ছল করে জল

আমি ছল করে জল আনতে গিয়ে
ডুববো যমুনায়
ডুববো আমি ডুববো আমি যাবোই তবু যাব যমুনায়

আমি ছল করে জল আনতে গিয়ে
ডুববো যমুনায়

বাজে বাঁশি নদীর ধারে–
দিনে রাতে অন্ধকারে
ভাষা কি তার বুঝতে পারি
অবিরাম ছুটেই মরি
ছুটেই মরি …

ছল করে জল আনতে গিয়ে
পা পিছলে পড়েই মরি
হরকা বানে নদীর ভেতর
ঘূর্ণি জলে ঘুরেই মরি …

আমি ছল করে জল আনতে গিয়ে
ছল করে জল
শুধু ছল করে জল
আনতে গিয়ে…

Heart
অপারেশনের আগে সকল মানুষেরই হৃদয়টা জেনে নেওয়া কতটা দরকার

ইসিজি

যদিও আকাশে মেঘ আর
এমন অসময়ে ইসিজি করতে আসা
জরুরি ভিত্তিতে।

কে না জানে অপারেশনের আগে সকল মানুষেরই হৃদয়টা জেনে নেওয়া কতটা দরকার।

পা দুটো কীরকম টান টান মেলে দিয়ে নির্বিকার শুয়ে আছেন আপনি, মিসেস সেন।

অস্থির দাঁড়িয়ে আছি আমি আপনার খাটের পাশে।
হাতে পায়ে আর বুকের নীচে ক্লিপ আর লোশন দিয়ে ভালভ লাগানো হয়েছে আপনার

আকাশে মেঘ আর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। আরও তিনটে ভালভ লাগাতে হবে
বুকের উপর হৃদয়ের সঠিক স্পন্দন বোঝবার জন্য।

মিসেস সেন, আপনার সত্ত্বর সক্রিয় সাহায্যের সহায়তা প্রয়োজন।

দেরি করবেন না প্লিজ।
এরপর নির্দিষ্ট সময়ে সুগার পিপি।

ভালভ হাতে দাড়িয়ে আছি
আপনার খাটের কিনারে
চাপা মেঘ ডাকছে আকাশে…

Clock Mechanic
ঘড়ির সমস্ত বিষয়ে জ্ঞান ছিল তার

কারিগর

ঘড়ির দোকান ছিল তার।
দেয়ালের তিনদিকে ঘড়ি
মাঝখানে বসে থাকত সে
দশটায় খুলত দোকান।
বন্ধ হত রাত্রি দশটায়।

ঘড়ির সমস্ত বিষয়ে জ্ঞান ছিল তার।
সময়ের সমস্ত বিষয়ে।

কাল মধ্যরাতে রাত্রির আহারের পর
কিছু বোঝবার আগেই
হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে গেল।

দোকানের তালা খুলল না পরদিন। কোনওদিন খুলবে না আর।
শুধু মালিকের ঘড়িগুলো হৃৎপিণ্ড শিরা ও ধমনী নিয়ে ঘরের ভেতরে
চলতে থাকল
চলতেই থাকল …

Dunlop Factory
আলো নিভে গেছে তার তিন দশক

ডানলপ কারখানা

ওপরে কালো অক্ষরে এখনো সুস্পষ্ট লেখা D U N L O P
নীচে ক্ষয়ে যাওয়া লাল দেওয়ালে
THE FIRST TYER FACTORY IN INDIA

ভারতের প্রথম টায়ার কারখানা হুগলির সাহাগঞ্জে ৯০ বছর আগে ।

আলো নিভে গেছে তার তিন দশক। সেদিন বসন্তে ছিল সুইমিং পুল
ছিল সিনেমা হল ছিল ঝকঝকে রাস্তাঘাট ছিল সাহেবদের টেনিস কোর্ট।

শিমুল পলাশে বসন্তে এসেছে আজও কোকিলের ডাকে বসন্ত এসেছে।
সেই বসন্তেই নিলাম হবে।

সাতাত্তর বছরের ফোরম্যান মন্টু দাস সত্তর বছরের টেকনিশিয়ান কালাচাঁদ বাষট্টি বছরের সুপারভাইজার রামেশ্বর সিং দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে কীভাবে নিলাম হয় তাঁদের যন্ত্রপাতি কলকব্জা জমিজমা ঘরবাড়ি সুইমিং পুল আর টেনিস কোর্ট।

সিটি সেন্টারের তিন তলার ফ্ল্যাটে বসে কীভাবে নিলামে স্বপ্ন বিক্রি হয় তা দেখবার জন্য নব্বই বছরের ডেপুটি ম্যানেজার চ্যাটার্জি সাহেবও বসে আছেন– তিন দশক আগেও যিনি দিন আর রাত্রি এক করেছিলেন এই কারখানায়
অপেক্ষা করছেন সেই সাহেবও…

 

*ছবি সৌজন্য: Pixels

দীপক রায় সত্তর দশকের কবি। তখন থেকেই নিজেকে ব্যক্ত করে চলেছেন নিরাভরণ কবিতার আঙ্গিকে। শুরুর দিনগুলোয় তাঁর পদ্য বাসা বাঁধতে চেয়েছিল রূপকথার ফুলভাসা জলের পুকুরপাড়ে। কিন্তু ক্রমাগত ভয় ও সন্তাপে শেষমেশ তাদের স্থান হয় কালো কুচ্ছিত নাগরিক ল্যাম্পপোস্টের তলায়। 'দৈনিক কবিতা' ও 'অণুমাত্রিক' নামে দুটি ছোট কাগজের সম্পাদনার কাজে নিযুক্ত রেখেছেন নিজেকে। কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও প্রকাশিত গদ্যের বইয়ের সংখ্যা চার। বাংলায় ছোট কবিতা চর্চার ইতিহাস রক্ষার কাজ তাঁর অন্যতম ব্রত।

One Response

  1. সাতের দশকের নিভৃতচারী কবি দীপক রায় এর কবিতা পেয়ে ভাল লাগলো।
    ডানলপ কারখানা ,খুব সাম্প্রতিক ও প্রতীকী বলে মনে হলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *