ভোর সাড়ে ছটা

পোশাকি নাম বিলাসখানি তোড়ি। ঘুমের বেদনা ফুটিয়ে শোঁ শোঁ শব্দে গরম হচ্ছে কেটলিজীবন। ঈষৎ ভারী হয়ে থাকা মাথায় কাটাকুটি খেলছে শৈশব থেকে উড়ে আসা বিবিধ পাখিডাক। রাস্তা সভ্যতায় উদ্বিগ্ন মুখের উঁকিঝুঁকি, স্কুলবাস আসতে কেবলই দেরি হয়ে যায়। খোসা ছাড়ানো আলোর এই সময় খোঁয়াড়ির জন্য প্রসিদ্ধ।

দুপুর আড়াইটে

রোদ্দুর এখন থান কাপড়ের মত নিঃসঙ্গ। গাছের সবুজ কমতে কমতে খর ও হরিদ্রাভ। গ্রীষ্মের ছুটির রুদ্ধশ্বাস চিলেকোঠাও সেই গায়ে হলুদ বইতেই উতরোল! ভাতঘুমে তলিয়ে যাওয়ার আগে অফিস পাড়া তেরছা মেপে নেয় ছায়া কত কমছে! পল্লির বিন্যস্ত ছাদগুলি থেকে বিবিধ পাপের প্রস্তাব আসতে থাকে।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা

জানলাগুলি ক্রমশ গভীর হয়ে এল। ফুটবল ম্যাচ শেষের শঙ্খধ্বনি শোনা যায়। আর সিরিয়াল-যাপনের শুরুর! পাঁচিলের ওপারের অন্ধকারে ঠোঁট পায় সাইকেল-প্রেম। দিদিমনিদের টহল শেষ হলে একে একে সব রোমিও ঘরে ফেরে। ঘড়িরা নিজস্ব কাঁটা গিলতে গিলতে গোটা পাড়ার পড়া মুখস্থ করাতে থাকে।

রাত সোয়া বারো

গাছেদের ঘুম, গৃহস্থের সঙ্গমশ্রান্তি এবং গেঁজেলের মৌতাতের জন্য বিখ্যাত। তবুও তস্কর, কুকুর ও ট্যাক্সিচালকের বহুপাক্ষিক আপোসে এমন জটিল সময়ে নতুন ফ্রেমের জন্ম হয়। বিষাদবন্দী ল্যাম্পপোস্ট চিরকাল যার সাক্ষী রয়ে গেল।

 

সকালে কবিতা লেখেন আর সন্ধ্যায় সংবাদ । এই স্বআরোপিত দ্বিচারিতার মধ্যেই ফ্রিস্টাইল বেঁচে থাকা । পেশার সূত্রে দেড় দশক দিল্লিতে অতিক্রান্ত। ভ্রমণ যত্রতত্র, কাব্যগ্রন্থ আপাতত পাঁচটি। জন্ম ১৯৭০, কলকাতা।

3 Responses

  1. যেন, ফিরে দেখা: রোজনামচা। আটপৌরে ছবিতে রূপকথার আঁচ লাগিয়ে দেওয়া। অগ্নি রায়ের অন্যান্য অনেক কবিতার মতই এ কবিতাতেও সেই কবিপ্রতিভা।
    আরও একটা বৈশিষ্ট্য- জীবনানন্দের উত্তরাধিকার। তাই: একে একে সব রোমিও ঘরে ফেরে। পূর্বসূরী কেবলই দৃশ্যের জন্ম দিয়ে গেছেন, আর ইনি এমন জটিল সময়ে নতুন ফ্রেমের জন্ম দিয়ে চলেছেন।

    সার্থক রিয়্যালিটি শো!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *