১
মায়াকাড়া চোখ তুলে
দ্যাখো রাত্রি ডাক দিল ক্লেশে
নিকোনো ত্বকের পাশে গা ঘেঁষে, আরও
গা ঘেঁষে ঘেঁষে,
থাকি।
গাছ থেকে পাতা পড়ে। শব্দ হয়।
এলোমেলো ম্যানগ্রোভ, বাদামি শালের বন —
শীতের কোলের কাছে রাত জেগে
কানায় কানায় — ওরা পূর্ণ হয়।
ভালো মন্দে পুণ্যে ও পাপে
ওরা চুমু খায়। ওরা,
যুবতী ও তাহার পুরুষ।
২
ভোর হতে আরও কিছু বাকি।
পা দুখানি গায়ের ওপরে তুলে দিয়ে
গানে গল্পে রাত যদি শেষ
আকণ্ঠ রোদন সন্তাপে,
ফেলে আসা ক্ষত — নিরুদ্দেশ
মিথ্যে নয়। আমিও ভেঙেছি রিশতা
বহুবার নানা অছিলায়
মনকেমনের হাওয়া — চড়ুইপাখির শবদেহে
দুটি কুচোফুল ঢেলে, চলো ওকে কবরে শোয়াই।
চলো,
যাবে?
৩
ঘরদোর গোছানো হয়নি ক’টা দিন।
নিত্য নামের এক মালি, ফুলবন ধরে ধরে
হেঁটে চলে গেলে
রাঢ় বাংলার ঘরে গান লেখা হয়।
তুমি গান? গানের হৃদয়?
কতদিন পরে এই সন্তাপে অঘ্রাণ সমাগত
ফুলকারি নীল খদ্দরে
পুরনো আদর ছিল, জেনে,
জেগে থাকি। চুপ করে গায়ে লেগে থাকি।
৪
ক্রমশ… ক্রমশ… লিখে
ছেড়ে দিচ্ছি দু’পাতা তিন পাতা।
মেঘ আসকারা দিচ্ছে। দোঁহে মিলি মহেন্দ্রর ছাতা।
মিল তো দেবো না জানি
অন্ত্যমিলে তুমিও অরাজি
দূরে দূরে ঘেঁষে থাকি
জলমাটিহাওয়াতারারাজি
রাজি তো সক্কলেই, শোনো,
ইদানিং চোখে জল এলে
পুরনো গানের খাতা উল্টেপাল্টে গাই আলো জ্বেলে
শ্বেতাভ শরীর দেখি,
আসলে নৈঃশব্দ্য ছুঁয়ে থাকা
আদরে মর্মরধ্বনি শষ্পমূলে ঘিরে ঘিরে রাখা
এসে হাত রেখে দ্যাখো, কপাল চুঁইয়ে আজ
রোদ নামছে হেমন্তের প্রেমে…
অবন্তিকা পাল। জন্ম ১৭ জুন ১৯৮৬, হাওড়া। কলকাতার স্থায়ী বাসিন্দা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে জে.বি.রায়. স্টেট আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ ও হসপিটাল থেকে আয়ুর্বেদ চিকিৎসাশাস্ত্রে স্নাতক। স্নাতকোত্তর স্তরে মনস্তত্ত্বের পাঠ দ্বিতীয় বর্ষে অসমাপ্ত থেকে গেছে। তবে লেখার পরিসরে সমাজবিজ্ঞান ও মানবাধিকার চর্চা অব্যাহত। কবিতার সঙ্গে নৈকট্য আশৈশব। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ২০১৩-তে। ২০১৭-এ প্রথম প্রবন্ধের বই। প্রথম সারির বাংলা দৈনিক, একাধিক জনপ্রিয় পত্রিকা ও ওয়েবম্যাগাজিনে তাঁর নিবন্ধ প্রকাশিত হয় নিয়মিতভাবে। সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের সময়ে কবি ফৈজ আহমেদ ফৈজ-এর সর্বজনবিদিত 'হম দেখেঙ্গে' (দেখে নেবো আমরাই) কবিতাটির বাংলা অনুবাদ করে অবন্তিকা জাতীয় স্তরের সংবাদমাধ্যমেও জায়গা করে নিয়েছেন।
প্রেমের চড়ুইভাতি।
অবন্তিকা এ যুগের কবিদের মধ্যে উল্লেখ করার মত। অধুনা ভুঁইফোঁড় সহস্রাধিক ‘কবি’ দের ভিড়ে মাথা তোলা তালগাছ। আমার খুব পছন্দের কবি অবন্তিকা।
খুব ভালো লাগল