শরীর ডিটক্স করতে উপোস করা ভাল। অনেকেই এই কথা মানেন এবং করেনও। কিন্তু ত্বকের উপোস কখনও শুনেছেন কি? জাপানে এই প্রথা অনেকদিন ধরেই চালু আছে। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এখন বিশ্বের অন্যান্য দেশেও শুরু হয়েছে এই স্কিন ফাস্টিং। এর মানে এক বা দু’দিন ত্বকে কোনওরকম প্রডাক্ট লাগানো যাবে না। এর ফল ত্বকের ডিটক্স হবে এবং নিঃশ্বাস নিতে পারবে। মনে করা হয় অতিরিক্ত প্রডাক্ট ব্যবহার করলে ত্বকের নিজস্ব তেল হারিয়ে যায়। ফলে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। তাই মাঝেসাঝে ত্বকে কিছু না লাগালে, ত্বক আগের অবস্থায় ফিরে আসতে পারে।

শুরুর গল্প

প্রাথমিক ভাবে স্কিন ফাস্টিং-এর অর্থ ছিল এক বা দু’সপ্তাহের জন্য রাতে ময়শ্চারাইজার না লাগানো এবং সপ্তাহে অন্তত এক দিন মেক-আপ না করা। এতে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল নিঃসরণ হয় বলেই ধারণা। অতিরিক্ত ময়শ্চারাইজার লাগালে ত্বকের এই প্রক্রিয়া থেমে যায়। এখন অবশ্য স্কিন ফাস্টিং আর এতেই থেমে নেই। মহিলারা এখন দু’-তিন দিন কোনওরকম স্কিন কেয়ার প্রডাক্টই ব্যবহার না করাকেই ত্বকের উপোস বলে মনে করা হচ্ছে। ত্বক বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এর পক্ষপাতী নয়। অনেকেই মনে করছেন স্কিন ফাস্টিং-এর মানেটা মানুষ সঠিকভাবে বোঝেননি। টানা কোনওরকম স্কিন কেয়ার প্রডাক্ট ব্যবহার না করলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। সানবার্ন, সান ড্য়ামেজ তো আছেই, ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যেতে পারে।

স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বকের জন্য সঠিক রূপ রুটিন মেনে চলা প্রয়োজন। নিজের ত্বকের ধরন বুঝে তার যত্ন নিতে হবে। প্রতি দিন ত্বক পরিষ্কার করা উচিত। সানস্ক্রিন, ডে ক্রিম আর নাইট ক্রিমও লাগানো দরকার। নাইট ক্রিম বাদ দেওয়া একেবারেই ঠিক নয়। কারণ সারা দিন ত্বকের যা ক্ষতি হয়, নাইট ক্রিম রাতভর ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে তা ঠিক করে দেয়। প্রত্যেকের ত্বকের ধরন যেহেতু আলাদা তাই বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আপনার বন্ধু স্কিন ফাস্টিং করছে বলেই যা আপনার তা সহ্য হবে তা কিন্তু নয়!

স্কিন ফাস্টিং ভাল না খারাপ?

শরীরের বাকি অংশের মতো ত্বকের প্রতি দিন পুষ্টির প্রয়োজন। এবার যদি কেউ দিনের পর দিন ডায়েটের নামে জল ছাড়া থাকেন, তা হলে শরীরের যেমন ক্ষতি হবে, ঠিক তেমনই কেউ যদি টানা স্কিন কেয়ার প্রডাক্ট ব্যবহার না করেন, ত্বকেরও ক্ষতি হবে। যেমন সানস্ক্রিন না লাগালে সূর্যের আলট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে সানবার্ন, ত্বকে কালচে দাগ, র‍্যাশ হতে পারে। রাতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্রিম না লাগালে ত্বকের ক্ষয় ক্ষতি সারতে সময় লাগে। এ ছাড়াও ব্রণ বা পিগমেন্টেশনের চিকিৎসা চলাকালীন কেউ যদি রাতের স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে না চলেন, তা হলে ত্বকের সমস্যা আরও বেড়ে যেতে পারে। ত্বকের পিলিং করার পরও নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলা প্রয়োজন। এছাড়া স্কিন ফাস্টিংয়ের ভাল ফল সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তবে এটাও সত্যি যে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা অতিরিক্ত স্কিন প্রডাক্ট ব্যবহার করেন। এর ফলে ত্বক স্বাভাবিক ভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারে না। প্রডাক্টের প্রলেপের তলায় চাপা পড়ে যায়। সেক্ষেত্রে স্কিন ফাস্টিং করা যেতে পারে। তবে একেবারে সব বন্ধ করে দিলে হবে না। প্রতি দিন তুলনায় কম প্রডাক্ট ব্যবহার করলেই হবে। আর কিছু ব্যবহার করুন না করুন, মাইল্ড সাবান আর সানস্ক্রিন ব্যবহার করা বন্ধ করবেন না। তবে পুরো ব্যাপারটাই নির্ভর করবে ত্বকের ধরনের উপর। মোদ্দা কথা কোনওরকম ট্রেন্ডে গা ভাসাবার আগে ভাল করে ভেবে নিন। না হলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *