হলুদ
একেবারে ফুরিয়ে যাওয়ার আগে
সামান্য থেকে-যাওয়া থাকে
হাতে, নখদর্পণে
অল্পকাল।
না-থাকা পোহাতে
রন্ধনপ্রণালীও কিছুটা জীবনযাত্রার মতো
এদিক সেদিক করে নিতে হয়।
আহারের রঙ বদলে সামান্য ফিকে হয়ে যায়।
স্বাদ অক্ষুন্ন রেখে অভাবপূরণের রীতি
ধীরে ধীরে শিল্প হয়ে ওঠে।
রঙ না থাকার কথা যখন আর মনেও পড়ে না
তখন তার জন্য অকারণ মনকেমন করতে থাকে।
এলাচ
জিভের নীচে রাখতে রাখতে একদিন
তোমার স্বাদ ম্লান হয়ে আসে।
চুমু বদল করার সময়,
তোমারটা আমি নিই, আমারটা তুমি–
দানা দানা অঙ্গীকার আলতো কষের দাঁতে
ভেঙে ভেঙে মিশে মিশে যায়
স্বাদকোরকের কাছে ধাক্কা মারে কথা কাটাকাটি।
নগ্ন হওয়ার আগে,
বীজ খুলে আনবার আগে
আমারও সুগন্ধ ছিল তোমাকে দেওয়ার।
লবঙ্গ
তোমার মুখের ভাপে সেদ্ধ হতে হতে
তোমার গান শুনতে পাই।
মিছরির ছুরির মতো কেটে বসছ কার যেন বুকে।
ফুলজন্মের কথা এখন আর মনে পড়ছে না।
নরম গালের ভাঁজে পিষে ফেলবার আগে,
হে ঈশ্বর, তেহাইটা যেন শুনতে পাই।
দারুচিনি
সুগন্ধী বল্কলগুলি খুলে নিয়ে চলে গেছে ভাড়াটে শ্রমিক।
অনাবৃত পড়ে রয়েছি ঠায় দেহ-কলাভৃৎ মেলে
অর্ধমৃতপ্রায়
তোমাদের ভাঁড়ারে আমার গোটানো চামড়ার দাম
প্রতি কিলো মাত্র এক হাজার।
ধনে
উৎসবে ব্যঞ্জনে আমি প্রভুর রসনাতৃপ্তি করি।
সহযোদ্ধাদের সঙ্গে আমাকেও পিষে দিলে;
তাদের উল্লাসের দিনে, মৃত পাখিটির মাংস আরও বেশি সুস্বাদু হয়।
তবুও আমিই সেই মানস যাকে ধরিত্রী ধারণ করলে
আমারই জননীর জন্ম হয়।
জিরে
সাদা-কালোয় ভাগ হওয়ার আগে একটিমাত্র জমিতে ছিলাম।
তারপর ভাগ হল, স্থান হল বিভিন্ন শিবিরে
নানাবিধ পাকশালায় বিভিন্ন ব্যবহার হল
তারপরে যোগ হল আবার
এখন পাঁচফোড়নে কখনও একইসাথে
অথবা কখনও বিচ্ছিন্নভাবে নিয়মিত ব্যবহৃত হই।
কাশ্মীরি লাল
রং দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছ।
সাবধানে কৌটোয় আটকে রেখেছ যাতে ফিকে না হই,
প্রয়োজনমতো ছুঁড়ে দিচ্ছ ফুটন্ত সময়ে–
ভাপে সিদ্ধ হতে হতে স্বাদু করে তুলছি
তোমাদের প্রাইম টাইম– ঝালে ঝোলে নাস্তায়।
অথচ অভিব্যক্তি ঘটতে ঘটতে আমার ভিতরের ঝাল
ক্রমশই ফুরিয়ে গিয়েছে।
এখন শুধু চোখে ধাঁধা লাগানো রং দিয়ে তোমাকে ভ্রমণে
ডাকা ছাড়া আমার আর কোনও কুমিরছানা নেই।
দেওয়ালে চিৎকার লিখতে লিখতে
আমার সমস্ত লাল দিনে দিনে খয়েরি হয়ে আসছে।
ধানী
জিভ পুড়ে যাচ্ছে অথচ সুরে একটুও কমতি নেই।
আলি আকবরের আঙুল থেকে গান্ধার-মধ্যম-নিষাদ হয়ে
ঈশ্বর জন্ম নিচ্ছেন আর হেঁটে বেড়াচ্ছেন
তোমাদের সমুজ্জ্বল ড্রয়িংরুম জুড়ে।
অন্ধভক্তির ঝালে সমস্ত পুড়িয়ে দিয়েছি
তার কোনও স্বাদকোরক আজ আর অবশিষ্ট নেই।
সুপুরি
যত্নের রূপকথা নেই
তাই সবুজ পাতার ফাঁকে ঝড়ে ও বিবাদে
আমি নিজেই নিজেকে বাঁচিয়েছি।
ভেতরে অজস্র ধারা, বাদামি, সাদার তন্তু
একসঙ্গে মিলে মিশে আছে —
রোদে তাপে শক্ত হতে হতে
টাফ নাট, সহসা ভাঙিনি।
আর আজ যে ইয়াব্বড় কল নিয়ে তুমি
দ্বিখণ্ডিত করতে এসেছ,
জেনে রেখো সহস্র টুকরোয়ও আমার অন্তঃস্থলের
চরিত্র বদলাতে পারবে না।
জর্দা
তোমার জিভের নীচে ঘন হচ্ছে আমার মৌতাত।
শরীরী গন্ধের মোহে একটু একটু করে
মুখে পুরছ অতীব যতনে
আর মাথা ভর্তি কিলবিল করে জেগে উঠছে ইচ্ছেফণাগুলি।
খেলা দেখাও বাবুজি, এবার তোমার
ওদেরকে বের করে আনো, মাদারি বনে যাও।
সমস্ত ধূমকিটুকু পুহিয়ে নিয়ে যতক্ষণ না
ফেলে দিচ্ছ
সুদৃশ্য পিকদানে তোমার!
খুব ভালো লাগলো এই কবিতাগুচ্ছ । মুগ্ধ ,আবিষ্ট হলাম ।
ভালোবাসা ❤️
ভালো লাগল
লেখাগুলো।
মশলাগুলো প্রাণ পেল যেন। অন্যরকম দেখার চোখ। অনেক শুভেচ্ছা।