[প্রথম ঘরে আলো জ্বলে। পাটাতনের ওপরে শিবকুমার খান্নার মৃতদেহ শোয়ানো। অল্প আলো -আঁধারি ওপরে। প্রথম ঘর আলোকিত। ভিকি, দিব্যা, অরুণা ও প্রমোদ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।]

ভিকি: চাবিটা দাও।

অরুণা: কীসের চাবি?

ভিকি: পিতাজির শোয়ার ঘরের ভল্টের। ওখানে ওনার সবকিছু আছে।

অরুণা: তা সেটা তোকে দেব কেন?

ভিকি: মানে? আমি পিতাজির একমাত্র ছেলে। ওনার যা কিছু আমিই তো পাব।

প্রমোদ: স্যরি, মিঃ খান্না। অ্যাজ এ প্রফেশনাল ল’ইয়ার আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি সাকসেসন আইনে সে কথা বলে না।

ভিকি: ভাঁড়ে যাক আইন। আর আপনি তো ভাই ঠিক ল’ইয়ার নন, এই মহিলার বয়ফ্রেন্ড।

অরুণা: সকালবেলাতেই ড্রাগ টেনেছিস? কোনো চাবি ফাবি হবে না। মরা বাপকে মালা দে, পাবলিক মিট কর, অতিথিদের দেখভাল কর। তারপর নিজের বাড়ি ফিরে যা।

দিব্যা: হ্যাঁ, তুমি যা বলবে তাই আমরা করতে বাধ্য যেন।

অরুণা: এই শোন দিব্যা শেলভাঙ্কার, যা প্লেনে গিয়ে পাইলটের সঙ্গে ঢলাঢলি কর। ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্টের যা কাজ তাই কর। আমার সঙ্গে বেশি মুখ লাগাতে আসবি না।

দিব্যা: তোর মতো বস্তির অভিনেত্রীর সঙ্গে আমার মুখ লাগাতে বয়ে গেছে। শালি চুড়ৈল।



অরুণা: আর তুই কী? রাণ্ডি শালা। বিজলি, মানে ভিকির আগের বউটা নেহাত ভিকির অত্যাচারে মরে গেল, নইলে তোর মতো গতর খাটানো বিমানসেবিকা না আমরা অমন শ-য়ে শ-য়ে জানি।

ভিকি: আর তুমি কে হে? হাড়-বজ্জাত মাগি একটা। মা মারা যাবার পর পিতাজির মাথাটা খারাপ না হয়ে গেলে তোমার মতো দুটাকার সিরিয়ালি মাল কেউ ঘরে আনে?

অরুণা: ওরে, তোর পিতাজি আমাকে হাত ধরে বলে গেছে রে, অরুণা আর যাই হোক আমার বিষয়সম্পত্তি যেন আমার ওই ড্রাগখোর লাথখোর ছেলের ফুর্তির ভোগে যেন না যায়। হাতে কাঁচা টাকা পেলে তো আবার এই (দিব্যাকে দেখান) ফর্সা ন্যাকড়ার পুঁটলিকে লাথি মেরে ওই ফাইভ স্টারের সুইটে ঢুকে রাশিয়ান মেয়েগুলোর পোল ড্যান্স দেখবি।
দিব্যা: অ্যাই শোন, তোর প্রত্যেকটা কথাই বলে দিচ্ছে তুই আসলে বস্তিতে মানুষ হওয়া কলোনির মাল।

অরুণা: আর তোর এই বাইরে মাখন মাখন হাবভাব করা আর শ্বশুরের সামনে পেছন দুলিয়ে ঢলাঢলি করা বলে দিত, নিজের বাপের সঙ্গে শুয়ে শুয়ে তুই ওইসব কনভেন্ট মারাতিস।

ভিকি: চোপ। টেনে তোমার জিভ ছিঁড়ে নেব শালি।

প্রমোদ: আঃ, মিঃ ভিকি খান্না। সংযত হোন। আপনি ভুলে যাবেন না, আপনার এক দিদি আছেন। তিনিও খবর পেয়েছেন, চলে আসবেন এক্ষুনি। তারপর না হয় সবাই মিলে-

ভিকি: কিসের বাল সবাই মিলে? আপনি তো সকালেই এই মেয়েছেলের কানে বুদ্ধি দিয়ে পিতাজির ভল্ট সাফা করে দিয়েছেন। এতক্ষণে বোধহয় সেসব মালকড়ি আপনার দাদারের ফ্ল্যাটে ঢুকে গেছে।



প্রমোদ: কি মুশকিল! মিঃ শিবকুমার খান্না মানে আপনার স্বর্গীয় পিতাজির কিছুদিন আগে করা উইলটা তো আছে। আপনি সেই উইল দেখুন।

ভিকি: উইল? আপনি কী ভাবেন আমায়? ইন্ডাস্ট্রি আমাকে যা বলে তাই? গাম্বাট ভিকি? ওই উইল শালা আপনি, পিতাজি স্বর্গবাসী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ট্যাম্পার করেছেন, নইলে শ্রদ্ধেয় পিতাজির সবকিছু আমাকেই দিয়ে যাওয়ার কথা।

অরুণা: হ্যাঁ রে। তোর পিতাজি তো জানত, তোর করা একটা সিনেমাও চলে না! ওনার টাকা না পেলে তো দুদিন বাদে ভিক্ষের বাটি হতে তোকে ভি.টি স্টেশনে গিয়ে দাঁড়াতে হবে, তাই সব টাকা ওনাকে ওনার নেশাড়ু ছেলের হাতে দিয়ে যেতে হবে।

ভিকি: ফাক ম্যান। আমার লাস্ট সিনেমাও ‘লাইফ কা তিসরা ওয়ে’ সুপারডুপার হিট। সেটা তোমার ওই মোটা সিরিয়ালি মাথায় ঢুকবে না।

অরুণা: ওরে গাম্বাট, সেটা হিট হয়েছে তোর ওই নায়িকা চুমকারা চৌবের জন্য রে। হল থেকে বেরিয়ে সকলে ওর কথাই বলছে।

ভিকি: তাই নাকি? শোনো, আমি ‘লাইফ কি তিসরি ওয়ে’-র পার্টটার জন্য এবার ফিল্ম ফেয়ার পাব বুঝেছ? স্টার, স্টার। আমরা হলাম স্টার, বুঝেছ? তোমার লাইফে যেহেতু একটাই ওয়ে ছিল, কী করে পিতাজির টাকাগুলো চুরি করা যায় আর ওই কুৎসিত সিরিয়ালগুলোয় পেছনমোটা শাশুড়ির পার্ট করা যায়, ফলে সিনেমা ব্যাপারটা কী তোমার ওই গোবর পোরা মাথায় ঢুকবে না।

অরুণা: ওরে ভারী আমার স্টার রে। প্রথম সিনেমা থেকে শুরু করে এই শেষদিন পর্যন্ত ওই বুড়ো বাবাকে দিয়ে প্রোডিউসারদের ফোন করাতিস।

ভিকি: একদম ফালতু কথা বলবে না। একমাত্র আমার ফার্স্ট সিনেমা মানে ‘দিওয়ানা দিবাকর’ পিতাজি আমার হয়ে বেনামে প্রোডিউস করে দিয়েছিল। তারপর যা করার আমি আপুন কা মেহনতে করেছি।

অরুণা: আপুন কা মেহনত? কাঁচকলা। আমি নিজে এ বাড়িতে ঢুকে থেকে দেখেছি উনি তোর হয়ে ট্যান্ডনজিকে হাতেপায়ে ধরছেন, যাতে ওদের হাউসের নতুন সিনেমায় তুই হিরো হোস।

ভিকি: একদম বাজে কথা বলবে না। পিতাজির সঙ্গে আমার মাঝে কোন যোগাযোগই ছিল না।

অরুণা: সেটা কেন? সেটা বল এখানে, কেন তোর শ্রদ্ধেয় পিতাজি তোর মত মাথামোটা গাম্বাটের মুখদর্শন পর্যন্ত করতেন না।

ভিকি: হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক আছে।



অরুণা: কী ঠিক আছে? বল, ড্রাগ কেসে ছ’মাস জেল খেটেছিলি। বেরিয়ে আবার তুই জেলে যেতিস, যে’দিন মাঝরাতে মদ খেয়ে ওই মাল্লু হিরোইনটা কি যেন নাম, হ্যাঁ, গোপিকা মেননকে মেরে মুখটুখ ফাটিয়ে দিয়েছিলি। তোর পিতাজি সেবারের মতো তোকে বাঁচিয়েছিল। শোন, তোর মতো পাক্কা ক্রিমিনালের জেলেই সারাজীবন পচা উচিত্‍ ।

ভিকি: আর তোমার যেমন সারাজীবন ওই মাহিমের বস্তিতেই থাকা উচিত্‍ ছিল। আর সিরিয়াল করতে গিয়ে ওই স্পটবয়গুলোর সঙ্গে শোয়াশুয়ি! আজীবন তো শুয়ে শুয়ে ওই বুড়ো লোকটাকে অবধি পাকড়ে নিলে, নইলে তো তোমার আজকের দিনে মাসি হয়ে কামাথিপুরার চৌলে খদ্দের দরাদরি করার কথা।

দিব্যা: আঃ ভিকি। কেন তুমি এই ছোটলোক জংলি অশিক্ষিত প্রস্টিটিউটটার সঙ্গে মুখ লাগাচ্ছ! তোমার যা দরকার সেইটুকু খালি বলো।

অরুণা: হ্যাঁ রে শালি, কনভেন্টে পড়া, বাপের ব্যবসা ভাঙিয়ে ওঠা ভদ্দরলোকি খানকি। সবাই জানে তোর বাবা ওই রিয়েল এস্টেটের মালহোত্রাকে রাতে বাড়িতে ডেকে এনে ওকে দিয়ে তোকে পাল দেওয়াতো, যাতে মাগনায় তোদের ফ্যামিলির খরচাটা উঠে যায়।

দিব্যা: (ক্ষেপে গিয়ে মোবাইল বার করে) বল্ বল্ বল্। রেকর্ড করব। যা বলবি এখুনি গিয়ে এফ.বি-তে ভাইরাল করে দেব। লোকে দেখুক সাধ্বী শাশুড়ির পার্ট করা রাণ্ডি অরুণা অরোরার আসল চেহারাটি কী?

অরুণা: বলবই তো শালি। আর শোন আমরাও না ওই ছাঁটের রেকর্ড করতে জানি। তোর ওই গাঁজাখোর বর এতক্ষণ আমাকে যা বলেছে আমিও রেকর্ড করে স্যাট করে ইউটিউবে ছেড়ে দেব। মি: ঠাকরে, আপনার মোবাইল বার করুন।

প্রমোদ: আঃ অরুণাজি। আপনি শান্ত হোন। দেশে আইনকানুন আছে। আইনের জোর দেশে মুখের থেকে বেশি।

ভিকি: আর আপনাদের ঢলাঢলির জোর তার থেকেও বেশি তাই তো? দুজনে মিলে সাম্বা নাচবেন এখন ফাঁকা বাড়িতে, কি তাই না? সব টাকা কীভাবে হাতিয়ে দুজনে মিলে মরিশাসে গিয়ে ফুর্তি করবেন সেই প্ল্যান চলবে? আমিও শালা গাম্বাট ভিকি- ইণ্ডাস্ট্রি বলে চারটে মোষের যা সম্মিলিত বুদ্ধি, আমারও তাই – আমিও দেখে নেব আপনাদের – কী করে আপনারা আমার শ্রদ্ধেয় পিতাজির টাকা মেরে নিজেদের গর্ভে পোরেন। হারামি কুত্তা, ব্যাচেলরের বাচ্চা উকিল শালা।

প্রমোদ: (হাসে) দেখুন মি: ভিকি। আমি ভীষণ প্রফেশনাল মানুষ। ওসব বেকার গালাগালিতে সত্যি আমার কিছু যায় আসে না। ধরুন, আপনি যদি আমাকে বলেন ‘শালে শুয়ার কে বাচ্চে’, আমি বলব, ‘সে তো বটেই, আমি একমত আপনার সঙ্গে। কিন্তু এই আপনার জন্য রইল আমার মানহানির মামলার চিঠি’। বা ধরুন আপনি আমাকে বললেন, ‘শালে রাণ্ডি কি আওলাদ’, আমি বলব, ‘নিশ্চয়ই, নিশ্চয়ই। তবে ওটা রাণ্ডি কি আওলাদ না বলে খানকি কি আওলাদ বললে বেশি অ্যাপট হত। কিন্তু এই আপনার জন্য রইল আমার প্রফেশনাল ফিসের বিল’। ফলে গব্বর সিং-এর মতোই আমি আপনাকে বলব, ‘চিল্লোন, প্রাণ ভরে চিল্লোন’। যত চিল্লাবেন তত আমার ওকালতির অরগ্যাজম বাড়বে।

ভিকি: (জোরে) হারামি

প্রমোদ: (আরও জোরে)কামিনা

ভিকি: নর্দমার ধেড়ে ইঁদুর।

প্রমোদ: (জোরে) ধানের ক্ষেতে শুয়ে থাকা ছালছাড়ানো কেউটে

ভিকি: খেঁকি কুকুরের বাচ্চা।

প্রমোদ: শুড্ডা ভামবেড়ালের গর্ভস্রাব।
(ভিকি থেমে যায়)

ভিকি: আপনি কাকে বলছেন এগুলো?
(নীরবতা। প্রমোদ ভিকির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে তারপর বলে)

প্রমোদ: আমাকে। নিজেকে বলছি নিজেকে।

ভিকি: আমিও দেখে নেব। বাইরে যাব, মিডিয়া করব। হল্লা করব। লোকে জানুক। নেশন ওয়ান্টস টু নো। আপনারা দেখুন শিবকুমার খান্নার বিধবা রাঁড়ের সঙ্গে এই উকিল প্রমোদ ঠাকরে কীভাবে সাঁট করে আমার মতো বাচ্চা নাদানের ন্যায্য প্রাপ্য টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দেখুন আপনারা। সওয়াল পুছ রহা হ্যায়। জাগো ভারত জাগো।
[একজন ভৃত্য আসে।]

ভৃত্য: ম্যাডাম, স্যারের মেয়ে নবনীত পুরী জি এসেছেন। আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন।

প্রমোদ: ঠিক আছে, তুমি যাও। ম্যাডাম যাচ্ছেন।
(ভৃত্য ঘাড় নেড়ে চলে যায়)

অরুণা: ওই তো – তোর এন.জি.ও দিদি এসে গেছে। সেও তো তোর মুখদর্শন করে না। সবার সামনে তোকে অমানুষ বলে ডাকে।

ভিকি: আমি যদি অমানুষ হই তো, আমার দিদি হচ্ছে ব্লাফ মিস্ট্রেস জেনারেল। অতবড়ে ঢপবাজকে দেখলে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত লজ্জা পাবে। আর শোনো, ও-ও না তোমাকে দুচক্ষে দেখতে পারে না। পার্টিতে বসে দুটো ওয়াইন খেলেই পাবলিকলি ভকভক করে তোমার মা-মাসি করে বুঝেছ। বলে, পিতাজিকি চুতিয়া চুড়ৈল।
[অরুণা তেড়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। প্রমোদ আটকায়]



প্রমোদ: চলুন ম্যাডাম, দেখা করবেন চলুন।
[অরুণা গজগজ করতে করতে এগোন। সঙ্গে প্রমোদ। প্রমোদ শেষমুহূর্তে ঘোরে]
মি: খান্না, অ্যাজ এ প্রফেশনাল ল-ইয়ার বলছি, আমার মনে হয় আপনারও আপনার দিদির সঙ্গে একবার দেখা করা উচিত্‍ ।

ভিকি: আমার বয়ে গেছে। আমি কেন ওর সামনে দাঁত ক্যালাতে যাব? ও দরকারে আমার কাছে আসবে। আমার নাম্বার এই সোসাইটিতে ওর থেকে অন্তত অনেক বেশি। (নিজের বুকে বুড়ো আঙুল ঠেকায়) স্টার। স্টার। হামলোগ স্টার হ্যায়। ঠিক আছে বিরু? যাও গিয়ে ছকবাজি করো।
(প্রমোদ বেরিয়ে যান। দিব্যা খিঁচিয়ে ওঠে)

দিব্যা: তুমি মাগিটার সঙ্গে অত চেপে চেপে কথা বলছিলেন কেন?

ভিকি: কে? কি? কার সঙ্গে?

দিব্যা: ন্যাকে সেজোনা। তোমার ওই রাক্ষুসী সৎমার সঙ্গে।

ভিকি: কোথায়? কত খিস্তি করলাম।

দিব্যা: ঢঙ। আমি সারাক্ষণ মাগিটাকে তুই-তোকারি করে যাচ্ছি, আর তুমি ‘তুমি-তুমি’ করে গা ঘষছিলে। লোকে যে বলে তোমার বাপের সেকেণ্ড বিয়ের পরে ওর সঙ্গে তোমারই বেশি আশনাই ছিল, আজ সেটা মালুম পেলাম। ঢলাঢলির একটি সীমা আছে। ইউ ফাকিং মাদারফাকার।

ভিকি: ডোন্ট শাউট। মালহোত্রার কেসটা লিক করে দিয়েছে বলে তুমি তার ঝাল আমার ওপর ঝাড়তে পারো না। ইউ ফাকিং বিচ।

দিব্যা: ইউ ফাকিং সোয়াইন।

ভিকি: ইউ ফাকিং অ্যাসহোল

দিব্যা: ইউ ফাকার, ফাকার, ফাকার।

ভিকি: ইউ ফাকিং ফাকিং ফাকিং।

[দুজনে ঝগড়া করতে থাকেন। আলো নেভে। ওপরে শিব খান্নার মৃতদেহের সামনে একঝলক ইন্দীবর ও কোকনদ খুরানাকে দেখা যায়। তাঁরা মরদেহে মালা দেন। আলো নেভে। ‘কোহিনূর’ বাংলোর সামনের রাস্তা দেখা যায়। সাংবাদিক পুনম পাটিল আর মহেশ খুরানা শিবকুমার খান্নার বড় মেয়ে নবনীত পুরীর বাইট নিচ্ছে। পাশে নবনীতের স্বামী হিমাংশু পুরী দাঁড়িয়ে আছে।]

নবনীত: পিতাজি ওইজন্য সবসময় তেমন সিনেমা করেছেন যা পারিবারিক মূল্যবোধকে ভারতীয় সমাজে প্রতিষ্ঠা দেয়। পারিবারিক মর্যাদা, ভারতীয় পরিবারের মূল্যবোধ, এইগুলো দেখবেন শিবকুমার খান্নার অভিনীত সিনেমায় সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে। পিতাজি প্রায়ই বলতেন যে, একজন অভিনেতার ক্ষমতা তাঁর অভিনয়ের ওপর নির্ভর করে না, সে কোন চরিত্রগুলো অভিনয়জীবনে নির্বাচন করছে তার ওপর নির্ভর করে। পিতাজির ‘গাঁওয়ার আনজানা’ সিনেমার হরিলাল চামার চরিত্রটার কথা ভাবুন। সেই যে হরিলাল ওই সিনেমায় বলেছিল, ‘দেশ কি সৌগন্ধ কে নাতে, ম্যায় হরিলাল চামার কহা রহা হুঁ, ইয়ে দেশ কা হর মন্দির, হর নদিয়া, হর বস্তি কি মান ইয়া গরিমা, ভ্যক্তি কি পারিবারিক সংস্থা বানানে পর নির্ভর করতা হ্যায়’, তা পিতাজি নিজের জীবনেও সবসময় পালন করে গেছেন। ফলে ব্যক্তি শিবকুমার খান্নার হয়তো আজ মৃত্যু হল, কিন্তু অভিনেতা শিব খান্না ভারতীয় সিনেমা এবং দর্শকদের মনের মণিকোঠায় অমর হয়েই বাঁচবেন। থ্যাঙ্কিউ।

[নবনীত এবং হিমাংশু ভেতরে চলে যায়। পুনম ক্যামেরা বন্ধ করে। মহেশ গেট উইং থেকে দুটো কাগজের কাপে চা নিয়ে আসে।]

মহেশ: নে, অনেক কাজ করেছিস। এবার একটু চা খা।

পুনম: দে। তোর কাছে সিগারেট হবে একটা?

মহেশ: চা-ধর। দেখছি।

(দুজনে সিগারেট জ্বালায়। চা-এ চুমুক দেয়)

পুনম: তুই নবনীত পুরীর বাইট পাঠালি না?

মহেশ: পাঠাচ্ছি। চ্যানেল বার বার করে জাফর খানের কথা বলছে। সে কোথায়?

পুনম: জাফর তো আসেনি এখনও। সদ্য বাপ-ব্যাটা ইন্দীবর আর কোকনদ খুরানা ঢুকেছে।

মহেশ: মিসেস খুরানা আসেনি? ধৃতি খুরানা? সব জায়গায় তো তিনজনে মিলে যায়।

পুনম: ধৃতি খুরানা বোধহয় ছেলেকে নিয়ে চিন্তিত। একটা সিনেমাও লাগছে না। সত্যি মাইরি, সুপারস্টার বাবা-মার ছেলের কী অবস্থা! ছেলেটাকে ইন্দীবর বিয়ে দিলে পারে।

মহেশ: কে বিয়ে করবে ওকে? ঢ্যাঁড়শ একটা।

পুনম: একটু বেশিই ভদ্র।

মহেশ: হ্যাঁ, বাবার থেকে ভদ্রতাটা শিখেছে, বুদ্ধি কিচ্ছু পায়নি।

পুনম: এখনও ছেলেমানুষ আছে।

মহেশ: বত্রিশ বছর বয়সেও যদি ছেলেমানুষি না কাটে ও আর কোনওদিনও কাটবে না।

পুনম: ওই জন্যই তো বলছি কোকনদ খুরানার বিয়ে করা উচিত্‍ ্‍। তাহলে হয়তো একটু ম্যাচিওর হবে।

মহেশ: তোর তো দেখছি হেভি পছন্দ। তুই-ই তাহলে ওকে বিয়ে কর।

পুনম: আমাকে বিয়ে করতে বয়ে গেছে কোকনদের।

মহেশ: তুই বলে তো দ্যাখ একবার!

পুনম: ধুর। আমার কাজ খবর খোঁজা। খবর হওয়া নয়। (থামে) আমার ভালো লাগে কোকনদকে। হয়তো ইন্ডাস্ট্রির জন্য একটু সফট, কিন্তু আমার ভালো লাগে ওকে।

মহেশ: বেকার, বেকার। ওই বাবা যা কামিয়েছে, তাতে ওদের সাতপুরুষ চলে যাবে। কী ভাগ্য মাইরি! কপাল, কপাল! আমার পদবীও খুরানা। কিন্তু আমার বাবার নাম যতীন খুরানা। পি.এন.টি ক্লার্ক। ফলে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে কোনোরকমে দৌড়ে এসে এই মহেশ খুরানাকে ঘামতে ঘামতে বান্দ্রায় রগড়াতে হচ্ছে। কি না, সিক্সটিসের কোন স্টার মারা গেছে। বেকার ঝামেলা যত। জানিস, সকালে বউ বলল চা-টা অন্তত খেয়ে যাও, তাও টাইম পেলাম না। এডিটর বলেছে, এক্ষুনি যাও। কিছু মিস করা যাবে না।

পুনম: আচ্ছা নবনীত পুরীর ওই যে বরটা কী যেন নাম হিমাংশু পুরী- ও কী করে রে?

মহেশ: কে? ওই শিব খান্নার জামাই? ওর তো আইটি কোম্পানী আছে। ভিলে পার্লেতে অফিস। তবে ওটা ব্যাক-আপ। আসলটা

নিউইয়র্কে।

পুনম: আর বউ সমাজসেবা করে বেড়াচ্ছে। দিব্যি আছে দুজনে।

মহেশ: ছেলেপুলে এখানে থাকে না, ফরেনে পড়ছে। নবনীত পুরী তো এবার রাজ্যসভা ট্রাই করছে।

পুনম: তাই নাকি? গতবার এম.পি সিটে হেরে গেল না?

মহেশ: ওই শিব খান্নার সিটেই তো একবার লড়ে জিতেছিল। বাবা মেয়েকে সিটটা ছেড়ে দিয়েছিল।

পুনম: লাস্টবার হেরে গেল না?

মহেশ: হ্যাঁ, একলাখ ভোটে হেরেছে। এবার রাজ্যসভা ছক করছে। পেয়ে যেতে পারে। হিমাংশু পুরী পার্টি ফাণ্ডে মোটা টাকা ঢেলে দেবে।

পুনম: তুই না পুরো চলমান উইকি। সবার হাঁড়ির খবর রাখিস।

মহেশ: এই করে খেতে হয় গুরু। ফ্যামিলি চালাতে হয়। মেয়েটা সবে ওয়ানে উঠল। ওদের স্কুলের খরচ জানিস? ভাবতে পারবি না।
(বাইরে আর একটা গাড়ির আওয়াজ হয়। সঙ্গে জনতার হইহই।)

পুনম: এই জাফর খান আসছে বোধহয়। রাজু, গেট রেডি।

[ওরা সবাই বেরিয়ে যায়। আলো নেভে।]

 

*ছবি সৌজন্য Pinterest
পরবর্তী পর্ব প্রকাশিত হবে ১৫ জানুয়ারি ২০২১
আগের পর্বের লিংক –  

 

জন্ম ১৯৬৯, ২৫ সেপ্টেম্বর, মেদিনীপুর। পূর্বতন প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। পরবর্তীতে সিটি কলেজে অধ্যাপনা। নাটককার, পরিচালক, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, চলচ্চিত্রাভিনেতা, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক, গীতিকার সম্পাদক। 'কালিন্দী ব্রাত্যজন' নাট্যগোষ্ঠীর কর্ণধার ও 'ব্রাত্যজন নাট্যপত্রের' প্রধান সম্পাদক। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের মন্ত্রী। পেয়েছেন বহু পুরস্কার ও স্বীকৃতি। উল্লেখ্য সত্যেন মিত্র পুরস্কার, শ্যামল সেন স্মৃতি পুরস্কার, দিশারী পুরস্কার, রমাপ্রসাদ বণিক স্মৃতি পুরস্কার, খালেদ চৌধুরী স্মারক সম্মান, অন্য থিয়েটারের শ্রেষ্ঠ নাট্য নির্মাণ সম্মান। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন গজেন্দ্র কুমার মিত্র-সুমথনাথ ঘোষ স্মৃতি সম্মান। তাঁর সম্পাদনায় 'গিরিশ কথা' ও 'শিশির কথা' দু'টি বই তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ, প: ব: সরকার কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছে। পেয়েছেন এবিপি আনন্দ 'সেরা বাঙালি ২০১৯' সম্মান। পেয়েছেন বাংলার নাট্যশিল্প জগতের সর্বোচ্চ সম্মান 'দীনবন্ধু মিত্র পুরস্কার'।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *