শামসুল আলম সাহেব ট্রেনের কামরায় ওঠা মাত্রই ট্রেন ছেড়ে দিল। কামরা ফাঁকা। সব মিলিয়ে দশজন যাত্রীও নেই। থাকবে কেমন করে? পুরো সপ্তাহ জুড়ে চলছে লাগাতার হরতাল-অবরোধ। বাস, ট্রাক, গাড়ি ভয়ে রাস্তায় নামছে না। বড় সড়কে মানুষ রিক্সা-ভ্যানে চলছে। কেউ কেউ পায়ে হেঁটে চলছে।

বিরোধীদল অজ্ঞাতস্থান থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করছে। তাদের কর্মীরা হঠাৎ মাঝে মাঝে রাস্তা বা গলিতে গাড়ি পেলে তাতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। ফলে ভয়েই মালিকরা গাড়ি রাস্তায় নামাচ্ছে না। যাদের খুব প্রয়োজন তারা বিকল্প যানবাহন ব্যবহার করছে। নৌকা, লঞ্চ, প্রাইভেট মোটর সাইকেলে করে গন্তব্যে যাচ্ছে। সড়কপথের বড় যানবাহন সকলে বর্জন করে চলছে।

শামসুল আলম সাহেব গিয়েছিলেন গ্রামের বাড়ি ভৈরব। ওখানে বড় দুটো পুরনো কড়ই গাছ গত পরশুর ঝড়ে উপড়ে পড়েছিল। বাড়ি থেকে আলতাফ ফোন করে জানাবার পর গতকাল তিনি গিয়েছিলেন বাড়ি। গাছ দুটো নগদ বারো হাজার টাকায় বিক্রি করে, গাছ কাটিয়ে আজ ফিরছেন ঢাকায়। ভৈরব থেকে ট্রেনে উঠেছেন সন্ধ্যায়। লোকজন তেমন নেই, তাই ফাঁকা কামরার শেষ দিকের সিটে গিয়ে বসেছেন। আশা করছেন রাত আটটা বা সাড়ে আটটার মধ্যে ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে গিয়ে পৌঁছবেন। তারপর রিক্সা নিয়ে চলে যাবেন বাসায়।

শামসুল আলম অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক। অবসরে গিয়েছেন প্রায় আট বছর আগে। দুই মেয়ে। দু’জনকেই বিয়ে দিয়েছেন। বড় মেয়ে শায়লা থাকে উত্তরায় স্বামী সন্তানসহ। ছোট মেয়ে লায়লা স্বামীর সঙ্গে আমেরিকাতে বসবাস করছে। শামসুল আলম সাহেবের স্ত্রী মারা গিয়েছেন দু’বছর পূর্বে। মেয়েদের বিয়ে দিয়ে তিনি সস্ত্রীক গ্রামেই অবসর জীবনযাপন করছিলেন। কিন্তু স্ত্রীর মৃত্যুর পর শায়লা বাবাকে একা গ্রামে রাখতে চায়নি। বাবার প্রবল আপত্তি থাকার পরও জোর করে ঢাকায় নিয়ে এসেছে শায়লা। গ্রামের বাড়ি দেখাশোনার জন্য রেখেছে আলতাফকে।

ঢাকায় বড় মেয়ের বাসায় শামসুল আলম সাহেবের মন্দ কাটে না সময়। খবরের কাগজ পড়ে, টেলিভিশন দেখে, নাতি-নাতনির সঙ্গে গল্প করে ভালই চলে যায় সময়। এর মধ্যে গত পরশু আলতাফ ফোন করে গাছ পড়ে যাওয়ার কথা বলতেই গ্রামে যান শামসুল আলম সাহেব। যাবার আগে শায়লা আপত্তি করেছিল। বলেছিল- বাবা, এই হরতাল-অবরোধের মধ্যে ভৈরব যাওয়ার দরকার নেই।

শামসুল আলম সাহেব মেয়ের আপত্তি উপেক্ষা করেই গতকাল বাড়ি গিয়েছিলেন। আজ গাছ বিক্রির টাকা-সহ ফিরছেন ঢাকা। শামসুল আলম সাহেব এদিক ওদিক তাকিয়ে কামরার ভিতরটা দেখে সুস্থিরভাবে বসলেন। তাঁর সঙ্গে আছে কালো রঙের একটা ব্রিফকেস। ব্রিফকেসের মধ্যে তাঁর ব্যবহারের লুঙ্গি, প্যান্ট, শার্ট, গামছা, টুথপেস্ট, ব্রাশ ইত্যাদি। আর ব্রিফকেসের ভিতরের পকেটে গাছ বিক্রির বারো হাজার টাকা। তিনি অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে পরীক্ষা করে দেখলেন, ব্রিফকেসের তালা ঠিকমতো লেগেছে কিনা। দেখলেন লেগেছে। এবার তিনি ব্রিফকেসটি সিটের বা পাশে রেখে আরও সুস্থির হয়ে বসলেন।

কিছু সময় পর একজন মধ্যবয়সী লোক এসে দাঁড়াল শামসুল আলম সাহেবের কাছে। তারপর অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বলল:
– ভাই কিছু মনে করবেন না। জানালার কাচটা লাগিয়ে দিন। আসলে হরতালকারীরা বা কোনও দুষ্ট ছেলে ঢিল মারতে পারে।
শামসুল আলম সাহেব বললেন:
– জ্বি ঠিক বলছেন। লাগিয়ে দিচ্ছি। তিনি যখন কাচ লাগাতে উঠে দাঁড়ালেন, ওমনি আগন্তুক বললেন- আমি লাগিয়ে দিচ্ছি আপনি বসুন।
লোকটি জানালার কাঁচ লাগিয়ে দিয়ে বলল:
– পুরো কামরা ফাঁকা। কথা বলার পর্যন্ত লোক নেই। আপনি যদি অনুমতি করেন তাহলে আপনার পাশে বসি?
শামসুল আলম বললেন- অবশ্যই।
আগন্তুক বসল এবং তারপর দুজন কথা বলতে লাগল। কথা বলার ফাঁকে আগন্তুক জেনে নিল শামসুল আলমের পরিবার, সন্তান, অবসর জীবন ইত্যাদি বিষয়।

শামসুল আলম অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক। অবসরে গিয়েছেন প্রায় আট বছর আগে। দুই মেয়ে। দু’জনকেই বিয়ে দিয়েছেন। বড় মেয়ে শায়লা থাকে উত্তরায় স্বামী সন্তানসহ। ছোট মেয়ে লায়লা স্বামীর সঙ্গে আমেরিকাতে বসবাস করছে। শামসুল আলম সাহেবের স্ত্রী মারা গিয়েছেন দু’বছর পূর্বে। মেয়েদের বিয়ে দিয়ে তিনি সস্ত্রীক গ্রামেই অবসর জীবনযাপন করছিলেন।

আগন্তুক জানাল, ঢাকার কমলাপুরে তাঁর নিজের বাড়ি। তিনি ব্যবসায়ী। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবসা ভাল যাচ্ছে না। গত ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু হওয়া হরতাল, অবরোধসহ ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে ব্যবসা খুবই ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এসব কথার ফাঁকে শামসুল সাহেব জিজ্ঞাসা করলেন:
– আপনি একা যাচ্ছেন ঢাকা? 
আগন্তুক বললেন: 
– না। ওই তো পাঁচ বেঞ্চি পরে বসে আছে আমার স্ত্রী ও বাচ্চারা। জমে ওঠা গল্পের মাঝখানে একবার উঠে দাঁড়িয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে বললেন:
– তোমরা থাক। আমি এখানেই আছি। ভাইসাহেবের সঙ্গে কথা বলছি। চিন্তা কোরও না।

গল্পের মাঝখানে আগন্তুক একবার বললেন:
– ভাইসাহেব আপনার সঙ্গে আমার অনেক মিল। যেমন আমি মনে করি শিক্ষকতা সবচেয়ে মহান পেশা। আপনিও। আমারও শক ছিল শিক্ষকতা পেশায় যাব। কিন্তু বাড়ির বড় ছেলে। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। ছোট ভাইবোনদের লেখা পড়ার দায়িত্ব নিতে হয়েছে বলে ব্যবসায় ঢুকে পড়লাম। বিয়েও করেছি বেশ দেরিতে। তাই দেখেন না বাচ্চারা ছোট। আপনিও পিতার অবর্তমানে দায়িত্ব নিয়েছেন ছোট ভাইবোনদের। তবে পেশা পেয়েছেন মনের মতো। ভাই সাহেব আপনার যেমন গ্রাম পছন্দ, আমারও। আমার ইচ্ছে আছে শেষ জীবনে গ্রামে গিয়ে থাকব। প্রকৃতির সঙ্গে থাকব।

শামসুল আলম সাহেব আগন্তুকের কথা গভীর মনোযোগ দিয়ে শোনেন। ভীষণ ভাল লাগে লোকটির কথাগুলি। একদম জীবনঘনিষ্ঠ ও বাস্তব। আলম সাহেব বলেন:
– শিক্ষকতা করতে পারেননি তাতে কী হয়েছে। মন খারাপ করবেন না। 
আগন্তুক বললেন:
– ইচ্ছে আছে শেষ বয়সে গ্রামে গিয়ে গ্রামের স্কুলে বাচ্চাদের ফ্রি পড়াব।
চলন্ত ট্রেনের প্রায় নির্জন কামরায় বসে আরও অনেক কথা বলে দু’জন। এর মধ্যে শামসুল আলম জানান তাঁর শান্তি ও স্বস্তির কথা। তিনি যে তাঁর মেয়ে, মেয়ে জামাই ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে খুব সুখী, সে কথাও বলেন। বলেন:
– আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া যে তিনি আমাকে এমন দুটি মেয়ে দিয়েছেন। আমার জামাইরাও খুব ভাল। শুধু একটা কষ্ট আমাদের সুখের সময়টিতে আমার স্ত্রী বেঁচে নেই।
আগন্তুক সান্ত্বনা দিয়ে বলেন:
– যাদের স্ত্রী খুব নেকবান্দা তাঁরা স্বামীর পূর্বে মৃত্যুবরণ করেন এবং বেহেশতের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকেন। তাঁরা স্বামীদের সঙ্গে না নিয়ে বেহেশতে যাবেন না।

শামসুল আলম সাহেব এদিক ওদিক তাকিয়ে কামরার ভিতরটা দেখে সুস্থিরভাবে বসলেন। তাঁর সঙ্গে আছে কালো রঙের একটা ব্রিফকেস। ব্রিফকেসের মধ্যে তাঁর ব্যবহারের লুঙ্গি, প্যান্ট, শার্ট, গামছা, টুথপেস্ট, ব্রাশ ইত্যাদি। আর ব্রিফকেসের ভিতরের পকেটে গাছ বিক্রির বারো হাজার টাকা। তিনি অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে পরীক্ষা করে দেখলেন, ব্রিফকেসের তালা ঠিকমতো লেগেছে কিনা।

আগন্তুকের একথা শুনে শামসুল আলম সাহেবের চোখে পানি চলে আসে। মনে পড়ে সংসারজীবনের শুরুতে শায়লার মা কতই না কষ্ট করেছে। ছোট ভাইবোনদের লেখাপড়া শিখিয়ে বিয়ে শাদি করানো পর্যন্ত সংসারের টানাটানির মধ্যে শায়লার মা আসে বড় বউ হয়ে। সেখান থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সংসারের জন্যে খেটেছে। আজ ট্রেনের কামরায় বসে জীবনের সেই সব স্মৃতি প্রখর হয়ে ভেসে ওঠে। আগন্তুক পরিবেশকে হালকা করার জন্য বলে:
– ভাই সাহেব আমার সঙ্গে আপনার অমিল কোথায় জানেন?
শামসুল আলম বুঝতে পারেন আগন্তুক বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান। যার কারণে প্রসঙ্গ পাল্টে তাকে শান্ত করছে। একথা ভেবে আগন্তুকের প্রতি তাঁর প্রীতি ও মমতা বৃদ্ধি পায়। তিনি লক্ষ করেন যে, আগন্তুকের শার্ট-প্যান্ট খুবই মলিন। স্পষ্ট দারিদ্র্যের ছাপ। বুঝতে পারেন গত পাঁচ-ছয় মাসের অশুভ রাজনীতির খপ্পরে লোকটির ব্যবসা ব্যাপক ক্ষতির সমুক্ষীন হয়েছে। তারই ছাপ তার পোশাকে। শুধু লোকটির মুখখানা সারা সময় হাসিমাখা। লোকটির প্রতি গভীর মমতায় আবার চোখে পানি চলে এল শামসুল আলম সাহেবের। তিনি চোখের পানিকে সংযত রেখে বললেন:
– কোথায় অমিল?
আগন্তুক বললেন:
– প্রথমত রঙে। যেমন আপনার প্যান্ট কালো, জুতা কালো, মোজা কালো, আপনার বুক পকেটের কলমটি কালো। আর আপনার ব্রিফকেসটিও কালো। তার মানে কালোর প্রতি আপনার পছন্দ না থাক। অপছন্দ নয়।

শামসুল আলম সাহেব বললেন:
– ঠিক বলেছেন। আমার স্ত্রী মানে শায়লার মা কালো খুব পছন্দ করত। তার পছন্দে কালো আলমারি কিনতাম। তার যুক্তি ছিল সাদা, আলোময় উজ্জ্বল যা, তা আরও উজ্জ্বল হয় কালোর পাশে। আমি ধীরে ধীরে তার পছন্দকে নিজের পছন্দ করে নিলাম। আগন্তুক বললেন:
ঠিক বলেছেন। আমার ক্ষেত্রেও তাই। আমার স্ত্রীর কালো খুব অপছন্দ। তাই দেখেন আমার জুতোর রঙ খয়েরি। তার পছন্দকে আমি আমার পছন্দ বলে এখনও পুরোপুরি মেনে অভ্যস্ত হইনি। তবে তার অপছন্দকে আমি আমার অপছন্দ বলে মেনে নিয়েছি। এই যে স্ত্রীর মতামতকে সম্মান করা, এটি আমার নৈতিক দায়িত্ব। জানেন ভাই, এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে স্ত্রীর মতামতকে অগ্রাহ্য করে অনেক পুরুষ পৌরুষ দেখায়। কিন্তু আমি মনে করি স্ত্রীর মতামতকে সম্মান করলে এবং স্ত্রী যদি স্বামীর মতামতকে সম্মান করে তবে দাম্পত্য জীবন মধুর হয়।
আগন্তুকের একথা শুনে কেঁদে দিলেন শামসুল আলম সাহেব। বললেন:
– জীবনের শুরুতে যদি এভাবে ভাবতে পারতাম, তাহলে শায়লার মা আরও শান্তি পেত।
এবার আগন্তুক ক্রন্দরত শামসুল আলম সাহেবের মাথায় হাত রাখলেন। বললেন:
– ভাই সাহেব কাঁদবেন না। যান বাথরুমে গিয়ে চোখ মুখ ধুয়ে আসেন। আমি আছি। আপনি যান ভাই।
আগন্তুক প্রায় ঠেলে শামসুল আলম সাহেবকে বাথরুমে পাঠালেন।

বাথরুমে এসে শামসুল আলম সাহেব বেসিনের কল থেকে পানি নিয়ে ভাল করে মুখ ধুলেন। তারপর প্রস্রাব করে নিজের সিটের কাছে এসে দাঁড়ালেন। ঠিক সেই সময় নরসিংদী স্টেশনে ট্রেন এসে দাঁড়াল। শামসুল আলম লক্ষ করলেন আগন্তুক নেই। তিনি পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখ মুছলেন। তারপর দেখলেন তার ব্রিফকেসটিও নেই। তাঁর মনে হল, বোধহয় আগন্তুক তার স্ত্রী-সন্তানের কাছে গেছে। নিরাপত্তার কথা ভেবে ব্রিফকেসও সঙ্গে নিয়ে গেছে।

ভাইসাহেব আপনার সঙ্গে আমার অনেক মিল। যেমন আমি মনে করি শিক্ষকতা সবচেয়ে মহান পেশা। আপনিও। আমারও শক ছিল শিক্ষকতা পেশায় যাব। কিন্তু বাড়ির বড় ছেলে। বাবার মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। ছোট ভাইবোনদের লেখা পড়ার দায়িত্ব নিতে হয়েছে বলে ব্যবসায় ঢুকে পড়লাম। বিয়েও করেছি বেশ দেরিতে। তাই দেখেন না বাচ্চারা ছোট। আপনিও পিতার অবর্তমানে দায়িত্ব নিয়েছেন ছোট ভাইবোনদের। তবে পেশা পেয়েছেন মনের মতো। 

শামসুল আলম সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন আগন্তুক আসবে ভেবে। ঠিক এসময় ট্রেন ছেড়ে দিল। এবার তিনি হেঁটে সামনের পাঁচ বেঞ্চি পর, যেখানে আগন্তুকের স্ত্রী সন্তানরা বসে আছে সেখানে গেলেন। দেখলেন ওখানে আগন্তুক নেই। একজন কালো বোরখা পরা মহিলা ছোট দুই বাচ্চা নিয়ে বসে আছে। তিনি মহিলাকে বললেন:
– আপনার স্বামী কোথায়? আমার কালো ব্রিফকেসটা নিয়ে কোথায় গেলেন?
মহিলা আশ্চর্য হয়ে দেখল শামসুল আলম সাহেবকে। বলল:
– কী কন আপনে? আমার স্বামীতো আইজকা দুই বৎসর কুয়েতে। এহানে আইব কেমনে? 
শামসুল আলম সাহেব বললেন:
– আমার সঙ্গে ভৈরব থেকে গল্প করতে করতে আসল। বলল আপনারা তার পরিবার। বার দুই আমার সামনে দাঁড়িয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলল।
এবার মহিলা কালো বোরখা দিয়ে নিজেকে আরও ঢেকে ক্ষিপ্ত হয়ে বলল:
– খাচ্চর ব্যাডা। বুইরা হইছে তবু ইতরামি কমে না।
শামসুল আলম সাহেব বুঝতে পারলেন আগন্তুক তাঁর টাকা, কাপড়জামা-সহ ব্রিফকেস নিয়ে পালিয়েছে। তাই তিনি মন খারাপ করে ট্রেনের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। হঠাৎ দেখলেন দরজার পিছনে অন্ধকারে তাঁর ব্রিফকেস। তিনি দ্রুত ব্রিফকেসটি তুলে নিলেন। দেখলেন ব্রিফকেস খোলা। ওর ভিতরে শার্ট, প্যান্ট, পেস্ট, ব্রাশ, লুঙ্গি এবং টাকা কিছুই নেই। শুধু খালি কালো ব্রিফকেসটি আছে। শামসুল আলম সাহেব কালো ব্রিফকেসটি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন দরজার কাছে। ট্রেন চলছে দুরন্ত গতিতে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

শামসুল আলম সাহেব বারবার শুনতে পাচ্ছেন আগন্তুকের সেই কথা: স্ত্রীর মতামতকে সম্মান করা আমার নৈতিক দায়িত্ব

ড. রতন সিদ্দিকী স্বনামখ্যাত অধ্যাপক, নাট্যকার ও নাট্যগবেষক। তাঁর জন্ম ১৯৬৩ সালের ২২ অক্টোবর। পৈতৃক নিবাস নরসিংদীর সদর উপজেলার মুরাদনগর গ্রাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) ১৯৮৫ ও স্নাতকোত্তর ১৯৮৬। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন নাটক ও লোকসংস্কৃতি বিষয়ে। ড. রতন সিদ্দিকী নাট্যগবেষণা ও নাট্যরচনাসহ সাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য লাভ করেছেন অতীশ দীপঙ্কর পুরষ্কার-২০১৫, মাদার তেরেসা পুরষ্কার ২০১৬, হিউমেনিটোরিয়াল এওয়ার্ড-২০১৯। উল্লেখ্য, নাটকে সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নাট্যশিক্ষক ড. রতন সিদ্দিকীকে ২০১৯ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *