‘পুরানো জানিয়া চেয়ো না আমারে আধেক আঁখির কোণে…’ লাইনটা গেয়ে থেমে গেল বিক্রম। পাশেই শুয়ে রয়েছে মেয়ে। পাঁচ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। মেয়ে গান ভালবাসে। ঘুমের সময় গান তার চাই-ই চাই। গানের জলসা নেমে আসে বিছানায়। একের পর এক গান গাইতে থাকে। মেয়ে বলে, এটা নয় ওটা গাও। এই গানটা থামিয়ে ওই গানটা তাকে গাইতে হয়। সুরের তরঙ্গ তৈরি হয় ঘরে। সিলিং ফ্যানের গতি বেড়ে ‌যায়। মানে হাওয়া বেড়ে ‌যায় আরও। মেয়ে আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ে। নাহ! প্রতিদিন তার ও মেয়ের এমন সৌভাগ্য হয় না। সপ্তাহের একদিন মাত্র হয়। রবিবার। আজ সেই রবিবার।  জলসা শেষ হয়েছে এখুনি, মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।

বিক্রম ও তার বউ এক বিছানায় শোয় না। পাশে তার বউ শুতে পারে না। তার গায়ে নাকি এক উৎকট গন্ধ। গন্ধ দূর করতে একটা শো-কেস জুড়ে পাউডারের ব্যবস্থা। শো-কেসে চারটি তাক। অন্তত দশ রকম পাউডার কিনে এনে তাতে রেখেছিল বউ। কাজ হয়নি। একের পর এক পাউডার তার শরীরে পরীক্ষা দিয়েছে, উত্তীর্ণ হতে পারেনি। গায়ের ওই বিদঘুটে গন্ধ ঢাকা ‌যায়নি। এ নিয়ে দুজনের ঝগড়াও কম নয়। ঝগড়ার সময় বাড়ির দশটা বারোটা কাচের জিনিসও ভেঙেছে। পাড়ার লোক এসে ঝগড়া থামিয়েছে।

ঝগড়া করলে তো আর গায়ের গন্ধ চলে ‌যায় না। অবশ্য বউকে এটা বোঝান ‌যায়নি। বোঝান ‌যাবেও না। শুধু পাউডারে সে ক্ষান্ত হয়নি। তিনটে অ্যালোপ্যাথি ও চারটে হোমিওপ্যাথি ডাক্তার এবং একটি কোবরেজ তাকে দেখানো হয়েছে। তাতেও কিছু হয়নি। বরং বউয়ের দাবি হল, আগের চেয়ে তার গায়ের গন্ধ নাকি আরও বিদঘুটে হয়েছে। গন্ধটা কেমন? বউয়ের কথা অনু‌যায়ী, ভোলা মাছের মতো প্রবল আঁশটে। ‌যদিও সে নিজে কোনওদিন এই গন্ধ পায়নি। যে সব ডাক্তার বিক্রমকে দেখেছে, তারা বউয়ের দাবি শুনে অবাক হয়েছে। এক ডাক্তার একবার বউকে রীতিমতো জেরা করতে শুরু করে। বউ জানিয়ে ফেলে তাদের জীবনের সিক্রেট- এই গন্ধটা মূলত আসে রাত্রে… শুলে। শুলে বললে ভুল হবে, যৌন ভাবে শুলে বলা ঠিক। সোজা কথা, শরীরে ‌যখন বিক্রমের যৌনতা জাগে তখনই ওই ভোলা মাছের আঁশটে গন্ধটা জেগে ওঠে। ফলে ডাক্তার কিংবা আর অন্য কারোর পক্ষে সেই গন্ধ পাওয়া সম্ভব নয়।

প্রথম প্রথম এমনটা ছিল না। মানে এত ভয়ঙ্কর অবস্থায় ব্যাপারটা পৌঁছোয়নি। বউ তার গায়ের ‌গন্ধ নিয়ে ইয়ার্কি মারত। বলত, ‘তুমি মানুষ না মাছ বল তো? ভোলা মাছ?’ সকলের সামনে অনেক সময় ভোলা বলে বিক্রমকে বউ ডাকত, আর মিটিমিটি হাসত। গান গাইত, ভোলা আমার ভোলা ওগো, ভোলা ভুবন ভরা।

বিক্রম শুনেছে, স্ত্রী সাপের যৌনতা জাগলে, তার শরীর থেকে এক ধরনের রস নিঃসরিত হয়। উৎকট গন্ধ থাকে তাতে। সেই গন্ধ পুরুষ সাপকে আকৃষ্ট করে। পুরুষ সাপ সেই টানে এসে মেয়ে সাপের সঙ্গে মিলিত হয়। সাপের সেই গন্ধ মানুষের কাছে উৎকট হলেও, পুরুষ সাপের কাছে অবধারিত ভাবেই তা পৃথিবীর চরম আকর্ষণীয় বস্তু!

প্রথম প্রথম এমনটা ছিল না। মানে এত ভয়ঙ্কর অবস্থায় ব্যাপারটা পৌঁছোয়নি। বউ তার গায়ের ‌গন্ধ নিয়ে ইয়ার্কি মারত। বলত, ‘তুমি মানুষ না মাছ বল তো? ভোলা মাছ?’ সকলের সামনে অনেক সময় ভোলা বলে বিক্রমকে বউ ডাকত, আর মিটিমিটি হাসত। গান গাইত, ভোলা আমার ভোলা ওগো, ভোলা ভুবন ভরা।

ক্রমে বউ একেবারে অন্য রকম হয়ে উঠতে থাকে। তুঙ্গ মুহূর্তে হঠাৎ বউ নির্দেশ জারি করতে শুরু করে, ‌”যাও পাউডার মেখে এস, ‌যাও।” বিক্রম সেক্সের মাঝপথে উঠে গিয়ে পাউডারে নিজেকে চুবিয়ে নিত। কিন্তু ফিরে এসে দেখত, বউ ঘুমিয়ে কাদা হয়ে পড়েছে। কখনও তা না হলেও বউ সুখানুভূতির চরমে উঠেও বলত, “গায়ের গন্ধটা এত, পাউডারেও ‌যায়নি দেখছি।” তীব্র আনন্দে ‌তা চোনা ফেলে দিত।

মেয়ে জন্মানোর পর, এটা সীমা ছাড়াতে থাকে। এতক্ষণ বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, বিক্রমের বউয়ের নাম কাকলি। বলতে হবে, কাকলির সঙ্গে পরিচয় বিয়ের বেশ খানিকটা আগে। কলেজে। না প্রেম-ট্রেম হয়নি। কাকলি পড়ত ফার্স্ট ইয়ার, আর সে থার্ড ইয়ারে। দুজনেই ফিজিক্সে অনার্স। কাকলি কলেজ-জীবনে অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করত তাকে, পড়াশোনার  প্রশ্ন। যেহেতু বিক্রম পড়াশুনোয় বেশ ভাল ছিল, জুনিয়র এবং সহপাঠীদের অনেকে তার সাহা‌য্য চাইত। তার কাছ থেকে বুঝলে নাকি বিষয়টি প্রাঞ্জল হয়ে ‌যায়! কাকলি বেশ সিরিয়াস ধরনের মেয়ে হলেও, তার একটি প্রেমিক ছিল, দুজনে একই ক্লাসে পড়ত। প্রেমিকটার নাম সে এখন ভুলে গিয়েছে।  কী হল কে জানে, কাকলি একদিন সেই প্রেমিককে জানিয়ে দিল, তাকে বিয়ে করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এরপর প্রেমিকটি ঘুমের ওষুধ খেয়ে সুইসাইড করে।

এই ঘটনা স্বাভাবিক ভাবেই তাদের কলেজে বিরাট সাড়া ফেলেছিল। কাকলির নামে ঢি-ঢি পড়ে গিয়েছিল। অনেকেই কাকলির সঙ্গে কথাবার্তা বন্ধ করে দেয়। কাকলি মাথা নিচু করে কলেজে ঢুকত, বেরিয়েও যেত মাথা নিচু করে।  অনেক দিন প‌র্যন্ত কাকলির ব্যর্থ প্রেমকাহিনি নিয়ে আলোচনা চলেছিল।  পিএনপিসি করার জন্য এটা একটা অসাধারণ বিষয় বৈকী। পড়াশোনায় ভাল হওয়া সত্ত্বেও, পিএনপিসি-তে বিক্রমের আগ্রহ ছিল। অনেকেরই হাঁড়ির খবর সে রাখত। শুনেছিল, ওই প্রেমিকের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা নাকি কাকলি বিছানা প‌র্যন্ত চলে ‌যায়। মনে আছে, প্রেমিকের আত্মহত্যার পর ‌যখন কাকলি সোশাল বয়কটের মুখে, বিক্রম তার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করেনি।

তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক মড়া চলে গেল। অনেক কাক মড়ার উপর বসে বসে হাসতে হাসতে এগিয়ে গেল। কলেজ থেকে বেরিয়ে বিক্রম চাকরি পেল। ব্যস্ত হয়ে পড়ল। যেমন হয়, তেমনই আর কী! কাকলি, কলেজ ইত্যাদি আরও কত কিছু সেই চাকরির গর্ভের অন্ধকারে হারিয়ে গেল তার ইয়ত্তা নেই। একদিন বিক্রম অফিসে বেরনোর জন্য তৈরি হচ্ছে, মোবাইল বেজে উঠল। অচেনা নম্বর। ধরতেই ভারি গলা।

পুরো সিনেমা মনে হচ্ছিল বিক্রমের। তারপর ‌যা বলল কাকলি, সে স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি।
— আই লাভ ইই বিক্রমদা। আমাকে বিয়ে করবে? তোমার নম্বরটা অনেক কষ্টে জোগাড় করেছি। কত বার ভেবেছি ফোন করব, করা হয়নি। তোমাকে না পেলে আমি মরে ‌যাব বিক্রমদা।
আশপাশে কাকলির বাবা, মা, কাকিমা দাঁড়িয়ে। বিক্রম দেখল তারা মিটিমিটি হাসছে!

— আপনার সঙ্গে একটু দরকার আছে? কথা বলা ‌যাবে?
— বলুন কী দরকার? কী কথা?
— আমার মেয়ের ভয়ঙ্কর জ্বর। বিশ্বাস করুন খুবই জ্বর হয়েছে, একশ তিন-চারের নিচে নামছে না।
— হ্যাঁ, তাতে আমি কী করব?
— না তাতে কিছু করার নেই, কিন্তু ও যে জ্বরের ঘোরে কেবলই আপনার নাম করছে।
— মানে? আমার নাম করছে? কেন আমার নাম করছে? আমি তো… আপনার মেয়ের নাম কি বলুন তো?
— আমার মেয়ের নাম কাকলি, কাকলি।
— কাকলি, কোন কাকলি?
— আরে কাকলিকে চিনতে পারছেন না! কাকলি, আপনার সঙ্গে কলেজে পড়ত। আপনি তো ওর কলেজের বন্ধু। মনে পড়ছে না ওর নাম? আপনার কথা কত বার বলেছে ও। আপনি কি ওকে ভুলে গেলেন? ওর সঙ্গে কি কোনও সম্পর্ক ছিল না আপনার? না থাকলে কেনই বা বারবার এভাবে আপনার নাম করবে বলুন তো?
— ওহ কাকলি! কলেজে পড়ত নিচু ক্লাসে। কিন্তু ওই প‌র্যন্ত। আর কিছু নয় দাদা, মানে—কাকু, বিশ্বাস করুন ওর সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক ছিল না।
— কিন্তু…
— না, কাকু কোনও সম্পর্ক ছিল না আমাদের।
— ও তো তোমার নাম বারবার বলছে বাবা জ্বরের ঘোরে। তোমাকে দেখতে চাইছে।
— কী সর্বনাশ! আচ্ছা আপনি আমার নম্বর কী করে পেলেন?
— কাকলির ডায়রি থেকে। প্লিজ তুমি একবার এস।
— আপনাদের বাড়িটা তো চিনি না।
— ‌যাক আসবে তবে! শোনো বিরাটি স্টেশনে এসেছ কোনও দিন?
— এক দু’বার।
— আচ্ছা। বিরাটির আপ স্টেশন থেকে রিক্সা করে পাঁচ মিনিট। এক কাজ করবে, স্টেশনে নেমে তুমি ফোন করবে এই নম্বরে। তোমাকে কেউ একজন নিয়ে আসবে স্টেশন থেকে।
— ঠিক আছে।
— তা হলে কবে আসছ তুমি বাবা?
— কাল তো রোববার, কালই ‌যাই তাহলে?
— আচ্ছা, দেখা হবে।

রবিবার কাকলির বাড়ি যেতে কোনও সমস্যা হয়নি বিক্রমের। ‌যথা সময়ে ফোন করেছিল, ওদের পাড়ার একটি ছেলে তাকে রিক্সা করে নিয়ে গেল। কাকলির ছিল ধুম জ্বর। বিক্রম সামনে যেতে চোখ কোনও ক্রমে খুলে কাকলি তার হাত দুটো জড়িয়ে ধরল।
— তুমি এসেছ।
পুরো সিনেমা মনে হচ্ছিল বিক্রমের। তারপর ‌যা বলল কাকলি, সে স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি।
— আই লাভ ইই বিক্রমদা। আমাকে বিয়ে করবে? তোমার নম্বরটা অনেক কষ্টে জোগাড় করেছি। কত বার ভেবেছি ফোন করব, করা হয়নি। তোমাকে না পেলে আমি মরে ‌যাব বিক্রমদা।
আশপাশে কাকলির বাবা, মা, কাকিমা দাঁড়িয়ে। বিক্রম দেখল তারা মিটিমিটি হাসছে!

এরপর বিক্রমকে জোর করে সেদিন খাওয়ান হল। পাতে পড়েছিল একটি বড় মাছের পিস।
— কী মাছ এটা কাকিমা? একটু আঁশটে গন্ধ, কিন্তু বেশ ভাল খেতে।
এখানে বলে রাখতে হবে যে বিক্রম মাছ চেনে না। বাজারে গেলে তেলাপিয়া আর কাটাপোনা ছাড়া আর কিছুই সে আনে না। ‌কাকলির মা জানিয়েছিল,
— এটা মধুভোলা বাবা, নাম শুনেছ?
— না কাকিমা, এ মাছ খাইনি কখনও।

খাওয়াদাওয়ার পর সেই দুপুরে কাকলির ঘরে বেশ খানিকক্ষণ ছিল বিক্রম। বাড়ির লোকজন বাইরে থেকে দরজাটা ভেজিয়ে দিয়েছিল। বাড়ির সব শব্দ যেন অফ করে দেওয়া হয়েছিল কোনও ম্যাজিকে।

বিক্রম একবার দরজা ফাঁক করে এক গ্লাস জল চেয়েছিল। কিন্তু কেউ কোনও সাড়া দেয়নি। কাকলি ক্ষীণ কণ্ঠে বলেছিল, বাড়িতে কেউ নেই। একটা কাজে একটু বাইরে গেছে। তুমি ফ্রিজ খুলে জলের বোতল বার করে নাও। দরজা দিয়ে বেরিয়ে বাঁ-দিকে ঘুরলেই দেখতে পাবে ফ্রিজটা। বিক্রম বুঝতে পেরেছিল, তাদের একা করে দিতেই বাড়ির লোকজন বাইরে গিয়েছে। এরপর জল খেয়ে, বার কয়েক একাকিত্বের সু‌যোগে সেক্স করেছিল কাকলির সঙ্গে। খুব খুশি হয়েছিল কাকলি। জ্বরও বেশ কমে গিয়েছিল তার। কিন্তু তিনবারই চরম মুহূর্তে পৌঁছে সে বলেছিল,
— তোমার গা থেকে ভোলা মাছের গন্ধ বেরোচ্ছে। খেয়ে হাত ধোওনি?

ব্যপারটা একেবারেই পাত্তা দেয়নি বিক্রম। পাত্তা দেওয়ার মতোই নয়। ইলিশ, বোয়াল, আড়, ভোলা এমন সব মাছ থেকে আঁশটে গন্ধ বেরোয়। খাওয়ার পর গন্ধ লেগে থাকে হাতে, মুখেও। ভাল করে ধুলেই চলে ‌যায় অবশ্য। সে দিন সন্ধেবেলায় কাকলিদের বাড়ির লোকজন চলে এসেছিল। বিক্রম এক কাপ চা খেয়ে, ‘দেখুক পাড়া পড়শিতে কেমন মাছ গেঁথেছে বড়শিতে’ গানটা গাইতে গাইতে বাড়ি ফিরে এসেছিল। রাত্রে এক আশ্চ‌‌র্য আনন্দের ঘুম হয়েছিল তার। কিন্তু মহাভারতের সত্যবতীর মৎস্যগন্ধা থেকে সুগন্ধা হওয়ার গল্পটা সকাল বেলার স্বপ্নে সে কেন দেখেছিল বুঝতে পারেনি। সত্যবতীর গল্পটা স্কুল জীবনেই শুনেছিল বিক্রম। পরে মনে হয়েছে, খুবই রতিউদ্রেককারী এবং রোমহর্ষক গল্প সেটা।

সে ঘুম থেকে উঠে বই বের করে সেই গল্পটা আবার পড়তে লাগল। চেদিরাজ উপরিচর বসু একবার মৃগয়াকালে তার রূপবতী স্ত্রী গিরিকাকে স্মরণ করে কামাবিষ্ট হলেন। তার স্খলিত শুক্র এক বাজপাখিকে দিয়ে রাজমহিষীর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। মাঝপথে আর এক বাজের আক্রমণের মুখে পড়ল সেই বাজপাখি। এতে করে শুক্র পড়ল গিয়ে ‌যমুনার জলে। ব্রহ্মশাপে মৎস্যরূপিণী  অপ্সরা অদ্রিকা ওই জল পান করলেন ও গর্ভবতী হলেন। এক জেলে ওই মাছটি এর পর ধরলেন। মাছের গর্ভ থেকে একটি পুরুষ ও একটি মেয়ে পেলেন জেলেটি, এবং অপ্সরা শাপমুক্ত হলেন। ছেলেটির নাম মৎস্য ও মেয়েটির মৎস্যগন্ধা। গা থেকে প্রবল মাছের গন্ধ বেরনোর জন্যই এই নাম তার। হ্যাঁ, এই হল সত্যবতী। উপরিচরবসুর এই মেয়ে অপরূপ সুন্দরী হলেন কালক্রমে। ধীবরপালিতা বলে তিনি খেয়াপারাপারের কাজ করতেন।

বারবার তার হাতটা সরিয়ে দিয়েছে কাকলি, চুমু প্রত্যাখ্যান করেছে। বিক্রম হাত সরিয়ে নিয়েছে, কিন্তু ওর ঠোঁটের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বিয়ের পর ‌যত সময় গিয়েছে, বিক্রমের শরীরে ভোলা মাছের গন্ধের পরিসর তত বেড়ে গিয়েছে। প্রথমে বিক্রমের হাতে চুমু খেতে না চাইলেও, তার অন্য কোনও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে কাকলির কোনও আপত্তি ছিল না। ক্রমে সেই আপত্তি বাড়তে থাকল। একদিন হঠাৎই সে প্রচণ্ড চিৎকার করে বলে উঠল,
— তোমার গা থেকে এত কেন আঁশটে গন্ধ বেরোয় বুঝতে পারি না। পাউডার মাখ না?

তারপর এক দিন বিক্রম ও কাকলির বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের আগে অবশ্য তারা বেশ কয়েক বার ডেটিং করল। ভিক্টোরিয়া, নন্দন, সেন্ট্রাল পার্ক গেল। বিক্রম চাইত, তার হাতে কেউ চুমু খাক। তাই ‌যখনই ডেটিং করত, তখনই হাতে চুমু খেতে অনুরোধ করত কাকলিকে। কাকলি হাতে চুমু ‌খেতে ‌যতবার গিয়েছে, তত বারই বলেছে,
— কী গো তোমার হাতে আঁশটে গন্ধ। অনেকটা ভোলা মাছের মতো। কেন বল তো?
বারবার তার হাতটা সরিয়ে দিয়েছে কাকলি, চুমু প্রত্যাখ্যান করেছে। বিক্রম হাত সরিয়ে নিয়েছে, কিন্তু ওর ঠোঁটের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বিয়ের পর ‌যত সময় গিয়েছে, বিক্রমের শরীরে ভোলা মাছের গন্ধের পরিসর তত বেড়ে গিয়েছে। প্রথমে বিক্রমের হাতে চুমু খেতে না চাইলেও, তার অন্য কোনও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে কাকলির কোনও আপত্তি ছিল না। ক্রমে সেই আপত্তি বাড়তে থাকল। একদিন হঠাৎই সে প্রচণ্ড চিৎকার করে বলে উঠল,
— তোমার গা থেকে এত কেন আঁশটে গন্ধ বেরোয় বুঝতে পারি না। পাউডার মাখ না?

এর পরের পর্বটা আগেই বলেছি। বউ আর পাশে শোয় না বিক্রমের। জীবনটাই তার আলুনি হয়ে গিয়েছে। প্রতিদিন আকাশ পাতাল ভাবে। ভোলা মাছের গন্ধ শরীর থেকে আসে কী ভাবে? কী ভাবে সম্ভব এমনটা? তা হলে কি কাকলিদের বাড়িতে প্রথম দিন খাওয়াটাই কাল হয়ে সামনে এল? সত্যিই কি মাছের গন্ধ বেরোয় তার গা থেকে? নাকি সেই স্মৃতিটা কাকলিকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে? এক ভয়ঙ্কর স্মৃতি বাস্তবে হানা দিয়েছে? ভাবতে থাকে বিক্রম। আরও ভাবতে থাকে। আরও… আরও…

একদিন সারা রাত ধরে বিক্রম ছটফট করে। ব্রাহ্মমুহূর্তে বিক্রম ঠিক করে ফেলে, নাহ, মানুষজীবন নয়। তার মাছের জীবন প্রয়োজন, মাছ হতে হবে। এ ভাবে ত্রিশঙ্কু অবস্থায় থেকে কোনও লাভ নেই। সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ‌যায়, হাঁটতে থাকে। হাঁটতেই থাকে।

একটা দিঘির কাছে পৌঁছে ‌যায়। বিশাল আর গভীর দিঘি। টলটল করছে কালো জল। ঘাই মারছে মাছ। বিক্রম জলে হাত দিয়ে দেখে, আহ কী সুন্দর ঠান্ডা। এমন জল আর কোথাও মিলবে না হলফ করে বলা হয়। আহ কী সুন্দর!

বিক্রম মাছ হওয়ার লক্ষ্যে ঝপাং করে জলে ঝাঁপ দেয়। কিন্তু সে সাঁতার জানে না।

Nilarnab Chakraborty Author

পেশায় সাংবাদিক নীলার্ণব বিভিন্ন বাংলা সংবাদপত্র ও পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন। গল্প কবিতা ও ফিচার লেখায় সমান আগ্রহ ও দক্ষতা রয়েছে। প্রকাশিত বই রাতের কাহিনী, অসংলগ্ন রিপোর্টাজ, হাওয়ার আওয়াজ।

3 Responses

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *