শংকর ঘোষকে আমি প্রথম দেখি আনন্দবাজার পত্রিকায় ট্রেনি জার্নালিস্ট-এর পদে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে। মনে আছে, ইন্টারভিউ বোর্ডে আমাকে ঘিরে সপ্তরথী বসে আছেন, আর তাঁদের সামনে আমি দুরুদুরু বুকে বেজায় নার্ভাস এক তরুণ। ওই রথীদেরই একজন ছিলেন শংকর ঘোষ। আমি তখন তাঁকে শুধু নামে চিনতাম তাঁর লেখা পড়ে, কিন্তু চোখে দেখিনি। ইন্টারভিউতে তিনি আমাকে একটি প্রশ্নও করেননি, শুধু দেখেছি, টেবিলের ওপাশে মোটা শেল ফ্রেমের চশমা পরা সম্ভ্রান্ত চেহারার এক ভদ্রলোক  আমার কথা মন দিয়ে শুনছেন। প্রাথমিক আড়ষ্টতা কাটিয়ে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়ে আমি যখন নানা প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তর দিতে শুরু করেছি আর প্রশ্নের বাইরে নিজের থেকেও কিছু বলছি, তখন অন্যদের মতো তিনিও ওই কথোপকথন বেশ উপভোগ করছিলেন বোঝা যাচ্ছিল। 

ইন্টারভিউ শেষে আমি সোজা হাজির হলাম আনন্দবাজারে আমার গত এক মাসের আস্তানা লাইব্রেরিতে। তখনকার লাইব্রেরিয়ান নকুল চট্টোপাধ্যায় আমাকে স্নেহ করতেন। মাসখানেক ধরে আমার পড়াশোনার ব্যাপারে তাঁর গাইডেন্স, নানা খবরের কাটিং দিয়ে সাহায্য করা আমার আনন্দবাজারে সাংবাদিকতার চাকরির পরীক্ষায় খুব কাজে দিয়েছিল। নকুলদাকে প্রশ্নোত্তর পর্বের কথা বলতে বলতে ইন্টারভিউ বোর্ডের সেই ভদ্রলোক লাইব্রেরিতে ঢুকলেন। আমাকে দেখে একটু হেসে বললেন, “কাজের ফাঁকে যখনই সময় পাবে, লাইব্রেরিতে আসবে। সাংবাদিকদের কিন্তু সব সময় পড়াশোনা করে যেতে হয়। তা হলে কোনও বিষয় বুঝতে আর লিখতে পারবে অনেক সহজে।”  

আমি অবাক হয়ে ভাবছি, সবে তো ইন্টারভিউ দিয়ে এলাম, এর মধ্যে আমাকে এমন কথা বলছেন! তা হলে কি আমার চাকরি হয়ে গিয়েছে! একটু পরেই নকুলদার ফোন বেজে উঠল। কথা শেষ করে হাসিমুখে নকুলদা বললেন, “গৌরকিশোর ঘোষের ফোন, ইউ হ্যাভ বিন সিলেক্টেড।” আমি আনন্দে লাফ দিয়ে উঠি আর কি! ততক্ষণে সৌম্যকান্তি সেই ভদ্রলোক একটু দূরে গিয়ে একটি টেবিলে বসেছেন বইপত্র, নোটপ্যাড কলম নিয়ে। আমার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি অনুসরণ করে নকুলদা বললেন, উনি শংকর ঘোষ।

Shankar Ghosh
শংকর ঘোষ

এবার বুঝতে পারলাম। ওঁর লেখার সঙ্গে তো পরিচয় ছিলই, চেহারাতেও তার সঙ্গে মানানসই একটা গাম্ভীর্য। অথচ কী স্নেহভরে আমাকে নিয়মিত পড়াশোনা করে যেতে বলার মাধ্যমেই জানিয়ে দিলেন আমার সাংবাদিক হওয়ার প্রাথমিক লক্ষ্য পূরণ হয়েছে! খুব কম কথা বলতেন বলে গম্ভীর মনে হত, কিন্তু মানুষটা ছিলেন স্নেহপ্রবণ। পরে জেনেছি আমার বাবা আর উনি সহকর্মী ছিলেন, সমবয়সী ছিলেন, দুজনেই ছিলেন কলকাতা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। অমিল বলতে শংকর ঘোষ সব সময় সাহেবি পোশাক পরতেন আর বাবা খাদির ধুতি পাঞ্জাবি। কিন্তু মনের মিল ছিল। বন্ধু-পুত্রের প্রতি স্নেহবশত প্রথম দিন আমাকে যে উপদেশ উনি দিয়েছিলেন বরাবর তা মেনে চলেছি। 

আরও পড়ুন- ‘ঘন ঘন চিঠি দিয়ো, সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো’: নরেন্দ্রনাথ মিত্রের স্ত্রীকে লেখা চিঠি

আনন্দবাজারে সদ্য যোগ দেওয়া শিক্ষানবিশ এই সাংবাদিকটির তখন শংকর ঘোষের কাছে কাজ শেখার কোনও সুযোগ ছিল না। বড়জোর করিডোরে বা লাইব্রেরিতে দেখা হলে একটু হেসে মাথা নাড়তেন।

খুব কম কথা বলতেন বলে গম্ভীর মনে হত, কিন্তু মানুষটা ছিলেন স্নেহপ্রবণ। পরে জেনেছি আমার বাবা আর উনি সহকর্মী ছিলেন, সমবয়সী ছিলেন, দুজনেই ছিলেন কলকাতা প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। অমিল বলতে শংকর ঘোষ সব সময় সাহেবি পোশাক পরতেন আর বাবা খাদির ধুতি পাঞ্জাবি। কিন্তু মনের মিল ছিল। বন্ধু-পুত্রের প্রতি স্নেহবশত প্রথম দিন আমাকে যে উপদেশ উনি দিয়েছিলেন বরাবর তা মেনে চলেছি। 

ওঁকে ভালো করে চেনার সুযোগ করে দিল একটি বই— ‘নিঃশঙ্ক: শংকর ঘোষ শতবার্ষিকী সংকলন’। গত বছর বইমেলায় ওঁর শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে কলকাতা প্রেসক্লাব প্রকাশিত এই বই আপসহীন একজন সাংবাদিকের প্রতি প্রেসক্লাবের শ্রদ্ধাঞ্জলি। জ্যাকেট সহ ডিমাই সাইজের হার্ড বাউন্ড ৪৭২ পাতার বইটির প্রথমার্ধে শংকর ঘোষের নিজের লেখা আছে তেত্রিশটি, আছে অসমাপ্ত আত্মজীবনী আর ওঁর একটি বড় লেখার একাংশের ইংরেজি অনুবাদ। পরের অধ্যায়ে শংকর ঘোষকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন ওঁর সাংবাদিক স্ত্রী আলপনা ঘোষ আর ওঁর ঘনিষ্ঠ বৃত্তে আসার সুযোগ পাওয়া ২৯ জন কনিষ্ঠ সাংবাদিক। ২১ জন লিখেছেন বাংলায়, ৮ জন ইংরেজিতে। সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন দুজন অভিজ্ঞ সাংবাদিক – স্নেহাশিস সুর ও শুভাশিস মৈত্র। 

Niswanka- Shankar Ghosh

ইংরেজি সাহিত্যের কৃতি ছাত্র শংকর ঘোষ তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন সাংবাদিকতার একেবারে প্রথম ধাপ প্রুফ রিডার হিসেবে অমৃতবাজার পত্রিকায়। তবে তিন মাস পরেই তিনি যোগ দেন হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড কাগজে। চেয়েছিলেন সাব এডিটার হতে, মনে করেছিলেন তা হলে ধাপে ধাপে সম্পাদক হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাঁকে রিপোর্টার হিসেবেই চান। পরবর্তীকালে শংকর ঘোষ বলেছেন, তাতে ভালোই হয়েছিল। ইতিহাসের বহু পালাবদল ও ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সাক্ষী হতে পেরেছিলেন। পরবর্তীকালে বিভিন্ন কাগজে সম্পাদকের গুরুদায়িত্ব পালন করলেও আজীবন তিনি নিজেকে রিপোর্টার ভাবতেই ভালোবাসতেন। 

ইংরেজি ও বাংলা, দুই ভাষাতেই সমান দক্ষতা ছিল তাঁর। দীর্ঘ ষাট বছরের কর্মজীবনে দেশি বিদেশি পত্রপত্রিকায় সহস্রাধিক প্রবন্ধ ও কলাম লিখেছেন তিনি। অতগুলোর ভেতর থেকে মাত্র কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ খুঁজে বের করা নিতান্ত সহজ কাজ নয়। সম্পাদকদ্বয় অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রায় অসাধ্য সাধন করেছেন। অবশ্যই প্রয়োজনীয় তথ্য ও লেখাপত্র যুগিয়ে সে কাজে প্রভূত সাহায্য করেছেন শংকর-জায়া আলপনা দেবী। এই বইয়ের জন্য বেছে নেওয়া লেখাগুলির মধ্যে ১৯৮৩ সালে যুগান্তর পত্রিকা থেকে শুরু করে ২০০৭-এ সংবাদ প্রতিদিনে প্রকাশিত প্রবন্ধের রচনাকাল চব্বিশ বছর। তার মাঝের লেখাগুলি বেরিয়েছে শনিবারের চিঠি, দেশ, সাপ্তাহিক বর্তমান, ওভারল্যান্ড ইত্যাদি পত্রিকায়। প্রতিটিই উত্তর-সম্পাদকীয় অথবা নিজস্ব কলাম। বিষয়-বৈচিত্র্যে সাংবাদিক হিসেবে শংকর ঘোষের গভীর জ্ঞান ও বিশ্লেষণী ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া যায় প্রতিটি ছত্রে

ইংরেজি ও বাংলা, দুই ভাষাতেই সমান দক্ষতা ছিল তাঁর। দীর্ঘ ষাট বছরের কর্মজীবনে দেশি বিদেশি পত্রপত্রিকায় সহস্রাধিক প্রবন্ধ ও কলাম লিখেছেন তিনি। অতগুলোর ভেতর থেকে মাত্র কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ খুঁজে বের করা নিতান্ত সহজ কাজ নয়। সম্পাদকদ্বয় অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রায় অসাধ্য সাধন করেছেন। অবশ্যই প্রয়োজনীয় তথ্য ও লেখাপত্র যুগিয়ে সে কাজে প্রভূত সাহায্য করেছেন শংকর-জায়া আলপনা দেবী।

নোয়াখালীর কুখ্যাত দাঙ্গার পর মহাত্মা গান্ধীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে সেখানে তাঁর যাত্রাপথের সঙ্গী হয়েছিলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর বহু বিদেশযাত্রার সফরসঙ্গী ছিলেন। সুভাষচন্দ্র বসুর নেতাজি হয়ে ওঠা, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি থেকে বল্লভভাই প্যাটেল, ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী থেকে অটল বিহারী বাজপেয়ী, বিধানচন্দ্র রায় থেকে অজয় মুখার্জি, জ্যোতি বসু থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নকশাল আন্দোলন ও চারু মজুমদার— ভারত ও পশ্চিমবঙ্গের হেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা কর্মকাণ্ড নেই যা নিয়ে তিনি বিশ্লেষণমূলক আলোচনা করেননি।

প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের রাজনৈতিক ঘটনাবলী, চিনের বিশ্বাসঘাতকতা, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান, দুই বিশ্বশক্তি রাশিয়া ও আমেরিকা ও তাদের সামরিক জোট এবং বান্দুং সম্মেলনে জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনের শুরু ও শেষ এবং আরও অনেককিছুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন শংকর ঘোষ। সবটাই এত নির্মোহভাবে, নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে যে, কোথাও সাংবাদিক শংকর ঘোষকে ছাপিয়ে ব্যক্তি শংকর ঘোষ উঁকি দেননি। মনে হয়নি উনি কাউকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন, কিংবা কারও পক্ষ নিয়ে কিছু বলছেন। সাবলীল ঝরঝরে কেজো ভাষা, পড়লে সংশ্লিষ্ট মানুষ ও ঘটনাগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কিন্তু বোঝা যায় ওগুলো সংবাদ, সাহিত্য নয়। শংকর ঘোষ বলতেন, সংবাদ হবে তথ্য ও বস্তুনিষ্ঠ। কী লিখছ, সেটাই বিচার্য, কীভাবে লিখছ তা নয়।

Sankar-Ghosh

পড়তে পড়তে ভাবছিলাম, এত বছর পরে শংকর ঘোষের লেখার সঙ্গে সম্যক পরিচয় হল, আরও আগে কেন পড়িনি! প্রতিটি সাংবাদিকের ওঁর রচনা পড়া অবশ্য কর্তব্য। বইয়ের অন্যতম সম্পাদক শুভাশিস মৈত্র যেমন লিখেছেন— ‘ভালো সাংবাদিক হতে চাইলে শংকর ঘোষের লেখা আমাদের পড়তে হবে।’ তবে আমার মতে, দু’মলাটের মধ্যে এ দেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী একটা বিশেষ সময়ের রাজনীতি, অর্থনীতি ও কূটনীতির হদিশ পেতে রেফারেন্স বই হিসেবে এটি শুধুমাত্র সাংবাদিকদের নয়, সকলেরই কাজে লাগবে।
সূচিপত্রে প্রতিটি রচনার পাশে সেটি কোন কাগজে কোন সালে বেরিয়েছে তা বলা রয়েছে। এই কালানুক্রমিক সূচি দেখে প্রেক্ষাপট বুঝতে পাঠকের সুবিধা হয়। 

বইটির নাম রাখা হয়েছে ‘নিঃশঙ্ক’। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তাঁর আপসহীন মনোভাব, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতের অমিল হওয়ায় বহু বার চাকরি ছেড়ে দেওয়া এই মানুষটির ‘শংকর’ নাম, আর সেই সঙ্গে তাঁর চরিত্রের বৈশিষ্ট্য মিলিয়ে এই বুদ্ধিদীপ্ত নামকরণ। ওঁর পুত্রবধূ ঊর্মি ভঞ্জের করা মলাটের ডিজাইন বইটির যথাযথ মর্যাদা দিয়েছে। 

শংকর ঘোষের পুত্র আনন্দরূপ ঘোষ দেশভাগ নিয়ে তাঁর বাবার লেখা বিশাল ঐতিহাসিক দলিল ‘হস্তান্তর’-এর একটি অংশ ইংরাজিতে অনুবাদ করে দিয়েছেন। যদিও সূচিপত্রে ভুল করে অনুবাদকের নাম লেখা হয়েছে ‘শংকর ঘোষ’। 

দুর্ভাগ্যবশত এমন আরও অজস্র ছোটখাটো ভুল বইটিতে রয়ে গিয়েছে। যেমন সূচিপত্রের শুরুতেই বোল্ড হরফে লেখা: ‘শংক ঘোষের নির্বাচিত রচনা’। ‘র’ বাদ ! তার পর আছে ‘অশঙ্কা’, রুবল, ‘একঘরে’ লিখতে গিয়ে ছাপা হয়েছে ‘একঘেয়ে’। ‘অমৃতবাজার’ হয়েছে ‘অমৃতবাজর’! সব ভুলের তালিকা দেওয়া ঠিক নয়। তাতে বইটির মর্যাদা লঘু হয়ে যায়।  প্রকাশকদের হয়তো ডেডলাইন বজায় রাখার তাড়ায় এইসব মুদ্রণ প্রমাদ ঘটেছে। কিন্তু পরবর্তী সংস্করণে আরও যত্ন নিয়ে ভুল সংশোধন করা দরকার। আজ যদি শংকর ঘোষ থাকতেন, ভুলগুলো দেখলেও স্বভাবসুলভ ভদ্রতার বশে বকাবকি করতেন না ঠিকই, কিন্তু ব্যথিত হতেন। 

সব মিলিয়ে এমন একটি মূল্যবান বিষয়ে বই প্রকাশের জন্য প্রেসক্লাবকে আর সেই সঙ্গে আলপনা ঘোষকে ধন্যবাদ।

 

 

ছবি সৌজন্য: লেখক, আলপনা ঘোষের ফেসবুক প্রোফাইল।

Dipankar Chakraborty

দুই পুরুষের সাংবাদিক দীপংকর চক্রবর্তীর চার দশকের পেশাগত জীবনের শুরু ও শেষ আনন্দবাজার পত্রিকায়। মাঝে এক দশক বেতার সাংবাদিকতা জার্মানিতে ডয়চে ভেলে, আর ওয়াশিংটন ডিসিতে ভয়েস অফ আমেরিকায়। প্রিন্ট মিডিয়া থেকে অবসর নিলেও মাল্টিমিডিয়ায় এখনও পুরোপুরি সক্রিয়। করেছেন বই সম্পাদনার কাজও। দেশে বিদেশে তাঁর অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারও বিচিত্র ও চিত্তাকর্ষক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *