রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যু হয়েছিল ১৯৬১ সালের ৩রা জুন, রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবর্ষ পালনের বছরেই, পঁচিশে বৈশাখের আনন্দ–মুখরিত দিন পেরিয়ে এক জ্যৈষ্ঠের বেলায়, দেরাদুনে তাঁর বাড়ি মিতালিতে। পাঁচ ভাই–বোনের মধ্যে রানী, শমী, বেলা এবং মীরা চলে গিয়েছিলেন আগেই। তাঁর মৃত্যুতে বিলুপ্ত হয়ে গেল রবীন্দ্রনাথের বংশধারা। অনেকের কাছে এ ঘটনা হয়ত বা বিশেষ শোকাবহ। আর সেটা অস্বাভাবিকও নয়। কিন্তু এটাও সত্যি, শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী স্থাপনের যে পরিকল্পনা রবীন্দ্রনাথ করেছিলেন, তার নেপথ্য কারিগর ছিলেন পুত্র রথীন্দ্রনাথ। ১৯১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর বিশ্বভারতীর ভিত্তি–প্রস্তর স্থাপন হয়। সেদিন এখানে এসে যে দায়িত্ব তিনি কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তা সামলেছেন তিন দশকের বেশি সময়। পরবর্তীতে ১৯৫১ সালে এই প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পেলে প্রথম দুবছর তিনি উপাচার্য পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন। এই স্বীকৃতিলাভের পিছনে তাঁর যে নিরলস পরিশ্রম তা বহুলাংশেই অজানা। এটাও স্বাভাবিক, যেহেতু সেই মানুষটি রথীন্দ্রনাথ।
পিতা একজন বিশ্ববরেণ্য মানুষ, সুতরাং তাঁকে ঘিরে মানুষের ভিড়, আর্কলাইটের আলো তাঁরই ওপর যার তেজ দিনে দিনে বেড়েছে। কিন্ত আদরের রথীর উপস্থিতি বরাবরই তাঁর পিছনে উপচ্ছায়ার মতো। ১৯০৬ থেকে ১৯০৯ – এই ক‘বছর বিদেশে শিক্ষার কারণে বসবাসের সময়টুকু ছাড়া, পিতা রবীন্দ্রনাথের কাজেই তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। আর কেউ না হোক, পিতা হিসেবে পুত্রের এ হেন আত্মোৎসর্গ রবীন্দ্রনাথ যে উপলব্ধি করেছেন, তাঁর কথাতেই সেটা পরিষ্কার “কর্মের যেখানে উচ্চ দাম সেখানে কর্মীর নাম নেপথ্যেই থাকে একপাশে”।
আরও পড়ুন: মুস্তারী বাঈয়ের গান শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ
পিতাপুত্রের এই মানসিক যোগাযোগ গড়ে ওঠার প্রথম সোপান মনে হয় তাঁদের শিলাইদহ পর্ব। তবে তারও আগে তাঁদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের এক তুলনামূলক বিচার নিয়ে খানিক কৌতুক–আলোচনা পাওয়া যায় রথীন্দ্রনাথের মেজ জ্যাঠামশাই সতেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আড্ডা ঘরের ‘পারিবারিক খাতা’–এর পাতায়। হিতেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রথীন্দ্রনাথের জ্যাঠাতুতো দাদা তাঁর ভালবাসার রবিকাকার পুত্রসন্তান সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন— “রবিকাকার একটী মান্যবান ও সৌভাগ্যবান পুত্র হইবে, কন্যা হইবে না। সে রবিকাকার মত হাস্যরসপ্রিয় হইবে না, রবিকাকার অপেক্ষা গম্ভীর হইবে। সে সমাজের কাৰ্য্যে ঘুরিবার অপেক্ষা দূরে দূরে একাকী অবস্থান করিয়া ঈশ্বরের ধ্যানে নিযুক্ত থাকিবে।” রথীন্দ্রনাথ পরে এ সম্পর্কে মন্তব্য করেন, প্রথমটি মিলে গেলেও “ধ্যান ধারণায় আমার জীবন অতিবাহিত হয়নি সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই”!

১৮৮৭ থেকে রবীন্দ্রনাথের উপর দায়িত্ব বর্তায় পুববঙ্গের জমিদারি দেখাশোনা করবার। আর রথীন্দ্রনাথের জন্ম ১৮৮৮ তে। এর দশ বছর পর, অর্থাৎ ১৮৯৮–তে তাঁরা পাঁচ ভাই–বোন এবং মা মৃণালিনী দেবী আসেন শিলাইদহে এবং রবীন্দ্রনাথের কাছারিবাড়িতে বসবাস শুরু করেন। কলকাতায় জোড়াসাঁকোর সেই বিশাল বাড়ির আগলের বাইরে শিলাইদহ, শাহজাদপুর আর পতিসর ছিল এক অন্য জগৎ। তাঁর নিজের কথাতেই আছে “শিলাইদহে আমরা যে পরিবেশের মধ্যে এসে বাস করতে লাগলাম, কলকাতার পারিবারিক ও সামাজিক জীবনধারা থেকে তা সম্পূর্ণ বিপরীত।… এই নির্জনতার মধ্যে দিদি আর আমি বাবা ও মাকে আরও কাছাকাছি পেলুম।“
কবি যেমন নিজেও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত হননি, ছেলেমেয়ের জন্যও সেই পদ্ধতিকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন সক্রিয়ভাবে। জোড়াসাঁকো বাড়িতে রথীন্দ্রনাথ সহ আরও জনা পনেরো বাচ্চার জন্য এক ঘরোয়া স্কুল খোলা হয়েছিল। সেখানে তাঁদের হাতেখড়ি হয়েছিল মাত্র; আসল লেখাপড়া শুরু হয় শিলাইদহে স্বয়ং কবির তত্ত্বাবধানে। বাংলা শেখানোর দায়িত্ব নিলেন নিজে। বড়দিদি বেলা খানিক বাংলায় সড়গড় হলেও রথী এবং বাকিদের বাংলাজ্ঞান সীমিত, কিন্তু তার মধ্যেও বিদ্যাসাগর, মধুসূদন, বঙ্কিম চাটুজ্যের ভালো লেখা তাঁদের পড়ে শোনাতেন তিনি; নিজের লেখা কবিতাও বাদ যেত না। ছিলেন সংস্কৃতের পণ্ডিত শিবধন বিদ্যার্ণব এবং ইংরিজির মাস্টারমশাই মিস্টার লরেন্স। অতি বাহুল্যবর্জিত পড়াশোনার এই রীতির সমান্তরালে, শিলাইদহের প্রকৃতি এক কথায় পেয়ে বসেছিল রথীন্দ্রনাথকে। ডানপিটেমি করলে ছিল না কোনও শাস্তির ভয়। বেড়ানো, মাছ ধরা, সাঁতার কাটা, লাঠি সড়কি খেলা, ঘোড়ায় চড়া এমনকি ভরা পদ্মায় নৌকা চালানো— তাতেও কোনও বাধা ছিল না। মা মৃণালিনীর দেওয়া মাসিক পাঁচ টাকার পকেটমানি জমিয়ে কিনেছিলেন এক ডিঙি নৌকো, যা চেপে শনি–রবিবার নদী পারাপার করা যেত। নদীতে সাঁতারও শিখেছিলেন খুব সহজে— পদ্মাবোটের উপর থেকে বাবার সজোর ধাক্কায় জলে পড়ে খানিক হাবুডুবু আর জল খেয়ে।

সময়টা ১৮৭৮। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের ইচ্ছানুসারে তখনও জমিদারির কাজ দেখতে পুব-বাংলায় যাতায়াত জ্যোতিরিন্দ্রনাথের। রবি সদ্য প্রবেশ করেছে কৈশোরে। জ্যোতিদাদা তাঁর ছোট ভাইটিকেও নিয়ে যেতেন সঙ্গে করে। হয়ত বা তাঁর কাছে হদিস ছিল রবির “আকাশে–বাতাসে-চ’রে-বেড়ান মন”-এর। জোড়াসাঁকোর বাড়িতে নবাবি ছাঁদের পাল্কির ভেতর বসে নির্জন দুপুরে এই মন হয়ে যায় স্বপ্নময়। কখনও বিশ্বনাথ শিকারি, কখনও বা ছুঁচলো দাড়ি আবদুল মাঝি সেই স্বপ্নের নায়ক। দুই দশকের ব্যবধানে দুটি কিশোর মন যেন বাঁধা পড়েছিল এক বিনি সুতোয়। শিলাইদহের পদ্মা আর গোরাই নদী, দিগন্তবিস্তৃত ধু ধু বালির চর, শ্যামলিমা— চাঁদ সূর্যের আলোআঁধারির মাঝে ধরা দিয়েছিল তাঁদের মনোজগতে। পিতা পুত্রের মধ্যে এই সংযোগ দিনে দিনে দৃঢ় হয়ে পরবর্তীতে রূপান্তরিত হয়েছিল এক ধরণের নির্ভরতায়।
কথায় বলে, মৃত্যু মানুষকে কাছে নিয়ে আসে। ১৯০১ থেকে ১৯০৭— এই ক’বছরে রবীন্দ্রনাথের জীবনে চলেছিল মৃত্যু-মিছিল। সেই নিরন্তর শোকের ভিতরেও আদরের রথী ছিল তাঁর দুঃখদিনের সঙ্গী, শারীরিক ও মানসিক— দুই ভাবেই। প্রথমে স্ত্রী মৃণালিনী দেবী। অঘ্রানের এক কুয়াশামোড়া ভোরে জোড়াসাঁকোর বাড়িতে শেষ হয়ে যায় তাঁর জীবন। রথীর বয়স তখন সবে ১৪। এরপরেই এসেছিল ছোটমেয়ে রেনুকার (রানী) চলে যাওয়ার দিন, ছোটভাই শমীন্দ্রনাথকে সঙ্গে নিয়ে রথী তখন শান্তিনিকেতন আশ্রমে। তার আগেই কলকাতা গিয়ে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে আসা গেছে। মন টানছিল শিলাইদহের দিকে। বাবাকে বলবার সাহস হয়নি, বলেছিলেন সুরেনদাকে (মেজো জ্যাঠার ছেলে সুরেন্দ্রনাথ)। সুরেনদা তাঁর রবিকাকার কাছে কথা পাড়তেই তিনি বললেন “সুরেন আমার হাতে যে টাকা নেই, রথীর রেল টিকিট কিনে দেব কী করে?” লজ্জা ও কষ্টে রথী শিলাইদহ যাওয়ার পরিকল্পনা ছেড়ে আশ্রমে রয়ে গেলেন তাঁর আদরের ছোট ভাই শমীকে সঙ্গে নিয়ে। ১৯০৫ সালের পৌষ মাসে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের জীবনাবসান। এই মৃত্যুও কবির জীবনে এক টার্নিং পয়েন্ট। এবার তিনি মনপ্রাণ ঢেলে শুরু করেন শান্তিনিকেতন বিদ্যালয় গড়ে তোলবার কাজ। রথী তখন থাকেন ‘নতুন বাড়ি’তে মীরা ও শমীকে নিয়ে মায়ের গ্রাম-সম্পর্কে পিসিমা রাজলক্ষ্মী দেবীর তত্ত্বাবধানে।

১৯০৬ সালে কৃষিবিদ্যা পড়ার জন্য রথীন্দ্রনাথ আমেরিকা চলে যান। নতুন মানুষ, নতুন পরিবেশ, নতুন জ্ঞানতপস্যা— কিন্তু তার মাঝেও ঘুরেফিরে আসে শান্তিনিকেতন ও শিলাইদহ। আদরের ভাই শমীর মধ্যে দেখতে পেতেন বাবার কবি প্রতিভাকে; তার কাছ থেকে চিঠিতে পেতেন আশ্রমের খবরাখবর। কিন্তু হঠাৎ বজ্রাঘাত— শমী নেই। সাতসমুদ্র পেরিয়ে সে সময় বাবার কাছে আসা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি ঠিকই; কিন্তু মনে বড় বেজেছিল সে আঘাত। পরে নিজেই উপলব্ধি করেছেন একজন সন্তানহারা পিতা হয়েও পুত্রশোককে কীভাবে নিজের হৃদয়ের মাঝে আত্মস্থ করতে হয়। মীরা দেবীর পুত্র নীতু (নীতীন্দ্রনাথ) যখন মারা যান এক চিঠিতে রবি লেখেন “শমী যে রাত্রে গেল তার পরের রাত্রে রেলে আসতে আসতে দেখলুম জ্যোৎস্নায় আকাশ ভেসে যাচ্ছে, কোথাও কিছু কম পড়েচে তার লক্ষণ নেই। মন বললে কম পড়েনি— সমস্তর মধ্যে সবই রয়ে গেছে, আমিও তারি মধ্যে। সমস্তর জন্যে আমার কাজও বাকি রইল।” বিদেশ থেকে ফিরে ১৯১০ নাগাদ একটা দীর্ঘ সময় পিতা-পুত্রের দিন কাটে শিলাইদহে, পদ্মাবোটে। উদ্দেশ্য রথীকে প্রজাদের সঙ্গে আলাপ পরিচয় করিয়ে দেওয়া। বারবার মৃত্যুশোকের আঘাতে, বিশেষত কনিষ্ঠ পুত্রের মৃত্যুর পর কবিকে তখন পেয়ে বসেছে একাকীত্ব। রথীকে কাছে পেয়ে যেন উজাড় করে দিলেন ভালবাসা। “সেই সময়টাতে আমরা পিতাপুত্র পরস্পরের যত কাছাকাছি এসেছিলাম তেমন আর কখনো ঘটেনি।” এরপর সুদীর্ঘ সময় দেশে ও বিদেশে পিতার ভ্রমণসঙ্গী রথী এবং পরবর্তীকালে তাঁর স্ত্রী প্রতিমা। পরেশনাথ, গিরিডি, রামগড়, লন্ডন, প্যারিস, আমেরিকা, ইতালি, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড এরকম বহু শহরে, দেশে! সঙ্গে তুলে নিয়েছিলেন শান্তিনিকেতন বিদ্যালয় গড়ে তোলবার কাজ। আজ যে রামগড়ে বিশ্বভারতীর দ্বিতীয় ক্যাম্পাস বাস্তবায়নের কাজ চলেছে, সেই ‘হৈমন্তী’ (পুরনো নাম স্নো ভিউ) খোঁজখবর করে কেনার পিছনেও রথীন্দ্রনাথ। তাঁর কৃষিবিদ্যার জ্ঞান যেমন কাজে লেগেছে শিলাইদহে কৃষি উন্নতির নানাবিধ চেষ্টায়, তেমনই শ্রীনিকেতনের মতো একটি প্রতিষ্ঠানকে গড়ে তোলার পিছনেও কাজে লেগেছে বিজ্ঞানের সঙ্গে তাঁর নন্দনতাত্তিক চিন্তাধারার মিশেল, যার ফসল আজকের শ্রীনিকেতনের শিল্পসদন বিভাগ। এখানে তৈরি বাটিক, মৃৎশিল্প, চামড়ার জিনিসপত্র আজ বহুল প্রসারিত এবং জনপ্রিয়। এক অর্থে ‘শান্তিনিকেতনি কাজ’ বলতে আজ আমরা যা বুঝি তার পূর্বসূরি। এর পিছনে ছিল রথীন্দ্রনাথ ও প্রতিমাদেবীর নিরলস পরিশ্রম ও অর্থব্যয়। একবার বলেছিলেন “জন্মেছি শিল্পীর বংশে, শিক্ষা পেয়েছি বিজ্ঞানের, কাজ করেছি মুচির আর ছুতোরের!
বিদেশ থেকে ফিরে ১৯১০ নাগাদ একটা দীর্ঘ সময় পিতা-পুত্রের দিন কাটে শিলাইদহে, পদ্মাবোটে। উদ্দেশ্য রথীকে প্রজাদের সঙ্গে আলাপ পরিচয় করিয়ে দেওয়া। বারবার মৃত্যুশোকের আঘাতে, বিশেষত কনিষ্ঠ পুত্রের মৃত্যুর পর কবিকে তখন পেয়ে বসেছে একাকীত্ব। রথীকে কাছে পেয়ে যেন উজাড় করে দিলেন ভালবাসা। “সেই সময়টাতে আমরা পিতাপুত্র পরস্পরের যত কাছাকাছি এসেছিলাম তেমন আর কখনো ঘটেনি।” এরপর সুদীর্ঘ সময় দেশে ও বিদেশে পিতার ভ্রমণসঙ্গী রথী এবং পরবর্তীকালে তাঁর স্ত্রী প্রতিমা।

রথীন্দ্রনাথের সঙ্গে রবীন্দ্রভবনের নামও জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। রবীন্দ্রস্মৃতি সংরক্ষণের লক্ষে তাঁর কর্মময় জীবনের অবকাশে যেভাবে তিনি রবীন্দ্রনাথের পাণ্ডুলিপি, চিঠিপত্র, পৃথিবীর নানা দেশে তাঁর সম্পর্কে যে খবর, বিবরণ প্রকাশিত হত তার কর্তিকা ইত্যাদি সংগ্রহ করেছিলেন সেও বিস্ময়ের। কারণ সেই সময়ে বিজ্ঞানসম্মত আর্কাইভ প্রযুক্তি সে অর্থে কিছু ছিল না এ দেশে। ক্রমশ ঠাকুর পরিবারের বন্ধু, আত্মীয়জনেরা তাঁদের ব্যক্তিগত সংগ্রহ রবীন্দ্রভবনকে দান করে সমৃদ্ধ করেছিলেন। ১৯৪১-এ কবির জীবনাবসানের পর রথীন্দ্রনাথ আরও বিশেষভাবে ব্রতী হয়েছিলেন এই সংগ্রহশালাকে সুগঠিত করবার কাজে; বিশ্বভারতীয় সামগ্রিক আর্থিক সংকটের মধ্যেও যতটা সম্ভব। বর্তমানে রবীন্দ্রভবন আজ যে রবীন্দ্র-গবেষণার এক মূল কেন্দ্র হয়ে উঠতে পেরেছে তার নেপথ্যে রথীন্দ্রনাথের উপস্থিতি এবং এর সার্থকতায় তাঁর স্মৃতিরক্ষা।
রথীর শৈশবে পদ্মাপারে নাটোরের রাজা জগদীন্দ্রনাথ তাঁর রাজা হওয়ার গল্প শোনাতে গিয়ে খেদোক্তি করেছিলেন “রথী রে, মহারাজ যেন কখনো হতে যাস না।” আপাতদৃষ্টিতে রথীন্দ্রনাথ সে কথা মেনেছিলেন নিজের জীবনে। লোকচক্ষুর অন্তরালে তাঁর কর্মময় জীবন, যা ছিল পিতা রবীন্দ্রনাথের প্রতি নিবেদিত, তাঁকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে এক অলখ রাজসিংহাসনে!
সপ্তর্ষি রায় বর্ধনের জন্ম, কর্ম এবং বর্তমান ঠাঁই তার প্রাণের শহর কলকাতায়। প্রথাগত ছাত্রজীবন কেটেছে কলকাতার পাঠভবন স্কুল, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ এবং যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে। গত তিরিশ বছর ধরে আর্থিক পরিষেবা ক্ষেত্রে কর্মরত। কর্পোরেট জগতের দিনগত পাপক্ষয়ের পাশে চলে লেখাজোকা, ছবি তোলা, নাট্যাভিনয় আর হেরিটেজের সুলুক সন্ধান। সঙ্গে বই পড়া, গান বাজনা শোনা আর আকাশ পাতাল ভাবনার অদম্য বাসনা ও নেশা। বাংলা, ইংরেজি কিছু ম্যাগাজিন এবং ব্লগে নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন বিষয়ের উপরে। আত্মীয় পরিজন, বন্ধু, সুজনদের সঙ্গে হৈচৈ করে জীবন কাটিয়ে দেওয়াতেই তাঁর ভালো লাগা। কারণ, জীবন তো একটাই যার বারো আনাই বাকি আর "জীবন ছাড়িয়া গেলে মানুষে কইবে মরা জীবন রে“!