আমাদের আঁকার স্কুল এখন বন্ধ। স্কুলও বন্ধ। বাইরে খেলতে যাওয়াও বারণ। টিভিতে খবরেও সবাই বারবার দেখছি বলছে বাইরে বেরিও না বাইরে বেরিও না। বাইরে বেরোলেই নাকি সকলের করোনাভাইরাস অসুখ করছে। আমার অসুখ একদম ভালো লাগে না। দিদুর একবার খুব অসুখ করেছিল। ডাক্তার কাকু এসে কিছু করতে পারেনি। সবাই মিলে দিদুকে হাসপাতালে নিয়ে গেছিল। কিন্তু তারপর দিদু আর ফেরেনি। মা খুব কেঁদেছিল। বাবা মায়ের পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল আর বলছিল সবকিছু তো আমাদের হাতে নেই। আমরা তো চেষ্টা করেছিলাম। আমার তাই অসুখ একদম ভালো লাগে না।

দিদু আমার আঁকার খাতা দেখতে খুব ভালোবাসত। প্রতি শনিবার আমি আঁকার ক্লাস থেকে ফিরে দিদুকে দেখাতাম সেদিনের আঁকা। আমার জলরং দিয়ে ছবি আঁকতে ভালো লাগে। গ্রামের ছবি, গাছপালার ছবি আঁকতে ভালো লাগে। কিন্তু ফিগার আমি ভালো আঁকতে পারি না। তাই আঁকতেও চাই না। স্যর বলেন ফাঁকিবাজ। দিদুও খুব ভালো ছবি আঁকত। আমাদের বাড়িতে দিদুর আঁকা ফ্রেম করে দেওয়ালে টাঙানো আছে। কিন্তু এখন আর পারত না। বলত আমার হাত কাঁপে।

শেষ যেদিন ক্লাস হল সেদিন স্যর আমাদের স্টিল লাইফ শেখাচ্ছিলেন। একটা পর্দা টাঙিয়ে তার সামনে একটা বোতল, আর দুটো কাচের গ্লাস রেখে সেটা পেন্সিল স্কেচ করতে বলেছিলেন। আমার বেশ কঠিন লেগেছিল। স্যর বলেছিলেন বাড়িতে ভালো করে প্র্যাক্টিস করতে হবে। এখন তাই বাড়িতে আমি স্টিল লাইফ আঁকা প্র্যাক্টিস করছি। ফলের ঝুড়ির ছবি, থালাবাসনের ছবি, ফুলদানি, এসব স্কেচ করছি। মা সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়, আমি স্কেচ করি। স্কুল খুললে স্যরকে চমকে দেব।

একদিন মা বইয়ের আলমারি থেকে একটা গ্রেট আর্টিস্ট সিরিজের বই বের করে আমাকে দেখাল। তাতে লেখা Paul Cézanne। আমি পড়েছিলাম কেজান কিন্তু মা বলল ওটা সেজান। পল সেজান নাকি ফ্রান্সের একজন খুব বড় শিল্পী ছিলেন। ওনার স্টিল লাইফ বিখ্যাত। বইটায় দেখলাম প্রচুর স্টিল লাইফের ছবি রয়েছে। তাতে প্রচুর ফলের ছবি। বেশিরভাগই তেল রং। আমি তো তেল রং পারি না। জলরং পারি। তবে আগে পেন্সিল স্কেচ করা প্র্যাক্টিস করে নিই, তারপর স্টিল লাইফগুলোয় রং করা শুরু করব। ঠিক সেজানের মত।

 

 

ক্লাস এইটের তিস্তা কাশীনাথপুর বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী। ভালোবাসে পাহাড়, রসগোল্লা আর রবিবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *