নিমাইদা, মানে প্রখ্যাত আলোকচিত্রী নিমাই ঘোষ মহাশয়কে নামে চিনি প্রায় কৈশোর থেকেই। কিন্তু তাঁর সঙ্গে ভবিষ্যতে যে পরিচয় হবে এবং ক্রমশ সেই পরিচিতি আমাকে ওনার কাছে পৌঁছে দেবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি। যদিও ওনার ছোট ছেলে সাত্যকির সঙ্গে আমার পরিচয় ও বন্ধুত্ত্ব হয় নিমাইদার সঙ্গে পরিচয়ের অনেক আগে. সাত্যকি আমার গুরু বাবা আলী আকবর খান সাহেবের বেশ কিছু ছবি তুলেছিল।
নিমাইদার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। ‘৯৪ সালের শেষ দিকে উনি একদিন আমায় ফোন করে বললেন যে ওনার খুব ইচ্ছা যে উনি আমার গুরুর কিছু ছবি তুলতে চান বিশেষ করে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি। আমি তখন ওনাকে জানিয়েছিলাম যে বছরের শেষে উনি কলকাতায় আসবেন, তখন ওনার সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা করে দেব। আমার গুরু এক অদ্ভুত প্রকৃতির লোক ছিলেন। উনি একদম আত্মপ্রচার পছন্দ করতেন না। ফলে কেউ ওনার ছবি তুলুক সেটাও উনি চাইতেন না। ওনাকে বহু কষ্টে রাজি করিয়েছিলাম নিমাইদার ছবি তোলার অনুরোধ জানিয়ে।
নিমাইদা আমার গুরুর প্রথম ছবি তোলেন যখন আমার গুরু দক্ষিণ কলকাতার লেক রোডের একটি ফ্ল্যাটে উঠতেন আমেরিকা থেকে এসে। উনি যেদিন ওখানে ছবি তুলতে যান, সেদিন সকালে আমার গুরু সিটিং দিচ্ছিলেন নবাগত তরুণ ও প্রতিশ্রুতিবান ভাস্কর আনন্দকিশোরকে। ফলে নিমাইদা একটা অন্যরকম পরিস্থিতিতে আমার গুরুর এক অন্য মেজাজের ছবি ধরে রাখতে শুরু করলেন বিভিন্ন দিক থেকে। এই সিটিং ও ছবি তোলার মধ্যে আরেকটা ঘটনা ঘটল। গুরুর বহুদিনের পরিচিত এবং বন্ধুসম আরেক বিখ্যাত ভাস্কর শান্তিনিকেতনের শর্বরী রায়চৌধুরী এসে উপস্থিত হলেন। শর্বরীদাকে পেয়ে নিমাইদা তো যেন হাতে চাঁদ পেলেন। পরিস্থিতি হয়ে গেলো ওনার কাছে যেন সোনায় সোহাগা। ওনার সামনে এসে দাঁড়ালো তিনটে বিষয় : আলী আকবর খান স্বয়ং, তার সঙ্গে শর্বরী রায় চৌধুরী আর মূর্তি তৈরী রত আনন্দ কিশোর। গুরু শর্বরী দা কে পেয়ে খুব খুশি হয়েছিলেন এক টানা চেয়ারে বসে থেকে আনন্দ কিশোরকে সিটিং দেওয়া ওনাকে একটু বিরক্ত করে তুলেছিল। যদিও বেচারা আনন্দ কিশোর খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিলো শর্বরী দা কে দেখে। শর্বরী দা সেটা বুঝতে পেরে আনন্দকিশোরকে বরং কয়েকটা উপদেশ দিয়ে কাজটা ভালো ভাবে যাতে ও চালিয়ে যায় তার অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। ওই পরিবেশ ওই তিনজনের দেহ ও বিশেষ করে মুখের ভাষা গিয়েছিল পাল্টে , রূপ নিয়েছিল বিভিন্ন মেজাজের আর সেটাকে কাজে লাগিয়ে নিমাইদা তুলেছিলেন অসাধারণ কিছু ছবি। সেই ছবির কয়েকটা কপি উনি আমায় দিয়েছিলেন বিনা মূল্যে আমার প্রথম বই, আমার গুরুর আত্মজীবনী “আপনাদের সেবায়”-এ ব্যবহার করার জন্য। যাঁদের কাছে ওই বইটি আছে তাতে ওনারা ওই ছবিগুলো দেখে থাকবেন।
এরপর নিমাইদা ছবি তুলতে আসেন আমার গুরুর রানীকুঠির বাড়িতে। তবে সেদিন ওনার একটু অঘটন ঘটে গিয়েছিল। সেদিন উনি দুটি ক্যামেরা নিয়ে এসেছিলেন। একটি পুরোনো আরেকটি একদম নতুন। পুরনো ক্যামেরায় কিছু ছবি তোলার পর ক্যামেরাটি গড়বড় করতে শুরু করে, তখন উনি সদ্য কেনা ক্যামেরায় ছবি তুলতে গিয়ে দেখলেন যে কোনও ভাবে ক্যামেরাটি আটকে গেছে এবং বহু চেষ্টা স্বত্তেও সেটা কাজ করল না। এদিকে বাড়ি গিয়ে যে অন্য ক্যামেরা নিয়ে আসবেন সে সময়ও ছিল না কারণ ততক্ষণে বেশ বেলা হয়ে গেছে। তাই মনক্ষুন্ন হয়ে বাড়ি ফিরে যান। তবে একটাই সান্ত্বনা যে পুরনো ক্যামেরায় যেসব ছবি তুলেছিলেন সেগুলো সবদিক থেকে অনবদ্য হয়েছিল। পরে আমায় দুঃখ করে বলেছিলেন “আপনার সঙ্গে যদি আরও কিছু বছর আগে যোগাযোগ করতে পারতাম, তাহলে খাঁ সাহেবের এত ছবি আমি তুলতে পারতাম যে ওনার ওপর একটা গোটা বই হয়ে যেত। সবই আমার কপাল।” সেই অর্থে ওনার কপালটা খারাপই ছিল। কারণ তার পর উনি আর গুরুর ছবি তোলার সুযোগ পাননি।

এই ঘটনার পর থেকে আমার শুরু হল ওনার বাড়িতে যাতায়াত আর ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা, যেটা ওনার জীবনের শেষদিন অবধি আমার ছিল। আরেকটা জিনিসও উনি আমার সঙ্গে শেষ অবধি বজায় রেখেছিলেন, সেটা হল আমাকে ‘আপনি’ করে সম্বোধন করা। আমি ওনাকে বহুবার অনুরোধ করেছি যাতে উনি ‘আপনি’ করে সম্বোধন না করেন। কিন্তু উনি সে অনুরোধ রাখেন নি। তবে উনি প্রায় সবাইকে আপনি করে সম্বোধন করতেন। যেমন করতেন আমার গুরুর বোন অন্নপূর্ণা দেবী। নিমাইদার খুব ইচ্ছে ছিল যে মুম্বাই গিয়ে অন্নপূর্ণা দেবীর ছবি তোলেন। এ বিষয়ে উনি আমার সাহায্যও চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি ওনাকে বুঝিয়ে জানিয়েছিলাম যে ওই আশাটা যেন উনি পরিত্যাগ করেন। অন্নপূর্ণা দেবী কাউকে বাড়িতেই ঢুকতে দেন না ছবি তোলা তো দূরের ব্যাপার। নিমাইদা সত্যজিৎ বাবুর ৯০,০০০ ছবি তো তুলেছেন সেই সঙ্গে নাটক, নাচ, বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, কলকাতা ইত্যাদি বহু বিষয়ের ওপর ছবি তুলে একটা বিশাল সময়ের দলিল রেখে গেছেন। ওনার আরেকটা বড় কাজ ভারতবর্ষের বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের তাঁদের ষ্টুডিওতে কর্মরত অবস্থার ছবি তোলা। এই কাজের ওপর উনি এক অসাধারণ বই প্রকাশ করে গেছেন। চিত্রশিল্পীদের ছবি তোলার কাজটা শেষ হবার পরই উনি আমায় যোগাযোগ করেন আর বলেন যে “আপনার সাহায্যে আমি বর্তমান যে সব বিখ্যাত শাস্ত্রীয় সংগীত শিল্পীরা আছেন তাঁদের রেওয়াজ বা শেখানোর সময়ের ছবি তুলতে চাই।” বিষয়টা আমায় খুব উৎসাহিত তো করেই, সেই সঙ্গে নিমাইদার সঙ্গে একটা কাজ করতে পারব, সেটাও আমাকে উত্তেজিত করে তোলে।
আমরা কাজটা শুরু করেছিলাম আমার গুরু পুত্র আশীষ খান এবং পন্ডিত উল্লাস কাশালকারকে দিয়ে। তবে কেন জানি না কাজটা উনি আর এগিয়ে নিয়ে যান নি। উনি আমাকে খুবই স্নেহ করতেন ও ভালোবাসতেন। আমি কোনও কিছু চাওয়ার আগে উনি কেমন করে যেন বুঝে যেতেন আর সেটা দিয়ে দিতেন আর দিয়েওছেন। ছবি, বই, ক্যালেন্ডার, পোষ্টার এবং কিছু ফিল্ম। ফিল্মগুলোর মধ্যে ওনার ওপর করা তথ্যচিত্র ছাড়াও দুটো ফিল্ম দিয়েছিলেন, সে দুটি খুব মূল্যবান। একটি হল অঁরি কার্তিয়ে ব্রেসঁর ওপর আর দ্বিতীয়টা বিখ্যাত ইতালীয় চলচিত্র পরিচালক মাইকেল এঞ্জেলো আন্তোনিওনির ছবি আঁকার ওপর একটি ফিল্ম। যখন এই ফিল্মগুলো উনি দিয়েছিলেন সেই সময় ওনাদের সঙ্গে কীভাবে কোথায় কখন দেখা হয়েছিল এবং কী কথাবার্তা হয়েছিল তাও খুব বিশদে বলেছিলেন। আমি যখন ওনার কাছে যেতাম তখন অন্য কেউ সেখানে বসে থাকলে বা এলে আমাকে তাঁদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেন ওনার বন্ধু এবং প্রখ্যাত সরোদবাদক বলে। আমাকে যা যা উনি দিয়েছেন, তা সবই মূল্যবান। বেশিরভাগ সময় আমি সেগুলো নিতে চাইতাম না। তখন উনি বলতেন, “আরে আপনি আমার জন্যে যা করেছেন সে তুলনায় আমি তো আপনাকে কিছুই দিতে পারলাম না।” আসলে আমি ওনাকে তিনজন সেক্রেটারি জোগাড় করে দিয়েছিলাম আর আমার বিশেষ বন্ধু অস্থি বিশারদ ডঃ কৌশিক ঘোষকে ওনার কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। কৌশিক একাধারে ডাক্তার, অভিনেতা ও চিত্রশিল্পী। কৌশিক পরবর্তীকালে ওনার, ও ওনার স্ত্রীর চিকিৎসাও করেছিল। এইসবের জন্য উনি নাকি আমার কাছে কৃতজ্ঞ ও ঋণী ছিলেন।
আমার এক বান্ধবী রেনেসাঁ-র খুব ইচ্ছে ছিল যে নিমাইদা যদি ওর ছবি তুলে দেন। আমি ওনাকে বলেছিলাম যে আমি নিমাইদাকে এ কথা বলতে পারব না। বরং আমি আপনাকে ওনার কাছে নিয়ে যাব আর আপনি নিজেকে ওনার কাছে অনুরোধ রাখবেন। নিয়েও গিয়েছিলাম। রেনেসাঁ কিছু বলার আগেই নিমাইদা নিজেই বলেছিলেন আপনার ছবি তুলে দেব আপনার বাড়ি গিয়ে। খালি দেখবেন যেখানে ছবি তুলব সেখানে যেন স্বাভাবিক আলো থাকে। নিমাইদা বিনা পারিশ্রমিকে সেসব ছবি তো তুলে দিয়েছিলেন এবং বেশ কিছু ছবি প্রিন্টও করে দিয়েছিলেন। প্রথমে টাকা নিতে অস্বীকার করেন, পরে রেনেসাঁর অনুরোধে প্রিন্টের জন্য কিছু টাকা নেন।
নিমাইদা রোজ সকালে ভিকটোরিয়াতে বেড়াতে যেতেন আর বিকেলে যেতেন হরিশ মুখার্জি রোডে বলবন্ত সিং এর ধাবায় চা খেতে আর আড্ডা দিতে। বলবন্ত সিং ওনাকে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরের সাদা কালো ছবি তোলার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। সে সব ছবি আমাকে দেখিয়েওছিলেন। আমরা সাধারণ ভাবে স্বর্ণমন্দিরের রঙিন ছবি দেখে অভ্যস্ত কিন্তু সাদা কালোতেও যে স্বর্ণমন্দিরের স্বর্ণের রং বোঝা যায় তা নিমাইদার তোলা ছবি না দেখলে বোঝা সম্ভব নয়।
মনের জোর ছিল অসম্ভব। শিরদাঁড়া অস্ত্রোপচারের পর দক্ষিণ কলকাতার লেকের ক্লাব আই এল এস এস-এ সাঁতার কাটতে শুরু করেন যাতে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে পুরোদমে ছবি তুলতে পারেন। গত নভেম্বর মাসে পড়ে গিয়ে চোট পান এবং আবার অস্ত্রোপচারের পর হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। কিন্তু মনের ওপর তার প্রভাব একটুও পড়েনি। শেষ যেদিন দেখা করতে গিয়েছিলাম, নানা কথার ফাঁকে বলেছিলেন “এবার সেরে উঠে স্বর্ণমন্দিরের আরও কিছু ছবি তুলতে যাব, আপনাকেও সঙ্গে নিয়ে যাব।” সেদিনই সকালে বহু প্রতীক্ষিত ওনার তোলা সত্যজিৎ রায়ের রঙিন ছবির বইটি হাতে পেয়েছেন। সন্ধ্যেবেলা ফোন করে ডেকে পাঠিয়েছিলেন বইটা দেখাবার জন্য আর স্বভাব সুলভ ভাবে বলেছিলেন, “মাত্র একটা বই পাঠিয়েছে, আর কয়েকটা পাঠালে আপনাকে একটা দেব।” শুনে তো আমি অভিভূত। সবে জেনেছি বইটির মূল্য ১০,০০০ টাকা। ও, আরেকটি কথাও জানিয়েছিলেন, “আমি ছাড়া আপনিই প্রথম বইটা দেখলেন, আমার বাড়ির লোকও এখনও দেখেনি।” আমার চোখে জল এসে গিয়েছিল। বইটির প্রচ্ছদের ছবি তুলে ওনার ছেলে সাত্যকির ওয়াটস্যাপে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।
যেদিন নিজে থেকে যেতাম, সেদিন ফোন করেই যেতাম। গেলেই কী খাবেন, কী খাবেন করে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তেন। আমি চা খাইনা, তাই ওনাকে একাই চা খেতে হত আমার সামনে আর আমার মধুমেহ আছে জেনে মিষ্টি ছাড়া সন্দেশ ও বিস্কুট এনে রাখতেন। একদিন ওনার বাড়ির কাছাকাছি ছিলাম। গিয়ে দেখলাম ফিজিওথেরাপি চলছে। তাই শুধু নমস্কার করে চলে এসেছিলাম। রাগ করে বলেছিলেন, “কতবার বলেছি ফোন না করে আসবেন না।” ওনার কথায় একটু খারাপ লেগেছিল। উনি বোধহয় সেটা আমার মুখ দেখে বুঝেছিলেন। রাতে ফোন করে ক্ষমা চেয়ে আমায় লজ্জায় ফেলে দিয়েছিলেন। আমার দেওয়া মিষ্টি খেয়ে ভালো লেগেছে সেটাও জানিয়ে দিলেন। আসলে ওনার রাগের কারণটা আমি পরে বুঝতে পেরেছিলাম। সেটা হল এক ওনার সঙ্গে আড্ডা দিতে পারিনি আর দুই পুজোর পর গিয়েছিলাম কিন্তু উনি কিছু খাওয়াতে পারেন নি তাই।
ওনার কাছে সত্যজিৎ বাবুর কথা তো শুনেইছি, তার সঙ্গে শুনেছি অন্যান্য অনেক বিখ্যাত লোকেদের গল্পও। আমার মতন আনাড়িকেও ছবি দেখিয়ে বুঝিয়ে দিতেন Composition, Light, Angle কাকে বলে। মোবাইল ফোনে ওনার ছবি তুলতাম যেদিনই যেতাম। উনি দেখে বলতেন, “আপনি তো বেশ ভালোই ছবি তোলেন।” তারপর বুঝিয়ে দিতেন, কীভাবে তুললে ছবিটা আরও গ্রহণযোগ্য হবে। ক্যানন-এর একটা ডিজিটাল ক্যামেরা কেনার পর গিয়েছিলাম ওনার ছবি তুলতে। তুলেওছিলাম। উনি প্রেরণা দিয়েছিলেন। ওনাকে অনুরোধ করেছিলাম আমার ক্য়ামেরায় একটা ছবি তুলে দিতে। উনি সবিনয়ে অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, “আমি অ্যানালগ ক্যামেরার মানুষ আর ওতেই আমার বিশ্বাস। আপনাকে আমি পরে ভালো ছবি তুলে দেব। কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠল না। আইসিসিআর-এ একটা প্রদর্শনী দেখার পর ওনার কাছে সত্যজিৎ বাবুর একটা ছবির কথা বলেছিলাম। এও বলেছিলাম যে ছবিটা আমার খুব পছন্দ। উনি এটা শোনার পর কম্পিউটার খুলে সত্যজিৎ বাবুর সংখ্যাতীত ছবি দেখিয়ে বললেন, “কোন ছবিটা পছন্দ আমায় দেখান।”
প্রদর্শনীতে যে ছবিটা দেখে পছন্দ হয়েছিল সেটা কোন কারণে Computer-এ দেখানো ছবিগুলোর মধ্যে ছিল না। তবে কাছাকাছি একটা ছবি পছন্দ করে ওনাকে বলেছিলাম। উনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “কোন size-এর ছবি হলে আপনার চলবে ?” আমি বলেছিলাম, বাড়ির দেওয়ালে কোথায় এটা মানাবে, সেটা দেখে আপনাকে জানাব। এও অনুরোধ করেছিলাম যে আপনাকে আমার নতুন ফ্ল্যাট-এ নিয়ে যাব আর আপনি নিজেই দেখে বিচার করে কোন সাইজের ছবি মানাবে বুঝে সেটা প্রিন্ট করে দেবেন। কিন্তু উনি পড়ে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ায় সেটাও আর হল না। যাইহোক তাতে আমার কোনো খেদ নেই, কারণ উনি আমাকে যে স্নেহ, ভালোবাসা ও অন্য আর যা কিছু দিয়ে গেছেন, তাই আমার সারা জীবনের পাথেয় হয়ে থাকবে।
পারিবারিক সূত্রে জেনেছিলাম ১৮ই মার্চ একটা বড় সাক্ষাৎকার হবার কথা ছিল ওনার, কিন্তু কোনও কারণে সেটি বাতিল হয়ে যায়। মনে দুঃখ পেয়েছিলেন। হয়তো আরও অনেক কিছু বলার ছিল বলে। এরপরই উনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন আর এক সপ্তাহের মধ্যে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। চলে গেলেন এমন চরম এক বিপদের সময় যে আমরা কোনও সুযোগই পেলাম না আমাদের শেষ শ্রদ্ধাটুকু জানাতে। যাইহোক উনি থেকে যাবেন আমাদের কাছে ওনার কাজ আর মানুষ হিসাবে। এই লেখার মাধ্যমে ওনাকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম জানালাম।
সরোদবাদক পণ্ডিত অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার তথা ভারতের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জগতে পরিচিত নাম। সঙ্গীতচর্চার পাশাপাশি চলে পড়াশোনা ও লেখালেখি। 'আপনাদের সেবায়', 'প্রসঙ্গ ঠুমরি', 'সুরের গুরু' ওঁর কিছু জনপ্রিয় বই। সরোদচর্চার পাশাপাশি নিয়মিত অভিনয় করেন বাংলা ছবিতে।
দারুন অনিন্দ্য। এতো গুনীজনের সান্নিধ্য আর ভালবাসা পেয়েছো, তাঁরা তাঁরা তোমাকে আপন করে নিয়েছেন, সেটাই তোমার যোগ্যতা।
আমি জানি এরকম হাজারো অভিজ্ঞতার সাক্ষী তুমি।
আরও লেখার অপেক্ষায় রইলাম।
খুব ভালো লাগলো প্রখ্যাত আলোকচিত্রী নিমাই ঘোষ-কে নিয়ে আপনার লেখা পড়ে l আপনি যে ওনার সান্নিধ্যে থেকে এমন এক প্রতিভাবান মানুষের এতো স্নেহ, ভালোবাসা পেয়েছেন তার কিছুটা আভাস পেলাম l খুব আনন্দ লাগছে জানতে পেরে l সকালে লেকে হাঁটতে গিয়ে একদিন আপনিই আমাকে জানিয়েছিলেন যে এক সন্ধ্যায় ‘আই এল এস এস’-এ ওনাকে নিয়ে কিছু আলোচনা ও একটা ফিল্ম দেখানো হবে l আপনার আমণ্ত্রণেই সেখানে যাওয়া আর এই মহান আলোকচিত্রীকে চাক্ষুষ দেখতে পাওয়া, ও তাঁর নিজের কথা শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল l ধন্যবাদ জানাই আপনাকে l
অনবদ্য লেখা , এমন গুণী মানুষদের অন্তরঙ্গ সময়ের এই বিবরণী অমূল্য সম্পদ হয়ে থেকে যাবে।
পারিস এর করোনা ভাইরাস জনিত অবরুদ্ধ নগরীতে রোববারের অলস ভোরে বিছানা ডলতে ডলতে তোমার অসাধারণ স্মৃতি বিজড়িত লেখনী মুগ্ধ করলো। ধন্য তোমার জীবন । এই ছোট্ট জীবনে কত মধুর স্মৃতি তোমার।
পারিস এর করোনা ভাইরাস জনিত অবরুদ্ধ নগরীতে রোববারের অলস ভোরে
ডলতে ডলতে তোমার অসাধারণ স্মৃতি বিজড়িত লেখনী মুগ্ধ করলো। ধন্য তোমার জীবন । এই ছোট্ট জীবনে কত মধুর স্মৃতি তোমার।
লেখা অসাধারণ হয়েছে। পড়ে খুবই আনন্দ পেলাম। জানলাম ও অনেক । ধন্যবাদ