা নেই তাহলে বাকি দুটো সংখ্যা কোথায়! হঠাৎ বালিগঞ্জ সারকুলার রোড়ের সঞ্জয় সেনের ছড়া মনে পড়ে গেলো। আর তাতেই পাজল সল্ভড। গড়িয়াহাট মানে কোলকাতা – ১৯ । অতএব তালার পাসওয়ার্ড হলো – ৬৪৫৭১৯।”

সন্তু উঠে এসে পিকুকে জড়িয়ে ধরল। আর তাই দেখে মেঘনা তাড়াতাড়ি বলে উঠল “আর আমি যে পিকুকে ছাড়িয়ে আনলাম! আমি বুঝি ফেলনা?!” 

পিকুর ফোকলা ঠাম্মা এতক্ষণ নাতির কীর্তি কাহিনী শুনছিলেন মন দিয়ে, এবার তিনি কাছে এসে মেঘনার গাল টিপে আদর করে বললেন “হেইয়া কেডা কইসে তোমারে ম্যাঘনা? তুমি হইলা গিয়া আমাগো ব্যাহুলা!” 

ঠাম্মার কথায় সক্কলে হো হো ক’রে হেসে উঠল। 

Aroop Dasgupta Author

পড়াশোনা করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিয়ো ফিজিক্স বিভাগে। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তথ্য প্রযুক্তিকে। প্রায় এগারো বছর নানা বহুজাতিক সংস্থার সাথে যুক্ত থাকার পর উনিশশো সাতানব্বইতে তৈরি করেন নিজের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। বর্তমানেও যুক্ত রয়েছেন সেই সংস্থার পরিচালনার দায়িত্বে। কাজের জগতের ব্যস্ততার ফাঁকে ভালবাসেন গান-বাজনা শুনতে এবং নানা বিষয়ে পড়াশোনা করতে। সুযোগ পেলেই বেড়াতে বেরিয়ে পড়েন আর সেই অভিজ্ঞতা ধরে রাখেন ক্যামেরায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *