তোমার চোখে তাকিয়ে দেখি সেখানে ছায়া ফেলেছে বাইরের সব অবিচলিত দোল খাওয়া গাছ , আকাশের ধারালো নীল আর আমার ফুলে ওঠা মুখ। আমি দেখি তোমার চোখে আমার একদিকের গাল, চিবুক কেমন অর্ধচন্দ্রাকৃতি হয়ে ফুলে আছে । নিজের এই ছায়াকে কেমন দেহ– ব্যবসায়ী, খুনি ধর্ষক ইত্যাদি মনে হয় । অথচ পাশাপাশি গাছের চলমান ছায়া , আকাশের ভীষণ ধারালো নীল কারও কিছু বদলায় নি। তোমার চোখের পেছনে যারা, যেসব কোষ সংবহন – তারা এই ছায়াগুলিকে দ্যাখে। অনুবাদ করে। তোমাকে পাঠায় সেসব অনুবাদ। সেসব হাতে তাসের মতো সাজিয়ে, মেলে ধরে তুমি নীচের ঠোঁট কামড়ে চুপ করে থাক। যেন সিদ্ধান্ত নিতে পারছ না । প্রকাণ্ড একটা মাকড়সা জাল বুনে বুনে উঠে যাচ্ছে তোমার মাথায়। ধরা যাক যেন অফিস ছুটি হয়ে খালি হয়ে গেছে। জগতে শুধু উজ্জ্বল তিনদিক ঘেরা কিউবিকগুলো পড়ে আছে। পেপার ওয়েস্ট উপছে ফুটে আছে ব্যবহৃত টিস্যুর ফুল। দেওয়ালের ওপারে কত আলোকবিন্দুর ছুটে যাবার মায়াবী শব্দ অথচ তুমি সিদ্ধান্ত নিতে পারছ না 

এমন ছায়া পড়ে কি মিলিত হবার আগে? তুমি দ্যাখো দরজার হাতলে ভূতুড়ে ছায়া পড়ার মতো একদিকের মুখ ফোলা একজন মানুষ তোমার ওপরে ঘনিয়ে আসছে। তোমার হয়তো শীত শীত করে ওঠে ভেতরে কোথাও বা শঙ্খধ্বনির মতো আতঙ্ক হয়। তে-তলার একটা অফিস নিশ্ছিদ্র ফাঁকা। জগত জুড়ে পড়ে রয়েছে খালি সার সার অথবা পুঞ্জীভূত কিউবিকেরা। পেপার ওয়েস্ট উপছে ফুটেছে কীসব নামগোত্রহীন ফুল । হলদে আলোয় তোমার হাতে মেলে ধরা সব তাস, অনুবাদ অথচ তুমি সিদ্ধান্ত নিতে পারছ না। তোমার শরীরে প্রবেশ করছে আরেক শরীর। ভোঁতা, অনুভূতিশূন্য ব্যবহার তার। পরাবাস্তবের যে কিছুই বোঝে না। কোনওদিন কিছুই বোঝে না। দেওয়ালের ওপারে অনেক আলোকবিন্দুর ছুটে যাবার মায়াবী শব্দ। অনেক হাসির সামনে অন্য হাসির উন্মুক্ত হবার শব্দ। অনেক ঝর্ণার সামনে আরেক ঝর্ণার গড়িয়ে পড়ার শব্দ বা অনেক নরম মাংসের ঘরে এককোণে যে সুবৃহৎ নক্ষত্রগুলি ফুটে থাকে , হাওয়া এলে অভিবাদনের মতো নড়ে – তার বা  তাদের শব্দ 

জন্ম কোচবিহার জেলায়৷ বড় হয়ে ওঠা আলিপুরদুয়ার জেলার হ্যামিল্টনগঞ্জে৷ কলেজে পড়াকালীন লেখালেখির প্রতি আগ্রহ জন্মায় এবং লেখার হাতেখড়ি৷ স্থানীয় ছোট পত্রপত্রিকায় প্রথম লেখা প্রকাশ৷ এরপর লেখায় দীর্ঘ সময়ের ছেদ পড়ে৷ আবার গত তিনবছর ধরে লেখায় ফেরা৷ কাব্যগ্রন্থ 'কিছুক্ষণ থাকা অথবা অনন্তকাল' ২০২০ কলকাতা বইমেলায় 'শুধু বিঘে দুই' থেকে প্রকাশিত৷ মূলত কবিতা লিখতে পছন্দ করেন৷ একটু আধটু গদ্যচর্চাও হয়৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *