গতকাল পরিবেশ দিবস ছিল। স্কুল থেকে বলা হয়েছিল আমরা সবাই যেন বাড়িতে একটা করে গাছ লাগাই। আমাদের তো বাগান নেই, তাই ছাদের টবে একটা বেলফুলের চারা বসিয়েছি। মা আগে থেকে মাটিটা তৈরি করে দিয়েছিল। গাছের চারাটা আমি একাই লাগিয়েছি। মা দাঁড়িয়ে থেকে বলে দিয়েছে কীভাবে করতে হবে। গাছটা বসিয়ে চারপাশে মাটিটা চেপে চেপে দিয়ে শেষে একটু জল দিয়ে দিয়েছি। বেশি না, অল্প একটু জল। কাল থেকে রোজ বিকেলে জল দেব।

ছাদে আরও ছটা বেলফুলের গাছ আছে। একটা গন্ধরাজ ফুলের গাছও আছে। বিকেলবেলা দারুণ গন্ধ বেরোয়। শনি আর রবিবার মা ভোরবেলা থেকে গাছ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। খুরপি দিয়ে গাছের গোড়ায় খুঁচিয়ে মাটি আলগা করে দেয়, সার দেয়, বোন ডাস্ট দেয় জল দেয়। তবে মা যে শুধু ফুলের গাছ লাগায় তা নয়। পুঁইশাক, টমেটো, ঢ্যাঁড়শ, লঙ্কা, উচ্ছে এসবও লাগায়। এই তো কদিন আগে আমাদের ছাদে ইয়াব্বড় একটা কুমড়ো হয়েছিল। নিমাই কাকা, তরুণ জেঠু, পাপাইদাদাদের বাড়িতে মা একটু করে কুমড়ো পাঠিয়েছিল। আমাদের যে দুধ দেয় দুলালদা, সেইই মাকে মাঝেমাঝে শুকনো গোবর দিয়ে যায় গাছে সার দেবার জন্য। আর যেদিন মা খোল পচায়, সেদিন দুর্গন্ধের চোটে বাড়িতে থাকাই দায় হয়।
মা তো সবাইকেই খাবার দেয়। আমাকে, বাবাকে, ভুলোকে, পাঁচি বেড়ালকে। পালপাড়ার কালিও মার কাছে মাঝে মাঝে এসে খাবার চায়। সবাই ওকে কানা কালি বলে কিন্তু মা বারণ করেছে বলে আমি আর বলি না। শুধু কালিদি বলি। আমাদের ছাদে দুটো পাত্র থাকে। তার একটায় জল আর একটায় খুদ ভরে রাখা থাকে। কয়েকটা চড়ুই, শালিখ, বুলবুলি আর মুনিয়া এসে খেয়ে যায়। কখনও সখনও মউটুসিও আসে। মউটুসিটাকে দারুণ দেখতে। গত বছর শীতকালে শান্তিনিকেতন বেড়াতে গিয়ে আমরা অনেক মউটুসি দেখেছিলাম। মউটুসি, বসন্তবৌরি, বি ইটার আর বেনেবউ। বি ইটারের বাংলা নামটা ভুলে গেছি। গাছ আর পাখি চিনতে আমার খুব ভালো লাগে। গাছ না থাকলে পাখিরা আসে না। পাখি দেখতে না পেলে আমার মনখারাপ লাগে।
বড় হয়ে আমি একটা মস্ত বড় বাগানের মধ্যে একটা ছোট্ট বাড়িতে থাকব। বাগানে একটা দোলনা থাকবে, আমি সারাদিন বসে দুলব। আর আমার চারপাশে পাখি কাঠবিড়ালি প্রজাপতিরা সব নিজেদের মধ্যে খেলা করবে।

ক্লাস এইটের তিস্তা কাশীনাথপুর বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী। ভালোবাসে পাহাড়, রসগোল্লা আর রবিবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *