সনৎকাকু বাড়িতে আসা মানেই সকলের দিলখুশ।
আজকে সনৎকাকুকে প্রথম দেখতে পেয়েছিল চিকু। একটু আগে ওরা সবাই ভিড় করে দাঁড়িয়ে ছিল রাস্তার ধারে। পাপাইদের বাড়ির সামনে। রাস্তার ওধারে পাপাইদের বাড়ির গেটের পাশে একটা গন্ধরাজ, কয়েকটা গোলাপ আর একটা কামিনী ফুলের গাছ। সেখানে ঘটতে থাকা অদ্ভুত এক দৃশ্যের কথা ফণীদাদুর মুখে শুনে ছোটকার সঙ্গে দৌড়ে বেরিয়ে পড়েছিল পিকু, চিকু এবং দিয়া। এমন দুর্লভ দৃশ্য দেখার সুযোগ কেউ ছাড়ে!
এমন দৃশ্য ওরা এর আগে দেখেনি। কী দৃশ্য! একটা সাপ কিনা আর একটা সাপের প্রায় পুরোটা গিলে নিয়েছে! ওরা সাপ চেনে না। ওদের সাপ দেখা কম্পিউটার এবং টিভির পর্দায়। অবশ্য বাড়ির উঠোনে মাঝে মাঝে এক ধরনের সাপ ওরা দেখতে পায়। পিসিমণির কাছে জেনেছে– ওই সাপের নাম হেলে। আরও কিছু সাপের নাম তারা বাড়ির বড়দের মুখে শুনেছে– জলঢোঁড়া, লাউডগা, চন্দ্রবোড়া, গেঁড়ি-ভাঙা-কেউটে ইত্যাদি। এইসব সাপ নাকি আগে এদিকে অনেক দেখা যেত।
শীত এখনও জমিয়ে পড়েনি। সবে দুর্গাপুজো গেল। কালীপুজোর আগে খুব একটা পড়বে বলেও মনে হয় না। পুজোর মরশুম বলে ছুটির আলসেমিতে কমবেশি সকলেই যেন মজে রয়েছে। ছুটির যেন আরও জমে গেল অদ্ভুত দৃশ্য দেখে। লোকে ভিড় করে তারিয়ে তারিয়ে চেটেপুটে উপভোগ করতে লাগল সেই দৃশ্য। দিয়া জানতে চাইল,
– ওটা কী সাপ, ছোটকা?
– শাঁখামুটি।… পিকু একবার গিয়ে আমার মোবাইলটা নিয়ে আয় তো। মনে হয় ডাইনিং টেবিলে পড়ে আছে। তাড়াহুড়ো করে আসতে গিয়ে ফেলে চলে এসেছি।
ছোটকা বলল। চিকু দেখল মোবাইলে সবাই ছবি তুলছে, ভিডিয়ো রেকর্ডিং করছে। পিকু দৌড়ে গিয়ে মোবাইলটা নিয়ে এসে ছোটকার হাতে দিতে ছোটকাও দৃশ্যটা মোবাইলে রেকর্ড করতে লাগল। ওরা দেখল, যে সাপটা অন্যটাকে গিলছে, সেটার শরীরে হলুদ-কালো মোটা মোটা ডোরা। শরীর ও লেজ তেকোণা। দিয়া শঙ্খচূড়ের কথা বইয়ে পড়েছে। সে ছোটকাকে জিজ্ঞাসা করল,
– শাঁখামুটিই কি শঙ্খচূড়?

ছোটকা তখন ছবি ঠিকঠাক নেওয়ার জন্য মোবাইলটা এদিক-ওদিক সরাচ্ছিল। তার মাঝেই জবাব দিল,
– আমি ঠিক জানি না।
তারপর কিছুক্ষণ চুপচাপ রেকর্ডিং করার পর বলল,
– চিকু, ভাল করে দেখ, তোরাও সবাই দেখে রাখ, শাঁখামুটিটা যে সাপটাকে গিলছে, সেটা হল জলঢোঁড়া।
– ছোটকা দেখেছ, শাঁখামুটি সাপটা কী মোটা!
চিকু বলল। পাশ থেকে দিয়া জুড়ে দিল,
– আর কী লম্বা!
ছোটকা বলল,
– লম্বা খুব বেশি নয়, মানুষ সমান। বড় জোর ফুট পাঁচেক হবে। আর চিকু যে বলছিস, মোটা, মোটাও খুব নয়। আসলে জলঢোঁড়াটার প্রায় পুরোটাই গিলে নিয়েছে বলে ওটাকে লেজ পর্যন্ত ও’রম গোলগাল লাগছে।
দু’একজন সাপটাকে মারবে বলে লাঠি খুঁজছিল। পাপাইয়ের লজেন্সদাদু এবং আরও কয়েকজন তাদের বাধা দিল।
– আহাররত কোনও জীবকে মারতে নেই।
ও পাড়ার পান্না বলল,
– সকালে সাপ মারা উচিত নয়।
এসব শুনে কেউ আর শাঁখামুটিটাকে মারতে এগোল না। ব্যাটা ধীরে সুস্থে জলঢোঁড়াটাকে গিলল। শেষদিকে আর নড়তে-চড়তেই পারছিল না। কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিয়ে বাবু ধীরে ধীরে পাপাইদের পুকুরের পাড় দিয়ে নেমে ঝোপঝাড়ের মধ্যে মিলিয়ে গেল। আরও অনেকের সঙ্গে চিকুরাও পুকুরের পাড়ে এসে ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে ছিল। সাপটা মিলিয়ে যেতে চিকু পিছনের দিকে মুখ ফেরাল। আর তখনই সে দেখতে পেল সনৎকাকুকে। সনৎকাকু তার ঠিক পিছনে কখন যে এসে দাঁড়িয়েছে চিকু বুঝতে পারেনি। কিন্তু সনৎকাকুকে দেখেই চিকু তার হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দিল,
– সনৎকাকু, চলো আমাদের বাড়ি। কতদিন তুমি আসোনি। আজ তোমাকে আমাদের বাড়ি যেতেই হবে।
চিকুর সঙ্গে যোগ দিল পিকু, দিয়া, এমনকী ছোটকাও।
– চলো, সনৎকাকু, চলো।
নিরুপায় সনৎকাকু বললেন,
– চলো, আজ সকালে তাহলে তোমাদের বাড়ি দিয়েই শুরু হোক আমার মাধুকরী।
শীত এখনও জমিয়ে পড়েনি। সবে দুর্গাপুজো গেল। কালীপুজোর আগে খুব একটা পড়বে বলেও মনে হয় না। পুজোর মরশুম বলে ছুটির আলসেমিতে কমবেশি সকলেই যেন মজে রয়েছে। ছুটির যেন আরও জমে গেল অদ্ভুত দৃশ্য দেখে। লোকে ভিড় করে তারিয়ে তারিয়ে চেটেপুটে উপভোগ করতে লাগল সেই দৃশ্য। দিয়া জানতে চাইল, – ওটা কী সাপ, ছোটকা?
সনৎকাকু ওদের কাকা নয়, দাদুর বন্ধু। জেঠু, বাবা, পিসিমণি, ছোটকা সনৎকাকু বলে, তা-ই ওরাও সেটাই বলে। দাদুর সমবয়সী সনৎকাকু ভারী মজার মানুষ। সবকিছু নিয়ে রসিকতা করতে ভালবাসেন। বয়স নিয়ে কথা হওয়ায় সেদিন বলছিলেন,
– ভবতোষ, খেয়াল করেছ কি,সত্তর পেরিয়ে এলাম। এবার মরতে হবে। না মরলে ভারতীয়দের গড় আয়ুর সব হিসাব তালগোল পাকিয়ে যাবে।
সনৎকাকু আগে একটা স্কুলে পড়াতেন। এখন অবসর জীবন। চিকুরা দাদুর মুখে শুনেছে স্কুলে বাচ্চাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য তাঁর নানান মজার ক্রিয়াকলাপের কথা। আকাশে মেঘ ডাকলেই সনৎকাকু টেবিলের নীচে ঢুকে কানচাপা দিয়ে লুকনোর ভান করতেন। এতে বাচ্চারা বাজ পড়ার আওয়াজে ভয় না পেয়ে মজা পেত। একবার ছেলেদের সঙ্গে স্যরেদের ফুটবল ম্যাচে ভেজা মাঠে সনৎকাকু পা পিছলে পড়ে কাদায় মাখামাখি হওয়ায় ছেলেরা খুব মজা পেয়েছিল। তাই ছেলেদের সঙ্গে ম্যাচ বৃষ্টি-ভেজা কাদামাঠে না হলেও সনৎকাকু ছেলেদের মজা পাওয়াবার জন্য খেলার মাঝে ইচ্ছা করে মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি খেতেন। আর ছেলেরা তাই দেখে হাসিতে লুটিয়ে পড়ত। সনৎকাকু সম্পর্কে এমন অনেক মজার কথা তারা দাদুর মুখে শুনেছে। অনেক কথা সনৎকাকু নিজের মুখেও বলেছেন। যে কোনও ঘটনা সনৎকাকু গল্পের মতো খুব জমিয়ে বলেন। আরও মজার বিষয়, যা-ই বলুন না কেন, সেই ঘটনার সঙ্গে সনৎকাকু ঠিক নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। ফলে ওঁর বলা প্রত্যেকটা ঘটনাই হয়ে ওঠে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অথবা প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা।
চিকুদের সঙ্গে বাড়িতে ঢুকে সনৎকাকু দেখলেন দাদু ঠাকুরতলায় বসে আছে। সনৎকাকু সেখানে দাদুর পাশে বসতে বসতে দিয়াকে বললেন,
– যাও দিয়া, তোমার মাকে বলো, এক কাপ লিকার চা পাঠিয়ে দিতে। আর হ্যাঁ, এটা অবশ্যই মনে করে বলবে, চায়ে যেন পাতিলেবুর রস আর একটু বিটনুন দিয়ে দেয়।
তারপর দাদুর দিকে ফিরে বললেন,
– কী ব্যাপার ভবতোষ, তুমি সাপ দেখতে বাইরে বেরোওনি যে বড়? অথচ এর আগে কতদিন এমন হয়েছে আমরা হয়তো চলে যেতে চেয়েছি, কিন্তু তুমি আমাদের হাত ধরে টেনে আটকে দিয়েছ, বাধ্য করেছ সাপখেলা দেখার জন্য। মনে পড়ে সেসব দিনের কথা?
– মনে পড়লে আর কী হবে সনৎ! বাতের ব্যথা এবার খুব ভোগাচ্ছে। নড়তে-চড়তে গেলেই বড় ব্যথা।
ইতিমধ্যে দিয়া এসে হাজির। সনৎকাকুকে মধ্যমণি করে সবাই ঘিরে বসল। সনৎকাকু সবাইকার মুখের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলেন,
– তা দাদুভাই-দিদিভাইরা, সাপ কেমন দেখলে বলো দেখি?
পিকু বলল,
– মাগো! সাপ কেমন সাপকে ধরেই খায়।
– বলো সনৎকাকু, আমাদের খাবার গিলতে জল লাগলেও সাপেদের লাগে না।
চিকু বলল। দিয়াই বা আর চুপ করে থাকে কেন! সে মোক্ষম প্রশ্ন করে বসল,
– সনৎকাকু, তুমি আগে এর’ম কখনও দেখেছ?
প্রশ্নটা শুনে সনৎকাকু উৎসাহিত হয়ে মুখ খুলতে যাওয়ার আগেই চিকুর মা প্লেটে করে বিস্কুট এবং চা-ভর্তি কাপ নিয়ে হাজির।
– কেমন আছেন, সনৎকাকু?
– তোফা আছি বৌমা, কিন্তু জানো আমার সুগার আরও বেশি তোফা আছে। তাই বিস্কুট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। বিস্কুটগুলো তুমি বরং বিচ্চুগুলোকে ভাগ করে দাও।
চিকুদের হাতে বিস্কুটগুলো দিয়ে মা বাড়ির ভিতরে চলে গেল। সনৎকাকু চায়ে একটা লম্বা চুমুক দিয়ে বললেন,
– হ্যাঁ, কী যেন বলছিলে দিদিভাই? আমি এমন দৃশ্য দেখেছি কিনা? তবে শোনো, তোমাদের বলি…,
সনৎকাকু চায়ে আবার একটা লম্বা চুমুক দিলেন। চিকুরা এদিকে তখন গল্পের গন্ধ পেয়ে সনৎকাকুর আরও কাছে সরে এসেছে।

– তা আজ থেকে প্রায় বছর তিরিশেক আগের ঘটনা…
সনৎকাকু বলতে শুরু করলেন।
– তোমরা তো দেখেছ আমাদের বাড়ির সামনে একটা পুকুর আছে। একদিন দুপুরে কি একটা কাজে বাড়ি থেকে বেরুচ্ছি, চোখ চলে গেল পুকুরপাড়ে। দেখি কিনা…
সনৎকাকুকে হঠাৎ চুপ করে যেতে দেখে চিকু একটু অপেক্ষার পর আর থাকতে না পেরে বলল,
– কী দেখলে, সনৎকাকু?
– দেখি একটা বড় চামরকোষা সাপ ফণা তুলে রয়েছে। তোমরা তো মনে হয় কেউ চামরকোষা সাপ দেখোনি। আজকের সাপটা যে শাঁখামুটি সে তো তোমরা ছোটকার মুখে শুনেছ। চামরকোষাও অনেকটা এই শাঁখামুটির মতোই দেখতে। তবে হলুদ-কালো ব্যান্ডের বদলে ধূসর-কালোর সঙ্গে সাদা বা হলদেটে দাগ। তেশিরে, মাথা ঘাড়ের চেয়ে চওড়া, ফণা লম্বা সরু।
দিয়া অস্ফুটে বলল,
– শঙ্খচূড়!
সনৎকাকু দিয়ার মুখের দিকে চোখ ফিরিয়ে বললেন,
– হ্যাঁ দিয়া, তুমি একদম ঠিক কথা বলেছ। শঙ্খচূড়কেই এখানে আমরা ওদের ওই চামর বা কোষার মতো নৌকোর মতো ফণা তোলা মাথার কারণে চামরকোষা বলি।…হ্যাঁ, তা যা বলছিলাম। পাড়ে যেখানে চামরকোষাটা মাথা দোলাচ্ছিল, তার একটু নীচে চোখ চলে যাওয়ায় দেখি একটা জলঢোঁড়া সাপ মাথা উঁচু করে আছে। কিন্তু দেখে মনে হল জলঢোঁড়াটা যেন নড়তে-চড়তে ভুলে গেছে। আমি ভাবলাম জলঢোঁড়াটার দফারফা হল বলে! কিন্তু…
সনৎকাকু আগে একটা স্কুলে পড়াতেন। এখন অবসর জীবন। চিকুরা দাদুর মুখে শুনেছে স্কুলে বাচ্চাদের আনন্দ দেওয়ার জন্য তাঁর নানান মজার ক্রিয়াকলাপের কথা। আকাশে মেঘ ডাকলেই সনৎকাকু টেবিলের নীচে ঢুকে কানচাপা দিয়ে লুকনোর ভান করতেন। এতে বাচ্চারা বাজ পড়ার আওয়াজে ভয় না পেয়ে মজা পেত। একবার ছেলেদের সঙ্গে স্যরেদের ফুটবল ম্যাচে ভেজা মাঠে সনৎকাকু পা পিছলে পড়ে কাদায় মাখামাখি হওয়ায় ছেলেরা খুব মজা পেয়েছিল।
– কী হল? কী হল?
– দেখলাম জলঢোঁড়াটা জলের মধ্যে নেমে গেল। চামরকোষাটা একইভাবে ফণা তুলে আছে। চলে যাব বলে পুকুরপাড় ধরে খানিকটা এগিয়েছি, দেখি জলঢোঁড়াটা মুখে করে একটা বেলেমাছ নিয়ে এসে চামরকোষাটার ফণার নীচে বাড়িয়ে দিচ্ছে। অবাক হয়ে গেলাম চামরকোষাটার কান্ড দেখে। দেখি ব্যাটা মাথা দুলিয়ে যেন অনিচ্ছা প্রকাশ করছে! জলঢোঁড়াটা আবার জলে নেমে গেল। আমি তো দেখলাম বেড়ে মজার ব্যাপার। ভাবলাম আর একটু অপেক্ষা করে দেখাই যাক শেষপর্যন্ত কী ঘটে! মিনিট তিন-চারেকের মধ্যে জলঢোঁড়াটা ফিরে এসে আবার মুখ তুলল। এবার তার মুখে ধরা একটা ল্যাটামাছ– আগের বেলেমাছটার তুলনায় যেটা বেশ বড়। জলঢোঁড়াটা ধীরে ধীরে ল্যাটামাছটাকে বাড়িয়ে দিল ফণা উঁচিয়ে থাকা চামরকোষার মুখের দিকে। চামরকোষাটা এবারও দেখলাম মাথা নেড়ে অনিচ্ছা প্রকাশ করছে, কিন্তু তার সঙ্গে সঙ্গেই…
চিকুদের কৌতূহলকে চরম সীমায় তুলে দিয়ে একেবারে চুপ করে গেলেন সনৎকাকু। তিনজন একসঙ্গে বলে উঠল,
– সঙ্গে সঙ্গেই… কী?
– সঙ্গে সঙ্গেই দেখলাম বিদ্যুৎগতিতে চামরকোষাটার ফণা নেমে এল জলঢোঁড়াটার মাথা লক্ষ করে এবং মুহূর্তের মধ্যে দেখি জলঢোঁড়াটার মাথাশুদ্ধ অনেকটা গিলে ফেলেছে চামরকোষাটা। শুনেছিলাম চামরকোষাকে সাপের রাজা বলে। কেন বলে এখন তার রাজকীয় আচরণ স্বচক্ষে দেখে বুঝতে পারলাম। বাবা একবার বলেছিল বটে যে, চামরকোষাকে অন্য সাপেরা শিকার ধরে এনে দেয়; আর শিকার এনে দিতে না পারলে নিজের গর্দান দেয়। এখানেও দেখলাম সেই একই ঘটনা। দু’বার সুযোগ পেয়েও জলঢোঁড়াটা চামরকোষাকে তার পছন্দের শিকার এনে দিতে পারল না বলে তাকেই শেষ পর্যন্ত চালান হয়ে যেতে হল চামরকোষাটার পেটে।
গল্প শেষ ভেবে উঠতে গেল পিকু। সনৎকাকু বললেন,
– দাদুভাই উঠবে পরে, শেষটা আগে শোনো। হ্যাঁ, যা বলছিলাম, আজকের মতো সেদিনও ভালো ভিড় জমে গিয়েছিল। হঠাৎ দেখি আমার পাশ থেকে শিবতলার হেমন্ত পাড়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সবাই বলে উঠল, ‘হেমন্ত, অত কাছে যাস না!’ কিন্তু শুনলে তো! কারও কথা না শুনে সে এগিয়ে গেল। চামরকোষার এই বাড়াবাড়ি তার সহ্য হয়নি। সবে কাটা একটা বাঁশের বাখারি ও দিকের পাড়ে পড়েছিল। সেটা তুলে নিয়ে হেমন্ত বসিয়ে দিল চামরকোষার চওড়া তেশিরে মাথায়। এরপর কী ঘটল নিশ্চয়ই বুঝতেই পারছ।… হ্যাঁ, একদম ঠিক বুঝেছ। বাখারির ওই এক আঘাতেই ভবলীলা সাঙ্গ হল বাবাজির।
*ছবি সৌজন্য: Shutterstock, Istock
পেশায় শিক্ষক দিলীপকুমার ঘোষের জন্ম হাওড়ার ডোমজুড় ব্লকের দফরপুর গ্রামে। নরসিংহ দত্ত কলেজের স্নাতক, রবীন্দ্রভারতী থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। নেশা ক্রিকেট, সিনেমা, ক্যুইজ, রাজনীতি। নিমগ্ন পাঠক, সাহিত্যচর্চায় নিয়োজিত সৈনিক। কয়েকটি ছোটবড় পত্রিকা এবং ওয়েবজিনে অণুগল্প, ছোটগল্প এবং রম্যরচনা প্রকাশিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে 'সুখপাঠ' এবং 'উদ্ভাস' পত্রিকায় রম্যরচনা এবং দ্বিভাষীয় আন্তর্জালিক 'থার্ড লেন'-এ ছোটগল্প প্রকাশ পেয়েছে।