গীতগোবিন্দের রচয়িতা কবি জয়দেব দ্বাদশ শতকে বীরভূমে অজয়নদের তীরে কেন্দুবিল্ব বা কেন্দুলিতে জন্মগ্রহণ করেন। কথিত আছে জয়দেব প্রতিবছর মকরসংক্রান্তিতে কাটোয়ার গঙ্গায় স্নান করতে যেতেন। এক বছর তিনি প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সেই পূণ্যস্নানে যেতে পারলেন না। আকুল হয়ে কাঁদতে লাগলেন তিনি। স্বপ্নাদেশ পেলেন যে মকরসংক্রান্তিতে মা গঙ্গা  অজয়নদে এসে মেশেন। তাই কেন্দুলিতে অজয়ে স্নান করলেই গঙ্গাস্নানের পূণ্য লাভ হয়। জয়দেব মধ‍্যরাতেই উন্মাদের মতো স্নান করতে ছুটলেন। ফিরে এসে সমাপ্ত করলেন দীর্ঘদিন  অসম্পূর্ণ হয়ে  পড়ে থাকা গীতগোবিন্দ কাব‍্য। এই কাহিনীর বিস্তারেই মকরসংক্রান্তিতে মানুষ কেন্দুলিতে ছোটেন পূণ‍‍্য লাভের আশায়। কেঁদুলির মেলা বাউল সংস্কৃতিতে সম্পৃক্ত। বাউলের আখড়া, একতারা, দোতারার সুর নিয়েই জয়দেবের মেলা। ১৬৮৩ খ্রিষ্টাব্দে বর্ধমানের মহারাজা কীর্তিচাঁদবাহাদুর জয়দেবের জন্মভিটেতে নির্মাণ করেন রাধাবিনোদ মন্দির। মন্দিরগাত্রে অপূর্ব টেরাকোটা কাজে বর্ণিত রাধা – কৃষ্ণের কাহিনী। মেলায় এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। অর্কেস্ট্রাসহ বাউল গান হয়। সন্ধ‍্যেবেলায় আলোর বন‍্যায় ভেসে যায় মেলা প্রাঙ্গণ। শীতলপাটি থেকে কার্পেট, খেজুর গুড়ের পাটালি থেকে মাইক্রোওয়েভের স্টল – কি নেই মেলায়! কেঁদুলির কনকনে হাওয়ায় ঐ তিনদিন ভেসে বেড়ায় গোপীযন্ত্রের গাবগুব ধ্বনি, বাঁয়া তবলার দিদাম দিদাম তালে দেহতত্ত্বের গান।

ছবি ও লেখা: মৈত্রেয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়।

ভ্রমণ লেখক ও ফটোগ্রাফার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *