গাড়ি চালাতে চালাতে কথা বলছিল মন্টুদা –
ওদের দেশে, সুন্দরবনে
প্রতিদিন বাঘের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয়
গ্রামের গরীব লোক, আর কী-ই বা করবে
জঙ্গলে কাঠ কাটে, মধু পাড়ে
প্রাণ হাতে করে বেরোয়, জানেনা ফেরা হবে কিনা
বনবিবিরও কোনও ভরসা নেই আজকাল
তাঁর পুজো করে গিয়েও বাঘের খপ্পরে পড়েছে অনেকে –
বলছিল মন্টুদা, সুন্দরবনে ভগবানও থাকেনা
শুধু থাকে বাঘ আর বাঘে খাওয়া গ্রাম
তবে উপায় একটা আছে, ট্র্যাফিক জ্যামে আটকে পড়ে
অল্প হেসে বললো মন্টুদা
ওর শ্বশুরমশাই মস্ত গুণিন –
‘গুণিনবাবা ‘ নামে ওই এলাকায় সবাই এক ডাকে চেনে
জঙ্গলে যাবার আগে গ্রামের লোক
একবার গুণিনবাবার পা ছুঁয়ে যায়
উনি বিড়বিড় করে কী একটা মন্ত্র পড়েন
তারপর লোকের মাথায় ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল ছুঁইয়ে দেন
মন্ত্রপূতঃ জল খাইয়ে দেন এক ঢোঁক
জঙ্গলে বাঘের পাল্লায় পড়লেও কিছু হয়না
মন্ত্রের জোরে বাঘ খুব কাছে এসেও মুখ খুলতে পারেনা
দাঁতে দাঁত চেপে জুলজুল করে তাকিয়ে থাকে
ঘনঘন ল্যাজ নাড়ে, বড়জোর থাবা মারে
থাবাতেও তেমন জোর থাকেনা
লোকজন কাঠ কেটে, মধু পেড়ে দিব্বি প্রাণ বাঁচিয়ে বাড়ি ফিরে আসে
তবে গুণিনবাবা খুব মুডি, বলছিল মন্টুদা
যাকে তাকে মন্ত্র দেননা , ভালো মানুষ ছাড়া কাউকে
বাঘের হাত থেকে বাঁচাননা
গাড়ির ব্যাকসিটে বসে আমি মন্টুদাকে বললাম –
আমি মোটামুটি ভালো লোক, কারুর কোনও ক্ষতি করিনি তেমন
শহরের রাস্তায়, অফিসের করিডরে
এমনকী কখনও কখনও বাড়ির মধ্যেও
রোজ রোজ এত বাঘের সঙ্গে ওঠাবসা করতে হয়
থাবা বা আঁচড়ে কিছু এসে যায়না – ওইভাবেই টিকে আছি এতকাল
শুধু বাঘের সামনে পড়লে, বাঘ যেন আপাতত মুখ না খুলতে পারে –
তোমার শ্বশুরমশাই গুণিনবাবাকে একবার নিয়ে এসো
আমি সেই মন্ত্র বুকপকেটে নিয়ে 
এই জঙ্গলে ঘুরতে বেরোব।

ছবি সৌজন্য: Pixabay

এই সময়ে যাঁরা বাংলা কবিতা লিখছেন , তাঁদের মধ্যে সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যতম। সৌভিকের কাব্যভাষা স্বকীয় ও স্বতন্ত্র - নাগরিক বিষন্নতা , সমাজসচেতনতা , মাঝে মাঝে কালো ঠাট্টা বা শ্লেষ ও নস্টালজিয়া তাঁর কবিতায় নানাভাবে ফিরে ফিরে আসে। লিখেছেন ছোট-বড় প্রায় সমস্ত বাণিজ্যিক ও লিটল ম্যাগাজিনে। এ পর্যন্ত প্রকাশিত কবিতার বইয়ের সংখ্যা তেরো, ২০২২ সালে প্রকাশিত হয়েছে 'কবিতাসমগ্র ১'। কবিতার জন্যে ভাষানগর-মল্লিকা সেনগুপ্ত পুরস্কার, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি পুরস্কার সহ পেয়েছেন আরও একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। গদ্যকার হিসেবেও উজ্জ্বল, এখনো পর্যন্ত প্রকাশিত গদ্যের বইয়ের সংখ্যা তিন । বড় পর্দাতে অভিনেতা হিসেবেও তাঁকে মাঝে মাঝে দেখা যায়।

One Response

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *