১)

এ হালখাতায় হিসাব মিলানো দায়,
মনের দোকানে একলাটি বসে থাকা।
কেউ যদি আসে পথভোলা অবেলায়,
এই পরবাসে, পান্থনিবাসে একা।

সারাদিন শুধু অপেক্ষা করে থাকা,
অন্তিম ক্রেতা, কথার পুরনো বোঝা,
কিনে নিয়ে যাবে, আঁধারে পথটি বাঁকা,
আমি হয়ে যাব ভাষাহারাদের রাজা।

দূরে আলো জ্বলে, পাহাড়ে সমুদ্দুরে,
ক্যাসিনোর নেশা, বিবশা তরঙ্গিণী।
বিলাস তরণী ফিরে আসে বন্দরে,
ঘুঁটিরা বেচাল, তাসেরাও প্রবাহিণী।

জলের ওপরে একটি আলোক রেখা,
জাগ্রত আশা, এখনও রয়েছে প্রাণ।
আলোক মিনারে রশ্মির শেষ শিখা,
ছায়াপথ বেয়ে অনন্তে বহমান।

দূরে আলো জ্বলে, পাহাড়ে সমুদ্দুরে
দূরে আলো জ্বলে, পাহাড়ে সমুদ্দুরে

২)

এখন তুমি জানলে আমি ভালোমানুষ নই,
এখন তুমি জানলে আমার গলাতে নীলসুতো
অনিচ্ছাতে আটকে গেছে। সেদিন রূপান্তর
আমার পরাবৃত্তে হাঁটা, আমার নোনাজল,
পায়ের নীচে তপ্ত বালি, অসহ্য মাতলামি,
সেই আকালে খুঁজলে তুমি ভালোমানুষ কই?

ভালোমানুষ অনেক ছিল, কাটা ঘুড়ির সুতো,
গাছের ডালে আটকে গেছে, কিংবা তেপান্তরে,
মগ্ন বিকেল, আকাশরেখায়, মেঘের শিলান্যাসে,
লাটাই হাতে ফকিরবাবা, ছেলেমেয়ের ঝাঁকে,
নগ্ন হৃদয়, নিষেধহারা, অশেষ ব্যাভিচারে,
দিন ফুরোলে পুরনো সেই গল্প বলার ছুতো।

এসো, তোমায় গল্প শোনাই প্রাণের যাদুকরী।
ব্যথার বিষে নীল হওয়া সেই অচল কানাকড়ি।

 

আরও পড়ুন: কবিতা: সৌরমথ

Statue picture
এখন তুমি জানলে আমি ভালোমানুষ নই,/এখন তুমি জানলে আমার গলাতে নীলসুতো

৩)

আমি যদি অন্য ভাষায়, অন্যভাবে কথা বলি,
সেই ভাষাতে বলার যা নয় সবই যদি শুনিয়ে ফেলি,
এবং দেখি অন্য চোখে, দেখার যা নয়?

সেই ভাষাতে তোমায় দেওয়া কথার ডালি,
কথার নদী পাগলাঝোরা, সাগরতটে কথার বালি
তৃতীয় চোখ দেখতে শেখে নতুন আলোয়।

কথার স্রোতে পাথর নড়ে, শ্যাওলা ভাসা,
তোমার কাছে পৌঁছে দেবে নষ্ট প্রাচীন ভালোবাসা,
আনকোরা এক অন্য দিনে, সকালবেলায়।

কথাই ছিল, থাকবে কথা, তৃতীয় চোখ পলকহারা
সব কিছু সে ভিন্ন দেখে এবং দারুণ লক্ষ্মীছাড়া।
অন্ধ আমার দুচোখ ঢাকা তোমার মায়ায়।

 

 

ছবি সৌজন্য: লেখক।

Dr Kaushik Sen

কৌশিক সেন পেশায় ডাক্তার, নেশায় লেখক। তিনি সেই প্রজন্মের লোক যাঁরা টাইপরাইটার এবং আকাশবাণী থেকে শুরু করে, ইন্টারনেটের শৈশব, যৌবন দেখে ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়ার মহাসমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছেন। কলকাতা ন্যাশন্যাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে এম-বি-বি-এস, তৎকালীন পি জি হাসপাতাল থেকে এম-ডি, তারপর অনেক মুসাফিরি, অনেক বিনিদ্র রাতের গল্প শেষ করে অবশেষে থিতু হয়েছেন আমেরিকার র‍্যালে শহরে। এই সফরের বিচিত্র সব আনন্দ-বেদনার অভিজ্ঞতা থেকেই প্রথমে ছোটোগল্প ও কবিতা, তারপর একে একে সাতটি উপন্যাস। অধিকাংশই প্রকাশিত হয়েছে দেশ, সানন্দা এবং আনন্দ পাবলশার্সের নানান পূজাবার্ষিকীতে, তার সঙ্গে রয়েছে প্রতিভাস প্রকাশনীর পত্রিকা নতুন কৃত্তিবাস এবং পরবাস আন্তর্জাল পত্রিকায় নিয়মিত উপস্থিতি। কৌশিক সেনের লেখায় প্রধানতঃ এক প্রবাসী চিকিৎসক জীবনের প্রেক্ষিত এবং অনুপুঙ্খ ফুটে ওঠে। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা মাত্র দশ কিন্তু লেখা শেষ হয়নি, এই যুগের অনেক গল্প এখনও তাঁর ঝুলিতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *