ভাদো সাহেবের গল্প আগেই শুনিয়েছি। এবার আসি প্লিভা সাহেবের কথায়। অ্যাডলফ প্লিভার জন্ম ১৮২২ সালে অস্ট্রো হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যে (Austro Hungarian Empire)। স্কুল জীবনের পরে প্লিভা সাহেব কনফেকশনারি ট্রেনিং নিয়ে কিছুদিন ভিয়েনা এবং কায়রোতে কাজ করার পর ভারতবর্ষে চলে আসেন। এখানে প্রথমে কিছুদিন বম্বে (মুম্বই) আর তারপর কলকাতায় থাকার পর শেষমেশ দার্জিলিং শহরে গমন আর ভাদো সাহেবের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। ভাদো সাহেবের সঙ্গে আলাপের পর দার্জিলিং-এর জেন্টলম্যানস ক্লাব (Gentlemen’s Club) এর চাকরি ছেড়ে প্লিভা সাহেব ভাদোর বেকারিতে তে চাকরি নিলেন।

কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই ভাদো সাহেব ঘটিবাটি গুটিয়ে পাড়ি দিলেন ইতালি। অ্যাডলফ প্লিভা তখন কিনে নিলেন ভাদোর তৈরি করা সেই দারুণ বেকারিটা এবং এর নতুন নাম দিলেন প্লিভাস বেকারি।
প্লিভা সাহেব খুব শিগগিরই কিছু জার্মান বেকার (German baker) নিযুক্ত করলেন এবং বেশ একটা জার্মান বেকারির পরিবেশ তৈরি করে ফেললেন। প্লিভা সাহেব ছিলেন খুব প্রাণখোলা মানুষ। সবাই তাকে পপ (pop) বলে ডাকত। উনি দার্জিলিংয়ে দেশ বিদেশ থেকে অনেক মানুষদের নিয়ে এলেন। যে বাড়িতে এইসব কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে চলছিল, সেই তিনতলা বাড়িটির নাম ছিল গ্লেনারি। কে বা কারা এই নামকরণ করেছিল সেটা এখনও জানা যায়নি।
তারপর সেই বেকারির কী হলো সেই গল্প বলব পরের পর্বে।

দার্জিলিং শহরের পরিচিতির সঙ্গে যেমন গ্লেনারি বেকারি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে তেমনই চায়ের সঙ্গে টা-এর সম্পর্ক। তাই এবার একটি মুখরোচক চা ও টা।
চা বিশেষজ্ঞরা পাঁচটি দার্জিলিং এর চা কে সবচেয়ে ভাল চায়ের আখ্যা দিয়েছেন। সেই পাঁচটি চা হলো:
১.গ্লেনবার্ন কিং – ফার্স্ট ফ্লাশ
২.রোহিণী জেথি কুপি পেকো চা – ফার্স্ট ফ্লাশ
৩.জঙ্গপানা এস্টেট – টিফিল্ডস – সেকেন্ড ফ্লাশ
৪.বালাসুন এস্টেট হিমালয়ান মাস্কাটেল-সেকেন্ড ফ্লাশ
৫.হিমালয়ান ফার্স্ট ফ্লাশ
এই চা বানানোর প্রণালী আমি প্রথম পর্বেই লিখেছি। এবার আসি ‘টা’ এর প্রসঙ্গে।

স্টিকি জিনজার কেক (Sticky Ginger Cake)
উপকরণ:
ময়দা (চেলে নেবেন)- ১কাপ (২০০গ্রাম)
বেকিং পাউডার – ১ চা চামচ
আদা বাটা – ১ টেবিল চামচ
দারচিনির গুঁড়ো – ১ চা চমচ
মাখন – ১২০ গ্রাম
ব্রাউন চিনি – ১৫০গ্রাম
গুড় – ৩ টেবিল চামচ ১/২ কাপ জলে ভাল করে জাল দিয়ে ঘন সিরাপ বানিয়ে ঠাণ্ডা করে নিতে হবে।
দুধ – ১ কাপ
আদার গুঁড়ো – ৫০গ্রাম
ডিম – ২ টো
ভ্যানিলা এসেন্স – ৫ ফোঁটা
প্রণালী:
১. ওভেন অথবা মাইক্রোওভেনে কনভেকশন মোড (convection mode) এ ১৬০° সেন্টিগ্রেডে গরম করে নিতে হবে।
২. ময়দা, বেকিং পাউডার দারচিনি ও আদা গুঁড়ো আর মাখন একটা কাচের বাটিতে এক সঙ্গে ভাল করে হাত দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। মিশ্রণটি ভাল করে মিশিয়ে ৫ মিনিট রেখে দিন।
৩. একটি ছোট কড়াইতে দুধ, চিনি ও গুড়ের ও আদা বাটা মিশ্রণটি একসঙ্গে মিশিয়ে একটু গরম করে নিতে হবে।
৪. এবার এই দুধ ও গুড়ের মিশ্রণটিকে ময়দার মিশ্রণের সঙ্গে ভাল করে কাঠের হাতা দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে। একটা ডিম ফেটিয়ে এতে দিয়ে দিতে হবে।
৫. মিশ্রণটি একটি কেক বেক করার প্যান এ একটু মাখন ও ময়দা ছড়িয়ে ঢেলে দিতে হবে। ১৭০° সেন্টিগ্রেডে ৫০ মিনিট বেক করতে নিতে হবে। কেক গরম থাকতে থাকতে ছোট ছোট টুকরোয় কেটে নিয়ে দার্জিলিং-এর ফার্স্ট অথবা সেকেন্ড ফ্লাশ চায়ের সঙ্গে চাকুম চুকুম করে খেয়ে নিলেই হলো।
ছবি সৌজন্য: মহুয়া রায় ও Glenary’s Facebook Page
মহুয়া এক কর্পোরেট সংস্থায় কর্মরত কাউন্সিলর। ভ্রমণ এবং নতুন নতুন খাদ্য-সংস্কৃতি সম্বন্ধে তাঁর অসীম আগ্রহ।