সময়ের সঙ্গে কথাবার্তা বলার অনেক রেওয়াজ আছে। নানারকম ভঙ্গি থেকেই সময়কে ডেকে নেওয়া যায়। চ্যাপলিন যেভাবে মার্কিনি ভবঘুরেদের দেখেন, সে ভাবে হিচকক উঁকি মারেন না। সত্তর দশকের শুরুতে, একদা অঘ্রাণ মাসের মিহি কুয়াশায় ‘গ্লোব’ ছায়াঘর থেকে বেরিয়ে মনে হয়েছিল, মৃণাল সেনের প্রাণপণ সাধনা এই ‘অদ্য’ নিম্নরেখ করার। এখানেই তিনি বাংলা ছায়াছবির ইতিহাসে অনন্য ও সহজীবীদের থেকে আলাদা রাস্তার পথিক। মৃণাল সেনের অন্যতম পথ প্রদর্শক, ইতালীয় নববাস্তববাদের দ্রোণাচার্য, সেজারে জাবাত্তিনি যেমন তাঁর ইস্তেহারে বঙ্কিম হরফে তিনবার লেখেন ‘টুডে, টুডে, টুডে’, মৃণাল এই ঘিঞ্জি অস্বাস্থ্যকর শহরের নিম্নমধ্যবিত্ত ভাড়াটে বাড়ির থেকেই তেমন সাক্ষাৎকারে ‘আজকের দিন’ বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার মাস খানেক আগে ‘প্রতিদ্বন্দী’র মুক্তি উপলক্ষে সত্যজিৎ রায়কে ‘বিজলী’র চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলাম। তাঁর হৃদয়েও শতাব্দীর আলোকিত পট মলিন হয়ে এসেছে। তবু সিদ্ধার্থের কাছে অন্তত ইন্টারভিউ বোর্ড জানতে চেয়েছিল গত দশকে ‘’হোয়াট ইজ দি মোস্ট সিগনিফিক্যান্ট ইভেন্ট!” ‘ইন্টারভিউ’তে প্রশ্নকর্তার অত ধৈর্য নেই। তিনি আজ কী ঘটল জানতে চান। সাহিত্য নিয়ে এটুকু মাত্র কৌতুহল – ‘’বিবর পড়েছেন বাই সমরেশ বোস?’’
মৃণাল এই রকমই। বড় ইতিহাসযানের বদলে তাঁর কাছে জরুরি হয়ে উঠেছে এই অপসৃয়মান আজকের তারিখটি সংরক্ষিত করার বাসনা। তিনি এই ভাঙাচোরা শহরের মধ্যবিত্ত হিসেবেই নিজের নথিপত্র জমা দিয়ে এলেন জীবনের অতিথিশালায়। ‘নীল আকাশের নীচে’ থেকে ‘আমার ভুবন’ পুরোটাই শহুরে মধ্যবিত্তের অশ্রু ও উল্লাসের ইতিকথা – পটভূমি শহর, গ্রাম বা মফসসল, যাই হোক না কেন। যখন তিনি সিন্ধু রূপসীর গান শোনান ‘ভুবন সোম’-এ বা যখন আকালের সন্ধানে তিনি ব্যস্ত থাকেন অথবা দাক্ষিণাত্যের উপজাতীয়দের প্রান্তিকতা চিনিয়ে দিতে চান, তখনও তিনি আদ্যন্ত কলকাতাবাসীর মেধা ও হৃদয় সম্বল করেই দর্শকের সঙ্গে আলাপ সেরে নেন।

আজ কলকাতার সংস্কৃতির যে হতশ্রী চেহারা দেখি, তাতে ভাবলেও অবাক লাগে যে আমাদের কেউ বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে সত্যিই পুরস্কৃত হতে পারেন। সত্যি সত্যিই পৃথিবীর সমস্ত মনে রাখার মতো চলচ্চিত্ররথী তাঁর নাম জানেন। বাংলা ছায়াছবির এ রকম গর্বের মুহূর্ত আর পঞ্চাশ বছর আগেও ছিল যখন একই শহরে ঋত্বিক, সত্যজিৎ ও মৃণাল খুব মগ্নভাবে নিজেদের কাজ করে যেতেন আর পেজ-থ্রির সাহায্য ছাড়াই আমরা ভাবতাম তাঁদের সেরা ছবি করা আমাদের বার্ষিক পরীক্ষার মতো। এখন বাঙালিকে বাঙালি হিসেবে পরিচয়পত্র দাখিল করতে হয়। আর তার ভাষা এতই মোটা দাগের, যে বোঝাই যায় না চলচ্চিত্র শেষ পর্যন্ত স্নায়ুর কারুকাজ। অথচ আমাদের সিনেমা সমালোচনা মৃণাল সেনকে নিয়ে খানিকটা অনিশ্চয়তায় জড়িয়ে পড়ে আজও।
সত্যজিৎ রায়ের বাস্তববাদী শৈলী নিয়ে, তাঁর আলোকপ্রাপ্তি বিষয়ে এতদিনে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের মনে একটা পোক্ত ধারণা গড়ে উঠেছে। ঋত্বিকের দৈবাদিষ্ট বিশৃঙ্খলাকেও তারা প্রতিভার স্বাভাবিক নৈরাজ্য ও অনিয়ম ভাবে। কিন্তু মৃণাল সেনকে ক্ষমতাবান পরিচালকের বাইরে, বাঙালির সাংস্কৃতিক মনন, কী আসন পেতে দিতে চায় জানতে আমাদের আরও কিছুকাল অপেক্ষা করতে হবে। তাঁর শীর্ষবিন্দু ‘ভুবন সোম’ (১৯৬৯) ছবিতে সৌরাষ্ট্রের বালিয়াড়িকে কে কে মহাজনের ক্যামেরা যেভাবে প্রণয় নিবেদন করে তা অনেকটাই ‘পথের পাঁচালী’র সুব্রত মিত্র-কৃত নিসর্গ চিত্রের প্রতিস্বর। আর ছবির শেষে রাগ হংসধ্বনি – লাগি লগন সখি পতিসন— যখন মুখরিত হয়, বুঝতে পারি, আযৌবন সুহৃদ ঋত্বিক ঘটক ও তাঁর ‘মেঘে ঢাকা তারা’র সঙ্গে মৃণাল সেন সেরে নিতে চাইছেন অকথিত কিন্তু জরুরি সংলাপ। একটু সহিষ্ণু হয়ে অপেক্ষা করলে দেখতে পাই ভুবন সোম শহুরে বাঙালি মধ্যবিত্ত। এই মধ্যবিত্তকে প্রেমে-রাগে-ঘৃণায় তন্ন তন্ন করে পরীক্ষা করাকেই তিনি নিয়তি বলে মেনে নিয়েছেন। তাঁর প্রতিবাদ, প্রতিরোধ সবই মধ্যবিত্তের। এভাবেই একদিন মৃণাল সেন দেখেন বার্লিন দেওয়াল ধসে পড়ছে মধ্যবিত্তের শয়নকক্ষে। যৌবনের বামপন্থা তাঁকে একটা পৃথিবী ছেড়ে আসতে পরামর্শ দেয়। আর একটা তাঁর চোখের সামনে বিপর্যস্ত হল। এখন তো ‘তৃতীয় ভুবন’-তাঁর বিকেলের স্বগতোক্তি। এই মৈত্রী, এই মনান্তর আমাদের সঙ্গে, বয়সের সঙ্গে। যদি সংহত করি নিজেকে, মৃণাল সেন সম্ভবত মধ্যবিত্ত বাঙালিয়ানার সিলমোহর। হয়তো ‘নীল আকাশের নীচে’ (১৯৫৯) থেকেই তিনি নথিভুক্ত করে এসেছেন কীভাবে বাঙালি মধ্যবিত্ত যুগের অদৃশ্য আয়নায় নিজেকে প্রসাধিত করে। মৃণাল সেনের উপার্জন বলতে এই মধ্যবিত্তের সাফল্য ও নিষ্ফলতা।

যাকে শক্তি চট্টোপাধ্যায় বলেন অলৌকিক পশ্চাদভ্রমণ – এরকম ভাবে, আমি মৃণালদাকে হঠাৎ দেখতে পাই রাসবিহারীর মোড় থেকে ‘ফ্রন্ট্রিয়ার’ কিনে লাফ দিয়ে দোতলা টুবি বাসে উঠছেন। ‘কলকাতা ৭১’- এর ম্যাটিনি শো শেষে মেট্রোর দোতলা থেকে নামার সিঁড়িতে মৃণাল সেনকে ঘিরে ধরছে আবেগে থর থর যুবাদল। ‘ইন্টারভিউ’ (১৯৭০) থেকে ‘কোরাস’ (১৯৭৪)– যখনই রাস্তায় হাঁটতাম, মনে হত অদৃশ্য সহযাত্রী মৃণাল সেন। অত্যাশ্চর্যভাবে তিনি হয়ে উঠেছিলেন আমাদের যৌবনের সঙ্গী ও অভিভাবক। কখনও যাদবপুরের ক্যান্টিনে বার্লিনের পাল্টা ফোরামের দায়িত্বে থাকা উলরিশ গ্রেগরকে পাশে রেখে টুলে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করছেন। আবার গান্ধী ভবনে আমাদের ষোল মিলিমিটার প্রজেক্টরে ফিলমের ফিতে আলগা হয়ে গেলে দৌড়ে এসে পাশে দাঁড়াচ্ছেন। ভাঁড়ের চা, থমকে ট্রাফিক, আমাদের কাঁধে হাত রেখে ‘ইম্পারফেক্ট সিনেমা’র পক্ষে সওয়াল করতে করতে সিটি কলেজের সামনের রাস্তা পার হচ্ছেন মৃণাল সেন, আর এই তিনিই একটা ছোট্ট বেবি হারমিস টাইপ রাইটারে এক আঙুলে টাইপ করতে করতে একই সঙ্গে কথা বলে চলেছেন কে কে মহাজন আর অখ্যাত মফস্বলি তরুণ কবির সঙ্গে তাঁর মতিলাল নেহরু রোডের দোতলার আস্তানায়। দেশপ্রিয় পার্কের উল্টোদিকে ছোট্ট এই বাড়িটা ছিল আমাদের সিনেমার শান্তিনিকেতন। তখন তো ‘জাল’ ছিল না, গোদার কী করছেন বা ভেনিসে এবার কী হল – এ সব মৃণালদা আমাদের হদিশ দিতেন। সত্তর দশকে বামপন্থী যুবকদের মিলন সমিতি গড়ে তুলেছিলেন তিনি কলকাতার রাস্তাঘাটে। একবার ‘ইন্দিরা’তে ‘কোরাস’-এর একেবারেই খারাপ হাল। চলছে না। তিনি আমাদের হাতে দু’শো টাকা দিলেন। আমরা সেই টাকায় একটাকা চল্লিশের টিকিট কিনে বন্ধুদের মধ্যে বিলি করলাম যাতে সেই দিনই ‘কোরাস’ উঠে না যায়। তিনি সর্বজনীন মৃণালদা – বাবারও, ছেলেরও। তাঁর আড্ডায় না থাকলে সিনেমার হাসিখুশি, সিনেমার বর্ণপরিচয় রপ্ত করা যায় না। কী করে যে তিনি কলকাতার যৌবনকে হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার মতো টেনে নিয়ে যেতেন!

অনেক সময় ভাঙনটাই বড় হয়ে ওঠে। সুদূর ফ্রান্সের সরবোঁ থেকে দক্ষিণ শহরতলির যাদবপুর পর্যন্ত সবাই তখন ভাবছে আমাদের বয়স কুড়ি, দুনিয়াটাকে পাল্টে দেব। আমাদের ঘুম, আমাদের জাগরণ, আমাদের সমাধিফলক ঘিরে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন গেরিলা সমাবেশ। তুমি কোন ভাঙনের পথে এলে – এরকমই আমাদের মনে হয়েছিল সত্তরের শুরুতে ‘ইন্টারভিউ’ দেখে। অবাক চোখে দেখলাম একটা প্রজন্মের রাগ আর প্রত্যাখ্যান কী ভাবে মৃণালদা ছেপে দিয়েছেন প্রুফ না দেখে, ব্যকরণের পরোয়া না করে। আমাদের পাড়ায় পাড়ায় তখন অবরোধ, আগুন। আমাদের গীতবিতান তছনছ হয়ে যাচ্ছে। ওই ছবির বিবস্ত্র ম্যানিকিনকে দেখে জানলাম, মৃণাল সেনের কর্কশ তর্জনী আমাদের জানাল – ওই ম্যানিকিন এক পুতুল – ব্যর্থ, বন্ধ্যা, জননাঙ্গবিরহিত। দেওয়াল লেখা আমাদের বলে দিচ্ছিল সাম্রাজ্যবাদ কাগজের বাঘ, সিনেমা আমাদের জানাল নব উপনিবেশবাদ আপাত সজ্জিত কিন্তু অন্তরে নপুংসক। আমাদের তর্কে, আমাদের বান্ধবীদের প্রস্তাবে ছড়িয়ে পড়তে থাকল বিদ্রোহের টুকরো করা সৌন্দর্য যা মৃণাল সেনের শহরবাসের ইতিকথা। সেই তানপুরাতে আজ ধুলো জমেছে। কিন্তু আজ, অন্যমনস্ক ঘাড় ফেরালে মনে হয়, সময়ের সঙ্গে এত তীব্র সহবাস, নিজের সময়ের ঠোঁটে এরকম চুম্বনের দাগ আর কেউই রেখে যাননি। না সত্যজিৎ, না ঋত্বিক। তাঁরা মহাকাব্যপ্রণেতা হতে পারেন কিন্তু হয়তো ইস্তেহার লেখার দায়, স্বেচ্ছায় ও সানন্দে, মৃণাল সেন নিয়েছিলেন। এত স্ব-বিরোধ আর কোনও চলচ্চিত্রকারের নেই। কিন্তু এক নিশ্বাসেই বলার, নিজেকে পাল্টে নেওয়ার দৃষ্টান্ত কি আর কারুর আছে? মৃণাল সেন কতটা প্রতিভাবান, এ নিয়ে যাঁরা প্রশ্ন তোলেন, তাঁরা খেয়াল করেন না যে সারিবদ্ধ মধ্যবিত্তদের একজন যার হওয়ার কথা ছিল, তিনি গোপনে এর প্রণালীবদ্ধ সাধনায় কীভাবে বিশিষ্ট হয়ে উঠলেন।

শুরুতে আমরা ভেবেছিলাম ‘বাইশে শ্রাবণ’ (১৯৬০) বড়জোর একটা সুনির্মিত সমাজ-বাস্তবতা। এখন বুঝতে পারি মাধবী-জ্ঞানেশের এই প্রণয়োপাখ্যান আসলে ইতিহাসের বিস্তারকে পারিবারিক অমঙ্গলের মধ্যে ঠাঁই দিয়েছে। বিষ্ণু দে, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণতিথিকে সমগ্র জাতীয় জীবনের শোকোচ্ছাসের প্রতীক হিসেবেই ভেবেছিলেন। মৃণালের আখ্যানে রবীন্দ্রনাথ নেই। তিনি এই বিয়োগ গাথাটিকে ইতিহাসের প্রান্তসীমায় টেনে এনেছেন। ‘বাইশে শ্রাবণ’ রচনার বহিরঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের ছায়া থাকতেই পারে। কিন্তু এখন দেখতে পাই যা অনাবশ্যক, তেমন দৃষ্টি কতটা জরুরি হয়ে সময়ে আলোকসম্পাত করে।
আরও পড়ুন: প্রতিদিনের ইতিহাস ও মৃণাল সেনের ছবি
‘ভুবন সোম’ তো উপমারহিত। অবসিত-গরিমা বুর্জোয়াতন্ত্রের প্রতি এমন ঠাট্টা আমাদের সিনেমায় আর কোথায়? ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ যেমন গ্রাম ভ্রমণের ছলনায় আদ্যন্ত শাহরিক, তেমনভাবেই ‘ভুবন সোম’ আমর্ম একটি নাগরিক জলবায়ু প্রবর্তন করে ভারতীয় চিত্রধারায়। ‘ভুবন সোম’ কোনও বিষণ্ণ চরিত্ররেখা নয়। বরং এক পদস্থ বিদূষক। সত্যজিৎ রায় ছবিটির প্রতি অবিচার করেছেন বলেই আমার ধারণা। কোনও পল্লিবালিকার প্রভাবে কোনও মন্দ আমলার সুপথে প্রত্যাবর্তনের গল্পই নয় ‘ভুবন সোম’। বরং সুহাসিনী মুলের স্থির বিদ্যুতের মতো যৌনতা তাকে আরও উজবুক করে তোলে। এই আধুনিক দৃষ্টির ছবি আমাদের সাংস্কৃতিক সম্পদ। গুর্জরতটের গীতিকবিতা যদি সিন্ধুরূপসীর রেখাবিভঙ্গ হয়, তবে মৃণাল সেনের সঙ্গে ভারতীয় বামপন্থার যে প্রেম ও সংঘর্ষ, তা মার্কসবাদী রাজনীতির অভ্যন্তরীণ দলিল ও প্রবন্ধ হয়ে উঠল ‘পদাতিক’ (১৯৭৩) ছবিতে। মৃণাল সেন আকৈশোর ত্রুফোয় আচ্ছন্ন, কিন্তু ‘কলকাতা ৭১’– এ এক অনামা যুবক যখন সমুদ্র, প্রান্তর ও অরণ্যের মধ্য দিয়ে দৌড়য়, আমরা বুঝতে পারি, মৃণাল সেনের সংযোজনী – এক ব্যক্তিগত সত্যকে ইতিহাসের দিগন্তরেখা পর্যন্ত চালনা করার পদ্ধতি।
‘আকালের সন্ধানে’ (১৯৮০), ‘খারিজ’ (১৯৮২) বা ‘খন্ডহর’ (১৯৮৩) হয়তো বিধুর পূরবী; মৃণাল সেন নিজের একাকী মুহূর্তেও জানতে চান সমাজের সঙ্গে ব্যক্তির ভারসাম্যের শর্ত কোথায়। তবু মৃণাল সেন আমার প্রিয়। তিনি এমন শিল্পী, যিনি সময়ের নাড়ি ছেড়ে কখনও উঠবেন না। আজ তাঁর সব কোলাহল বারণ হয়ে গেছে। এক চূড়ান্ত আত্মসচেতন সমকালীনতার শাল মুড়ি দিয়ে ইতিহাসের মধ্যেই তো রয়েছেন তিনি। আর বাঙালি মধ্যবিত্ত খেয়াল করে না, যে সে তার সর্বস্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক আয়নার সামনে। সেই আয়নার পোশাকি শিরোনাম: মৃণাল সেন।
ছবি সৌজন্য: অলংকরণ চিরঞ্জিৎ সামন্ত, Wikipedia, Mrinalsen.org
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেমার মাস্টার মশাই ছিলেন বলে বা সরকারি প্রতিষ্ঠান 'রূপকলা কেন্দ্র'-র অধিকর্তা ছিলেন বলে তাঁর নামের পাশে 'চলচ্চিত্রবেত্তা' অভিধাটি স্বাভাবিক ভাবেই বসে যায়। আসলে কিন্তু সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় একজন চিন্ত্যক ও আমাদের সাংস্কৃতিক আধুনিকতার ভাষ্যকার। কাব্য বা উপন্যাস, চিত্রকলা বা নাটক,জনপ্রিয় ছায়াছবি বা রবীন্দ্রসংগীত-যে কোন পরিসরেই সঞ্জয় এক ধরনের মৌলিক ভাবনার বিচ্ছুরণ ঘটান। সেই মনোপ্রবণতায় আকাদেমিয়ার জীবাশ্ম নেই বরং ছড়িয়ে থাকে মেধার কারুবাসনা। আলোচনাচক্রে, দেশে ও বিদেশে,বৈদ্যুতিন মাধ্যমের ভাষনে তিনি প্রতিষ্ঠিত বক্তা। ঋত্বিক ঘটকের প্রবন্ধাবলী সহ সম্পাদনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ। অনুবাদ করেছেন ছটি বিখ্যাত সিনেমার চিত্রনাট্য। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা আট। একমাত্র উপন্যাস 'বুনো স্ট্রবেরি' ইতিমধ্যেই তরুণ মহলের নজরে। হাইকোর্টসঙ্কুল এই শহরে তিনি নিজেকে 'আমুদে বাঙাল' ভেবেই খুশি।
বেশ ভাল লাগল । কিন্তু ” একদিন প্রতিদিন ” -ও তো মধ্যবিত্ত জীবনের জলছবি ।এই film-টির উল্লেখ থাকলে আর-ও ভাল লাগত ।