একদা স্কুলের বন্ধু সপরিবারে গিয়েছে বেড়াতে
গাঢ় নীল আকাশের গায়ে অরুনাচল প্রদেশ যেন মেঘ জড়ো করে
ঢেকেছে শরীর তবু পায়ে পায়ে আনন্দ এসে লেগেছে আর বোনের মুখ ছুঁয়ে
রামধনু উঠেছে এবং দুটি হাত ভেসে গিয়েছে সুবনশিঁরির জলে… 

এইতো ভ্রমণ, সংক্রামিত রোগের মতো ছড়ায় মনে তারপর হুশ থাকেনা
কবে যে এসেছিলে অথবা কাদের সঙ্গে!
পাখিরা নিজস্ব ভাষা খুঁজে পেয়ে কতদূর গিয়েছিল সেবার?
আপাত বেকার আমি ছবি দেখি বুক ভরে আর চিলেকোঠার ঘরে

তেমনই শান্ত এক চাঁদ এসে সঙ্গ দেয় রোজ।

গতকাল ওরা কি তবে চারশ বছরের পুরনো তাওয়াং মঠে গিয়েছিল!
পাহাড়ে পাহাড় লেগে রাস্তা ক্রমশ উঁচু হয়ে ঠেকেছে গুম্ফায়
শ্বাসপ্রশ্বাসের কষ্ট হবে জেনে বাবা-মা কী ছিলনা হোটেলে!
একে আপরকে কাছে টেনে ওরা বুঝি দেখেছে বহুদূরে
বৃষ্টি যেন অভিমানী কিশোর হয়ে ঝরে পড়ে গাছের আড়ালে 

নির্জন ভ্রমণ আমি শুরু করি বাবাকে ছুঁয়ে আর
একা কিছু হবে না জেনে ছায়ারই মতো উঠে এসেছিল মা
লোকমুখে আর বইপত্র ঘেঁটে কতো পথ, নদী আর পাহাড়ের কথা জেনে
গিয়েছি গাড়িতে তারপর হেঁটে ভীষণ জঙ্গল, দূরে
জোনাকির মতো আলো জ্বেলে রাতের খাবার 

এইভাবে কিছুকাল নানা পথ ঘুরে তুমিও শয়তান হলে বাবা! 

সমস্ত শুরুর কথা একভাবে যারা বলে যায়, আমি
তাদের খাদ্যতালিকায় রসের অভাব বোধ করি
যদিও লেখা দীর্ঘ হলে প্রসঙ্গ বদল হতে পারে!
বাবার নোটবই খুলে আমি দেখেছি বহুবার –
ভ্রমণের কথা ছাড়া কিছুই নেই তেমন জোরালো 

বড়জোর না-পাঠানো চিঠির ভূমিকা শেষে নিজেরই নাম লেখা

অরুনাচলের পথে যেতে গিয়ে শান্তি পাওয়া যায়
এইটুকু লিখে মারা যায় বাবা এবং তারপরে
হয়ত শান্তির খোঁজে পাহাড়ে পাহাড়ে কিংবা গুম্ফায়
ঘুমিয়ে রয়েছে আর বন্ধুর ঘুমের ভিতরে ঢুকে
জানতে চেয়েছে বাড়ির খবর, মায়ের পা ব্যথা, ছেলের বেকারত্ব… 

মধ্যরাত্রে ঘুম ভেঙে গেলে আমি দেশলাই জ্বেলে এইসব ভাবি আর মনে হয়-
আমার পিছনে বসে কে যেন  এক অপরূপ ভ্রমণকাহিনী লিখছে

সৌভিক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা ও গণজ্ঞাপন বিভাগে স্নাতক। কবিতা লেখার শুরু ২০১২ থেকে। প্রথম বই " অলীক ভ্রমণ চিঠি " প্রকাশ পায় সোঁতা প্রকাশন থেকে ২০১৬ সালে। দ্বিতীয় বই " দুমুঠো গল্পের মতো " প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে "জানলা" থেকে। জানলা পত্রিকা সম্পাদনা ২০১৫ থেকে এযাবৎ পর্যন্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *