ঋষি অরবিন্দের সমস্ত বাংলা লেখা একত্রিত করে ১৯৬৯ সালে পণ্ডিচেরী থেকে প্রকাশিত হয় ‘শ্রীঅরবিন্দের বাঙ্গলা রচনাবলী’। সম্পাদনা করেন শ্রীনলিনীকান্ত গুপ্ত, যিনি অরবিন্দের বিশেষ স্নেহভাজন ছিলেন। তাঁর লেখা থেকেই জানা যায়, প্রথম জীবনে প্রবাসী এবং ছাত্রাবস্থায় বিলেতবাসী, সাহেবি আদবকায়দায় অভ্যস্ত অরবিন্দ বাংলা লেখা শুরু করেছিলেন তাঁর বাবার নির্দেশ অমান্য করে, বরোদায় থাকাকালীন। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দেবার সময় ভারতীয় ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষা নিয়েছিলেন তিনি। এমনকী, অরবিন্দের দাদা মনোমোহন ঘোষের রচনা থেকে জানা যায়, অরবিন্দ বাংলা কবিতাও লিখতে শুরু করেছিলেন মাইকেল মধুসূদনের ঢংয়ে। পরে অবশ্য একেবারেই প্রবন্ধ রচনায় মনোনিবেশ করেন। চিঠি লিখতেন বাংলায়। ‘ধর্ম্ম’ পত্রিকায় বহু প্রবন্ধ লিখেছেন বাংলায়। তাঁর অসম্পূর্ণ বাংলা গ্রন্থ ‘কারা-কাহিনী’ যা পরে রচনাবলির অন্তর্ভুক্ত হয়, সেখান থেকেই কিয়দংশ পুনর্মুদ্রিত হল ১৫ অগস্ট তাঁর জন্মদিন এবং ভারতের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে।
মনুষ্যমাত্রেই প্রায় বাহ্য অবস্থার দাস, স্থলজগতের অনভূতির মধ্যেই আবদ্ধ। মানসিক ক্রিয়াসকল সেই বাহ্যিক অনুভূতিকেই আশ্রয় করে, বুদ্ধিও স্থূলের সংকীর্ণ সীমা লঙ্ঘন করিতে অক্ষম; প্রাণের সুখদুঃখ বাহ্য ঘটনার প্রতিধ্বনি মাত্র। এই দাসত্ব শরীরের আধিপত্যজনিত। উপনিষদে বলা হইয়াছে, “জগৎ-স্রষ্টা স্বয়ম্ভূ শরীরের দ্বারসকল বর্হিম্মুখীন করিয়া গড়িয়াছেন বলিয়া সকলের দৃষ্টি বহির্জগতে আবদ্ধ, অন্তরাত্মাকে কেহ দেখে না। সেই ধীরপ্রকৃতি মহাত্মা বিরল যিনি অমৃতের বাসনায় ভিতরে চক্ষু ফিরাইয়া আত্মাকে প্রত্যক্ষ দর্শন করিয়াছেন।” আমরাও সাধারণতঃ যে বর্হিম্মুখীন স্থূলদৃষ্টিতে মনুষ্যজাতির জীবন দেখি, সেই দৃষ্টিতে শরীরই আমাদের মুখ্য সম্বল। য়ুরোপকে যতই না জড়বাদী বলি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মনুষ্যমাত্রই জড়বাদী। শরীর ধর্ম্মসাধনের উপায়, আমাদের বহু-অশ্বযুক্ত রথ, যে দেহ-রথে আরোহণ করিয়া আমরা সংসার পথে ধাবিত হই। আমরা কিন্তু দেহের অযথার্থ প্রাধান্য স্বীকার করিয়া দেহাত্মক বুদ্ধিকে এমন প্রশ্রয় দিই যে বাহ্যিক কর্ম্ম ও বাহ্যিক শুভাশুভ দ্বারা সম্পূর্ণরূপে আবদ্ধ হইয়া থাকি। এই অজ্ঞানের ফল জীবনব্যাপী দাসত্ব ও পরাধীনতা। সুখদুঃখ শুভাশুভ সম্পদ-বিপদ আমাদের মানসিক অবস্থাকে নিজের অনযায়ী করিতে সচেষ্ট ত হয়ই, আমরাও কামনার ধ্যানে সেই স্রোতে ভাসিয়া যাই। সুখলালসায় দুঃখভয়ে পরের আশ্রিত হই, পরের দত্ত সুখ, পরের দত্ত দুঃখ গ্রহণ করিয়া অশেষ কষ্ট ও লাঞ্ছনা ভোগ করি। কেন না, প্রকৃতি হৌক বা মনুষ্য হৌক, যে আমাদের শরীরের উপর কিঞ্চিন্মাত্র আধিপত্য করিতে পারে কিংবা নিজশক্তির অধিকার-ক্ষেত্রে আনিতে পারে, তাহারই প্রভাবের অধীন হইতে হয়। ইহার চরম দৃষ্টান্ত শত্রুগ্রস্ত বা কারাবদ্ধের অবস্থা। কিন্তু যিনি বন্ধুবান্ধব-বেষ্টিত হইয়া স্বাধীনভাবে মুক্ত আকাশে বিচরণ করেন, কারাবদ্ধের ন্যায় তাঁহারও এই দুর্দ্দশা। শরীরই কারাগৃহ, দেহাত্মক বুদ্ধিরূপ অজ্ঞানতা কারারূপ শত্রু।
এই কারাবাস মনুষ্যজাতির চিরন্তন অবস্থা। অপরপক্ষে সাহিত্য ও ইতিহাসের প্রত্যেক পৃষ্ঠায় মনুষ্যজাতির স্বাধীনতা লাভার্থ অদমনীয় উচ্ছাস ও প্রয়াস দেখিতে পাই। যেমন রাজনীতিক বা সামাজিক ক্ষেত্রে, তেমনি ব্যক্তিগত জীবনে যুগে যুগে এই চেষ্টা। আত্মসংযম, আত্মনিগ্রহ, সুখ-দুঃখ বর্জ্জন, Stoicism, Epicureanism, asceticism, বেদান্ত, বৌদ্ধধর্ম্ম, অদ্বৈতবাদ, মায়াবাদ, রাজযোগ, হঠযোগ, গীতা, জ্ঞানমার্গ, ভক্তিমার্গ, কর্ম্মমার্গ, নানা পন্থা একই গম্যস্থান। উদ্দেশ্য— শরীর জয়, স্থূলের আধিপত্য বর্জ্জন, আন্তরিক জীবনের স্বাধীনতা। পাশ্চাত্য বিজ্ঞান-বিদগণ এই সিদ্ধান্ত করিয়াছেন যে স্থূলজগৎ ভিন্ন অন্য জগৎ নাই, স্থূলের উপর সূক্ষ্ম প্রতিষ্ঠিত, সূক্ষ্ম অনভব স্থূল অনভবের প্রতিকৃতি মাত্র, মনুষ্যের স্বাধীনতা প্রয়াস ব্যর্থ; ধর্ম্মদর্শন বেদান্ত অলীক কল্পনা, সম্পূর্ণ ভূতপ্রকৃতি-আবদ্ধ আমাদের সেই বন্ধনমোচনে বা ভূতপ্রকৃতির সীমা উল্লঙ্ঘনে মিথ্যা চেষ্টা। কিন্তু মানব-হৃদয়ের এমন গূঢ়তর স্তরে এই আকাঙ্ক্ষা নিহিত যে সহস্র যুক্তিও তাহা উন্মূলন করিতে অসমর্থ। মনুষ্য বিজ্ঞানের সিদ্ধান্তে কখনও সন্তুষ্ট থাকিতে পারে না। চিরকাল মনুষ্য অস্পষ্টরূপে অনুভব করিয়া আসিতেছেন যে স্থূলজয়ে সমর্থ সূক্ষ্ম বস্তু তাহার অভ্যন্তরে দৃঢ়ভাবে বর্ত্তমান, সূক্ষ্মময় অধিষ্ঠাতা নিত্যমুক্ত আনন্দময় পুরুষ আছেন। সেই নিত্যমুক্তি ও নির্ম্মল আনন্দলাভ করা ধর্ম্মের উদ্দেশ্য।

এই যে ধর্মের উদ্দেশ্য, সেই বিজ্ঞান কল্পিত evolution এরও উদ্দেশ্য। বিচারশক্তি ও তাহার অভাব পশু ও মনুষ্যের প্রকৃত ভেদ নহে। পশুর বিচারশক্তি আছে, কিন্তু পশু দেহে তাহার উৎকর্ষ হয় না। পশু মনুষ্যের প্রকৃত ভেদ এই যে শরীরের নিকট সম্পূর্ণ দাসত্ব স্বীকার পাশবিক অবস্থা, শরীর জয় ও আন্তরিক স্বাধীনতার চেষ্টাই মনুষ্যত্ব বিকাশ। এই স্বাধীনতাই ধর্ম্মের প্রধান উদ্দেশ্য, ইহাকেই মুক্তি বলে। এই মুক্তার্থে আমরা অন্তঃকরণস্থ মনোময় প্রাণশরীর নেতাকে জ্ঞান দ্বারা চিনিতে কিবা কর্মভক্তিদ্বারা প্রাণ মন শরীর অর্পন করিতে সচেষ্ট হই। “যোগস্থঃ কুরু কর্ম্মাণি” বলিয়া গীতার যে প্রধান উপদেশ এই স্বাধীনতাই সেই গীতোক্ত যোগ। আন্তরিক সুখদুঃখ যখন বাহ্যিক শুভাশুভ সম্পদ-বিপদকে আশ্রয় না করিয়া স্বয়ংজাত, স্বয়ং-প্রেরিত, স্বসীমাবদ্ধ হয়, তখন মনুষ্যের সাধারণ অবস্থার বিপরীত অবস্থা হয়, বাহ্যিক জীবন আন্তরিক জীবনের অনুযায়ী করা যায়, কর্ম্মবন্ধন শিথিল হয়। গীতার আদর্শ পুরুষ কর্মফলে আসক্তি ত্যাগ করিয়া পুরুষোত্তমে কর্মসন্ন্যাস করেন। তিনি “দুঃখেষ্বনুদ্বিগ্নমনাঃ সুখেষু বিগতস্পৃহঃ” আন্তরিক স্বাতন্ত্র্য লাভ করিয়া আত্মরতি ও আত্মসন্তুষ্ট হইয়া থাকেন। তিনি প্রাকৃত লোকের ন্যায় সুখলালসায় দুঃখভয়ে কাহারও আশ্রিত হন না, পরের দত্ত সুখে-দুঃখ গ্রহণ করেন না, অথচ কর্ম্মভোগ করেন না। বরং মহাসংযমী মহাপ্রতাপান্বিত দেবাসুর যুদ্ধে রাগ ভয় ক্রোধাতীত মহারথী হইয়া ভগবৎ প্রেরিত যে কর্ম্মযোগী রাষ্ট্রবিপ্লব অথবা প্রতিষ্ঠিত রাজ্য ধর্ম্মসমাজ রক্ষা করিয়া নিষ্কামভাবে ভগবৎকর্ম্ম সম্পন্ন করেন, তিনি গীতার শ্রেষ্ঠ পুরুষ।
আধুনিক যুগে আমরা নূতন সময়ের সন্ধিস্থলে উপস্থিত। মানুষ বরাবরই তাঁহার গন্তব্যস্থানে অগ্রসর হইতেছেন, সময়ে সময়ে সমতল ভূমি ত্যাগ করিয়া উচ্চে আরোহণ করিতে হয়, এবং সেইরূপ আরোহণ সময়ে রাজ্যে সমাজে ধর্ম্মে জ্ঞানে বিপ্লব হয়। বর্ত্তমানকালে স্থূল হইতে সূক্ষ্মে আরোহণ করিবার উদ্যোগ চলিতেছে। পাশ্চাত্য বৈজ্ঞানিক পণ্ডিতগণ স্থূল জগতের পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা ও নিয়ম নির্দ্ধারণ করায় আরোহণ মার্গের চতুঃপার্শ্বস্থ সমতল ভূমি পরিষ্কার হইয়াছে। সূক্ষ্মজগতের বিশাল রাজ্যে পাশ্চাত্য জ্ঞানীদিগের প্রথম পদক্ষেপ হইতেছে, অনেকের মন সেই রাজ্যজয়ের আশায় প্রলুব্ধ। ইহা ভিন্ন অন্য লক্ষণ দেখা যাইতেছে— যেমন অল্প দিনে থিয়সফির বিস্তার, আমেরিকায় বেদান্তের আদর, পাশ্চাত্য দর্শনশাস্ত্রে ও চিন্তাপ্রণালীতে ভারতবর্ষের পরোক্ষভাবে কিঞ্চিৎ আধিপত্য ইত্যাদি। কিন্তু সর্বশ্রেষ্ঠ লক্ষণ ভারতের আকস্মিক ও আশাতীত উত্থান। ভারতবাসী জগতের গুরুস্থান অধিকার করিয়া নূতন যুগ পরিবর্তন করিতে উঠিতেছেন। তাঁহার সাহায্যে বঞ্চিত হইলে পশ্চাত্যগণ উন্নতি-চেষ্টায় সিদ্ধকাম হইতে পারিবেন না। যেমন আন্তরিক জীবনবিকাশের সর্ব্বপ্রধান উপায়স্বরূপ ব্রহ্মজ্ঞান তত্ত্বজ্ঞান ও যোগাভ্যাসে ভারত ভিন্ন অন্য কোন দেশ উৎকর্ষ লাভ করে নাই, তেমনই মনুষ্যজাতির প্রয়োজনীয় চিত্তশুদ্ধি ইন্দ্রিয়সংযম ব্রহ্মতেজ তপঃক্ষমতা ও নিষ্কাম কর্ম্মযোগশিক্ষা ভারতেরই সম্পত্তি। বাহ্য সুখদুঃখকে তাচ্ছিল্য করিয়া আন্তরিক স্বাধীনতা অর্জন করা ভারতবাসীরই সাধ্য, নিষ্কাম কর্ম্মে ভারতবাসীই সমর্থ, অহঙ্কার-বর্জ্জন ও কর্ম্মে নির্লিপ্ততা তাহারই শিক্ষা ও সভ্যতার চরম উদ্দেশ্য বলিয়া জাতীয় চরিত্রে বীজরূপে নিহিত।

এই কথার যাথার্থ্য প্রথম আলিপুর জেলে অনুভব করিলাম। এই জেলে প্রায়ই চোর ডাকাত হত্যাকারী থাকে। যদিও কয়েদীর সঙ্গে আমাদের কথা কহা নিষিদ্ধ, তথাপি কার্য্যতঃ এই নিয়ম সম্পূর্ণ পালন করা হইত না, তাহা ছাড়া রাঁধুনি পানিওয়ালা ঝাড়ুদার মেহতর প্রভৃতি যাহাদের সংস্রবে না আসিলে নয়, তাহাদের সঙ্গে অনেক সময় অবাধে বাক্যালাপ হইত। যাঁহারা আমার এক অপরাধে অপরাধী বলিয়া ধৃত, তাঁহারাও নৃশংস হত্যাকারীর দল প্রভৃতি দুঃশ্রাব্য বিশেষণে কলঙ্কিত ও নিন্দিত। যদি কোনও স্থানে ভারতবাসীর চরিত্র ঘৃণার চক্ষে দেখিতে হয়, যদি কোন অবস্থায় তাহার নিকৃষ্ট অধম ও জঘন্য ভাবের পরিচয় পাওয়া সম্ভব হয়, তবে আলিপুর জেলই সেই স্থান, আলিপুরে কারাবাসই সেই নিকৃষ্ট হীন অবস্থা। আমি এই স্থানে এই অবস্থায় বার মাস কাটাইলাম। এই বারমাস অনুভবের ফলে, ভারতবাসীর শ্রেষ্ঠতা সম্বন্ধে দৃঢ় ধারণা, মনুষ্য চরিত্রের উপর দ্বিগুণ ভক্তি এবং স্বদেশের ও মনুষ্যজাতির ভবিষ্যৎ উন্নতি ও কল্যাণের দশগুণ আশা লইয়া কর্মক্ষেত্রে ফিরিয়া আসিয়াছি। ইহা আমার স্বভাবজাত optimism অথবা অতিরিক্ত বিশ্বাসের ফল নহে। শ্রীযুক্ত বিপিনচন্দ্র পাল বক্সার জেলে ইহা অনুভব করিয়া আসিয়াছিলেন, আলিপুর জেলে ভূতপূর্ব্ব ডাক্তার ডেলি সাহেবও ইহা সমর্থন করিতেন। ডেলি সাহেব মনুষ্যচরিত্রে অভিজ্ঞ সহৃদয় ও বিচক্ষণ লোক, মনুষ্য চরিত্রের নিকৃষ্ট ও জঘন্য বৃত্তি সকল প্রত্যহ তাঁহার সম্মুখে বিদ্যমান, অথচ তিনি আমাকে বলিতেন, “ভারতের ভদ্রলোক বা ছোটলোক, সমাজের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি বা জেলের কয়েদী যতই দেখি ও শুনি, আমার এই ধারণা দৃঢ় হয় যে চরিত্রে ও গুণে তোমরা আমাদের চেয়ে ঢের উঁচু। এই দেশের কয়েদী ও য়ুরোপের কয়েদীর আকাশ পাতাল তফাৎ। এই ছেলেদের দেখে আমার এই ধারণা আরও দৃঢ় হয়েছে। এদের আচরণ চরিত্র ও নানা সদগুণ দেখে কে কল্পনা করতে পারে যে, এরা Anarchist বা হত্যাকারী। তাদের মধ্যে ক্রূরতা উদ্দামভাব অধীরতা বা ধৃষ্টতা কিছুমাত্র না দেখে সব উল্টা গুণই দেখি।”
বর্ত্তমানকালে স্থূল হইতে সূক্ষ্মে আরোহণ করিবার উদ্যোগ চলিতেছে। পাশ্চাত্য বৈজ্ঞানিক পণ্ডিতগণ স্থূল জগতের পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা ও নিয়ম নির্দ্ধারণ করায় আরোহণ মার্গের চতুঃপার্শ্বস্থ সমতল ভূমি পরিষ্কার হইয়াছে। সূক্ষ্মজগতের বিশাল রাজ্যে পাশ্চাত্য জ্ঞানীদিগের প্রথম পদক্ষেপ হইতেছে, অনেকের মন সেই রাজ্যজয়ের আশায় প্রলুব্ধ। ইহা ভিন্ন অন্য লক্ষণ দেখা যাইতেছে— যেমন অল্প দিনে থিয়সফির বিস্তার, আমেরিকায় বেদান্তের আদর, পাশ্চাত্য দর্শনশাস্ত্রে ও চিন্তাপ্রণালীতে ভারতবর্ষের পরোক্ষভাবে কিঞ্চিৎ আধিপত্য ইত্যাদি। কিন্তু সর্বশ্রেষ্ঠ লক্ষণ ভারতের আকস্মিক ও আশাতীত উত্থান।
অবশ্যই জেলে চোর ডাকাত সাধু সন্ন্যাসী হয় না। ইংরাজের জেল চরিত্র শুধরাইবার স্থান নহে, বরং সাধারণ কয়েদীর পক্ষে চরিত্রহানি ও মনুষ্যত্বনাশের উপায়মাত্র। তাহারা যে চোর ডাকাত খুনী ছিল, সেই চোর ডাকাত খুনীই থাকে, জেলে চুরি করে, শক্ত নিয়মের মধ্যেও নেশা করে, জয়াচুরি করে। তাহা হইলে কি হইবে, ভারতবাসীর মনুষ্যত্ব গিয়াও যায় না। সামাজিক অবনতিতে পতিত, মনুষ্যত্বনাশের ফলে নিষ্পেষিত, বাহিরে কালিমা কদর্য্যভাব কলঙ্ক বিকৃতি, তথাপি ভিতরে সেই লুপ্তপ্রায় মনুষ্যত্ব ভারতবাসীর মজ্জাগত সদগুণে লুকাইয়া আত্মরক্ষা করে, পনঃ পুনঃ কথায় ও আচরণে তাহা প্রকাশ পায়। যাঁহারা উপরের কাদাটকু দেখিয়া ঘৃণায় মুখ ফিরাইয়া লন, তাঁহারাই বলিতে পারেন যে ইহাদের মধ্যে মনুষ্যত্বের লেশমাত্র দেখিতে পাই নাই। কিন্তু যিনি সাধুতার অহঙ্কার ত্যাগ করিয়া নিজ সহজসাধ্য স্থির দৃষ্টিতে নিরীক্ষণ করেন, তিনি এই মতে কখনও মত দিবেন না। ছয় মাস কারাবাসের পরে শ্রীযুত বিপিনচন্দ্র পাল বক্সার জেলে চোর ডাকাতের মধ্যেই সর্বঘটে নারায়ণকে দর্শন করিয়া উত্তরপাড়ার সভায় মুক্তকণ্ঠে এই কথা স্বীকার করিয়াছিলেন। আমিও আলিপুর জেলেই হিন্দুধর্ম্মের এই মূলতত্ত্ব হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিলাম, চোর ডাকাত খুনীর মধ্যে সর্বপ্রথম মনুষ্য দেহে নারায়ণকে উপলব্ধি করিলাম।
এই দেশে কত শত নিরপরাধ ব্যক্তি দীর্ঘকাল জেলরূপ নরকবাস ভোগ দ্বারা পূর্বজন্মার্জিত দুষ্কর্ম্ম ফল লাঘব করিয়া তাঁহাদের স্বর্গপথ পরিষ্কার করিতেছেন। কিন্তু সাধারণ পাশ্চাত্যবাসীগণ যাহারা ধর্ম্মভাব দ্বারা পূত ও দেবভাবাপন্ন নহে, তাহারা এইরূপ পরীক্ষায় কতদূর উত্তীর্ণ হয়, যাঁহারা পাশ্চাত্য দেশে রহিয়াছেন বা পাশ্চাত্য চরিত্র-প্রকাশক সাহিত্য পড়িয়াছেন, তাঁহারাই সহজে অনুমান করিতে পারেন। এরূপ স্থলে হয়ত তাঁহাদের নিরাশা-পীড়িত ক্রোধ ও দঃখের অশ্রুজলপ্লূত হৃদয় পার্থিব নরকের ঘোর অন্ধকারে এবং সহবাসীদের সংস্রবে পড়িয়া তাহাদেরই ক্রূরতা ও নীচবৃত্তি আশ্রয় করে– নয়ত দুর্বলতার নিরতিশয় নিষ্পেষণে বল বৃদ্ধি হীন হইয়া তাহাতে মনুষ্যত্বের নষ্টাবশেষ মাত্র অবশিষ্ট থাকে। আলিপুরের একজন নিরপরাধীর কথা বলি। এ ব্যক্তি ডাকাতিতে লিপ্ত বলিয়া দশ বৎসর সশ্রম কারাবাসে দণ্ডিত। জাতে গোয়ালা, অশিক্ষিত, লেখাপড়ার ধার ধারে না, ধর্ম্ম, সম্বলের মধ্যে ভগবানে আস্থা ও আর্য্যশিক্ষা-সুলভ ধৈর্য ও অন্যান্য সদগুণ ইহাতে বিদ্যমান। এই বৃদ্ধের ভাব দেখিয়া আমার বিদ্যা ও সহিষ্ণুতার অহঙ্কার চূর্ণ হইয়া গেল। বৃদ্ধের নয়নে সর্ব্বদা প্রশান্ত সরল মৈত্রীভাব বিরাজিত, মুখে সর্ব্বদা অমায়িক প্রীতিপূর্ণ আলাপ। সময় সময় নিরপরাধে কষ্টভোগের কথা পাড়েন, স্ত্রী-ছেলেদের কথা বলেন, কবে ভগবান কারামুক্তি দিয়া স্ত্রী-ছেলেদের মুখদর্শন করাইবেন, এই ভাবও প্রকাশ করেন, কিন্তু কখনও তাঁহাকে নিরাশ বা অধীর দেখি নাই। ভগবানের কৃপাপেক্ষায় ধীরভাবে জেলের কর্ম সম্পন্ন করিয়া দিন যাপন করিতেছেন।

বৃদ্ধের যত চেষ্টা ও ভাবনা নিজের জন্যে নহে, পরের সুখ-সুবিধা সংক্রান্ত। দয়া ও দুঃখীর প্রতি সহানুভূতি তাঁহার কথায় কথায় প্রকাশ পায়, পরসেবা তাঁহার স্বভাব-ধর্ম। নম্রতায় এই সকল সদগুণ আরও ফুটিয়া উঠিয়াছে। আমা হইতে সহস্রগুণ উচ্চ হৃদয় বুঝিয়া এই নম্রতায় আমি সদা লজ্জিত এইতাম, বৃদ্ধের সেবা গ্রহণ করিতে সংকোচ হইত, কিন্তু তিনি ছাড়েন না, তিনি সর্বদা আমার সুখসোয়াস্তির জন্যে চিন্তিত। যেমন আমার উপর তেমনই সকলের উপর– বিশেষ নিরপরাধ ও দুখীজনের প্রতি তাঁহার দয়াদৃষ্টি বিনীত সেবা-সম্মান আরো অধিক। অথচ মুখে ও আচরণে কেমন একটি স্বাভাবিক প্রশান্ত গাম্ভীর্য্য ও মহিমা প্রকাশিত। দেশের প্রতিও ইহার যথেষ্ট অনুরাগ ছিল। এই বৃদ্ধ কয়েদীর দয়া-দাক্ষিণ্যপূর্ণ শ্বেতশ্মশ্রুমণ্ডিত সৌম্যমূর্ত্তি চিরকাল আমার স্মৃতিপটে অঙ্কিত থাকিবে। এই অবনতির দিনেও ভারতবর্ষের চাষার মধ্যে– আমরা যাহাদের অশিক্ষিত ছোটলোক বলি, তাহাদের মধ্যে এইরূপ হিন্দুসন্তান পাওয়া যায়, ইহাতেই ভারতের ভবিষ্যৎ আশাজনক। শিক্ষিত যুবকমণ্ডলী ও অশিক্ষিত কৃষক সম্প্রদায় এই দুইটি শ্রেণীতেই ভারতের ভবিষ্যৎ নিহিত, ইহাদের মিলনেই ভবিষ্যৎ আর্য্যজাতি গঠিত হইবে।
ডেলি সাহেব মনুষ্যচরিত্রে অভিজ্ঞ সহৃদয় ও বিচক্ষণ লোক, মনুষ্য চরিত্রের নিকৃষ্ট ও জঘন্য বৃত্তি সকল প্রত্যহ তাঁহার সম্মুখে বিদ্যমান, অথচ তিনি আমাকে বলিতেন, “ভারতের ভদ্রলোক বা ছোটলোক, সমাজের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি বা জেলের কয়েদী যতই দেখি ও শুনি, আমার এই ধারণা দৃঢ় হয় যে চরিত্রে ও গুণে তোমরা আমাদের চেয়ে ঢের উঁচু। এই দেশের কয়েদী ও য়ুরোপের কয়েদীর আকাশ পাতাল তফাৎ। এই ছেলেদের দেখে আমার এই ধারণা আরও দৃঢ় হয়েছে। এদের আচরণ চরিত্র ও নানা সদগুণ দেখে কে কল্পনা করতে পারে যে, এরা Anarchist বা হত্যাকারী। তাদের মধ্যে ক্রূরতা উদ্দামভাব অধীরতা বা ধৃষ্টতা কিছুমাত্র না দেখে সব উল্টা গুণই দেখি।”
উপরে একটি অশিক্ষিত চাষার কথা বলিলাম, এখন দুইজন শিক্ষিত যুবকের কথা বলি। ইহারা সাত বৎসর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইয়াছেন। ইহারা হ্যারিসন রোডের কবিরাজদ্বয় নগেন্দ্রনাথ ও ধরণী। ইঁহারাও যেরূপ শান্তভাবে, যেরূপ সন্তুষ্টমনে, এই আকস্মিক বিপত্তি, এই অন্যায় রাজদণ্ড সহ্য করিতেন, তাহা দেখিয়া আশ্চর্য্যান্বিত হইতে হইত। কখনও তাঁহাদের মুখে ক্রোধ-দুষ্ট বা অসহিষ্ণুতা প্রকাশক একটি কথা শুনি নাই। যাঁহাদের দোষে জেলরূপ নরকে যৌবনকাল কাটাইতে হইল, তাঁহাদের প্রতি যে লেশমাত্র ক্রোধ তিরস্কার ভাব বা বিরক্তি পর্য্যন্ত আছে, তাহার কোন লক্ষণ কখনও দেখিতে পাই নাই। তাঁহারা আধুনিক শিক্ষার গৌরবস্থল পাশ্চাত্যভাষায় ও পাশ্চাত্যবিদ্যায় অভিজ্ঞতা-বঞ্চিত, মাতৃভাষাই ইহাদের সম্বল, কিন্তু ইংরাজী শিক্ষালব্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে তাঁহাদের তুল্য কম লোক দেখিয়াছি। দুইজনেই মানুষের নিকট আক্ষেপ কিংবা বিধাতার নিকট নালিস না করিয়া সহাস্য মুখে নতমস্তকে দণ্ড গ্রহণ করিয়াছেন। দুটি ভাইই সাধক কিন্তু প্রকৃতি বিভিন্ন। নগেন্দ্র ধীর প্রকৃতি, গম্ভীর বুদ্ধিমান। হরিকথা ও ধর্মবিষয়ে আলাপ অত্যন্ত ভালবাসিতেন। যখন আমাদিগকে নির্জ্জন কারাবাসে রাখা হইল তখন জেলের কর্তৃপক্ষ জেলের খাটুনি সমাপ্তে আমাদিগকে বই পড়িবার অনুমতি দিলেন। নগেন্দ্র ভগবদগীতা পড়িতে চাহিয়া বাইবেল পাইয়া ছিলেন। বাইবেল পড়িয়া তাঁহার মনে কি কি ভাবের উদয় হয়, কাঠগড়ায় বসিয়া আমার নিকট তাহার বর্ণনা করিতেন। নগেন্দ্র গীতা পড়েন নাই তথাপি আশ্চর্যের সহিত দেখিলাম বাইবেলের কথা না বলিয়া গীতার শ্লোকার্থ বলিতেছেন— এমন কি এক একবার মনে হইত যে ভগবদ্গুণাত্মক মহৎ উক্তিসকল কুরুক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণ-মুখ-নিঃসৃত উক্তিগুলি সেই বাসুদেব মুখপদ্ম হইতে এই আলিপুরের কাঠগড়ায় আবার নিঃসৃত হইতেছে। গীতা না পড়িয়া বাইবেল গীতার সমতাবাদ, কর্মফলত্যাগ, সর্বত্র ঈশ্বর দর্শন ইত্যাদি ভাব উপলব্ধি করা সামান্য সাধনার লক্ষণ নহে। ধরণী নগেন্দ্রের ন্যায় বুদ্ধিমান নন, কিন্তু বিনীত ও কোমল প্রকৃতি, স্বভাবতঃই ভক্ত। তিনি সম্প্রদা মাতৃধ্যানে বিভোর, তাঁহার মুখের প্রসন্নতা, সরল হাস্য ও কোমল ভক্তিভাব দেখিয়া জেলের জেলত্ব উপলব্ধি করা কঠিন হইয়া পড়িত। ইহাদের দেখিয়া কে বলিতে পারে, বাঙ্গালী হীন অধম? এই শক্তি, এই মনুষ্যত্ব, এই পবিত্র অগ্নি ভস্মরাশিতে লুক্কায়িত আছে মাত্র।
ইহারা উভয়েই নিরপরাধ। বিনা দোষে কারারুদ্ধ হইয়াও নিজগুণে বা শিক্ষাবলে বাহ্য সুখ-দুঃখের আধিপত্য অস্বীকার করিয়া আন্তরিক জীবনের স্বাধীনতা রক্ষা করিতে সক্ষম হইয়াছেন। কিন্তু যাঁহারা অপরাধী, তাঁহাদের মধ্যেও জাতীয় চরিত্রের সদগুণ বিকাশ পাইত। বার মাস আলিপুরে ছিলাম, দুয়েকজন ভিন্ন যত কয়েদী, যত চোর ডাকাত ধনীর সঙ্গে আমাদের সংস্রব ঘটিয়াছিল, সকলের নিকটেই আমরা সদ্ব্যবহার ও অনুকূলতা পাইতাম। আধুনিক-শিক্ষা-দূষিত আমাদের মধ্যে বরঞ্চ এসকল গুণের অভাব দেখা যায়। আধুনিক শিক্ষার অনেক গুণ থাকিতে পারে কিন্তু সৌজন্য ও নিঃস্বার্থ পরসেবা সেই গুণের মধ্যগত নহে। যে দয়া সহানভূতি আর্য্যশিক্ষার মূল্যবান অঙ্গ, তাহা এই চোর-ডাকাতের মধ্যেও দেখিতাম। মেহতর ঝাড়ুদার পানিওয়ালাকে বিনা দোষে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে নির্জ্জন কারাবাসের দঃখ-কষ্ট কতকপরিমাণে অনুভব করিতে হইত, কিন্তু তাহাতে একদিনও আমাদের উপর অসন্তুষ্টি বা ক্রোধ প্রকাশ করে নাই। দেশীয় জেলরক্ষকদের নিকট তাহারা মাঝে মাঝে দঃখ প্রকাশ করিত বটে, কিন্তু প্রসন্নমুখে আমাদের কারামুক্তি প্রার্থনা করিত। একজন মুসলমান কয়েদী অভিযুক্তদিগকে নিজের ছেলেদের ন্যায় ভালবাসিতেন, বিদায় লইবার সময় তিনি অশ্রুজল সম্বরণ করিতে পারেন নাই। দেশের জন্যে এই লাঞ্ছনা ও কষ্টভোগ বলিয়া অন্য সকলকে দেখাইয়া দুঃখ করিতেন, “দেখ, ইহারা ভদ্রলোক, ধনী লোকের সন্তান, গরীব-দুঃখীকে পরিত্রাণ করিতে গিয়া ইহাদের এই দুর্দশা।”
যাঁহারা পাশ্চাত্য সভ্যতার বড়াই করেন, তাঁহাদের জিজ্ঞাসা করি, ইংলণ্ডের জেলে নিম্নশ্রেণীর কয়েদী, চোর ডাকাত খুনীর এইরূপ আত্মসংযম দয়া-দাক্ষিণ্য কৃতজ্ঞতা পরার্থে ভগবৎভক্তি কি দেখা যায়? প্রকৃতপক্ষে য়ুরোপ ভোক্তৃভূমি, ভারত দাতৃভূমি। দেব ও অসুর বলিয়া গীতায় দুই শ্রেণীর জীব বর্ণিত আছে। ভারতবাসী স্বভাবতঃ দেব প্রকৃতি, পাশ্চাত্যগণ স্বভাবতঃ অসুর প্রকৃতি। কিন্তু এই ঘোর কলিতে পড়িয়া তমোভাবের প্রাধান্যবশতঃ আর্য্য-শিক্ষার অবলোপে, দেশের অবনতিতে, আমরা নিকৃষ্ট আসুরিকবৃত্তি সঞ্চয় করিতেছি আর পাশ্চাত্যগণ অন্যদিকে জাতীয় উন্নতি ও মনুষ্যত্বের ক্রমবিকাশের গুণে দেবভাব অর্জন করিতেছেন। ইহা সত্ত্বেও তাহাদের দেবভাবে কতকটা অসুরত্ব এবং আমাদের আসুরিক ভাবের মধ্যেও দেবভাব অস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। তাহাদের মধ্যে যে শ্রেষ্ঠ, সেও অসুরত্ব সম্পূর্ণ হারায় না। নিকৃষ্টে নিকৃষ্টে যখন তুলনা করি, ইহার যথার্থতা তখন অতি স্পষ্টরূপে বোঝা যায়। এই সম্বন্ধে অনেক কথা লিখিবার আছে, প্রবন্ধের অতিদীর্ঘতার ভয়ে লিখিলাম না। তবে জেলে যাঁহাদের আচরণে এই আন্তরিক স্বাধীনতা দর্শন করিয়াছি, তাঁহারা এই দেবভাবের চরম দৃষ্টান্ত। এই সম্বন্ধে পরবর্ত্তী প্রবন্ধে লিখিবার ইচ্ছা রহিল।
*বানান অপরিবর্তিত।
*ছবি সৌজন্য: Boloji, Sriaurobindoinstitute.org
বাংলালাইভ একটি সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ওয়েবপত্রিকা। তবে পত্রিকা প্রকাশনা ছাড়াও আরও নানাবিধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে থাকে বাংলালাইভ। বহু অনুষ্ঠানে ওয়েব পার্টনার হিসেবে কাজ করে। সেই ভিডিও পাঠক-দর্শকরা দেখতে পান বাংলালাইভের পোর্টালে,ফেসবুক পাতায় বা বাংলালাইভ ইউটিউব চ্যানেলে।