কোলাকুলি!

এক ছিল তালঢ্যাঙা গুরু আর তার ছিল এক আলতো-ভুঁড়ির চেলা। চেলা চিরকাল অসহিষ্ণু, এখানে ওখানে জট পাকায় আর কাঁদুনি গায়, গুরু ঠান্ডা মাথায় তার অসময়ের উৎপাত নির্বিকারচিত্তে সহ্য করে, সান্ত্বনা আর পরামর্শ দেয়। গুরু অজাতশত্রু, সবার সঙ্গে তার সদ্ভাব। চেলা সেই নিয়ে আওয়াজ দেয়, গুরু মিটিমিটি হাসে। গুরু গুরুগম্ভীর গল্প-উপন্যাস লেখে, চেলা লেখে হালকাফুলকা রম্যরচনা আর ফিচার।

গুরু শৃঙ্খলাপরায়ণ, চেলা অনুশাসন মানে না। গুরুর আদেশে গাঁইগুই করতে করতে দু’একটা গল্প লিখেই চেলা আবার গোঁত্তা মারে। ডাফ হোস্টেলের ঘরে এক দেওয়াল লিখন দেখে তিরিশ বছর আগের এক দুপুরে মল্লিকবাজারের অদূরে অফিস-বাংলার ঠেকে গুরুকে চেলা জিজ্ঞেস করেছিল “মেজকাকার আধখানা কুমিরে খেয়েছিল বলে বাকি আধখানা কেন মরে গিয়েছিল?” গুরু তার ব্যারিটোন গলায় বলেছিল “নেশা কমলে আর বয়েস বাড়লে বুঝবি।” চেলা গুরুবাক্য মেনে অপেক্ষা করে।

এক ছিল বস, আর তার ছিল এক শাগরেদ। বস অনেক মনখারাপের মেঘ তার হাসির ঔজ্জল্য দিয়ে ঢেকে রাখতে পারত। এদিকে শাগরেদের মনে একটু মেঘ জমলেই তার অন্ধকার মুখ দেখে সবার মালুম পড়ত। বস ছিল মুসলমান আর শাগরেদ ছিল গোঁড়া ব্রাহ্মণবাড়ির; দু’জনেই ধর্ম মানত না কিন্তু টাইম্‌-পাস করতো ঝগড়া করে। যারা দু’জনকে চিনত তারা হেসে কুটিপাটি হত ওদের যুক্তিজাল শুনে। বস অফিসের রাজনীতি আলগোছে মসৃণভাবে এড়িয়ে যেত তার হাসিমশকরা দিয়ে।

শাগরেদ একদিন বলেছিল, সে ভণ্ড হতে পারবে না। বস তাকে সযত্নে কূটনীতি আর ভন্ডামির তফাৎ বুঝিয়েছিল। সবসময় পরিপাটি থাকা বস আর সবসময় অবিন্যস্ত শাগরেদ এমন অসম্ভবকে সম্ভব করত, যা সাধারণ নিয়মের বাইরে। তাই হয়তো বাইরে থেকে চাকরির অফার আসত জোড়ায়, বস আর শাগরেদ দু’জনকেই চাইত অন্য কোম্পানি। যখন শাগরেদ বৃহত্তর পৃথিবীর দিকে পা বাড়ায়, বস হেসে বলেছিল তার স্বভাবসিদ্ধ উর্দু ঘেঁষা বাংলায়- “হাবিজাবি কোথায় যাবি, আমার কাছে আছে তোর সব চাবি!”

এক আছে জগাই আর এক আছে মাধাই- যারা বিগত পঁয়ত্রিশ বছর ধরে সেঁটে আছে একে অপরের সঙ্গে। জগাইয়ের নাম তাঁর মাতৃদেবী এক যুগপুরুষের নামের সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছিলেন। জন্মইস্তক জগাইয়ের সেই যুগপুরুষের প্রতিষ্ঠিত আশ্রমে যাতায়াত। ছোটবেলা থেকেই জগাইয়ের শরীরের ইড়া-পিঙ্গলাতে অনুশাসন ঘাই মারে। মাধাই সেই আশ্রমে পড়তে গিয়ে ছিটকে চলে এল অনুশাসনের ধাক্কা সামলাতে না পেরে! কোনও রকম অনুশাসন আর বাধ্যবাধকতায় মাধাইয়ের কিনা ঘোর অ্যালার্জি!

জগাই সর্বজনপ্রিয়- বন্ধুর মায়েরা বেশিদিন তাকে না দেখলে ব্যাকুল হতেন, কারণ জগাই কোনও বন্ধুর বাড়ি গেলে আগে রান্নাঘরে গিয়ে সেই বন্ধুর মায়ের সঙ্গে একটু গল্প করে আসত। বন্ধুদের মায়েরা অনুযোগ করতেন “জগাইয়ের মতো হতে পারিস না!” মাধাই নিজের গণ্ডির বাইরে মুখচোরা, তাই বন্ধু বাড়িতে গিয়ে গুটিয়ে থাকত। বন্ধুদের মায়েদের চোখের দিকে তাকিয়ে সঙ্কোচবোধ করত বলে মায়েরা সন্দেহের চোখে দেখতেন মাধাইকে আর শাসন করতেন “মাধাইয়ের মতো খবরদার হোস না!”

 

আরও পড়ুন: শামিম আহমেদের কলমে: চড়ুইভাতির উৎসের খোঁজে

 

জগাই চট্টগ্রামের বাঙাল আর ঘোরতর ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। সে মাধাইকে শুঁটকীপ্রেমী করেছে। মাধাইয়ের দেশ বর্ধমান। মোহনবাগান ম্যাচের দিন এখনও মনেমনে “জয় মা! মান রেখো!” জপ করে। সে আবার জগাইকে পোস্তর ভক্ত করেছে। জগাই ঘোরতর বাস্তববাদী। প্রচুর বাস্তববুদ্ধি তার। ষোলো বিলিরুবিন নিয়েও বিয়ের ঘোড়ায় বসেছিল, কারণ জানত একবার বিয়ে পিছিয়ে দিলে অবাঙালি প্রেমিকার বাবার সুবুদ্ধির উদয় হয়ে যেতে পারে। মোক্ষম সময়ে চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করে বাস্তববুদ্ধির জোরে সে এখন সফল ব্যবসায়ী।

মাধাই কল্পনার জগতে বাস করতেই বেশি স্বচ্ছন্দ। জগাইকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে জগাইয়ের বারংবার নিষেধ সত্ত্বেও বড় চাকরি ছেড়ে ব্যবসা করতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছিল। কারণ ব্যবসার ব্যাপারেও স্বপ্ন বেশি দেখে ফেলেছিল। স্বর্গবাসীদের বাদ দিয়ে জগাই আর মাধাই শুধু ভয় পায় একে অপরকে, দু’জনে দু’জনকে একটু বেশিই চেনে বলে!  

পদাবলি!

আজ থেকে প্রায় আশি বছর আগে এক কিশোর, ধরা যাক তার ডাকনাম বুবাই, তৎকালীন বিহারের এক শিল্পনগরী থেকে কলকাতার পঞ্চাশ মাইল দূরে এক আধা-গ্রাম আধা-শহরে দুর্গাপূজার ছুটি কাটাতে আসত। সেখানে ছিল তার দেশের বাড়ি। তার প্রায় বিহারি-বনে-যাওয়া ছোট বোনের সঙ্গে খেলত দিঘির ওপাড়ের ভটচায্যিবাড়ি থেকে একটা মেয়ে, ধরা যাক তার নাম পরি। সে-ও নাকি মামাবাড়ির পুজোতে আসে অন্য শহর থেকে। বুবাই সেই ছোট্ট মেয়ে দুটোর পুতুল খেলা দেখত, দুই বন্ধু বাড়ির উঠোনে কদম গাছের ডালে বসে দুলত। বুবাই দেখত আর হাসত।

সময়ের চাকা গড়িয়ে চলল। বুবাইয়ের তখন আঠেরো কি উনিশ, বাবা হঠাৎ মারা গেলেন। তিনি শুধু বুবাইয়ের দিদির বিয়ে দিয়ে যেতে পেরেছিলেন। বুবাইয়ের ওপর দায়িত্ব পড়ল তার মায়ের আর চার ছোট ছোট ভাই বোনের, যার মধ্যে সেই কদম গাছে দোল খাওয়া বোন ইতিমধ্যে বিবাহযোগ্যা। বোনের বিয়ের সম্বন্ধ হল পরির কাকার সঙ্গে। সেখানে পরিকে দেখে বুবাই হাঁ! সে মেয়ে তখন ষোড়শী। দূর থেকে বুবাই দেখে, কিন্তু খুব জড়তা মনে।

অবস্থার দুর্বিপাকে বুবাই নেড়া মাথায় ব্যাঙ্কের চাকরিতে ঢুকেছে, সান্ধ্য কলেজে নাম লিখিয়েও অর্ধেকদিন গিয়ে উঠতে পারে না। বুবাইয়ের কাকারও ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত দৌড়, বাড়িতে বিদ্যার চেয়ে শিক্ষা বেশি আদরণীয়। আর পরি? তার নামকরা পরিবার- ডাক্তার, মোক্তার, ইঞ্জিনিয়ারের ছড়াছড়ি সেখানে। তার ওপর পরি সত্যিই ডানাকাটা পরি। আর বুবাই পুরুষালি হলেও সুদর্শন মোটেই নয়। পরি কলকাতার কলেজে পড়তে এসে পিসির বাড়িতে ওঠে। বুবাই মাঝেমাঝে বিভিন্ন অজুহাতে পৌঁছে যায় সেখানে- বৈদিক ব্রাহ্মণ হওয়ায় লতায় পাতায় আত্মীয়তা সেখানে রক্ষাকবচ হয়েছিল। পরির ছোটবেলার বন্ধু তখন তার কাকিমা, পরির কাছে তাই বুবাই কাকিমার দাদা বৈ আর কিছু কি? বুবাই জানে না- কারণ পরি দিনরাত পড়াশুনা নিয়েই মশগুল থাকে।

 

আরও পড়ুন: অনিশ্চয় নিয়োগীর কলমে: ভিয়া দোলোরোসা

আবার সময়ের চাকা ঘুরে চলে। পরি ইতিমধ্যে তার শহরতলির বাড়ি ফেরত গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই কলকাতা শহরের নামী সব পরিবার থেকে বিয়ের সম্বন্ধ আসছে তার। আজ থেকে সত্তর বছর আগে কলকাতার নামী কলেজের স্নাতক, তাতে আবার দুর্ধর্ষ রূপসী! এমন সময়ে পরির ঘরে ঘনিয়ে এলো দুর্যোগ- প্রথমে জ্যাঠামশাই, তারপর বাবা মারা গেলেন আর সংসার যখন দারিদ্র্যের জাঁতাকলে পড়ে হিমসিম খাচ্ছে, তখনই এক দুর্ঘটনায় পরির হাতের হাড় টুকরো টুকরো হয়ে গেল। কলকাতা মেডিকেল কলেজের ফ্রি বেডে যখন পরি চিকিৎসাধীন, সেই আইএসসি পাশ, গোঁফ রেখে মোটা ঠোঁট ঢাকা বুবাই সুযোগ পেলেই একা সুন্দরী বিদুষী পরির কাছে বসে তাকে সঙ্গ দিত।

ইতিমধ্যে বুবাইয়ের পাঁচ-সাত বছর চাকরি হয়ে গিয়েছে, সে তখন পূর্ণ যুবক। তারও বিয়ের সম্বন্ধ আসছে একের পর এক। একদিন পরির মা দিঘির ওপারের বাড়ি এসে বুবাইয়ের মায়ের হাত চেপে ধরে মিনতি করলেন, তাঁর মেজ মেয়ে, অর্থাৎ কিনা পরির মেজদির সঙ্গে বুবাইয়ের বিয়ে দিতে। বুবাইয়ের মা তো এককথায় রাজি। পরিচিত পরিবার, বিপদে পড়েছে, আর মেজ মেয়েও বেশ সুন্দরী। কিন্তু ছেলে ভাইবোনদের মানুষ করার দায়িত্ব নিয়েছে, তার মতামত নেওয়া উচিৎ। তাই পরির মা-কে বললেন, ‘আমার আপত্তি নেই, ছেলের সঙ্গে কথা বলে যোগাযোগ করব।’ সপ্তাহান্তে ছেলে বাড়ি এলে কথাটা তুললে বুবাই বলল “পিসিমার একটা বড় মেয়ে আছে না?” 
– কিন্তু তার তো হাত ভাঙা!
– হাত ভাঙা বলে কি বিয়ে হবে না? যদি বিয়ে করতেই হয়, পিসিমার আর তোমার আপত্তি না থাকলে ওই মেয়েকেই বিয়ে করব!
মাতৃদেবী মুচকি হেসে বারান্দায় বেরিয়ে ছোট ছেলেকে দিয়ে খবর পাঠালেন পরির মা-কে! 

কলকাকলি!

বুবাই ইতিমধ্যে যুবক থেকে লোক হয়ে গিয়েছে। পরিবারটা ঠাঁইনাড়া হয়ে কলকাতায় থিতু। বুবাই দুই মেয়ের বাপ, ভব্যিযুক্ত ব্যাঙ্ক অফিসার। পরি এখনও পড়াশুনা নিয়েই থাকে, নামী ইশকুলে টিচার। দেওর-ননদ থেকে মেয়েদের পড়াশুনার ব্যাপারে বুবাই কোনও কথা বলে না, পরির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। আবার সংসারের বিষয়ে পরি কোনও কথা বলে না- বুবাইয়ের কথাই শেষ কথা। বুবাইয়ের মা দেখেন আর তৃপ্তির হাসি হাসেন। এদিকে পরির আবার বাচ্চা হবে। কলকাতা তখনও প্রায় অচেনা শহর। তাই মফসসল থেকে বাড়িতে এল মণিমালা দাসী। অবস্থাপন্ন বাড়ির বউ মণিমালা দুই মৃত সন্তান প্রসব করে শ্বশুরবাড়িতে ব্রাত্য, বাপের বাড়িতে অপাংক্তেয়। গ্রাম সম্পর্কে পূর্ব পরিচিত বাড়িই তার কাছে নিরাপদ আশ্রয়।

পরি যখন বাচ্চার জন্ম দিল, ধরা যাক তার নাম তপু, তাকে কোলে তুলে নিল মণিমালা। তপু মণিকে “মা” ডাকলে তাকে “না” বলা হত। মণিমালা তাই তপুর কাছে “মানা” হয়ে উঠল অচিরেই। তপুর ব্যাপারে মণিমালা পরিকেও বিশ্বাস করে না, পড়াশুনার খেয়ালে কী খাওয়াতে কী খাওয়াবে ঠিক নেই! পরি প্রতিবাদ করে। একদিন তপুর জ্বর- পরি ছেলের জন্যে সুজি করে আনল। তপু ওয়াক্‌ তোলে, পরি জোর করে খাওয়ানোর চেষ্টা করে। ইতিমধ্যে রান্নাঘরে গিয়ে মণিমালা দেখে চিরতা ভেজানো জল উধাও। অর্থাৎ কিনা সুজি বানাতে লেগে গিয়েছে সেই জল! তপুকে চিরতার জলে তৈরি সুজি খাওয়া থেকে রক্ষা করে বুকে টেনে নেয় মানা। পরি আবার ফেরত চলে যায় তার পড়াশুনার জগতে।

 

আরও পড়ুন: অনুব্রতর কলমে: কোভিডের ডিজিটাল দুনিয়া

 

বেশি খাওয়া পরির না-পসন্দ, বেশি খেলে তপু অসুস্থ হয়ে পড়বে। এদিকে কম খাওয়া মণিমালার অপছন্দ। সে ঠেসে খাওয়ায়, যাতে তপু একটু ‘গায়ে-গত্তি’ হয়। তপু দুপুরে মানার কাছে বসে খায়, রাতে পরির কাছে। কলকাতা শহর জল থৈথৈ। পরি নির্বিকার। জানে তপু ইস্কুলে আছে, আর বাড়ি ফেরার সময় বন্ধুরা একসঙ্গে ফিরবে। মণিমালা গজগজ করতে করতে ইস্কুল চলল “কী মা রে বাবা! ছেলে যদি ভেসে যায়, কী হবে!” সংসারের বিষয়ে মণিমালা পরিকে একেবারে বিশ্বাস করে না, সবাই নাকি তাকে ঠকায়। তাই যাবতীয় হিসেব দাদা, মানে বুবাইয়ের সঙ্গে।

দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। তপু যুবা থেকে লোক হয়, আর মণিমালা বৃদ্ধা। সে থাকে তপুর দেশের বাড়িতে। তপু গেলে হাঁড়ি উপুড় করে ভাত দেয় আর গায়ে হাত বোলায়। পরি রাগে গজগজ করে ভাতের পরিমাণ দেখে, কিন্তু কিছু বলতে পারে না।মণিমালা আজও তাকে বিশ্বাস করে না- রাতে দরজার খিল টেনে দেখে তপুর মা দরজার খিল দিতে ভুলে যায়নি তো! কলকাতায় একদিন খবর আসে মণিমালা শেষশয্যায়- পরি দৌড়য় দেশের বাড়ি। তাকে দেখে মণিমালার মুখে হাসি ফোটে, সেদিনই বিকেলে চলে যায়। হাসপাতাল থেকে পরি জানতে পারে, মণিমালা মৃত্যুর আগে তার পরি বৌদিকে দেখার জন্যে খুব ব্যাকুল হয়েছিল। 

রসকলি!

তিনি বলেন, তিনি প্রতারিত হয়েছেন। যাকে ভালবেসেছিলেন সে মুখোশ পরেছিল। বিয়ের পর আস্তে আস্তে মুখোশ খুলছে, আর স্বরূপ প্রকাশ পাচ্ছে। তিনি পাহাড় ভালবাসেন, স্বামী সমুদ্র। কারণ, সমুদ্রের পাড়ে থেবড়ে বসে থাকা যায়, বেশি হাঁটাহাঁটি করতে হয় না। সকালে ঘুম থেকে উঠে রবি ঠাকুরের গান শুনলে তাঁর মন ভাল হয়ে যায়। স্বামী সকালে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনলে আঁতকে ওঠেন। তিনি অনেক কষ্ট করে সংসারটা যখন গুছিয়ে এনেছেন, তখন তাঁর স্বামী “ধ্যাৎ! ভাল্লাগছে না!” বলে চাকরি ছেড়ে দিলেন। তিনি মেয়েদের মানুষ করেন। স্বামী মেয়েদের অমানুষ করেন।

স্বামীর বিশ্বাসযোগ্যতা এতই কম যে শাশুড়ি পর্যন্ত নিজের ছেলের চেয়ে তাঁকে বেশি বিশ্বাস করেন। তিনি দায়িত্ব নিতে ভালবাসেন। স্বামী দায়িত্ব দেখলে পাশ ফিরে শোন। তিনি যখন মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেন, স্বামী ভিক্টোরিয়ার ইতিহাস নিয়ে কথা বলেন। যখনই স্বামীকে পাশে চান, স্বামী পাশে আসেন বগলে বই নিয়ে। তিনি স্বভাবগম্ভীর, বাচালতা তাঁর না-পসন্দ। এদিকে স্বামীর অভিধানে “সিরিয়াস” শব্দটাই লেখা নেই। 

গত ছাব্বিশ বছর ধরে কথাগুলো শুনছি। বিয়ের পরের দিন থেকে। এখন তো আরও বেশি করে। আর বারান্দায় বসে বাঁদরের মতো রড ধরে লোকজন দেখি- কারণ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পড়ার উপায় নেই। তিনি বলে দিয়েছেন “বেরলে ঠ্যাং ভেঙে দেব! তোমার কিছু হলে আমার কী হবে ভেবে দেখেছ!” 

কোলাকুলি – পুনশ্চ 

মাধাই জগাইকে ফোন করে রাতে। মাধাই জিজ্ঞেস করে “বস যে চলে গেল, চাবির কী হবে?” জগাই উত্তর দেয় “তালায় জং ধরে গেছে, চাবি থাকলেও খুলত না।” এবার মাধাই জিজ্ঞেস করে “গুরু যে চলে গেল, বলে গেল না তো কুমিরের বাকি আধখানা কেন মরে গেল?” জগাই বলে “বয়েস বেড়েছে, নেশা এখনও কমেনি তোর।” মাধাই জগাইয়ের কথা বিশ্বাস করে, তাই আবার ভাবতে বসে। নেশা কমার অপেক্ষা করে। 

পেশার তাগিদে সার্ভিস সেক্টর বিশেষজ্ঞ, নেশা আর বাঁচার তাগিদে বই পড়া আর আড্ডা দেওয়া। পত্রপত্রিকায় রম্যরচনা থেকে রুপোলি পর্দায় অভিনয়, ধর্মেও আছেন জিরাফেও আছেন তিনি। খেতে ভালোবাসেন বলে কি খাবারের ইতিহাস খুঁড়ে চলেন? পিনাকী ভট্টাচার্য কিন্তু সবচেয়ে ভালোবাসেন ঘুমোতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *